Reading Time: 5 minutes

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে নিজের পছন্দমতো এলাকায়, চাহিদামত বাজেটে ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া যেন বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। তবে শহরের অলিগলি ঘুরে প্রপার্টি কেনাবেচার কাজটি এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে প্রপার্টি কেনাবেচার দারুণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কারণে। আর এ তালিকায় অত্যন্ত দক্ষতা এবং নির্ভরতার সাথে গ্রাহকদের কাছে তাদের চাহিদামত ভেরিফায়েড প্রপার্টি খুঁজে দিতে বিপ্রপার্টি রয়েছে বরাবরের মতোই তালিকার শীর্ষে। বিপ্রপার্টির মাধ্যমে গ্রাহকরা ব্যবহৃত প্রপার্টির পাশাপাশি নির্মাণাধীন প্রপার্টি, ফুল-ফার্নিশড রেডি ফ্ল্যাটও কিনতে পারছেন নিশ্চিন্তে। আর তাই প্রপার্টি কেনার অসংখ্য অপশন থেকে আপনিও যদি ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার কথা ভেবে থাকেন, তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চলুন জেনে নেই ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। 

ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা সমূহ 

উন্নত জীবনযাপনের সন্ধানে প্রতিনিয়তই ঢাকা শহরে বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে আগ্রহী মানুষের আনাগোনা বাড়ছে লক্ষণীয় মাত্রায়। একদিকে নিত্যনতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে, অন্যদিকে একই সাথে দ্রব্যমূল্য সহ নির্মাণ সামগ্রীর চড়া দাম, সৃষ্টি করছে নানা ধরনের সংকট। আর এমতাবস্থায় অনেকেই ব্যবহৃত ফুল-ফার্নিশড বা সেমি-ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবছেন।

নতুন কোন ফ্ল্যাটে ওঠার সাথে সাথেই সেখানে বসবাসের জন্য প্রধান কিছু আসবাব এবং মেশিনের প্রয়োজন যে কারোরই হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নবদম্পত্তি সহ অনেকেরই হয়তো শুরুতেই প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলোর ব্যবস্থা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। ফ্ল্যাট কিনতে যেহেতু বেশ বড় অংকের বিনিয়োগ করা হয়, তাই ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি আসবাব সহ অন্যান্য জিনিস কিনতে অনেকেই পরবর্তী কয়েক মাস অপেক্ষা করেন এবং ধীরে ধীরে কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন। এক্ষেত্রে ফুল বা সেমি ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। কেননা, এখানে আপনি আগে থেকেই আসবাব সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা পেয়ে যাচ্ছেন আগে থেকেই। 

বাড়তি খরচ কমে যাওয়া

মানি সেভড
ফার্নিচার বানানোর বাড়তি খরচ কমে যাবে

ফার্নিশড ফ্ল্যাটে ওঠার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বেসিক আসবাবপত্র কেনার খরচটা কমে যায়। যদিও ফ্ল্যাট ফুল বা সেমি-ফার্নিশড হলে এর জন্য ফ্ল্যাট কেনার মোট মূল্য কিছুটা হলেও বেড়ে যাবে। তবে নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া বা কেনা যেটাই হোক না কেন, প্রয়োজনীয় আসবাব যেমন- আলমারি, সোফা, কিচেন কেবিনেট, চুলা, ওভেন বা ওয়াশিং মেশিন এর মতো ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস যদি আগে থেকেই ফ্ল্যাটে থাকে, তবে শিফটিং এর ঝামেলাপূর্ণ কাজটি অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়।     

নতুন আসবাব কেনার তাড়া না থাকা

বাসা শিফটিং করা মাত্রই নতুন বাসার জন্য কী কী লাগবে, এর যেন বিশাল এক তালিকা প্রস্তুত হয়ে যায়। একদিকে বাসা বদলের ধকল, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো ছাড়া যেন হচ্ছেই না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নবদম্পতি হওয়ার কারণে আগের ব্যবহৃত কোন আসবাব থাকে না, সেক্ষেত্রে নতুন বাসায় ওঠা মাত্রই একসাথে অনেক কিছু কেনার দরকার পরে, যা হয়তো বাজেটের চেয়েও অনেক বেশি খরচ এর তালিকা হয়ে দাঁড়ায়। আবার অনেক পরিবারে সবাই কর্মজীবী হওয়ার কারণে হয়তো আসবাব কেনার সময়-সুযোগ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা হল ফ্ল্যাটে আগে থেকেই আসবাবের ব্যবস্থা থাকা।  

বাসা গোছানো যায় সহজেই 

ফার্নিশড বাসা গোছানোর কাজটা সেরে নেয়া যায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই

ভাড়া বাসা হোক কিংবা নতুন কেনা ফ্ল্যাট, বাসা শিফটিং এর পর অন্তত ২ মাস সময় লেগে যায় বাসার সব জিনিসপত্র আনপ্যাঙ্কিং করতে কিংবা ঠিকঠাক মতো গোছাতে। পুরনো আসবাব বদলানো, নতুন আসবাব কেনা, ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে পরিবর্তন কিংবা টাকা জমিয়ে পছন্দের জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো; এসব কিছুই যেন পরিকল্পনা এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে নতুন বাসাতে যদি আগে থেকে ফার্নিচার থাকে, তবে বাসা গোছানোর কাজটা দ্রুত সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব হয়।   

ভাড়া বাসার ক্ষেত্রে বেশ উপকারী

ভাড়া বাসায় যদি ফার্নিচারের ব্যবস্থা থাকে, তবে তা যেন জীবনটাকে আরও সহজ করে দেয়। বাসা শিফটিং এর ক্ষেত্রে এক বাসা থেকে আরেক বাসায় ফার্নিচার টেনে নেয়া, সেগুলোর যেন কোন ক্ষতি না হয় তা খেয়াল রাখা, এমনকি শিফটিং বাবদ বেশ বড় অংকের টাকা খরচ হওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোর সম্মুখীন তো হতেই হয়। তবে এসকল বিষয় অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে পারে একটি ফার্নিশড বাসা। এমনকি যাদের চাকরির কারণে কিছুদিন পর পরই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বাসা ভাড়া নিতে হয়, তাদের জন্য ফার্নিশড বাসা পাওয়া যেন সবচেয়ে বড় সুবিধা।  

ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার অসুবিধা সমূহ 

তবে ফার্নিশড বাসা কেনা বা ভাড়া দেয়ার সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও রয়েছে বেশ কিছু। আর তাই ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে, তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। তবে চলুন এবার ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার কী কী অসুবিধা হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারনা নিয়ে নেই।  

ভাড়া বাসার ক্ষেত্রে বাড়তি মূল্য সংযোজন

ফার্নিশড বাসা কেনার সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অন্যতম অসুবিধার মধ্যে রয়েছে বাড়তি মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা। যেহেতু আপনি ফুল বা সেমি ফার্নিশড বাসা ভাড়া নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, ফলে আপনার নিজের যেমন ফার্নিচার কেনার প্রয়োজন পড়বে না, তেমনি বাড়তি এই সুবিধার জন্য বাড়তি কিছু মূল্যও পরিশোধ করা লাগতে পারে। এতে করে মোট ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তবে শুধু ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া না, বরং কেনার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। 

ফার্নিচারের গুণগত অবস্থা ভালো না থাকা 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যেতে পারে, আপনি ফার্নিশড বাসা তো পেলেন, কিন্তু বাসার ফার্নিচার, চুলা কিংবা কেবিনেটের মতো জিনিসগুলো একেবারেই ভালো অবস্থায় নেই। সেক্ষেত্রে ফার্নিশড বাসা নেয়া সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বরং বেশি হবে। অথবা ধরুন ফার্নিশড বাসার কাঠের কোন আসবাবে ঘুণপোকা কিংবা ছারপোকা রয়েছে, এক্ষেত্রে আপনার অন্যান্যও আসবাবও কিন্তু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই এমন অবস্থায় যেন পড়তে না হয়, এজন্য আগেভাগেই ফার্নিশড বাসার ক্ষেত্রে সকল ফার্নিচারের গুণগত অবস্থা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। 

damaged furniture
নষ্ট হয়ে যাওয়া ফার্নিচার মেরামত খরচ বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ

পছন্দমতো ফার্নিচার রাখার সুযোগ না থাকা 

ফার্নিশড বাসায় যেহেতু আগে থেকেই ফার্নিচারের ব্যবস্থা থাকে, ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইন কিংবা পছন্দের ফার্নিচার রাখর সুযোগ থাকে না। নতুনবা একই ফার্নিচার ঘরে ডাবল হয়ে যাবে, বা নতুন ফার্নিচার কিনলে তা রাখার আর বাড়তি জায়গা থাকবে না। 

আর তাই আপনি যদি কাস্টমাইজড ডিজাইনে নিজের পছন্দমতো ঘর সাজানোর পরিকল্পনা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার এই অসুবিধা সমূহ বিবেচনা করে ফার্নিচার ছাড়া ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। নতুনবা অপ্রয়োজনীয় এই ফার্নিচার সড়াতে গিয়ে আপনার বাড়তি টাকা খরচ করা লাগতে পারে। 

ভাড়া বাসার ক্ষেত্রে ফার্নিচার নষ্ট হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা 

ফার্নিশড ফ্ল্যাট যদি ভাড়া নেয়ার জন্য হয়ে থাকে, তবে এর প্রধান একটি অসুবিধাই হল বাসার ফার্নিচার গুলো যেন কোনভাবেই নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা। এতে করে দুশ্চিন্তা যেন এমনটিতেই বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। বিশেষ করে বাসায় যদি ছোট বাচ্চা থাকে, সেক্ষেত্রে যেকোনো কিছুই নষ্ট করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। ফলে ফার্নিশড বাসার কোন কিছু যদি নষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে বাসা ছেড়ে দেয়ার সময় জরিমানাও দেয়া লাগতে পারে। 

আর তাই ফার্নিশড ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে যথাযথ ধারনা নিয়ে এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন খুব সহজেই যে, কোন ধরনের প্রপার্টি আপনার জন্য হবে পারফেক্ট। প্রপার্টি কেনা হোক কিংবা ভাড়া নেয়া, ফার্নিশড ফ্ল্যাটের সুবিধাও যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধার দিকটাও কিন্তু বিবেচনায় নেয়া জরুরি।   

Write A Comment

Author