Reading Time: 4 minutes

গত বছরটি রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য ছিল উত্থান-পতনের। অনেক উচ্চাশা এবং অপার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন বছর, লেনদেনের সূচক ছিল উর্ধ্বমূখী। কিন্তু অচেনা এক ভাইরাসের আগমনে সারা বিশ্বেই থমকে দাঁড়ায় জীবনযাপন, যার প্রভাব পরে বাংলাদেশেও। রিয়েল এস্টেট খাতে লেনদেন নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে বছরের প্রথমে দেখতে পাওয়া সেই সম্ভাবনারও অঙ্কুরে বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে সময়ের সাথে সাথে জীবনযাত্রা যত স্বাভাবিক হয়েছে, রিয়েল এস্টেট খাতও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই খাতের পক্ষে কিছু সিদ্ধান্ত এবং সবার প্রচেষ্টায় বছরের শেষ দিকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে রিয়েল এস্টেট খাত। ২০২০ শেষ হয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন বছর। ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট খাত কেমন হবে? বিশেষজ্ঞরা কী ভাবছেন এই বছরের প্রথম ভাগ সম্পর্কে? এমন কিছু বিষয় নিয়ে সাজানো আমাদের আজকের লেখা।

Banani Cityscape

অধিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা

রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য শুভকর বেশ অনেকগুলো সিদ্ধান্তই সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে মহামারী পরবর্তী সময়ে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ছিল অপ্রদর্শিত অর্থ রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া। ফলশ্রুতিতে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ দেখেছে রিয়েল এস্টেট খাত। যেহেতু প্রতি বছর জুন মাসে বাজেটের আগে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যাচাইবাছাই করে দেখা হয়, তাই এর আগেই অর্থ্যাৎ বছরের প্রথম ভাগেই রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে ভাবছেন অনেকেই। এর বাইরেও আরও কিছু নিয়মে পরিবর্তন যেমন গৃহঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কমিয়ে ৯% এ নামিয়ে আনা, ল্যান্ড ট্রান্সফার ট্যাক্স ২% থেকে কমিয়ে ১% নামিয়ে আনা, স্ট্যাম্প ডিউটি ফি ৩% থেকে অর্ধেক কমিয়ে ১.৫% নামিয়ে আনার মত কারণে এই সেক্টরে আরও বিনিয়োগ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিবর্তন

স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ২০২০ এর শেষভাগে রিয়েল এস্টেট খাতকে বেশ অগ্রসরমান হতে দেখা গিয়েছে । যদিও সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়ানো এখনো বাকি কিন্তু সূচকের উর্ধ্বমূখী যাত্রা রয়েছে অব্যাহত। কিন্তু একে ধরে রাখতে হলে এবং এ খাতের অধিকতর উন্নতির জন্য প্রয়োজন কিছু পরিবর্তনের। যদিও ইতোমধ্যেই রিয়েল এস্টেট খাতের পক্ষে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত এসেছে তবুও ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট খাতে আরও সমৃদ্ধি আনতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন। এখনো বেশ কিছু কারণ রয়েছে যে কারণে আমাদের মোট জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ আবাসন খাতের অংশ হতে পারছে না। নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হবে এসব বাঁধা দূরীকরণ এবং ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট খাত যেন আরও বেগবান হয় সে বিষয়টি নিশ্চিতকরণ। তাই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যে কিছু পরিবর্তন আসবে তা ধারণা করছেন অনেকে। 

Purbachal

রেডি প্লট বা জমির চাহিদা বৃদ্ধি

২০২০ সাল যত গড়িয়েছে, জমির জন্য চাহিদা ততই বেড়েছে। বিপ্রপার্টির নিজস্ব ডাটা অনুসারে, বছরের শুরুর তুলনায় বছরের শেষে প্লট বা জমির চাহিদা ছিল ১০ গুণ বেশি। এর পেছনে অবশ্য রয়েছে যৌক্তিক কারণ। দেখা গিয়েছে যে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের মত প্রপার্টিতে বিনিয়োগের চেয়ে প্লট বা জমিতে বিনিয়োগে লাভ (রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট) বেশি। ঢাকা শহরের ভেতরে যদিও জমির মূল্য আকাশচুম্বী এবং তা পাওয়া দুষ্করও বটে, কিন্তু ঢাকার আশেপাশে যেমন পূর্বাচলের মত জায়গায় তা তুলনামূলক সহনীয়। আর পূর্বাচলেও জমির দাম বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। একারণেই প্রচুর মানুষ এখন খোঁজখবর নিচ্ছেন পূর্বাচলে জমির ব্যাপারে। ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট মার্কেটে এই খোঁজখবর যে চলবে তাও নিশ্চিত। তাই অর্থনীতি যতই শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়াবে, প্লট বা জমিতে বিনিয়োগ ততই বাড়বে।

অধিকতর সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট

বছরের মাঝামাঝি সোময়ে যখন মহামারীর শুরু, তৈরি ফ্ল্যাট কেনার মত ক্রেতা হুট করেই কমে যায় অস্বাভাবিকভাবে। ক্রেতা কমে গেলেও বিক্রিরর জন্য রেডি কিংবা নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের সংখ্যা কিন্তু কমেনি মোটেও। ফলে সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক এক অবস্থার, চাহিদার বীপরিতে অতিরিক্ত যোগান দেখা দেয় বাজারে। অনেক ডেভেলপারই হাতে নগদ টাকার অভাবে পড়েন বড় সমস্যায়। কেননা ভবিষ্যত প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য তাঁদের টাকার প্রয়োজন। যেহেতু চাহিদা কম তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে কমিয়ে দিতে হয় ফ্ল্যাটের দাম। এজন্যই যারা ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবছেন তাঁদের জন্য এটি বেশ চমৎকার সময়। সময়ের সাথে সাথে দাম আবার বেড়ে যাবে কিন্তু ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট খাতের একটি বৈশিষ্ট্যই হবে যে বছরের প্রথমভাগে প্রপার্টির দাম বেশ কমই থাকবে।

Apartment Buildings

ঘুরে দাঁড়ানো

সুদের হার কমানো, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া এবং বিভিন্ন ফি কমানোর মত পলিসির কারণে রিয়েল এস্টেট খাত বেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রিয়েল এস্টেট খাতের পক্ষে এসব নীতিতে পরিবর্তন এবং একই সাথে মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়েই দ্রুত উন্নতির ফলে রিয়েল এস্টেট সেক্টর অনুমিত সময়ের চেয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আর ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট খাতেও যে সে ধারা বজায় থাকবে তাই অনেকের অনুমান। পূর্ব অনুমান অনুসারে ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬.৮% জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। আর এই হার বজায় থাকলে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের আগের অবস্থা ফিরে আসতে হয়ত খুব বেশি সময় লাগবে না। ২০২১ এর প্রারাম্ভেও তাই রিয়েল এস্টেট খাতের ঘুরে দাঁড়ানো অব্যাহত থাকবে। 

অন্য সব খাতের মতই রিয়েল এস্টেট খাতের জন্যও ২০২০ ছিল একটি অস্থিতিশীল বছর। তবে বছর শেষে আবার প্রতিটি খাতই কমবেশি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই ২০২১ সালের রিয়েল এস্টেট খাত হবে ক্রমাগত সেই ক্ষতি মেরামত ও উন্নতির ধারা বজায় রাখার বছর, মোটামুটি সকলের ভবিষ্যতবাণীই এমন।

Write A Comment