Reading Time: 4 minutes

রাজধানীতে বেশির ভাগ মানুষই থাকেন ভাড়া বাসায়। কখনো এই এলাকা কখনো সেই এলাকা। দৌড়ে বেড়াতে হয় গোটা শহর! আবার কেউ কেউ আছেন যাদের ছুটে যেতে হয় ঢাকা বাইরেও। এই ছোটাছুটিতে সবচেয়ে ক্ষয় ক্ষতি হয় যে জিনিসটির সেটাই হচ্ছে আপনার আসবাবের। ঘরের সাজে নানা আসবাব থাকলেও সেগুলোকে  একের বেশি ওঠানামা করালে তা একটু দুর্বল হয়ে পড়ে। বাসা থেকে আসবাব নামানো, সেগুলোকে ভ্যান বা ট্রাকে তোলা আবার নতুন  বাসায় উঠানো এই সবকিছুতে আসবাবের যেমন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তেমনি আসবাবের আয়ুও কমে আসে। কাঠের তৈরি আসবাব হলে একটু রক্ষা। কাঠ সবসময়ই মজবুত এবং টেকসই কিন্তু বোর্ড ঠিক ততোটাই উল্টো! হালকা নড়াচড়াতেই বোর্ডের আসবাব যেন নড়বড়ে হয়ে যায়। এই সমস্ত কিছু জেনেই আজকের ব্লগের টপিক বাছাই করা হয়ছে বাসা বদলে সহায়ক আসবাব। বাসা বদলের সময় যেন আসবাবগুলো ঠিকঠাক থাকে সে জন্য দেখে নিতে পারেন এই ব্লগটি। 

আপনি যদি আসবাব কিনবেন বলে ভাবছেন তাহলে দেখে নিতে পারেন নানা ধরণের আসবাব। আর যদি বাসা বদলে সহায়ক আসবাব বেছে নিতে চান তাহলে এই দুই ধরণের আসবাবের কথা ভাবতে পারেন। একটি হচ্ছে নক ডাউন কিংবা রেডি টু অ্যাসেম্বল ফার্নিচার আর একটি হচ্ছে বাক্স বদল। একে একে চলুন এই বাসা বদলে সহায়ক আসবাব ও এর সতর্কতা সম্বন্ধে জানা যাক।   

নক ডাউন কিংবা রেডি টু অ্যাসেম্বল ফার্নিচার

furniture assembly

সম্প্রতি সময়ে নক ডাউন আসবাব বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একে তো দেখতে বেশ স্টাইলিশ আবার মুভিং ফ্রেন্ডলি সব মিলে দুর্দান্ত। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন এবং প্রায়ই বাসা বদলের একটা সম্ভাবনা থাকে তাদের জন্য এই ফার্নিচারগুলো বেশ সুবিধাজনক। কোনরকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই যেমন স্থানান্তর করা যায় তেমনি সহজেই আবার আগের মত জোড়া লাগানোও যায়। সময় থাকলে এবং চাইলে আপনি নিজেই এই ফার্নিচারগুলো ঠিক করে ফেলতে পারবেন। এই আসবাবে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে খাট। বেশ কিছু সময় আগে থেকেই খাটের বিভিন্ন অংশ খুলে স্থানান্তর করা হয়। এখন অন্যান্য আসবাবেও এইভাবে ফার্নিচার খোলা বা জোড়া লাগানো যায়। তাই এই পদ্ধতিকে বা এই আসবাবকে রেডি টু অ্যাসেম্বল ফার্নিচার বলা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে ঘরের সবগুলো আসবাব এই রেডি টু অ্যাসেম্বল নিতে পারেন। বাজারে আছে প্রায় সবকিছুই। খাট তো আগে থেকেই পাওয়া যেত এখন আরও বেশ কিছু আসবাবও যোগ হয়েছে। এই আসবাবগুলোর প্রধান সুবিধাই হচ্ছে এগুলো পেরেক দিয়ে জোরা লাগানো থাকেনা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে লাগানো থাকে ফলে সহজেই প্রয়োজন মত খোলা ও লাগানো যায়। প্রতিটি অংশ খুলে আপনি স্থানান্তর করতে পারবেন। ট্রাকে বা ভ্যানে সহজেই উঠানো ও নামানো যায়। একবার যদি দেখে নেওয়া যায় কীভাবে লাগানো ও খোলা যায় তাহলে নিজেরাই এই কাজটি সহজেই করে ফেলতে পারবেন। বাসা বদলের সময় যদি আসবাবগুলোকে খুলে কোন বাক্সে ভরে নতুন বাসায় নিয়ে গিয়ে পুনরায় সেট আপ করতে পারলে কি চমৎকার হবে ভাবুন তো! না ক্ষয়ক্ষতি হলো, না কোন জিনিসের আয়ু কমলো, না করতে হলো কোন প্রকার দুশ্চিন্তা। এছাড়াও, খরচের ব্যপারটিও কিন্তু বেশ কমে আসবে। হতে পারে এক ট্রাকে বা একটি ট্রিপেই ঘরের সব আসবাব নতুন ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। সময় আর টাকা দুটোই কমে আসবে অনেকটা।

এখন ভাবছেন কোথায় পাওয়া যাবে?   

আসবাবের যেকোনো বড় শো-রুমে সহজেই পাওয়া যায় নক ডাউন আসবাব। অথবা পাড়া-মহল্লার কাঠের দোকানে বলে একেবারে নিজস্ব নকশার নক ডাউন আসবাব বানিয়ে নেওয়াও যায়। খাট, চেয়ার, টেবিল, সোফা, ডিভান, আলমারিসহ বাসায় ব্যবহার করা যায় যত রকমের আসবাব, তার প্রায় সবই এখন নক ডাউন পদ্ধতিতে বানিয়ে নেওয়া যায়। তবে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, গুণগত মানের কথা কিন্তু অবশ্যই ভাবতে হবে আপনাকে। যেহেতু, আসবাবটা একের অধিক খোলা ও জোড়া লাগানো হবে তাই সেক্ষেত্রে ভালো ব্র্যান্ডের আসবাব হওয়া জরুরী। আর যদি দোকান থেকে বানিয়ে নিতে চান তাহলে দক্ষ কারিগর দিয়ে বানিয়ে নিতে হবে নয়তো বা ভবিষ্যতে পড়তে হবে নানান সমস্যায়। এছাড়াও, অনেক অভিজ্ঞরাই বলে থাকেন যে এই সমস্ত আসবাব যত কম খোলা হবে ততোই ভালো।  

বাক্স বদল বা বক্স ফার্নিচার 

Modular Furniture

বাক্স বদল বা বক্স ফার্নিচার নামটি শুনে একটি অবাক হলেও এটাই এখনের বাস্তবতা। বক্স মডিউলে তৈরি হওয়া আসবাবগুলো হাল সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেকোন স্থানে যেকোন সময়ে বাক্স ধরে সরিয়ে নিলেই ব্যস কাজ শেষ। একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় বলে সংসারে এগুলোর চাহিদাও হয়েছে বেশ। ইদানিং দেখা যাচ্ছে একের উপর একটা রাখলেই আসবাবের আকার ধারণ করে। যার ফলে জিনিসপত্র রাখা যেমন সুবিধা তেমনি বাসা বদলের সময়ও এগুলো সরিয়ে নিতে সুবিধা। এই বক্সগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বুক শেলফ আবার এগুলোর উপর কাপড় বিছিয়ে বানানো হয়েছে বসার আসবাব।

শোকেস ওয়ারড্রব সবকিছুতেই দেখা গেছে এই বক্সের ব্যবহার। এই বক্সগুলো যেমন ছোট জায়গাকে সুন্দর করে ব্যবহার করতে সাহায্য করে তেমনি দেখতেও বেশ আধুনিক লাগে। এছাড়া, বাসা বদলের সময় বাক্স বদল করলেই দেখবেন বাসা বদল হয়ে গেছে। বাসা বদলের সময় আসবাবের আকার ছোট হওয়ার কারণে ওঠানো বা নামানোর ক্ষেত্রে সেগুলোর ক্ষতি হয় না। দ্রুত এবং অল্প খরচে সেগুলোকে স্থানান্তর করা যায়। তবে মাথায় রাখতে হবে বেশ কিছু বিষয়। যেহেতু, বক্স আসবাব ছোট আকারের হয়ে থাকে তাই নিজেরাও চাইলে এগুলোকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই নিয়ে যেতে পারছেন। তাই বহনের ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে বেশ মনযোগী না হলে ঘটে যেতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা। যেকোন ব্র্যান্ডেড শোরুমে খুঁজে দেখলেই পেয়ে যাবেন পছন্দের এই বক্স আসবাব। আপনি চাইলে কাঠের দোকানেও অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। নিজের নকশা দিয়ে সুন্দর করে বানানো যেতে পারে। তারা আপনাকে বানিয়ে দেবে আপনার পছন্দমতো বিভিন্ন আকৃতির বক্স। আর মূল্য সেটা নির্ভর করবে বাক্সের সংখ্যা, কাঠের দাম আর বার্নিশের উপর। 

বাসা বদল এমনিতেই একটা ঝামেলার কাজ। এটা সেটা কত কিছু যে থাকে। এই সমস্ত ঝামেলা এড়াতে আপনি বেছে নিতে পারেন বাসা বদলে সহায়ক আসবাব । কেমন লেগেছে আজকের এই ব্লগ? মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।

Write A Comment