Reading Time: 5 minutes

যত ছোটই হোক না কেন, নিয়মনীতি এবং নকশা মাথায় রেখে যে কোন কিছু পরিকল্পনা বা প্ল্যানিং করা সবসময়ই কঠিন। আর বড় বা জটিল কোন প্ল্যানের বিষয়ে তো কথাই নেই, প্ল্যান করে সে মোতাবেক কাজ করতে গেলে হতে হয় গলদঘর্ম! তাই, বিষয়টা যখন আপনার বিজনেস বা অফিস ফ্লোরের জন্য অফিসস্পেস প্ল্যানিং তখন তাকে সিরিয়াসলি না নিয়ে উপায় নেই। সম্মক জ্ঞান, বিষয়াদি সম্পর্কে তথ্যাবলী, ডেডিকেশন এবং ভবিষ্যদৃষ্টি, সব কিছুকে মাথায় রেখেই করতে হয় অফিসস্পেস প্ল্যানিং । আর তাই, পুরো বিষয়টি যতই জটিল হোক না কেন, সব খুঁটিনাটি বিষয়ে লক্ষ্য রেখে অফিস কেমন হবে সেই ডিজাইন করাটা জরুরী। কেননা, ছোট্ট একটি ভুলের কারণেই ভেস্তে যেতে পারে আপনার অফিসস্পেস প্ল্যানিং এর পুরোটাই! 

সৌভাগ্যবশত, প্রথম থেকে যদি কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর রেখে প্ল্যান করা হয়, তাহলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো যায় খুব সহজেই। এমন অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭টি আইডিয়া নিয়েই আজকের আয়োজন যা অবশ্যই আপনার কাজে লাগবে অফিস প্ল্যানিং এর সময়। 

আরামদায়ক এবং কার্যকর অফিস

chairs in office space

অফিস বা ওয়ার্কপ্লেস যদি হয় আরামদায়ক, তাতে কাজের গতি বেড়ে যায়। তাই দেখা যায় অনেকেই বলেন,  ওয়ার্কপ্লেস বা অফিস কমফোর্টেবল হলে তার কর্মক্ষমতা বেড়ে যায় অনেকাংশেই। তবে এই আরাম বা কমফোর্ট খুবই বৈষয়িক একটি জিনিস। সবাই হয়ত একই জিনিসে আরাম পাবেন না, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের চাহিদা থাকে বিভিন্ন। এজন্যই অফিসস্পেস প্ল্যানিং করার সময় মাথায় রাখতে হবে একটি আরামদায়ক এবং একই সাথে কার্যকর অফিস বানানোর বিষয়টি। বলা যতটা সহজ করা ঠিক ততটাই কঠিন। কারণ অফিসভেদে কার্যকরণ এবং কমফোর্টের মাপকাঠি হবে আলাদা। এমনকি একই অফিসে আলাদা বিভাগের পরিস্থিতিতে থাকতে পারে ভিন্নতা। কিন্তু এত চ্যালেঞ্জের মাঝেও আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যেন অফিসে বিরাজ করে কাজ করার জন্য একটি ভাল পরিবেশ এবং অফিসের কর্মচারীরা তাদের সর্বোচ্চটা দিতে পারেন।

খোলামেলা নাকি বদ্ধ ডিজাইন?

Open office space

এরপরেই আপনার নজর দেয়া উচিত অফিসের লে-আউট বা নকশা কেমন হবে সেইদিকটায়। আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায় আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টের জন্য আলাদা আলাদা অংশ (সেগমেন্ট) করা অফিস। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন অফিসই দরকার কিন্তু ইদানিং সময়ে অনেকেই ঝুঁকছেন আধুনিক “ওপেনস্পেস” অফিস ডিজাইনের দিকে। যারা এমন ওপেন স্পেস পছন্দ করেন তাদের যুক্তি থাকে, এমন খোলামেলা পরিবেশে অফিসে কাজ করা সবার মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়ে, একই সাথে বারে কাজের গতি। যা অনেক সময় সত্যি কিন্তু হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা আবার দেখিয়েছে, ওপেনস্পেস যে শুধু কর্মদক্ষতা কমায় তাই না, বরং এতে অপ্রয়োজনীয় খরচও বাড়ে অনেক বেশি। অর্থ্যাৎ পক্ষে বিপক্ষে মত থাকবেই, আপনার নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে কোন লেআউট আপনার অফিসের জন্য বেশি মানানসই।

সঠিক স্থানে সঠিক টিমের প্লেইসমেন্ট

Compass

লেআউট কেমন হবে তার সাথে সাথে অফিসস্পেস প্ল্যানিং এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল অফিসের বিভিন্ন টিমকে তাদের উপযোগিতার হিসাবে সাজানো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই একাধিক অংশ নিয়ে গঠিত, এবং বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কাজও আলাদা। এবং তাদের কাজের ধরণের উপর নির্ভর করবে তাদের অফিসের পরিবেশ কেমন হবে সেটি। তাই প্ল্যানিং এর সময়েই ঠিক করে ফেলতে হবে কোন টিমকে আপনি কোথায় স্থান দেবেন।

উদাহরণ হিসাবে কোন সেলস টিমের কথাই ধরুন। আপনার প্রোডাক্ট যদি এমন কিছু হয় যার যদি গ্রাহকের সাথে সামনাসামনি দেখা করা প্রয়োজন এবং তা আপনার সেলস টিম দেখভাল করে তাহলে, সেলস টিমের অনেককেই দেখা যাবে বেশিরভাগ সময় অফিসের বাইরে কাটাচ্ছেন। তাদের অহরহ অফিসে আসতে হচ্ছে বা অফিস থেকে বের হতে হচ্ছে। অন্যদিকে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং টিম অথবা অনলাইন / টেলিফোন কাস্টমার সার্ভিস টিমের মাঠ পর্যায়ে বলতে গেলে কোন কাজই নেই। তাদের বেশিরভাগ সময় অফিসেই কাটাতে হয়। তাই সেলস বা ফিল্ডে কাজ করতে হয় এমন যে কোন টিমের অবস্থান হওয়া উচিত বাইরের দিকে যেখান থেকে খুব সহজে, অন্য কারো অসুবিধা না করে বের আসা-যাওয়া করা যায়। আর যাদের বেশিরভাগ সময় অফিসেই কাটাতে হয় তাদের তুলনামূলক ভেতর দিকে থাকলেও অসুবিধা নেই। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনার অফিস ডিজাইন ও নীলনকশা তৈরি করুন।

রঙের সঠিক ব্যবহার

a lamp in a blue room

বিভিন্ন রঙ যে মানুষের মনের উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে তা অনেক গবেষণায় প্রমাণিত। সবুজ রঙ সবচেয়ে আরামদায়ক ও সহজ, তাই একে প্রশান্তির প্রতীক বললে ভুল হবে না। হলুদ রঙ আমাদেরকে উজ্জীবিত করে তোলে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, তাই সৃষ্টিশীল কাজ যেখানে হয় সেখানে হলুদ রঙ ব্যবহার করা ভাল। অন্যদিকে লাল রঙ মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম, তাই যেসব কাছে অধীক মনোযোগ প্রয়োজন সেখানে লাল রঙের ব্যবহার নিয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে। মোদ্দাকথা, আপনার অফিসস্পেস প্ল্যানিং করতে কিছুটা সময় ব্যয় করুন রঙের ব্যবহার নিয়ে। আপনার ব্র্যান্ড ইমেজের সাথে যায় এমন কোন রঙ ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ভিন্ন রঙের ব্যবহারে অফিসে আনতে পারেন বৈচিত্র্য। অর্থ্যাৎ, বাহারি রঙের ব্যবহারে আকর্ষণীয় করে তুলুন আপনার অফিসটি। 

প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম আলোর যথাযথ ব্যবহার 

office lobby with large windows

কর্মক্ষেত্র থেকে সর্বোচ্চটি আশা করলে সেখানে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে সঠিক আলোর ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম আলোর যথাযথ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারলে তা যেমন অফিসে কাজ করা লোকেদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তেমনি অফিসের পরিবেশও নষ্ট হয়ে যায়। তাই অফিসস্পেস প্ল্যানিং করতে গেলে বিশেষ দৃষ্টি রাখুন আপনার অফিস কতটুকু আলোকিত সেদিকেও। তবে অনেকেই অফিসের আলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে শুধুমাত্র কয়েকটি লাইট লাগানোকেই মনে করেন। কিন্তু রঙের মতই, মানুষের মন প্রফুল্ল রাখতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোও। প্রকৃতপক্ষে সূর্য্যের আলোর অভাবে আপনার অফিস হয়ে উঠতে পারে নিষ্প্রাণ যা কখনোই কাম্য নয়। 

অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

Bproperty's Campaign to Raise Fire Safety Awareness in Real Estate

সম্প্রতি দেশে বিভিন্ন অগ্নিকান্ডের ঘটনা আমাদেরকে ছুঁয়ে গিয়েছে। সবাই এখন ভবনের ফায়ার সেফটি নিয়ে সচেতন হয়ে উঠছে যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।  তাই আপনার অফিস নিরাপদ ও ঝুকিমুক্ত করতে মাথায় রাখুন কিছু বিষয়। বিশেষ করে অফিসের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপকযন্ত্র, ফায়ার অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখুন। একই সাথে নিশ্চিত করুন জরুরী সময়ে যেন মানুষ দ্রুত বের হয়ে যেতে পারে সে বিষয়টিও। জরুরী বহির্গমন পথের সাথে সাথে নিশ্চিত করুন মানুষ বের হয়ে কোথায় নিরাপদে আশ্রয় নেবে সে জায়গাটিও।  

ভবিষ্যতের ভাবনা মাথায় রাখা

rising stats

সবশেষে, পরিকল্পনার মূল কথাই হল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখা। যে কোন উদ্যোক্তার জন্য ব্যবসার প্রসারই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। কিন্তু অফিসস্পেস বদলে ফেলা কিন্তু চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। তাই অফিসস্পেসের প্ল্যান করার সময়েই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ভবিষ্যতের কথা। ভাবতে হবে আগামী পাঁচ বছরে আপনার কোম্পানী আসলে কতটা বড় হয়ে উঠবে? তখন কি এই অফিস তার বর্ধিত কর্মচারীদের জায়গা দিতে পারবে? নাকি নতুন অফিস খুঁজতে হবে? অফিসস্পেস প্ল্যানিং করার আগেই এসব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকা উচিত।   

তো এই ছিল অফিস প্ল্যানিং নিয়ে আমাদের মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি টিপস। আপনার অফিস প্ল্যান করার সময় এটি কতটা কাজে এসেছে জানিয়ে দিন আমাদের। এই লিস্টে বাদই বা পড়েছে কোন দিকগুলো? তাও জানাতে ভুলবেন না। আর নতুন অফিস খুঁজে পাওয়া যত কঠিনই হোক না কেন তা অসম্ভব নয়। কারণ আপনার জন্য ঢাকায় অফিস খুঁজে দিতে আছে  বিপ্রপার্টি ডট কম। দেরী না করে এখনই বিপ্রপার্টির সেবা উপভোগ করুন!

Comments are closed.