Reading Time: 8 minutes

৩০ মে ২০১৯ থেকে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মর্যাদার লড়াই, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ । ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপের এটি ১২তম আসর। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানদের তালিকা করতে গেলে বিনাবাক্যব্যয়ে সবার উপরে আছে অস্ট্রেলিয়া, ৫টি শিরোপা নিয়ে। নিকটতম প্রতিদন্দ্বী হিসাবে আছে ২টি করে শিরোপা নিয়ে ওয়েস্টইন্ডিজ আর ভারত। আর ১টি করে শিরোপা আছে শ্রীলংকা আর পাকিস্তানের। যারা নিজেদের ক্রিকেটের জনক বলে দাবী করে, সেই ইংল্যান্ডেরই নেই কোন শিরোপা। যদিও এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এর অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে ইংল্যান্ডকেই কিন্তু বাস্তবতা হল, শিরোপার কথা উঠলে তাদের ঝুলি এখন পর্যন্ত একদমই ফাঁকা। হয়ত তারা সবচেয়ে বেশি “দ্বিতীয়” হওয়া দল (বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩ বার রানার্স-আপ হয়েছে ইংল্যান্ড), হয়ত আরেকটু এদিক-ওদিক হলেই তাদেরও একটি বিশ্বকাপ থাকত, তবে এখন পর্যন্ত তাদের সাফল্য বলতে ঐ রানার্স-আপই!

তবে, ক্রিকেটে ইংলিশদের ঐতিহ্য আসলেই অনেক পুরাতন, ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে কথা উঠলে তাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। ক্রিকেটের কূলীন সদস্যদের একজন ইংল্যান্ড। বিশ্বের প্রথম স্বীকৃত ওয়ানডে অথবা টেস্ট ম্যাচে দুই দলের একটি ছিল ইংল্যান্ড। আর রানার্স-আপ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বকাপের আরেকটি “কাইন্ড অফ” রেকর্ডও তাদের দখলে। ২০১৯ কে হিসাবে ধরলে, বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ইংল্যান্ডের নাম জড়িয়ে আছে সবচেয়ে বেশি ৫ বার।

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ যৌথভাবে আয়োজন করছে ইংল্যান্ড আর ওয়েলস। কিন্তু বাস্তবে মোট ১১টি ভেন্যুর মধ্য ১০টিই আছে ইংল্যান্ডে। আর সে কী ভেন্যু একেকটি! লর্ডস, ওল্ড ট্রাফোর্ড, এজবাস্টন, ওভালের মতন সব বাঘা বাঘা ভেন্যু এবার আয়োজন করবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এর মোট ৪৮টি ম্যাচ। আর আমাদের আজকের আয়োজন এমন ৫টি বিখ্যাত ভেন্যু নিয়েই যেখানে আছে বাংলাদেশের ম্যাচ

কেনিংটন ওভাল – লন্ডন

শুধু ক্রিকেটই নয়, ওভালের সাথে জড়িয়ে আছে আরও অনেক খেলার নাম। ইংল্যান্ডের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচও এই ওভালেই হয়েছিল

দি ওভাল
দি ওভাল

ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের শুরুটা কোথায়? উত্তর, এখানে, এই ওভালে। সেই ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে যে টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল তা ছিল ইংলিশ ইতিহাসের প্রথম, আর বলাই বাহুল্য, ভেন্যু ছিল দি ওভাল। সাউথ লন্ডনের এই বিখ্যাত স্টেডিয়ামটি যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে অসংখ্য ইতিহাসের সাক্ষী। ২০১৭ সালে ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ স্টেডিয়াম হিসেবে এটি ১০০তম টেস্ট আয়োজন করার গৌরব অর্জন করে। তুলনা করার জন্য বলা যেতে পারে, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর দল হিসেবে গত প্রায় ২০ বছরে বাংলাদেশের খেলা টেস্ট ম্যাচের সংখ্যাই সর্বসাকুল্যে ১১৪টি! এই ওভাল সারে ক্রিকেট কাউন্টি ক্লাব-এর হোম গ্রাউন্ড হিসেবে আছে সেই ১৮৪৫ সাল থেকে। গুরুত্ব বিবেচনায় ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সিজনের শেষ ম্যাচটি খেলা হয় এই মাঠেই। এই মাঠের ধারণক্ষমতা ২৩৫০০। এই মাঠেই ২০০৬ সালে পাকিস্তান দল বল টেম্পারিং এর অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং আম্পায়ারেরা তাদের ৫ রান জরিমানা করেন। কিন্তু পাকিস্তান দল এই দোষ অস্বীকার করে এবং চা বিরতির পর তারা মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলস্বরূপ বিপক্ষ দল, ইংল্যান্ড ওয়াকওভার পায় এবং বিজয়ী ঘোষিত হয়। পাকিস্তান, তাদের রেপুটেশনের প্রতি সুবিচার করতেই কিনা কে জানে, কিছুক্ষণ পরেই খেলতে নামতে চায়।কিন্তু আম্পায়ারেরা সাফ জানিয়ে দেন যে, ততক্ষণে ম্যাচ পরিত্যাক্ত ঘোষিত হয়েছে এবং ইংল্যান্ড বিজয়ী ঘোষিত হয়েছে!

শুধু ক্রিকেটই নয়, ওভালের সাথে জড়িয়ে আছে আরও অনেক খেলার নাম। ইংল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচের কথা তো আগেই বলা হল, কিন্তু আপনি জানেন কি, ইংল্যান্ডের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচও যে এই ওভালেই হয়েছিল? ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডের মাঝে এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ বিশ্ববিখ্যাত। ফুটবল নিয়ে সামান্য খোঁজ রাখেন এমন সবাই জানেন যে এবারের চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে খেলছে ৪টি ইংলিশ ক্লাব। সেই ইংলিশ ফুটবলের এফ-এ কাপের বেশ কয়েকটি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। এছাড়াও ইংলিশ রাগবির বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচও এই মাঠেই হয়েছে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি এই মাঠের সাথে বাংলাদেশের তেমন স্মৃতি নেই। বরং টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরেও যে দুটি দল এখনো এই ঐতিহ্যবাহী মাঠে খেলতে পারেনি, বাংলাদেশ তাদের একটি। তবে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আছে ভবিষ্যৎ রাঙ্গানোর। ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এর ৫টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এই ওভালে। এর মধ্যে দুটি ম্যাচেই থাকবে বাংলাদেশ। জুনের ২ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ৫ তারিখে নিউজিল্যান্ড, দুই শক্ত প্রতিপক্ষের বিপরীতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে যে এই ওভাল থেকেই!

সোফিয়া গার্ডেন – কার্ডিফ

সবাই বলে “কার্ডিফে গেলেই বাংলাদেশ দলের যেন কী হয়ে যায়।” কিন্তু শুধুমাত্র ২০১১ আর ২০১৫ এর বিশ্বকাপ দেখে থাকলে কেউ এই উক্তিটি বদলে বলতে পারেন, “ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপে পেলেই বাংলাদেশ আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কী যেন হয়ে যায়!!”

সোফিয়া গার্ডেন - কার্ডিফ
সোফিয়া গার্ডেনের একটি গ্যালারি

ইংল্যান্ডের বাইরে যে একটি স্টেডিয়ামের কথা হয়েছিল, এই সোফিয়া গার্ডেনই (এরপর থেকে কার্ডিফ হিসেবে লিখিত) সেটি। ওয়েলসে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম ইংল্যান্ডের অন্যান্য শতবর্ষী ভেন্যুর তুলনায় নেহায়েতই শিশু। এই মাঠে প্রথম ওয়ানডে খেলা হয় ১৯৯৯ সালে আর প্রথম টেস্ট তো এই সেদিনকার ঘটনা, ২০০৯ সালে। যে টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে ১০০তম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে নাম লিখিয়েছে কার্ডিফ। কিন্তু,  বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের তাতে বয়েই গেছে! তর্ক সাপেক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ দুটি ওয়ানডে জয় যে এসেছে এই মাঠেই!

হার্ডহিটার আফতাব আহমেদ
সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াও হারতে পারে – বুঝতে পেরে উল্লাসে মত্ত হার্ডহিটার আফতাব আহমেদ!

২০০৫ সালের সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল। গিলক্রিস্ট, হেইডেন, পন্টিং, ম্যাগ্রা, ক্যাস্পারহুইচ, হাসি,  কী এক একজন প্লেয়ার সেই দলে! সেই দল এমনই সর্বজয়ী যে তাদের নিজেদের ক্লোন করে তাদের বিপক্ষে নামিয়ে দিলেও বুঝি অরিজিনাল অস্ট্রেলিয়া দল হেসেখেলে ক্লোন দলকে হারিয়ে দেবে! কম্পিউটর গেমসেও তাদের হারানো যায় না! সেই বছরে জুন মাসের ১৮ তারিখ, ঘটে গেল এক অকল্পনীয় ঘটনা। আশরাফুল, বাশার, আফতাব, রফিকদের ব্যাট যেন হয়ে উঠল একেকটি খাপ খোলা তলোয়ার! সপাং সপাং চাবুকের বাড়িতে যেন বল গিয়ে পড়তে লাগলো সীমানার বাইরে। বিশ্ব অবাক হয়ে দেখল, অস্ট্রেলিয়াও হারতে পারে! আর এই ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে থাকল কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর জন্য জয়সূচক রানটি হবার পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

পরের গল্পটা তো আরও নতুন। সেই কার্ডিফ, সেই জুন মাস, সেই বাংলাদেশ। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশি নিউজিল্যান্ড। হিসাবটা খুব সহজ, এই ম্যাচ হারলে বাদ বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ২৬৬ রানের টার্গেট দিল কিউইরা। বল করতে এসে পেস আর সুইং দিয়ে সাপের মত ফণা তুলতে শুরু করলেন ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদি। তাদের সেই ছোবল সইতে না পেরে বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমও যখন ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে যান বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩৩ রানে ৪ উইকেট। জয়? সে তো বহুদূরে। মনে হচ্ছিল ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ যেন বহুদিন পর “একটি সম্মানজনক হারের” জন্য খেলবে! ক্রিজের দুই প্রান্তে যে দুজন ব্যাট করছিলেন, কার্ডিফে অস্টেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের সময় তাদের কারোরই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে অভিষেক পর্যন্ত হয় নি। কে জানে, তাদের উপর সেই ২০০৫ সালের ভুত ভর করেছিল কিনা! “রিয়াদ” আর “ফয়সাল” নামের বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই স্তম্ভ, করে ফেললেন সেঞ্চুরি, গড়লেন ঐতিহাসিক এক পার্টনারশিপ। নিউজিল্যান্ড তো বটেই, সারা ক্রিকেট বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ছিনিয়ে আনলেন ৫ উইকেটের জয়! রিয়াদ কে? তা হয়তো অনেকেই চিনে ফেলেছেন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ফয়সাল? কেউ নয়, আমাদের সাকিব! বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান!

সবাই বলে “কার্ডিফে গেলেই বাংলাদেশ দলের যেন কী হয়ে যায়।”। কিন্তু শুধুমাত্র ২০১১ আর ২০১৫ এর বিশ্বকাপ দেখে থাকলে কেউ এই উক্তিটি বদলে বলতে পারেন, “এই ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপে পেলেই বাংলাদেশ আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কী যেন হয়ে যায়!!” দুয়ারে আরেকটি বিশ্বকাপ, ম্যাচ আছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাই মঞ্চ প্রস্তুত, তৈরী আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান বাকি সঙ্গীদের নিয়ে। কী আশ্চর্য, ইংল্যান্ডের সাথে এই ম্যাচ কিনা কার্ডিফেই! এই বিশ্বকাপের অন্যতম দাবীদার যাদের বলা হচ্ছে সেই ইংল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে কি ক্রিকেট বিধাতা মুচকি মুচকি হাসছেন? উত্তর জানতে হলে চোখ রাখতে হবে টিভির পর্দায়, জুন মাসের ৮ তারিখে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, কার্ডিফে। আরে, কি অদ্ভুত! আবার দেখি জুন মাস!

ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড – ব্রিস্টল

২০১৯ বিশ্বকাপের মোট ৪টি ম্যাচ এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমাদের চোখ নিশ্চিতভাবেই তাকিয়ে থাকবে ১১ই জুনের ম্যাচটির দিকে, ব্রিস্টলে যে সেদিন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ!

ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড - ব্রিস্টল
ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড – ব্রিস্টল

শফিউল ইসলাম যেন ঈগল পাখির মতন ডানা মেলে উড়াল দিতে চাচ্ছেন। রুবেল হোসেন তো উঠেই গিয়েছেন শূন্যে। ওদিকে আবছা দেখা যাচ্ছে স্ট্যাম্পের কাছে কারা যেন ছুটে গিয়েছেন, স্মারক নিতে হবে না? মাশরাফি বিন মর্তুজাও আছেন আশেপাশে কোথাও। বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন হিসেবে তিনি এখন হয়ত নিজেকে কিংবদন্তির উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন কিন্তু আমরা বলছি ২০১০ সালের কথা, এখনো মাশরাফির পায়ে সপ্তম অপারেশনটা হয় নি। তবে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতন যখন ইংল্যান্ডকে হারাল, ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের সাথে সাথে সেই ম্যাচেও কিন্তু ক্যাপ্টেন ছিলেন এই মাশরাফি-ই! খেলা কোন মাঠে হয়েছিল? এই ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ডে!

শফিউল ইসলাম
শফিউল ইসলাম যেন ঈগল পাখির মতন ডানা মেলে উড়াল দিতে চাচ্ছেন – ২০১০ সালে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত হারানোর পর

ইংল্যান্ডের আরো অনেক স্টেডিয়ামের মতই এই স্টেডিয়ামটিও শতবর্ষ পুরানো। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টেডিয়ামটি নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনো ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব গ্লোস্টারশায়ারের হোম গ্রাউন্ড। এর ধারণক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার এবং ইংল্যান্ডের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি মাঠ হিসেবে এটি সুপরিচিত। বিখ্যাত অনেক ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত টেস্টই এই মাঠে বেশি খেলা হত। হয়ত তাই অন্যান্য যেকোন কাউন্টি মাঠের চাইতে এই মাঠের বাউন্ডারি অনেক বড়।

২০১৯ বিশ্বকাপের মোট ৪টি ম্যাচ এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমাদের চোখ নিশ্চিতভাবেই তাকিয়ে থাকবে ১১ই জুনের ম্যাচটির দিকে, ব্রিস্টলে যে সেদিন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ!

এজবাস্টন – বার্মিংহাম

নানা কারণে বিখ্যাত এই এজবাস্টন বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত কোন সুখস্মৃতি উপহার দিতে পারেনি।

এজবাস্টন - বার্মিংহাম
এজবাস্টন – বার্মিংহাম

লন্ডনের পরে বার্মিংহাম হল ইংল্যান্ডের সবচেয়ে জনবহুল শহর। এজবাস্টন স্টেডিয়ামটি বার্মিংহামেই অবস্থিত। ১৮৮২ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার। ইংলিশ কাউন্টি টিম ওয়ারউইকশায়ারের হোম গ্রাউন্ড এটি। এই মাঠে প্রথম ওডিআই খেলা হয় ১৯৭২ সালে, আর প্রথম টেস্ট প্রায়  ১২০ বছর আগে, ১৯০২ সালে।

এই এজবাস্টন আসলেই একটি দৃষ্টিনন্দন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেডিয়াম। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেনের “গাইড টু ক্রিকেট ” ১৯৯২ সালে এটিকে লর্ডসের পর সবচেয়ে প্রভাবশালী মাঠ হিসেবে মন্তব্য করে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের জন্য পয়া এই ভেন্যুতে তারা সবচাইতে বেশি পায় সমর্থকদের আকুন্ঠ সমর্থন। ইংল্যান্ড দলের প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যালেক স্টুয়ার্টের মতে দর্শক যেন মাঠে দ্বাদশ খেলোয়ার হিসেবেই উপস্থিত থাকে এখানে!

নানা কারণে বিখ্যাত এই এজবাস্টন অবশ্য বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত তেমন সুখস্মৃতি উপহার দিতে পারেনি। যে ফরম্যাটই হোক না কেন, সঙ্গী হয়েছে হার। শেষ ম্যাচটি তো আরো ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা। মাত্রই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশকে একটানে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল ভারত, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭ এর সেমিতে। এবার কি অন্য কিছু হবে? না পুনরাবৃত্তি হবে শেষ ম্যাচের? জুলাই ২, ২০১৯ এ, বিশ্বকাপের ৪০ তম ম্যাচে যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেই ইন্ডিয়াই!

লর্ডস – লন্ডন

তামিম ইকবালের নাম আছে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। যেখানে নেই গাভাস্কার, টেন্ডুলকার, লারা বা পন্টিং এর মত লিজেন্ডদের নামও!

লর্ডস - লন্ডন
লর্ডসের বিখ্যাত মিডিয়া সেন্টার

ক্রিকেট ফলো করেন অথচ লর্ডসের নাম জানেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। এ যে পৃথিবীর “হোম অফ ক্রিকেট”! ১৮১৪ সালে স্থাপিত, বয়স ছাড়িয়েছে ২০০, বিনা তর্কে ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরাতন ভেন্যু এই লর্ডস। বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ক্রীড়া জাদুঘর রয়েছে এই লর্ডসে। আর রয়েছে প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্ন,  অনার্স বোর্ড।

লর্ডসের কথা উঠলে আপনার মনে কী আসে জানিনা তবে আমার মনে আসে তামিম ইকবালের সেই সেঞ্চুরি আর কালজয়ী উদযাপন – লিখে রাখ আমার নাম! আগের ইনিংসেই করেছিলেন ফিফটি, দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ৫০ রানের জন্য অনার্স বোর্ড নেই কেন? জবাব পেয়েছিলেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে উঠতে হলে ১০০ই করতে হবে তোমাকে বাছা! সদ্য বিশ পেরুনো তামিম নিলেন চ্যালেঞ্জ, খেললেন ১০০ বলে ১০৩ রানের অনবদ্য ইনিংস। তার নাম উঠল লর্ডসের অনার্স বোর্ডে যেখানে নেই গাভাস্কার, টেন্ডুলকার, লারা বা পন্টিং এর মত লিজেন্ডদের নামও! তামিম অনেকদিন ধরেই সেই তামিম নেই, বয়সের সাথে সাথে হয়েছেন স্থিতধী। কিন্তু দরকারে যে তিনি কতটা বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারেন তা মনে করতে গত বিপিএল-এর ফাইনালই যথেষ্ট! লর্ডসে বাংলাদেশ লড়বে ৫ই জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে। আপনার কী মনে হয়? পাকিস্তানকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ? অথবা শেষটা রাঙাতে পারবে টাইগারেরা?

কি, আমাকে হতাশাবাদী মনে হচ্ছে? ভাবছেন ৫ তারিখে শেষ ম্যাচ হয় কিভাবে? বাংলাদেশ কি এতই ফেলনা যে তাকে গোনাতেই ধরছে না, ৫ই জুলাইয়ের ম্যাচ “শেষ ম্যাচ” বানিয়ে দিয়েছে? লেখক কি ভুলে গেল এরপরে আছে সেমিফাইনাল আর ফাইনাল?

না, একদম ভুলিনি। বরং খুব ভালভাবেই জানি, এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটা এই লর্ডসেই। শেষটা রাঙাতে হলে যে টাইগারদের শেষ ম্যাচটা খেলতেই হবে। আর কে না জানে যে “ফাইনাল” ম্যাচ মানেই শেষ ম্যাচ!! অনেক অনেক শুভকামনা টাইগারস!

শেষের আগে

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এ বাংলাদেশ খেলবে এমন ৫টি ভেন্যু নিয়ে ছিল এই আমাদের গল্প। কেমন লাগলো আপনার? মন্তব্যের ঘরে জানাতে ভুলবেন না। চাইলে নিচের ছবিটিও নামিয়ে রাখতে পারেন, বিস্তারিত বলা আছে কবে কোথায় কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ Bangladesh Fixture
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফিক্সচার

যে কোন মন্তব্য, বিশেষ করে কোন তথ্যগত ত্রুটি সংক্রান্ত কোন মন্তব্য থাকলে তা কমেন্ট সেকশনে জানানোর অনুরোধ থাকল। আর বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন আমাদের ব্লগে। আপনার সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!

সংযুক্তিঃ তথ্য এবং ছবির জন্য ধন্যবাদ – গুগল, উইকিপিডিয়া, ক্রিকইনফো, ক্রিকবাজ

6 Comments

  1. Sadiq Ahmad

    অনেক তথ্যবহুল এবং প্রাঞ্জল পোস্ট! সাথে বাঙালিসুলভ আবেগ লেখাকে করেছে আরও প্রাণবন্ত। ধন্যবাদ লেখককে এত চমৎকার একটি আর্টিকেল উপহার দেয়ার জন্য।

    শুভকামনা টাইগার্স!🇧🇩

  2. Mainul Islam Rahat

    অসাধারণ লেখা, তথ্যবহুল, সাকিবের ডাক নাম যে ফয়সাল সেটা এই লেখায় জানলাম। কার্ডিফের নিউজিল্যান্ড বধের অংশ পড়তে যেয়ে গুজবাম্প হল। লেখককে ধন্যবাদ

  3. লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানলাম।। ভাইটার জন্য দোয়া।। বাংলাদেশ প্রত্যাশায় চেয়ে ভালো করবে বিশ্বকাপে।। শুভকামনা প্রিয় দলের জন্য।

  4. অসংখ্য ধন্যবাদ মিস্টার সাদিক। লেখাটি আপনার ভাল লাগলেই প্রচেষ্টা সার্থক।

  5. লেখাটি কিছুটা হলেও আপনার কাজে এসেছে জেনে ভাল লাগলো মিস্টার রাহাত।

  6. আমরাও চাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাদের সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করুক। অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Write A Comment