২০১৯ সালের শেষ মাসটি থেকে নতুন একটি ভাইরাসের সাথে পরিচিত হলো গোটা বিশ্ব। যা এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো বিশ্বে। কভিড ১৯ নামের মারাত্মক এই ভাইরাসটির এখনো পর্যন্ত প্রতিষেধক না থাকলেও আছে প্রতিরোধের উপায়। সংক্রমণ এড়াতে তাই প্রয়োজন ঘরে থাকা এবং নিজে পরিচ্ছন্ন থাকা। একইসাথে প্রয়োজন ঘরের সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখা। আর সেকারনেই যে দুইটি জিনিসের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি তা হল হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং জীবাণুনাশক। সাবান থেকে অনেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারন এটি ঘরে যেমন ঝটপট ব্যবহার করা যায়, তেমনি ঘরের বাইরেও স্যানিটাইজারের ছোট্ট বোতলটি পকেটে রেখে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় বাজার, রাস্তাঘাট যেখানে প্রয়োজন। বিশেষত ঘরের বাইরে টাকা, বাজারের ব্যাগ, ওয়ালেট আমরা হরহামেশাই ব্যবহার করি। অনিচ্ছাসত্বেও হাতের স্পর্শ লাগতে পারে বাজারের পণ্যে, সিড়ির রেলিঙে বা বাইরের যে কোনো বস্তুতে। তাই বাইরে থাকা অবস্থায় যখন আপনার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেবার সুযোগ কম, তখন বারবার হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে স্যানিটাইজার কিন্তু বেশ কার্যকরী সমাধান।
অন্যদিকে ঘরের যেকোনো বস্তু জীবাণুমুক্ত করতে বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে জীবানুনাশক। আমরা জানি যে, ভয়ংকর এই ভাইরাসটি বাতাসে তিন ঘণ্টা, তামার ওপর চার ঘণ্টা, কার্ডবোর্ডের ওপর ২৪ ঘণ্টা এবং প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের ওপর দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই, বাইরে থেকে যে কোনো কিছু আনার পর সেগুলো জীবাণুমুক্ত করা খুব জরুরি। একই সাথে জরুরি, দরজার হ্যান্ডেল, ঘরের মেঝে ইত্যাদি নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখা। কিন্তু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক, বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক এ বস্তু দুটি কোথায় পাবেন আপনি? চাহিদা বেশি থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় এ জিনিস দুটি বাজারে আসার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ সময়। তাই বাজারে গিয়েও অনেকে পাচ্ছেন না হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক। এ অবস্থায় আপনি কী করবেন? অধিক চাহিদার এ পণ্য দুটি কিনতে বারবার বাজারে ছুটবেন? চাহিদার সাথে বাড়তে থাকা দামে কিনে নেবেন চড়া মূল্যে? নাকি খুঁজবেন অন্য কোনো সহজ বিকল্প! এমন সহজ বিকল্প নিয়েই কথা বলবো আজ। এতো ছুটোছুটি না করে খুব সহজে ঘরেই বানিয়ে নেয়া সম্ভব হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর জীবাণুনাশক। কীভাবে? চলুন জেনে নেই।
যেভাবে তৈরি করবেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার-
বাজারে যে কোনো হার্ডওয়ারের দোকানে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল কিনতে পাওয়া যায়। কেনার সময় ৯০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা রাবিং অ্যালকোহল রয়েছে এমন মিশ্রণ দেখে কিনুন। ঘরে বসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে, প্রথমেই একটি বোতলে ৭৫০মিলি আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল নিন। এতে ২ মিলি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যোগ করুন। মিশ্রণটিতে ১৫ মিলি গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। ২০০ মিলি ডিস্টিলড ওয়াটার অর্থাৎ ফুটিয়ে ঠান্ডা করা পানি মেশান। আলকোহলের গন্ধ যাতে না ছড়ায় এজন্য যোগ করুন ২৫/৩০ মিলি যেকোনো ধরণের সুগন্ধি বা অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল। সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে একটা স্প্রে বোতলে ভরে ব্যবহার করুন। (উৎসঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) ঘরে কিংবা বাইরে সবসময় নিজের সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন। নিজেকে ও আশেপাশের সবাইকে নিরাপদ রাখতে একঘণ্টা পর পর বাড়িতে বানানো এ স্যানিটাইজারটি ব্যবহার করুন।
যেভাবে তৈরি করবেন জীবাণুনাশক-
বাজারে বেশ সহজলভ্য একটি পণ্য হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার। আজকাল যা, রাস্তার মোড়ে ভ্যানে করেও বিক্রয় করতে দেখা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ব্লিচিং পাউডার দিয়েই জীবাণুনাশক প্রস্তুত সম্ভব। এটি দিয়ে দুই ধরণের জীবাণুনাশক তৈরী করা যাবে- বেশি ঘনত্বের ও কম ঘনত্ব।
বেশি ঘনত্বের জীবাণুনাশক তৈরির প্রক্রিয়া
বেশি ঘনত্বের জীবাণুনাশকের অনুপাত হবে ১: ১০। এ জন্য একটি পাত্রে দুই লিটার পানির সঙ্গে এক টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার যোগ করুন। এরপর পানির সঙ্গে মেশার জন্য আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যে কোনো মুখবন্ধ বোতলে ভরে অপেক্ষাকৃত ঘন ও এ দ্রবণটি সংরক্ষণ করুন। তবে, এ দ্রবনটি কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় ঘরের কাজের জন্য নয়। এটি সাধারণত অধিক সংক্রামক বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দেহ জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
কম ঘনত্বের জীবাণুনাশক তৈরির প্রক্রিয়া
স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কম ঘনত্বের জীবাণুনাশকের অনুপাত হবে ১: ১০০। এটি তৈরির জন্য, ২০ লিটার পানিতে এক টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার গুলিয়ে নিন। এটি ঢাকনা দিয়ে ৩০ মিনিট ঢেকে রাখুন। নিচে জমা হওয়া তলানি ফেলে দিয়ে উপরের স্বচ্ছ জীবাণুনাশক স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। এই জীবানুনাশকটিই মূলত ঘরের পরিচ্ছন্নতায় কাজে আসবে আপনার। ঘরের মেঝে, আসবাব, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, দরজার হ্যান্ডেল কিংবা গাড়ি জীবানুমুক্ত করতে অনায়াসে ব্যবহার করুন। (উৎসঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর)
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্কতা ও সচেতনতাই আপনার সবচেয়ে বড় ঢাল। যে অত্যাবশ্যকীত জিনিসগুলো বাড়িতেই কম খরচে বানানো সম্ভব তার জন্য বাইরে ছুটোছুটি করবেন না। বরঞ্চ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক ঘরেই বানানোর ফলে যে অতিরিক্ত অর্থ আপনার বেচে গেলো তা বরাদ্দ করুন নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষের জন্য। রমজানের এই মাসে আপনার সামর্থ্য মতো সাহায্যের সাথে যোগ করুন এই বেচে যাওয়া অর্থটুকুও। সেইসাথে, আমাদেরকে জানান বাড়িতে বানানো হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর জীবাণুনাশক কী কী কাজে ব্যবহার করছেন আপনি। আপনার সতর্কতাই সুরক্ষিত রাখতে পারে আপনার পরিবার ও দেশকে।