জালিয়াতি, স্ক্যাম কিংবা প্রতারণা এই কোনটাই আমাদের কাছে নতুন কোন শব্দ না। বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে এইসব শব্দের সম্মুখীন আমাদের সবারই হতে হয়েছে। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রিয়েল এস্টেট সেক্টরে, অনেকেই এই সব নেতিবাচক ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন। এটাও অস্বীকার করার মত নয় যে, বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টর এখন বিশাল এক মুনাফা খাত। অনেকে যেমন বিনিযোগ করছেন অনেকে আবার এই সেক্টরকে পেশা হিসেবেও বেছে নিচ্ছেন। বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে যেখানে লোকেরা এই রিয়েল এস্টেট স্ক্যামারদের ফাঁদে পড়ে যায়। তাদের লোভনীয় সব অফার দেখে মানুষ কিছু না ভেবেই এই সমস্ত ফাদে পড়ে যায়। রিয়েল এস্টেট সেক্টরে স্ক্যাম বা প্রতারণা ঠেকাতে আমাদের আগে স্ক্যাম শনাক্ত করতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। কিভাবে ? পড়তে থাকুন জেনে যাবেন!
প্রতারণার জাল

নানা ধরণের লোভনীয় অফার নিয়ে আপনার পূর্ব নির্ধারিত প্রপার্টি কোম্পানি নামে ওয়েব পেইজ এবং ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে। যেখান থেকে আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন লোভনীয় অফার পাঠানো হয়ে থাকে। এমন কি আপনার মুঠোফোনেও সে খুদে বার্তা পাঠাবে। শুনে অবাক হলেও তারা কখনো কখনো আপনাকে সরাসরি ফোনও দিবে। তারা আপনাকে নির্দেশ দিবে আপনি কিভাবে টাকা পাঠাবেন, কত পাঠাবেন এবং কেন! তারা আপনাকে এটাও খুব পারদর্শিতার সাথে জানাবেন যে কেন তারা এখন টাকা চাইছে!
প্রতারণার জাল এড়াবেন যেভাবে
এমন অবস্থায়, আপনার এই সকল প্ল্যাটফর্ম নিজেই যাচাই করতে হবে যে, আদৌ এই প্ল্যাটফর্মগুলো ঠিক কিনা। সম্পূর্ণ নির্দেশনা না পরে কোন লিংকে ক্লিক করবেন না। কোন ইমেলের রিপ্লাই করবেন না। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছে সেই নম্বর যাচাই করুন। ওয়েবসাইট ঘাটুন। খুব ভাল হয় যদি সশরীরে যাচাই করে আসেন। এতগুলো টাকার বিষয় যেখানে যাচাই করতে ভুলবেন না। এই সমস্যাগুলোর সম্পর্কিত সমাধান আপনাকে দিতে বিপ্রপার্টি সর্বদা আপনার পাশেই আছে।
রিলিফ অফার প্রতারণা

যারা ঋণ খেলাপি কিংবা প্রপার্টি বন্দক রেখেছেন তাদের জন্য এমন ফাঁদে পরা খুব সহজ। কারণ, ঋনের বোঝা টানতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষগুলোই এই প্রতারকদের তালিকায় থাকেন শীর্ষে। কারণ, তারা নিজেদের প্রপার্টির বাঁচানোর চিন্তায় এতই মগ্ন থাকেন যে তারা সহজেই এই স্ক্যামে জড়িয়ে যান। প্রতারক দল, কিভাবে যেন পবালিক রেকর্ড ঘেটে সকল ঋণ খেলাপি এবং প্রপার্টি বন্দক রেখেছেন এদের তালিকা তৈরি করে রাখেন। এবং নানারকম রিলিফ অফার দিয়ে থাকেন এই বলে যে “আমরা আপনাকে প্রপার্টি বাঁচাতে সাহায্য করব”। এবং নির্দিষ্ট পূর্ব পেমেন্টের মাধ্যমে তারা বন্দকী প্রপার্টির টাকার পরিমানও কমিয়ে আনবে। এমন অবাস্তব এবং বেআইনি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে তারা গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করে। এমনকি তারা আপনার বিশ্বাস অর্জন করতে, নকল ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি এবং প্রশংসাপত্রও প্রদান করে।
রিলিফ অফার প্রতারণা এড়াবেন যেভাবে
এমন কিছু হয়ে থাকলে তা এড়াতে, আপনার ঋণ দাতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। তাদের সাথে আপনার বর্তমান লোন মডেলটির স্কিম পরিবর্তন করুন। আপনার সম্পূর্ণ সমস্যা সমাধান করতে পারেন, এবং নতুন কিছু এগ্রিমেন্ট তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও, বিপ্রপার্টির লিগ্যাল সার্ভিসটিও নিতে পারেন। শতভাগ সহায়তা আপনি এখানেই পেয়ে যাবেন।
অনলাইন রেন্টাল স্ক্যাম

বিপ্রপার্টির অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রয়েছে ভেরিফাইড সব প্রপার্টি। কিন্তু, সব অনলাইন পোর্টাল এমন নয়। অনেক স্ক্যামার এমনও আছেন, আসল তালিকা তৈরি করেন এবং লোভনীয়ভাবে দাম কমিয়ে পরিবেশন করেন। যার ফলে, অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পরেন এবং কম ভাড়ার জন্য এই স্ক্যামগুলোতে ক্লিক করে বসেন এবং স্বীকার হন নানা প্রতারণার। তারা সহজেই একটি রেজিস্ট্রেশন ফি বা ইনস্টলেশন ফি গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রপার্টি তাদের বলে দাবি করেন। এবং প্রপার্টি দেখতে চাইলে তারা এখন দেশে নেই এবং দেশে ফিরলে পুনরায় যোগাযোগ করেবন, এমন কথাও বলে থাকেন। নানারকম মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা অনলাইনে স্ক্যাম তৈরি করেন।
অনলাইন রেন্টাল স্ক্যাম এড়াবেন যেভাবে
এই স্ক্যাম থেকে বাঁচার জন্য, কোন রকম টাকার লেনদেন আগেই করবেন না। তারা যদি আমানত জমা দিতে বলেন, সেক্ষেত্রে আপনি তাদের যথাযথ কাগজ জমা দিতে বলবেন। এমনকি সশরীরে কোন স্থান পরিদর্শন না করে কোন রকম সিদ্ধান্তে পৌছাবেন না। এবং অবশ্যই সব দলিল ও নথিপত্র সঠিক উপায়ে যাচাই করুন।
পরিচিতি জালিয়াতি

সবগুলো স্ক্যামের মধ্যে এই স্ক্যামটা বেশি হয়ে থাকে এবং অনেক বিপদজ্জনকও। এটা সাধারণত তাদের সাথেই হয় যারা কিনা এই রিয়েল এস্টেট সেক্টরে একদম নতুন। এরা নিজের পরিচয় গোপন করে এবং অন্যের পরিচয়ে প্রপার্টি বেচা কেনা করে থাকে। সম্পত্তিটি তাদের নামে স্থানান্তর করে, ক্রেতার কাছে জাল সম্পত্তি দলিল উপস্থাপন করে টাকা হাতিয়ে নেন। এবং প্রপার্টির মূল্য প্রদানের পর জানা যায় যে, এই প্রপার্টি সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয়। এরা নিজের জন্য মূল্য গ্রহণ করে এবং নতুন বাড়ির মালিককে ঋণ পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধ রেখে থাকেন।
পরিচিতি জালিয়াতি এড়াবেন যেভাবে
এই জালিয়াতি থেকে বাঁচার একটি চমৎকার উপায় রয়েছে। এমন হয়রানি থেকে বাঁচতে আপনি বীমা করতে পারেন। এই বীমাগুলো এই জাতীয় স্ক্যামারদের থেকে আর্থিক সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও, সর্বদা আপনার ডেটা রক্ষা করুন। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (এনআইডি, পাসপোর্ট, ইত্যাদি) সহ কারও কাছে প্রকাশ কিংবা হস্তান্তর করবেন না। ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেও অবলম্বন করতে হবে সাবধানতা।
লোন স্ক্যাম

রিয়েল এস্টেট সেক্টরে স্ক্যাম বা প্রতারণা নিত্যদিনের ঘটনা আর এই লোন স্ক্যাম সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং এই সেক্টরে বেশি হয়ে থাকে। রিয়েল এস্টেট সেক্টরে এই স্ক্যামটাই বেশি হয় এবং বৃহত্তর স্ক্যামার হিসেবে পরিচিত। দূর্বল গ্রাহকদের কাছ থেকে অত্যধিক ফি এবং উচ্চ-সুদের হারের সাথে বন্ধকের জন্য সাইন আপ করিয়ে থাকে। এই ফাঁদে পড়া মানুষজন তাদের সামর্থের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে প্রতারিত হয়। যার ফলে সব হারিয়ে শেষ হয়ে নিজের ঠিকানা তারা হারিয়ে ফেলে।
লোন স্ক্যাম এড়ানোর উপায়
লোভনীয় এবং বাস্তব অফারগুলো বার বার যাচাই করুন। সময় নিয়ে গবেষণা করুন। মনে রাখবেন, এমন ফ্রড কারও কাছ থেকে লোন নেওয়ার চেয়ে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লোন নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
এই কয়েকটি উপায়ে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে স্ক্যাম বা প্রতারণা এড়ানো সম্ভব। তাই যেকোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে, প্রপার্টি এক্সপার্টদের থেকে ভালো মত বুঝে তবেই কোন সিদ্ধান্তে আসুন। আপনার যদি মনে হয় আপনার কোন সিদ্ধান্তে বিপ্রপার্টির সাহায্য প্রয়োজন, তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করব।