ঘর সাজানোর তালিকায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তা হলো সঠিক পর্দা নির্বাচন। হতে পারে পর্দাটি আপনি নিজেই ডিজাইন করে বানিয়ে নিচ্ছেন অথবা সরাসরি দোকান থেকে কিনছেন, তবে কোন ঘর সাজাতে কেমন পর্দা ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত তো? ঘরের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশই নির্ভর করে সঠিক রুমের জন্য সঠিক পর্দা বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে। আর তাই তো রুমের আকার-আকৃতি এবং পর্দার ধরন বুঝেই ঘর সাজাতে পর্দা কিনতে হবে অত্যন্ত যত্নের সাথে। তবে চলুন জেনে নেই, ধরন ভেদে পর্দার ডিজাইন কেমন হতে পারে?
সিঙ্গেল প্যানেল
নাম শুনেই যেমনটা ধারণা করা যাচ্ছে যে, এ ধরনের পর্দা প্রস্থের দিক থেকে চওড়া ধাঁচের হয়ে থাকে, যার একটি প্যানেলই পুরো জানালাটি ঢেকে রাখে। আমরা সাধারণত প্যানেল পেয়ার বা ডাবল প্যানেলের পর্দা ব্যবহার করে থাকি জানালার জন্য, তবে স্টাইলে ভিন্নতা আনতে লিভিং রুম কিংবা ড্রইং রুমের জন্য বেছে নিতে পারেন সিঙ্গেল প্যানেল পর্দা।
ঝালর ডিজাইনের পর্দা
ঝালরের এই ডিজাইনটি থাকে পর্দার ঠিক উপরের দিকে। বেশ খানিকটা কাপড় কুচি দিয়ে এই ঝালর বানানো হয়। এই ডিজাইনটির সবচেয়ে সুবিধার দিক হল আপনি চাইলে জানালা জুড়ে পর্দা না রেখে শুধু ঝালরের অংশটুকুও জানালায় রাখতে পারবেন। জানালায় ব্লাইন্ডস ব্যবহার করা থাকলে শুধুমাত্র ঝালরের অংশটাই আপনি জানালায় ব্যবহার করতে পারবেন। এই ডিজাইনটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি রুমে আভিজাত্যের ভাব ফুটিয়ে তুলতেও এটি কোন অংশে কম নয়।
উইন্ডো কাভারিং সেট
এ ধরনের ডিজাইনের পর্দার সাধারণত কয়েকটি অংশ থাকে, যেগুলো একসাথে করেই পুরো সেটটা প্রস্তুত করা হয়। আর এ কারণেই উইন্ডো কাভারিং সেট হিসেবে এটি পরিচিত। এ ধরনের ডিজাইনে দুই স্তরের পর্দা ব্যবহার করা হয়। জানালার খুব কাছে থাকা পর্দাটি সাধারণত সাদা বা অফ হোয়াইট রঙের স্বচ্ছ ধাঁচের হয়ে থাকে, যেন বাহিরের আলো-বাতাস ঠিকমতো ভেতরে ঢুকতে পারে। অন্যদিকে এর সামনের অংশের জন্য ভারী কাপড় ব্যবহার করা হয়। এই সেটের সাথে আরও থাকে ঝালর, বিশেষ রড পর্দা ঝোলানোর জন্য এবং জানালার দুইপাশে পর্দা বেঁধে রাখার জন্য ব্যান্ড। বেডরুম এবং ড্রইংরুমের জন্য এ ধরনের উইন্ডো কাভারিং সেট বেশি মানানসই হয়ে থাকে।
উইন্ডো স্কার্ফ
গলায় স্কার্ফ জড়িয়ে রাখার মতো এখানেও জানালার উপর পর্দাটা এমনভাবে রাখা হয়, যেন দেখলে মনে হবে জানালায় স্কার্ফ জড়ানো। সাধারণত পাতলা ফেব্রিক বেছে নেয়া হয় এ ধরনের পর্দার জন্য, যা বেশ লম্বা ওড়নার মতো দেখায়। আমাদের দেশে এই স্টাইলের পর্দা কম দেখা গেলেও, বিদেশে এর প্রচলন অনেক বেশি।
পর্দার কাপড় কেমন হবে?
পর্দা বানানোর ক্ষেত্রে কাপড়ের ধরনটা হতে হবে সঠিক। অর্থাৎ, যদি খুব বেশি পাতলা ধাঁচের পর্দার কাপড় কেনা হয়, তা যেমন ঘরের প্রাইভেসি রক্ষা করবে না। তেমনি ভারী পর্দার কাপড় ঘরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে। তাই, সঠিক পর্দার কাপড় বাছাইয়ের উপর নির্ভর করবে তা আপনার ঘরের সৌন্দর্য কতখানি বাড়িয়ে দিবে।
সেমি-স্বচ্ছ পর্দা
ঘরের বাইরের আলো-বাতাস দুটোই আসবে এ ধরনের পর্দার কাপড়ের মধ্য দিয়ে। খুব বেশি পাতলা ফেব্রিক না হলেও বাইরের ভিউটা দেখা যাবে এ ধরনের কাপড়ের মধ্য দিয়ে। তবে আবার এমনও হবে না যে ঘরের প্রাইভেসি থাকবে না। সেমি-স্বচ্ছ পর্দা ডাইনিং রুমের জন্য এবং লিভিং রুমের জানালার জন্য পারফেক্ট বলতে পারেন। যেখানে বাইরের মিষ্টি রোদ আর বাতাস এসে রুমটাকে প্রাণবন্ত রাখবে সবসময়।
ব্ল্যাকআউট ডিজাইন
এ ধরনের ডিজাইনে ঘরের বাইরের ভিউ পুরোপুরিভাবেই ঢেকে যাবে। রোদের অতিরিক্ত তাপ এ ধরনের পর্দার ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই ঘরের ভেতরটা ঠাণ্ডা রাখতে ব্ল্যাকআউট ডিজাইনটা সেরা বলতে পারেন। এ ধরনের ডিজাইনের পর্দা সাধারণত ডার্ক রঙের অর্থাৎ, নেভি ব্লু, মেরুন, সি গ্রিন বা অ্যাশ রঙের হয়ে থাকে। তবে চাইলে অন্য রঙের কাপড়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। বেডরুমের জন্য কিংবা স্টাডি রুমের ডিজাইনের জন্য ব্ল্যাকআউট ধাঁচের পর্দা হবে বেস্ট সল্যুশন।
সেমি-অপাকিউ
ব্ল্যাকআউট এবং সেমি-স্বচ্ছ এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থান সেমি-অপাকিউ কাপড়ের পর্দার। আপনি হয়তো একেবারে স্বচ্ছ ধাঁচেরও চাচ্ছেন না, আবার পুরোপুরি ঢাকা থাকবে এমনটাও চাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে সেমি-অপাকিউ অপশনটি বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেমি-অপাকিউ ধরনের পর্দার প্রচলনই বেশি দেখা যায়।
ট্যাব টপ
ট্যাব টপ পর্দা দেখতে অনেকটা ছোট বাচ্চাদের জামার ডিজাইনের মতো। আড়ং-এর পর্দা যারা কিনে থাকেন বা পছন্দ করেন, তারা এই ট্যাব টপ ধাঁচের পর্দার ডিজাইন নিয়ে হয়তো জেনে থাকবেন। অন্যান্য অনেক ডিজাইনের ভিড়ে ট্যাব টপ ডিজাইনের পর্দার প্রচলন সবসময়ই থাকে বলতে পারেন। গেস্ট রুম বা বেডরুমের জানালা এবং দরজায় এই ডিজাইনের পর্দা অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই ডিজাইনটি কিন্তু ড্রইংরুম বা লিভিং রুমের জন্য মানানসই নয়। ফিতার মতো দেখতে পর্দার মাথাগুলো পর্দার স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে এই ডিজাইনের পর্দা লাগানো হয়। যেহেতু এতে কোন আইলেট বা রিং লাগে না, তাই পর্দা পরিষ্কার করা বা ধোয়ার ক্ষেত্রেও এর সুবিধা অনেকাংশেই বেশি বলে মনে করা হয়।
আইলেট ডিজাইন
এখন যে ডিজাইনের পর্দার প্রচলন অনেক বেশি, তা হল আইলেট ডিজাইন। পর্দার সাথে মানানসই যেকোনো রঙের আইলেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। পর্দার উপরের অংশে বড় একটা গর্ত করে সেখানে আইলেটটি বসানো হয়। পরবর্তীতে পর্দার রড এই আইলেটগুলোর মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেই পর্দা লাগানোতে আর তেমন কোনও ঝামেলা থাকে না। তবে হাতে কিংবা মেশিনে ধোয়ার আগে অবশ্যই পর্দা থেকে আইলেটগুলো খুলে রাখতে হয়, নতুবা আইলেটগুলো ভেঙে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।
পর্দা কিনতে কোথায় যাবেন?
ঢাকার মধ্যে নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, মোহাম্মদপুর, রোকেয়া সরণি, গুলশান, মিরপুর ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাবে পর্দার বিশাল সংগ্রহ। আপনি চাইলে পছন্দমতো কাপড় কিনে লেইস, বোতাম দিয়ে ডিজাইন করে বানিয়ে নিতে পারেন রুমের জন্য মানানসই পর্দা। এক্ষেত্রে পর্দার সঠিক মাপ জেনে নেওয়া জরুরি।
কাপড়ের উপর নির্ভর করে প্রতি পিস পর্দা ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে গজ কাপড় হিসেবে কিনতে চাইলে প্রতি গজ কাপড় ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
পর্দায় যদি টার্সেল ব্যবহার করতে চান তবে এর দাম পড়বে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। আর এর সাথে টার্সেল স্ট্যান্ডের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। সুতি অথবা খাদি ধরনের কাপড়ের পর্দায় ব্লক, বাটিক অথবা হাতের কাজ করা থাকে বিধায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। যা ১ থেকে ২ হাজার টাকার মতো লাগতে পারে।
এছাড়া বাংলাদেশে অনেকেই হোম টেক্স থেকে পর্দা কিনে থাকেন। সাধারণ সিল্ক থেকে শুরু করে অনেক ভারী ডিজাইনের পর্দার বিশাল কালেকশন থাকে হোক টেক্সে। যার দাম আনুমানিক ৬৫০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে বা এর বেশিও হতে পারে। অন্যদিকে কে ক্রাফট, অঞ্জন’স কিংবা আড়ং-এ প্রতিটি পর্দার দাম পড়বে ৭০০-১৬০০ টাকার মধ্যে, যদিও ডিজাইন এবং কাপড় ভেদে এই দামের তারতম্য দেখা দিতে পারে।
তবে আপনার টার্গেট যদি হয় কম খরচের মধ্যে কাপড় কিনে নিজেই পছন্দমতো ডিজাইন অনুযায়ী পর্দা বানানোর, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য পারফেক্ট জায়গা হবে নিউমার্কেট। এখানে আপনি বিভিন্ন ডিজাইনের গজ কাপড় পাবেন। সুতি চেক কিংবা শেডের কাপড় থেকে শুরু করে সিনথেটিক, নেট এমনকি বিভিন্ন প্রিন্টের কাপড় পাওয়া যায় নিউমার্কেটে। যার দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ বা তার বেশিও হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুটা দরদাম করেই কাপড় কিনতে হয়। আর যারা দরদাম করতে পটু, তাদের জন্য তো নিউমার্কেট অপশনই বলা যায়।। ভালো হয় যদি আগেভাগেই আপনি জেনে নিতে পারেন যেকোনো কাপড়ের দাম কেমন হতে পারে, তবে যাচাই-বাছাই করে কাপড় কিনতে সুবিধা হবে।