Reading Time: 4 minutes

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯০ শতাংশ স্টার্ট-আপ শুরুর দিকেই মুখ থুবড়ে পড়ে আবার ৩০ শতাংশ প্রথম দুই বছরেই হারিয়ে যায়। কিন্তু কিভাবে বাকী ১০ শতাংশ সফল হয়ে যাচ্ছে? যেখানে বেশিরভাগই হারিয়ে যাচ্ছে! নিশ্চয়ই কোন সিক্রেট আছে! আপনি যদি বাংলাদেশের ব্যবসা সফল স্টার্ট-আপের গল্পগুলো জেনে থাকেন তাহলে হয়তো, তাদের সফলতার মূলমন্ত্র কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন! তারপরও, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থাকলে যেকোন স্টার্ট-আপকে সফল করতে হিমশিম খেতে হবে না। চলুন তবে জেনে নেই সফল স্টার্ট-আপ এর সে ৪টি বিষয়!  

ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলা 

ফিজেট স্পিনার
ব্যবসার বাজার যাচাই করুন

এমন অসংখ্য ব্যবসা আছে যার আইডিয়া চমৎকার হওয়ার পরও, তেমন ভালো করতে পারেনি! কেবলমাত্র ব্যবসার আইডিয়াটা সময়ের বা ট্রেন্ডের আগে হয়ে যাওয়াতে।  আচ্ছা, আপনি কি কখনও SixDegrees.com এর কথা শুনেছেন? এটা বিশ্বের প্রথম সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এই স্টার্ট-আপের লক্ষ্য ছিল এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে মানুষ একে অপরের সাথে পরিচিত হবে। আইডিয়াটি যদিও চমৎকার তবে সময়ের অনেক আগে উপস্থিত হওয়াতে এটি সফল হতে পারেনি। 

যেকোন স্টার্ট-আপের জন্যই আপনার ভোক্তা কি চায় সেটার ব্যাপারে ভালমত লেখাপড়া করা খুব দরকার! সফল স্টার্ট-আপ শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে, আপনার ভোক্তা ঠিক এই সময়ে কী চাচ্ছে? কতটুক সময় পর্যন্ত সেই চাহিদা থাকবে? এবং এই চাহিদা মার্কেটের জন্য কতটুকু লাভজনক হতে পারে। এই বিষয়গুলো জানা থাকলে, শুধু স্টার্ট-আপ না যেকোন ব্যবসায় লাভজনক ফলাফল আনা সম্ভব। সুতরাং, আপনি যদি কোন স্টার্ট-আপ করতে যাচ্ছেন অবশ্যই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন, দেখবেন আপনার স্টার্ট-আপ দেশের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

সীমাবদ্ধতাগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন

স্পিডোমিটার
আপনার ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা বেশ জরুরী

এখন আপনি জেনে গেছেন কোন কোন বিষয় সম্বন্ধে ধারণা থাকলে আপনি স্টার্ট-আপকে সফল করতে পারবেন। এবার জানার পালা, আপনার কাছে কি পরিমাণ অর্থনৈতিক সাপোর্ট আছে! সবসময় যে অর্থনৈতিক সাপোর্টের প্রশ্ন তা কিন্তু নয়! আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যেগুলো নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করে তবেই মাথে নামা ভালো। আপনার বাজেটের মধ্যে  উপযুক্ত কমার্শিয়াল স্পেস, মালামালের নিয়মিত সাপ্লাই, ব্যবসার ভবিষ্যত সম্ভাবনা এবং সর্বশেষ একজন ব্যবসায়ী হিসেবে মার্কেটে আপনি কতদিন টিকে থাকাতে পারবেন, এ সবগুলো হিসেব করে। তবেই, একটি ব্যবসার পরিকল্পনা করা উচিত!   

যে সকল স্টার্ট-আপ এবং ব্যবসাগুলো এই সকল বিষয়গুলো বুঝতে পারেনি তারা এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বেশি দিন থাকতে পারেনি। ইকারাসের কথা কি আপনার মনে আছে? যিনি উড়তে উড়তে সূর্যের খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন! কিন্তু, সে ভুলে গিয়েছিলেন যে সূর্যের তাপে তার পাখা পুড়ে যাবার ভয় আছে! ঠিক, তাই ই হল! এই ছোট্ট গল্প থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, সব বিষয়ে সঠিকভাবে জেনে বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এজন্য আপনার ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা বেশ জরুরী নতুবা, ব্যবসায় ক্ষয়ক্ষতি হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া 

কফি মাগ
স্টার্ট-আপের মত ব্যবসাক্ষেত্রে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক

বর্তমানের সব সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করলে আপনি জানতে পারবেন, তারা প্রতিনিয়ত তাদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেন, যতই গবেষণা করি না কেন কিছু জিনিস আমাদের হাত থেকে ফসকাবেই! সত্যি বলতে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্টার্ট-আপের মত ব্যবসাক্ষেত্রে ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ভুল থেকে বের হয়ে সামনে এগুনোর নামই জীবন। স্টার্ট-আপের শুরুতে সঠিক পরিকল্পনা, হিসাব নিকাশ এবং প্রস্তুতি হয়তো ভবিষ্যতের ভুল থেকে আমাদের সতর্ক করবে কিন্তু, ছোটখাটো ভুলগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। স্টার্ট-আপে যে ভুলের সম্মুখীন আপনি হবেন তা জেনে তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, ভবিষ্যতে এমন ভুল যেন পুনরায় না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে এগিয়ে যেতে হবে। একই ভুল যেন ভবিষ্যতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।

সময়ের সাথে পরিবর্তিত হবার মানুষিকতা

অক্ষরে লেখা
সময় বুঝে ব্যবসার পরিকল্পনা বদলে ফেলাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা

সকল সফল স্টার্ট-আপ এর জন্য সময় বুঝে বদলে যাওয়াই সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি। বিশ্বের ব্যবসা বাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং আরও বেড়ে যাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি, নীতিমালা সর্বক্ষণই উপস্থাপন হচ্ছে। সে সম্বন্ধে খোঁজ খবর রাখা, কখন কি হতে যাচ্ছে তার ধারণা রাখা। এবং সময় বুঝে ব্যবসার পরিকল্পনা বদলে ফেলাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। সময় বদলালে আপনার ব্যবসার মডিউলও বদলানো জরুরী। 

সব রকম স্টার্ট-আপ তখনই মুখ থুবড়ে পড়েছে, যখন তারা সময়ের সাথে নিজেদের বদলে নিতে পারেনি। সময়ের সাথে বদলে যাওয়াকে যারা যুক্তিগত মনে করে না বরং হাজারটা উদাহরণ থাকার পরও তারা বদলাতে চায়নি বলে, তারা আজ কোথাও নেই। উদাহরণ স্বরূপ, “কোডাক”-এর কথাই ধরা যাক। তারা কোন স্টার্ট-আপ নয়, বরং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরাকে না বলার জন্য আজ মার্কেটে তারা একদম নাই বললেই চলে। অথচ সময়ের সাথে বদলে গেলে হয়তো আজও তারাই রাজত্ব করতো! 

আপনার স্টার্ট-আপে কি এই ৪টি বিষয় রয়েছে? যদি থেকে থাকে, তাহলে খুব শীঘ্রই আপনার স্টার্ট-আপ সফলতার শিখরে পোঁছে যাবে। আপনার স্টার্ট-আপকে সফল করতে ওপরে বলা এই ৪টি বিষয় নিশ্চিত করা বেশ জরুরী। লেখাটি পড়ে কেমন লাগল কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। 

1 Comment

  1. একটি অসাধারণ এবং সময়োপযোগী লেখা,যেখানে বিষয়গুলো অল্পবিস্তরে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

Write A Comment