Reading Time: 4 minutes

ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টাতে গোটা দেশের শিক্ষার্থীদের ছাড়তে হয় নিজের বাড়ি। সরকারি-বেসরকারি যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম লিখিয়ে নিয়েই পরের যে চিন্তাটা করতে হয় সেটা হচ্ছে, থাকবো কোথায়? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে সেখানে থাকার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু, হলে সিট পাওয়াও যে সোনার হরিণ পাবার মতই দুর্লভ ব্যাপার। লটারিতে যদি নাম উঠে যায় তবেই সেই সিট আপনার। কিন্তু, বাকিদের তাহলে কী হবে? যারা সরকারিতে চান্স পায়নি বা চান্স পেয়েছে হলের সিট পায়নি বা বেসরকারিতে পড়বে? বাড়ি থেকে দূরে যারা লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য নানা শহরের ছুটে গেছেন সে সব শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন এর কিছু বিকল্প রয়েছে। সেগুলো সম্বন্ধে জানতে পড়তে থাকুন।  

সাবলেট 

রুম ফর রেন্ট
সাবলেটে থাকার অন্যতম সুবিধা হচ্ছে আপনি নিজের মত করে থাকাতে পারছেন

বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে কিছু এলাকা সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা মিলে একটি বাসা বা অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে থাকে। সেখানে চাইলে একটি রুম নিয়ে সাবলেট থাকা সম্ভব। ২ বা ৩ জন মিলে একটি বাসা ভাড়া নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে থাকা যায়। এতে করে বাড়ি ভাড়া অনেক কমে আসে। নিজের মত করে থাকাও যায় আবার ভাড়াও সাশ্রয়ী। সাবলেটে থাকলে আপনি খরচের হার অনেকটা কমাতে পারছেন যেমন, বাসা ভাড়া ভাগ হওয়ার সাথে সাথে পানি বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলও ভাগ হচ্ছে। এমনকি ইন্টারনেট বিলও আপনাকে দিতে হবে শেয়ারিং এ। শুধু এসবই নয় বরং, বাসার অন্যান্য মেরামত খরচ বা বাড়তি যেকোন খরচ আপনি শেয়ারিং এ দিতে পারছেন। এমন কী কাজের বুয়ার বেতনও আপনার একা দিতে হচ্ছে না। থাকার ও খাওয়া খরচের জন্যও বেশ সাশ্রয়ী এই সাবলেট। সাবলেটে থাকার একটা অন্যতম সুবিধা হচ্ছে আপনি নিজের মত করে থাকার পাশাপাশি রান্নাও নিজে করতে পারছেন। অনেকে যদিও মিলেমিশে এক সাথে রান্নাবান্না করতে চান এক্ষেত্রে এই সুবিধাও রয়েছে। তবে আপনার ফ্ল্যাটমেটের উপর এটা নির্ভর করছে। নিজের মত করে একটা রুম সাজিয়ে নিয়ে থাকার মত স্বাচ্ছন্দ্য কেবল সাবলেটেই সম্ভব। আমরা অনেকেই স্টুডেন্ট লিভিং সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে জানি। প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল ছাত্রদের থাকার ঘরটি আকারে সাধারণত খুব ছোট হয়ে থাকে। ছাত্রদের এই ছোট ঘর সাজানোর জন্য রয়েছে বেশ চমৎকার কিছু টিপস যেগুলো ব্যবহার করে আপনিও ছোট ঘর বেশ চমৎকারভাবে সাজাতে পারবেন। 

মেস 

স্টুডেন্ট লিভিং
নিজেদের মত করে এখানেও থাকা সম্ভব

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশেপাশে গড়ে ওঠে অনেক মেস বাসা। ২ রুমের একটা বাসায় অনেক সময় ৭ বা ৮ জন করেও থাকতে দেখা যায়। এতে খরচের পরিমাণটা অনেক কমে আসে। মেস বাসায় এক রুম শেয়ার করতে হয় ৩ থেকে ৪ জনের সাথে। এখানে থাকার ভাড়া সাবলেটে থাকার ভাড়া থেকে কম। যেহেতু রুমমেটদের সংখ্যা বেশি তাই ভাড়াও শেয়ারিং এ কমে আসবে। এখানে সবার জন্য একসাথে রান্না হয়। “মিল” সিস্টেমে খাবারের হিসাব রাখা হয়। অনেকটা হোস্টেলের মত হলেও এখানে হোস্টেলের মত নিয়ম কানুন এখানে নেই। নিজেদের মত করে এখানেও থাকা সম্ভব। একটি ঘরে যেখানে ৪ ৫ জন করে থাকা হচ্ছে সেখানে লেখাপড়ার পরিবেশ একটু কমই পাওয়া যাবে কিন্তু সবার সাথে মিলে মিশে এখানেও লেখাপড়ার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। তবুও, থাকা খাওয়ার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কমে আসে। সরকারি বা বেসরকারি যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অনেক মেস বাসা আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন। অনেক সময়ই দেয়ালে টু-লেট ঝুলতে দেখা যায় যে মেস-বাসায় সিট খালি রয়েছে। সেই ঠিকানায় যোগাযোগ করলেই সহজেই মেসের সন্ধান পাওয়া যাবে। 

হোস্টেল 

হোস্টেল টাইপো
হোস্টেল আরও উন্নত হয়েছে এসেছে নতুনত্ব

বিশ্ববিদ্যালয় বা ভর্তি কোচিং এলাকাগুলোতে সরকারি বা বেসরকারি অনেক হোস্টেল রয়েছে। যেখানে একা কিংবা শেয়ারিং এ রুম নেওয়া যায়। হোস্টেলে থাকার ভাড়ার সাথে একসাথে খাবারের টাকাও রাখাও হয়। হোস্টলে সবকিছুর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা জায়গা। যেমন- ডাইনিং, বাথরুম, রান্নাঘর এমনকি ক্যান্টিন সবকিছুর জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা। হোস্টেলের একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থিদের খাওয়াদাওয়া এবং যাতায়াত করতে হয়। সময়ের সাথে হোস্টেল আরও উন্নত হয়েছে এসেছে নতুনত্ব। যেমন সুপার হোস্টেলের মত আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেক হোস্টেল এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন হিসেবে এই হোস্টেলগুলোর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। 

লিভ ইন টিউটর 

কলম ডাইরি এবং হাত
ছাত্র অবস্থায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত সুযোগ হাত ছাড়ার মত নয়

এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা একজন ছাত্রের থাকা এবং খাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন, এবং বিনিময়ে তাদের সন্তানের লেখা পড়ার দায়িত্ব নিতে হয় সেই শিক্ষার্থীর। এমন প্রচলন এখন কমে আসলেও এমন কিছু পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে এখনো ছাত্ররা বসবাস করে। থাকা ও খাওয়ার খরচ তখন সেই পরিবার বহন করে। থাকার জায়গা না থাকা ছাত্রদের সাহায্যে এমন বেশ কিছু পরিবার এগিয়ে আসছে। অনেকে এই পরিবারের বাচ্চাদের পড়িয়েও থাকে, এতে করে নিজের খাওয়ার খরচ কিন্তু আপনি নিজেই উপার্জন করতে পারছেন। ছাত্র অবস্থায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত সুযোগ হাত ছাড়ার মত নয়। এছাড়াও, বেশীরভাগ সময় দেখা যায় ছাদের ঘরটা খালি আছে সেখানে শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হল। অন্যান্য বাসার চেয়ে এই ছাদ ঘরের খরচ ভীষণ কম। কিছু পরিবার এমনও আছে যারা তাদের ব্যবহারের একটি রুমে একজন করে ছাত্র বা ছাত্রীকে থাকতে দেন। খাওয়ার খরচও নিয়ে থাকেন। এটাও শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন এর একটা উপায়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতে এই সবকয়টি সুবিধাই আপনি পেয়ে যাবেন খুব সহজে। 

শিক্ষা জীবনের শুরুতে একটি সাশ্রয়ী আবাসনের প্রয়োজনীয়তা থাকে অনেক। নিজেকে গড়ার এই সময়ে পরিবারের কথা ভেবেই বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীরা এভাবে কষ্ট করে যান। এমন লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাওয়া যাবে যারা হোস্টেল বা সাবলেটে ভালোই আছেন লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন সুন্দর করে। আর লিভ ইন টিউটরের মত একটা সুযোগ কিন্তু ছাত্র অবস্থায়ই আপনাকে নিজের পায়ে দাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। সুতরাং, নতুন জীবনের শুরুটাই হোক একদম নিজের মত করে। শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন এর উপায়গুলো কেমন লেগেছে জানাতে কমেন্ট করতে ভুলবেন না যেন! 

Write A Comment