Reading Time: 4 minutes

ভূত! কেউ বলবে এসব ছাইপাঁশ আবার কেউ বলবে সত্যি। এইসব নিজে না দেখলে কখনও বিশ্বাস করা যায় না। ভূত প্রেত নিয়ে বিজ্ঞানেও রয়েছে কড়া যুক্তি তর্ক। বিজ্ঞানীরা ভূতের অস্তিত্ব মানতে নারাজ হলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু তার উল্টো। আগে মনে হতো গ্রামগঞ্জের মানুষ এইসব বেশি মানে কিন্তু না! এখন যেন ঢাকার ঠিকানা পেয়েছে রাজ্যের যত ভূতরা। আছে এমন কিছু ভূতের বাড়ির গল্প যেগুলো শুনে ভয় পেতে পারেন আপনিও। গল্প শুনে আপনার মনে হতেই পারে আপনার ঘরেও আছে নাকি ভূত প্রেত? এমন ভূতের ভয় কিন্তু সত্যি আছে কিছু এলাকায়। যেখানে নাকি ভূতের বাড়ি ভেবে ছাড়ছে বাসা আবার কেউ কেউ ছাড়ছে বিল্ডিং। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক, ঢাকার শহরের সারা জাগানো কয়েকটি ভূতের বাড়ির গল্প। 

ধানমন্ডি ২৭ নং 

অন্ধকার ঘর
গা ছমছমে সময়

শহরের অন্যতম জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা ধানমন্ডি। যেখানে কিনা অ্যাপার্টমেন্ট খালি পাওয়া যায় না। এত মানুষের আনাগোনার মধ্যে একটি অ্যাপার্টমেন্ট এমন আছে যেখানে সব চেয়ে কম ভাড়ায় টুলেট ঝুলিয়েও নাকি ভাড়াটিয়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। লোখমুখে জানা যায়, একজন মহিলার আত্মহত্যার পর থেকে কোন ভাড়াটিয়া সেখানে উঠলেই ঘটতে থাকে বিচিত্র সব ঘটনা। একটি ঘটনা এমনও ছিল যা নাকি এতটাই ভয়ংকর ছিল, রাতারাতি বাসা বদল করতে বাধ্য হয়েছিল সেই ভাড়াটিয়ার। 

আহমেদ পরিবার (ছদ্দনাম) ৫ মাসের বাচ্চা নিয়ে উঠেছিলেন ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের দিকে অক্সফোর্ড স্কুলটির কাছাকাছি তিন তলার একটি খালি অ্যাপার্টমেন্টে। এই এলাকায় বাসা ভাড়ায় যেখানে ৫০০ টাকার ছাড় পাওয়া যায় না কিন্তু, অর্ধেক ভাড়ায় এত সুন্দর খোলামেলা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়ে, অল্প সময়ের ভেতরেই সপরিবারে উঠে পরেন এই বাসায়। এমন নয় যে এই বাড়ি সম্বন্ধে  তিনি জানতেন না। তিনি ভেবেছেন এগুলো কেবলই গুজব।  

অ্যাপার্টমেন্টে  উঠার বেশ কিছুদিন পর থেকেই শুরু হতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। কালো ছায়া দেখা কিংবা এক জায়গায় জিনিস অন্য জায়গায় খুঁজে পাওয়ার মত ছোট ঘটনাগুলো ছিল নিত্যদিনের। কিন্তু একদিন এমন কিছু ঘটে গেল যা আসলেই মেনে নেওয়ার মত নয়। 

পুরো বাসায় থাকতেন মোটে তিন জন মানুষ। আহমেদ সাহেব, তার স্ত্রী আর তাদের ৫ মাসের বাচ্চা। আহমেদ সাহেব নামাজ কালাম পড়তেন নিয়মিত। দেরি করে আসায় প্রায়ই ইশার নামাজ  কাজা হয়ে যায়। এমনই একদিন রাত ১১ টার দিকে নামাজ পড়বেন বলে শোবার ঘরের পাশের ঘরে গিয়েছিলেন আহমেদ সাহেব। নিরিবিলি নামাজ পড়বেন বলে ঘরের বাতি নিভিয়ে ঘরের মাঝখানে জায়নামাজ বিছিয়ে বসলেন। অন্যঘরের আলো যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে সুন্দরভাবে নামাজ  আদায় করা যাবে। 

ঘরে হালকা অন্ধকার। পাশের ঘরেই স্ত্রী আর বাচ্চা খেলছে, সেই শব্দ হালকা ভেসে আসছে। শান্ত মনে চোখ বন্ধ করে শুরু করলেন নামাজ । নামাজের শেষে তিনি যখন সিজদাহ থেকে উঠে দুয়া পড়বেন বলে বসলেন কিছু একটা অনুভব করতে লাগলেন! তিনি আর ঘরে একা নন। তার পিঠ ঠেকেছিল দেয়ালে কিন্তু সে তো ঘরের মাঝে নামাজ পরছিলেন! তার পিঠ কেন দেয়ালে ঠেকবে। এমনটা ভাবতেই তিনি চোখ খুলে ফেললেন আর অনুভব করলেন তার কানের কাছে কেউ যেন বিড়বিড় করে কি বলছে! পেছন ফেরে নাকি তাকাবার শক্তি ছিল না তার! এরপর আর কিছু জানা যায়নি…  

মিরপুর ভূতের বাড়ি 

অন্ধকারে একজন মানুষ
কি এমন হয়েছিল সেদিন ?

দশ বারো বছর আগে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যে ঘটনাটি সেটি হল দুই বোন রিতা আর মিতার গৃহবন্দী হয়ে থাকার। শুধুই কি তারা বাসা থেকে বের হতেন না? নাকি ছিল আরও অন্যকিছু? কি এমন হয়েছিল সে বাসায় যার কারণে ভূতের বাড়ির তকমা লেগেছিল?

মিরপুর ছয় নম্বর সেকশনের সি ব্লকের নয় নম্বর রোডের এক নম্বর বাড়ি। দুই পাশে রাস্তা। আর দুই পাশে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিলেন প্রকৌশলী মিতা ও তার চিকিৎসক বোন রীতা। এখন আর ওই বাড়িতে থাকে না তারা। জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত পড়ে আছে কোটি টাকার বাড়িটি। কিন্তু এক সময় এই বাড়িতেই নাকি ঘটত নানা ভুতুড়ে ঘটনা। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই নাকি বৃদ্ধ মাকে নিয়েই এই বাসায় দিন রাত পার করতেন রিতা আর মিতা। বাসা থেকে নাকি বের হতেন না তারা। 

একদিন অদ্ভুত কিছু নজরে পরে প্রতিবেশীদের। তারা বলেন, একদিন মাঝরাতের দিকে নাকি এই দুই বোনকে মাটি খুঁড়তে দেখা যায়। দেখে যেন মনে হয়েছিল কোন কবর খুঁড়ছেন তারা। এলাকাবাসী সাথে সাথে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ আসার পর জানা গেল, তাদের মা মারা গিয়েছেন এবং বৃদ্ধ মাকে তারা নিজেই কবর দিতে চেয়েছিলেন বলে মাটি খুঁড়ছিলেন। অনেকে বলেন সেই থেকে নাকি তাদের বাড়িতে ঘটতে শুরু করে নানাবিধ ভুতুড়ে ঘটনা। রিতা মিতা অলৌকিক উপায়ে তাদের মাকে ফিরে পেতে নাকি করে যাচ্ছিল নানা জাদু আর তপস্যা।   অনেকে এটাও বলে মাঝরাতে নাকি রিতা-মিতার মাকেও হেটে বেড়াতে দেখা যায়। যে কবরটা খোঁড়া হচ্ছিল সে কবরের আশেপাশে নাকি তাকে দেখাও গিয়েছে অনেক। 

রিতা-মিতাও নাকি কখনও অস্বীকার করেনি তাদের মায়ের উপস্থিতি। একবার এমন ঘটেছিল, এই ভুতুড়ে বাড়ির পাশের বিল্ডিং এ থাকা এক বাসিন্দা এমন কিছু দেখেছিলেন যা সারা এলাকায় সৃষ্টি করেছিল ভূতের আতঙ্ক। রাত ছিল নাকি ৩ টা, তিনি বারান্দায় গিয়েছিলেন বাতাস খেতে, তখনই দেখতে পারেন কবরের জন্য করে রাখা গর্তে কি যেন বসে আছে কালো কাপড় জড়ানো… 

লালবাগ কেল্লা

দুটি ঘোড়া
সেই ভয় এখনো কাটেনি

এটাও কোন ভূতের বাড়ির থেকে কম কিছু নয়। মুঘল শাসক আওরঙ্গজেবের ছেলে সুবাহদার মোহাম্মদ আজম তার মেয়ে পরী বিবির মৃত্যুর পর এই কেল্লা ছেড়ে চলে যান। আর পেছনে ফেলে যান ছোট্ট মেয়েটির আত্মা বা ভূতকে। এখনো নিঝুম রাতে পূর্ণ চাঁদ উঠলে কেল্লায় পরী বিবির হাসি আর ছোটাছুটির আওয়াজ পাওয়া যায়। কেবল তাই নয়, প্রায়ই রাত তিনটার দিকে কিছু মানুষকে কেল্লার ভেতরে নামাজ পড়তে শোনা যায়। যদিও আজ অব্দি কাউকে দেখা যায়নি। কিন্তু এলাকার মুরব্বীরা বলেছেন তারা প্রায়ই কেল্লার ভেতরে মানুষ নামাজ পড়ছেন এমন কিছু অনুভব করতে পারতেন। কিন্তু কেউই সাহস করে ঘর থেকে বেড় হয়ে দেখতে যাননি। এমনটা ভয় ছিল সবার ভেতর। ব্যাপারটা কেবল এখানেই শেষ নয়। 

লালবাগ কেল্লার আশে পাশে থাকেন এমন অনেকেই পাওয়া যাবে যারা এমন কিছু ঘটনা জানেন যা শুনলে আপনার গায়ে কাটা দিয়ে উঠবে। এলাকার পুরানো বাসিন্দা মোবারক সাহেব (ছদ্দনাম) নাকি একদিন এমন একজনকে দেখেছেন যে কিনা মাথা কাটা অবস্থায় ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরছিলেন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য অনেকেই দেখেছে। এমন গল্পের যেন কোন শেষ নেই । 

ভূতের বাড়ির গল্প সত্য-মিথ্যা তা যাচাই করতে যাওয়াও যেন আর এক গল্পের জন্ম দেওয়া। সময়ের সাথে এই গল্পগুলো এতটাই ভীতি তৈরি করেছে মানুষের হৃদয়ে তা সত্যি অবিশ্বাস্য। আপনার কি এমন কিছু গল্প আছে? যা আমদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছেন তাহলে এখনই কমেন্ট করুন। কিংবা এখানের কোন গল্প কি মিলে গেছে আপনার শোনা গল্পের সাথে সেটাও জানাতে ভুলবেন না যেন! 

“লোকমুখে শোনা গল্প, যেগুলো সত্যি বলে যেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি তেমনি মিথ্যে বলেও কিছু পাওয়া যায়নি” 

Write A Comment