Reading Time: 4 minutes

যেকোন ভাড়া বাসা প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা বোধয় সবার একইরকম।  বেশীরভাগ ভাড়া বাসাই থাকে পূর্ব ব্যবহৃত তাই, অচিরেই আপনাকে স্বাগতম জানায়, ঘরের শূন্য দেয়াল, হেলে পরা জানালার পাল্লা কিংবা ঘরের হলদে হয়ে যাওয়া কোণা। এই সবকিছুই যেন বেশ স্বাভাবিক এবং নিত্যদিনের একটা ঘটনা প্রতিটা নতুন ভাড়াটিয়ার কাছে। আমার কাছেও এর ব্যাতিক্রম ছিল না, প্রথম দেখায় আমার কাছে আমার ভাড়া বাসা নিজের বলে মনেই হয়নি! এমন পুরনো একটি বাসা কি করে আমার হয়? কিন্তু, হোম ডেকোর বা ইন্টেরিয়রের জাদুটাই সেখানে। জাদুর ছোয়ায় পুরনো ঘর হয়ে ওঠে নতুন আর ভাড়া বাসাও হয়ে ওঠে একদম নিজের। 

অনেকে আছে বাড়ির মালিক বা ভাড়া বাসার নিয়ম কানুন না জেনেই বাসা ভাড়া নিয়ে নিচ্ছে তাই, ভাড়া বাসা সম্বন্ধে আগে জানতে হবে। তাই, ভাড়া বাসা সাজানো এর বেলায়ও দেখা দেয় নানা সমস্যা! অনেক বাড়িওয়ালা আছেন যারা দেয়ালে “তারকাঁটা” বিঁধাতে দেন না। এমন অবস্থাতে ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া বাসা নিজের মত করে সাজিয়ে নিতেও দেখা যায় নানা সমস্যা। আর যদি বাসাটি হয়ে থাকে ছোট, সেক্ষেত্রে ছোট বাসা সাজাতে হবে ভেবে চিন্তে।  শুধু ছোট বাসা বলে কথা নয় ভাড়া বাসা নেবার আগেই আপনাকে ভাবতে হবে অনেক কিছু। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে জেনে তবেই বাসা বদলানো উচিত। যে বাসাটিতে আপনি থাকবেন সেটা নিয়ে সবকিছু জানা যেমন একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনার দায়িত্ব তেমনি একজন বাড়ির মালিক হিসেবে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার নিয়ম কানুন সম্বন্ধে সঠিক তথ্য জানাও বাড়ির মালিকের একান্তই কর্তব্য। তাই যারা ভাড়া বাসায় থাকেন কিংবা ভাড়া বাসায় উঠতে যাচ্ছেন তাদের জন্য, আজকের এই ব্লগ। কিভাবে ভাড়া বাসা সাজানো যায় তা নিয়ে জানুন।  

অপছন্দের সবকিছু সরিয়ে ফেলুন 

দরজার লক
যেটাই আপনার পছন্দ নয় সেগুলো দ্রুত বদলে নেওয়া

এমন হতেই পারে ঘরের দরজাগুলো আপনার ভালো লাগেনি কিংবা অনিরাপদ। এক্ষেত্রে একজন ভাড়াটিয়া এবং বাসার ভবিষ্যৎ বাসিন্দা হিসেবে নিজের আবাসস্থলকে আরও নিরাপদ করতে আপনাকে নিতে হবে সর্বোচ্চ নিরাপদ ব্যবস্থা, হতে তা দরজা পরিবর্তন করে কিংবা ঘরের ভেতর সিসি টিভি ক্যামেরা লাগিয়ে। শুধু দরজাই নয় বাসার বাথরুম ফিটিংস থেকে শুরু করে কিচেন কেবিনেট যেটাই আপনার পছন্দ নয় সেগুলো দ্রুত বদলে নেওয়া। কিন্তু, অবশ্যই বাড়ি মালিকের অনুমতি নিতে ভুলবেন না। নয়তো বা হিতে বিপরীত হতে পারে। বাড়ি মালিকের অনুমতি থাকলে নিজের মত করে বাসা সংস্কারও করে নিতে পারেন 

বেয়ার ওয়াল বা শূন্য দেয়াল

শূন্য দেয়াল
চমৎকার কোন স্টিকার লাগিয়ে নিন

বেশীরভাগ ভাড়া বাসায় শূন্য দেয়াল থাকে। আপনি যদি, মিনিমাল বা সিম্পল ডেকোর ভালোবাসেন সেক্ষেত্রে এই দেয়ালগুলো শূন্যই থাকতে দিন নয়তোবা চমৎকার কোন দেয়াল মুরাল বা স্টিকার লাগিয়ে নিন।  এই ওয়াল মুরাল বা স্টিকারগুলো বেশ সুন্দর করেই দেয়ালগুলোকে, রাঙিয়ে তোলে। অনেকেই আছি যারা অনেক স্ট্রিট আর্টগুলো পছন্দ করি। আবার ঘরের ভেতরেও কিন্তু অ্যাকসেন্ট ওয়াল তৈরি করা যায়। 

পোস্টার ব্যবহার করুন

দেয়ালে পোষ্টার
ঘরের ভেতরের পরিবেশটাই একদম বদলে যায়

কিছু বাড়িওয়ালা আছে যারা দেয়ালে তাড়কাটা বিদ্ধ করা সহ্য করতে পারেন এমন সৌভাগ্যবান হলে অবশ্যই দেয়ালে পোস্টার ঝুলাতে পারেন। ছোট জায়গায় দেয়ালে ছোট পোস্টার বড় দেয়ালে বড় পোস্টার। এখন তো সবকিছু আরও সহজ হয়েছে, ক্যানভাসে এঁকে কিংবা পছন্দের কোন ছবি প্রিন্ট করে নিলেই দেয়ালে সুন্দর করে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়। এতে ঘরের ভেতরের পরিবেশটাই একদম বদলে যায়। প্রকৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, মডার্ন আর্ট বা পছন্দের যেকোন কিছু বেঁছে নিতে পারেন দেয়ালের জন্য।  ভাড়া বাসা সাজানো কিন্তু এতটাও কঠিন নয় যতটা আমি আগে ভেবেছিলাম।

জানালার দৃশ্য বদলে নিন 

জানালা
জানালার গ্লাসে স্টেইন স্টিকার ব্যবহার করতে পারেন

ভাড়া বাসার এ এক পুরনো সমস্যা। বাসার জানালার মুখে অন্যের বাসার বারান্দা কিংবা দরজা! ঘরের জানালাই খোলা যায় না এমন এক অবস্থা! আর এই সমস্যাকে আপনি ইতিবাচকভাবেই ব্যবহার করতে পারেন চাইলে। কিভাবে? চমৎকার নকশার পর্দা ঝুলিয়ে দিতে পারেন ঘরের সাজে পর্দার মাধুর্য অন্যরকম। আবার জানালার গ্লাসে স্টেইন স্টিকার ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে, এই জানালাগুলো দেখতে আপনার কাছে ভালো লাগবে। চোখে স্বস্তি অনুভব হবে। অনেকটা শান্তি লাগবে। এমনকি পর্দা বা স্টিকার যাই ই ব্যবহার করুণ না কেন তা সাথে সাথে আপনি সরিয়ে নিতে পারছেন তাই এই ভেবে ভয় নেই যে আবার কখনো ব্যবহার করা যাবে না।

সবুজ রাখুন

টবে গাছ
কিন্তু মনে রাখতে হবে “লেস ইজ মোর”

যারা বাগান করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এ এক রাজকীয় সুযোগ। ছোট্ট একটা বাগান  বাসার যেকোন কোণায় মনের মত সাজিয়ে নিলেই হয়ে গেল। কিন্তু মনে রাখতে হবে “লেস ইজ মোর”। সবরকম গাছ রেখে ঘিঞ্জি করবেন না। বেশি গাছ রেখে নিজের জন্য জায়গা বন্ধ করবেন না। পরিমিত গাছ ঘরকে রিলাক্সিং করবে। আপনি চাইলে গাছের টবগুলো বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে দিন। দেখতে সুন্দর দেখাবে এবং ডেকোর আইটেম হিসেবে কাজেও লাগবে। রিলাক্সিং একটা পরিবেশ যখন তৈরি করছেন কেননা ফুলের গাছ দিয়ে তৈরি করুন। ফুলের ছোট ছোট পট ঘরের সিলিং এ ঝুলিয়ে দিন। এতে করে আপনার ভাড়া বাসাও দেখতে ভীষণ রঙিন দেখাবে। 

আমি যত বড় হয়েছি আর বুঝতে শিখেছি ততোই জেনেছি, আমি যেখানে থাকবো বা বসবাস করবো সেখানের ব্যাপক প্রভাব আমার মন এবং মেজাজের উপর পরে। সুতরাং আপনার ভাড়া বাসাটিও তৈরি করে নিতে হবে একদম নিজের স্বাচ্ছন্দ্য মত। এই ব্লগটি পড়ে আপনি ই আমাকে বলুন তো ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনা নাকি ভাড়া করে থাকা সুবিধা? আপনিই আমাকে কমেন্টে জানিয়ে দিন।

Write A Comment