পুরাতন ভবনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয় নির্ভুল পরিকল্পনা এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টা। বেশ কিছু মৌলিক পদক্ষেপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন ছাড়া কোন পুরানো ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা অসম্ভব। শুধু পুরানো ভবনের সমস্যাগুলো সমাধান করলে চলবে না, বরং এই সমস্ত সমস্যা যেন ঘটতে না পারে সেইভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরনো বহুতল ভবন কিংবা বাবা মার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একতলা ভবন যাই হোক না কেন তার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা। এবং রুটিন মেনে এই সমস্ত রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সবকিছুর আগে আপনাকে জানতে হবে, পুরাতন ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করবেন কীভাবে। সকল পদ্ধতি সম্বন্ধে সঠিক উপায়ে জানতে হবে তবেই না পুরাতন ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে! রক্ষণাবেক্ষণ টিপস নিয়ে চমৎকার একটি তালিকা তৈরি করেছি জানতে পড়তে থাকুন।
দেয়াল
পুরাতন ভবনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে থাকে বলে ঝুঁকির পরিমাণটাও এখানে অনেক। অবিচ্ছিন্ন পানির প্রবাহ দেয়ালের নমনীয়তাকে যেমন প্রভাবিত করবে তেমনি ভবনের কাঠামোগত ক্ষতির কারণও হতে পারে। যদি স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের গন্ধ বা ছাপ পান তাহলে জলদি খতিয়ে দেখুন দেয়ালের কোন অংশটি ড্যামেজ হয়েছে। আলমারি, বিছানা বা সোফা সেটগুলির পিছনে দেখুন দেয়ালে ড্যাম্প ভাব আছে কিনা। দেয়ালের কোন অংশ যদি একটু স্যাঁতসেঁতে হয়েও যায় তাহলে স্যাঁতসেঁতে প্রতিরোধী প্লাস্টার দিয়ে মেরামত করে নিন। দেয়ালে ছত্রাকের বৃদ্ধি বা কালো ছাঁচ থেকে থাকলে তা অপসারণের ব্যবস্থা করুন। নাহলে, তা দেয়ালের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে।
ছাদ
পুরনো ভবনের ছাদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। সূর্য ও পানির সংস্পর্শে আসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের পোকার উপদ্রব এবং ছত্রাকের কারণে ভবনের ছাদ আরও অনেক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। যেহেতু আপনার ভবনটি আগেই পুরাতন অবস্থায় আছে তাই স্বাভাবিকভাবে এই সকল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তাই পুরাতন ভবনের যত্ন প্রয়োজন আরও অধিক। শেওলার উপদ্রব ছাদের জন্য পুরানো নয়, এই উপদ্রব কমাতে প্রয়োজন সঠিক উপায়ে মোকাবিলা করা। ছাদের রেলিং তৈরির সময় রেলিং এর কর্নারগুলো ভালো মত যাচাই বাছাই করুন, খেয়াল করবেন যাতে কোন ছিদ্র বা ফাটা জায়গা যেন না থাকে। কেননা, পানির স্রোতে বা বেশি পানি জমে থাকলে সেখানে থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে ছাদ বা দেয়াল উভয়ই ড্যাম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দরজা ও জানালা
পুরাতন ভবনের দরজা বা জানালা তৈরির ম্যাটেরিয়াল বেশীরভাগ সময়ে কাঠ হয়ে থাকে। সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করলে কাঠের আসবাব বা কাঠ অনেক দিন টেকসই হয়। সময়ের সাথে সাথে, দরজা বা জানালার উপকরণগুলো একটু রঙ উঠে যেতে পারে, দরজা বা জানালার কিছু অংশ ক্ষয়ে যেতে পারে আবার কিছু অংশ অনেক পুরনো হয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় বদলে নেওয়া যায় কিংবা দরজা বা জানালার অবস্থা কেমন সেটা যাচাই করার জন্য ছুরি ব্যবহার করে দেখতে পারেন যে কাঠের অবস্থা এখন কেমন। শক্ত এবং সবল কাঠ হলে ছুরি কখনই কাঠ ভেদ করতে পারবে না। কাঠ অনেক দিন ধরে ব্যবহার করার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। তাই এখনি এগুলোকে সূর্যের আলো এবং পানির প্রবাহ থেকে দূরে রাখতে হবে। এবং ভালোমানের বার্নিশ দিন এতে করে অনেক দিন কাঠ ভালো থাকবে।
ড্রেন
পুরাতন ভবন রক্ষণাবেক্ষণ এর ক্ষেত্রে ড্রেনেজ রক্ষণাবেক্ষণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রায়ই দেখা যায় প্লাস্টিক, কাদা, পাতা বা অ-নিষ্পত্তিযোগ্য জিনিসগুলো এই ড্রেনে আটকে যায়। যার ফলে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এছাড়াও জমে থাকা পানিতে তৈরি হয় শেওলা বা কীটপতঙ্গ। তাই ড্রেনগুলো ঘন ঘন পরিদর্শন করতে হয়। যাতে করে কোন ময়লা আবর্জনা আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি না হয়। ড্রেন পানি চলাচল ঠিকঠাক মত হচ্ছে কিনা তার জন্য টর্চ লাইট ব্যবহার করে দেখুন। যদি কোন কিছু আটকে থেকে থাকে তাহলে রডের সাহায্যে এগুলো পরিষ্কার করুন।
রঙ
প্রতি দু বছর পর পর আপনার বাড়ির পেইন্টিং বদলে নিন। এতে করে সূর্যের আলো বা পানির প্রবাহ থেকে রঙকে বাঁচানো সম্ভব। এছাড়াও, খেয়াল করবেন দেয়ালের রঙে যেন কোনকিছু লেগে না যায়। যেকোন রকমের দাগ থেকে সাবধান থাকবেন। দেয়ালের গা থেকে দাগ উঠানোর ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেয়ালের রঙের অনেক ক্ষতি হয়। তাই সাবধান থাকাই শ্রেয়।
দীর্ঘ বৃষ্টিপাত বা কোন বড় ঝড় থেকেও পুরাতন ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত পুরাতন ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করায় যেকোন অবহেলা কিন্তু ভবিষ্যতের বড় বিপদ যেমন ডেকে আনবে তেমনি আপনার পকেটের বড় অংশ খরচও করিয়ে ছাড়বে। তাই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করুন।