Reading Time: 3 minutes

আমরা সবাই জানি বাড়ি বানানো সহজ কাজ নয়! অনেক সময় যে জমি আপনি বেছে নেন তার উপর নির্ভর করে বাড়ি তৈরির সময় সেই জমিটিকে প্রস্তুত করে নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, বলা যায় ফসলের জমি বা জলাভূমি! এই সমস্ত জমিগুলোকে বাড়ি নির্মাণের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এছাড়াও, বেশি অসুবিধা দেখা দেয় যখন কোন জমি ৪৫ ডিগ্রী ঢালু হয়। যদি এই ঢালু জমিটি পাহাড়ের পাশে হয়ে থাকে এক্ষেত্রে আপনার স্বপ্নের বাড়ির জন্য এটা একটি আকর্ষণীয় প্লট। কিন্তু, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় এমন জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণ করার কারণে বেশ কিছু অসুবিধার জন্ম দেয় যেগুলো সম্বন্ধে আপনার আগে থেকেই জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার আগে ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের অসুবিধা কী কী জেনে নিন!    

অতিরিক্ত অর্থ এবং সময় ব্যয় 

ঘড়ি
মাঝারি ঢালু জমিগুলোতেও প্রয়োজন হয় অধিক নির্মাণ সামগ্রী

ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অসুবিধা হচ্ছে, বাড়ির ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়। কারণ, যে সমস্ত জমি ৪৫ ডিগ্রির বেশি ঢালু সেগুলো সর্বপ্রথম বাড়ি নিমার্ণের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। তবে, এমন অনেক উদাহরণ আপনি খুঁজে পাবেন যেখানে ৯০ ডিগ্রী ঢালু জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণের সময় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। এমনকি মাঝারি ঢালু জমিগুলোতেও প্রয়োজন হয় অধিক নির্মাণ সামগ্রী, গভীর খনন (যার জন্য বিশেষ খনন সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়), দেয়াল খনন এবং ড্রেনেজ ও সেপ্টিক সিস্টেম। এই সমস্ত ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের মান যথাযথ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রচেষ্টা, শ্রম এবং অর্থ সাধারণ বাড়ি নির্মাণের চেয়ে অধিক হারে ব্যয় হয়।

ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ  

ড্রেন ও সুয়ারেজ
দেয়ালগুলোও পানিরোধী হওয়া দরকার

ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় যদি মাটি ক্ষয় শুরু হয় তখন ভিত্তি প্রস্তর থেকে শুরু করে ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ সবকিছু নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা যেন সচল থাকে এই বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।  এমনকি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জমাটবাঁধা পানি যেন সরকারী রাস্তা ও আশেপাশের বাসাবাড়ি দিয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এমনকি দেয়ালগুলোও পানিরোধী হওয়া দরকার এবং বৃষ্টির সময় পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিল্ডিং সুয়ারেজ এবং কালভার্টগুলো তৈরি করা আর একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে পানি বাইরে বের করে দেওয়ার। এছাড়াও, আপনি মাটিতে গর্ত তৈরি করতে পারেন এবং বর্জ্য জাতীয় কিছু বস্তু দিয়ে সেই গর্তটি ভরাট করতে পারেন। যদিও নতুন সুয়ারেজ সিস্টেম কিছুটা জটিল লাগতে পারে। আপনার বাড়িটি কোথায় অবস্থিত সেটার উপর নির্ভর করে আপনার বাড়ির ড্রেনেজ এবং সুয়ারেজ লাইন কেমন হবে! অবস্থান বুঝেই পানির শ্রোতের গতি বাড়াতে পাম্প বসাতে হবে নয়তবা পানির গতি বাড়াতে ব্যবহার করতে হবে কোন ম্যাকানিকাল সিস্টেম। 

ল্যান্ডস্লাইডিং

ল্যান্ড স্লাইডিং
গাছ লাগাতে পারেন কারণ এগুলো মাটি অক্ষত রাখে

ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির ক্ষয়ক্ষতি হয়, এটা ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম। সুতরাং, বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাটি ক্ষয়ের প্রবণতা রয়েছে কিনা তা জানতে হবে। এরপর মাটির ধরন সম্বন্ধে আপনার ধারণা নিতে হবে। মাটির ধরন সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানা থাকলেই আপনি ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের অসুবিধা গুলো দূর করতে পারবেন। ঢালু জমির এই সমস্যাটি মোকাবেলার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। গাছ লাগাতে পারেন কারণ এগুলি মাটি অক্ষত রাখে এবং মাটি প্রভাবিত হবার ক্ষমতা কমিয়ে আনে। সুতরাং, ল্যান্ডস্লাইডিং ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের অসুবিধা রোধের আর একটি সমাধান হতে পারে। তবে, একজন বিশেষজ্ঞ বা আর্কিটেক্টের মতামত অবশ্যই নেওয়া ভালো।

রক্ষণাবেক্ষণ

রক্ষণাবেক্ষণ
ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা দেখভাল করতে হবে

ঢালু জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের কিছু বিষয় আছে। স্বাভাবিক বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি আরও বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণ করলে। এই যেমন ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থার উপর বেশি জোর দিতে হবে। এছাড়াও, জমির আশেপাশে প্রচুর গাছগাছালি থাকলে সেগুলোর যত্নও আপনাকে রুটিন নিয়মে নিতে হবে। তাছাড়াও, আপনার যদি এই সমস্ত ইফোর্ট কমিয়ে আনার ইচ্ছা থাকে এক্ষেত্রে আপনি চাইলে মাটি ধারণকারী প্রাচীর ব্যবহার করতে পারেন।  

এই ছিল ঢালু জমিতে বাড়ি নির্মাণের অসুবিধা গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি। আমার সাথে আপনি একমত হলে কমেন্টে জানিয়ে দিন আপনার মতামত।

Write A Comment