ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি তীব্র শীত পড়ে দেশে। শুধু মানুষদের জন্যই নয় বরং ঘরের পোষা প্রাণীর হয় ভীষণ কষ্ট। গা গরম করতে পরে ফেলি সোয়েটার। শীত থেকে বাঁচতে মুড়িয়ে নেই লেপ কম্বলে। কিন্তু আপনার ঘরের পোষা প্রাণীটির কি অবস্থা ভাবুন তো? বেচারা না পরতে জানে সোয়েটার না বুঝে লেপ কম্বলের তারতম্য। তাহলে কী উপায়? আমাদের তাদের হয়ে ভাবতে হবে। তারাও যেন এই প্রচন্ড শীতে আরাম খুঁজে পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সুরক্ষা এবং আরাম দুটোই নিশ্চিত করবে এমন কিছু চমৎকার টিপস রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে শীতের সময়ে পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া যাবে খুব সহজে।
শীতের সময়ে পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার কার্যকরী টিপস
শীতের সময়ে তাদের যেন কোন কষ্ট না হয় সেই খেয়াল রাখা কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব। চলুন জানা যাক কী কী উপায়ে শীতের সময়ে পোষা প্রাণীর যত্ন নিতে হবে!
পেটসকে ইনডোরে রাখুন

অনেকেই আছি যারা পোষা প্রাণীর থাকার ব্যবস্থা করছি ঘরের বাইরে বা খোলামেলা যায়গায়। প্রথমেই আপনাকে যা করতে হবে ইনডোরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। শীতের সময়ে কোনভাবেই খোলামেলা জায়গায় রাখা যাবে না। যেখানে বাতাস বা কুয়াশা ঢুকতে পারবে না এমন জায়গা বেছে নিতে হবে বা বাইরেই ঘরের মত একটা জায়গা করতে হবে। যাতে তাদের জন্য উষ্ণ একটা জায়গা তৈরি হয়।
ত্বকের যত্ন

আপনার ঘরের পোষা প্রাণীটি যদি কুকুর হয়ে থাকে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে গায়ের লোম ঝরার সময় হয়েছে কিনা। এই প্রক্রিয়াকে মোল্ডিং বলে থাকে। সাধারণত বছরে ২ বার এদের লোম ঝরে। শীতকাল তাদের গায়ের লোম ঝরার সময়। তাই এই সময় তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এই সময়ে দিনে দুবার বা অন্তত একবার কুকুরের গায়ে কম্বিং বা ব্রাশিং করতে হবে। আবার খেয়াল রাখবেন লোম বড় প্রাণী হলে গায়ের লোমে যেন জটা না পড়ে। এছাড়াও, কুসুম গরম পানি দিয়ে সপ্তাহে একবার গোসল করাতে হবে আপনার পেট’সকে। গোসলের জন্য বাজারে পোষা প্রাণীর জন্য বিশেষ শ্যাম্পু পাওয়া যায় সেগুলো কিনে নিতে হবে। চোখ, নাক বা কানে যেন এই শ্যাম্পু না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও বাজারে নানা রকম ড্রাই শ্যাম্পু পাওয়া যায় সেগুলো কিনুন। যদি পানি দিয়ে গোসল করানো ঝামেলা মনে হয়ে থাকে। গোসলের পর গা মুছতে ভুলবেন না কারণ গায়ে যদি পানি থেকে যায় পরবর্তীতে ছত্রাক জাতীয় রোগ চামড়ায় বাসা বাধতে পারে। দ্রুত গা শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এছারাও, বেশিদিন ধরে যদি গোসল করা সম্ভব না হয় এক্ষেত্রে পারফিউম ব্যবহার করুন।
কাপড় পরাতে হবে

শীতকাল বলে কথা। আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীর গায়ে উলের বা যেকোন গরম কাপড়ের পোশাক জড়াতে ভুলবেন না যেন। যেহেতু তাদের গায়ে লোম আগে থেকেই থাকে তাই অতিরিক্ত গরম পোশাকের প্রয়োজন নেই। হাতা কাটা হালকা গরম পোশাকের ব্যবস্থা করলেই হয়ে যাবে। শীতে হাতা কাটা পোশাক পরালে তারা যতই ছোটাছুটি করুন না কেন তা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ঘুমনোর ব্যবস্থা

এই শীতকালে আপনার পোষা প্রাণীকে কোনভাবেই মেঝেতে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। বছরের অন্যান্য সময়ে পোষা প্রাণীরা মেঝেতে ঘুমাতে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু, শীতকালে মেঝে অনেক বরফ ঠাণ্ডা হয়ে থাকে বলে আপনাকে ব্যবস্থা করতে হবে বিছানার। গদি বা তোশক দিয়ে ছোট একটা বিছানা তৈরি করতে পারেন। আর গায়ে দিয়ে দিতে পারেন চাদর। চেষ্টা করবেন বিছানাটা কার্পেটের উপর করার।
হিটার থেকে দূরে রাখুন

আপনার পোষা প্রাণী যদি কুকুর বা বেড়াল হয়ে থাকে এক্ষেত্রে রুম হিটার থেকে দূরে রাখতে হবে। শুধু হিটার না ল্যাম্প বা আগুন থেকে দূরে রাখতে হবে নয়তো বা অতিরিক্ত কাছে গিয়ে পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
খাবার পানি বদলে নিন

শীতকালে আমাদের আমাদের যেমন পিপাসা কম লাগে তেমনি পোষা প্রাণীদের ক্ষেত্রেও তাই। আর শীতকালে পাত্রে রাখা পানি বরফ শীতল হয়ে যায় কিছুক্ষণ রেখে দিলেই। এটাও আর একটা কারণ হয়ে উঠবে যথাযথ পানি পান না করার। তাই পুরনো ঠাণ্ডা পানি বদলে নতুন পানি রাখুন পাত্রে। এবং ২ থেকে ৩ ঘন্টা পরপর এই পানি পরিবর্তন করা উচিত।
খেয়াল করুন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

শীতকালে অল্পতেই ঠাণ্ডা লেগে যায়। হাঁচি কাশি হয়ে যায় মূহুর্তেই। তাই খেয়াল করুন, যে আপনার পোষা প্রাণী হাঁচি বা কাশি দিচ্ছে কিনা। কিংবা কান ব্যাথা করছে কিনা, ঠাণ্ডায় অনেক সময় কান ব্যাথা করে কান দিয়ে রস পরে তখন দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তাই খেয়াল করুন এবং যথাযথভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
এই ছিল শীতের সময়ে পোষা প্রাণীর যত্ন নিয়ে কিছু কার্যকরী টিপস। ঘরের ছোট্ট আর সবচেয়ে আদরের সদস্যের খেয়াল রাখতে এই টিপসগুলো কেমন লেগেছে জানাতে কমেন্ট করুন!