Reading Time: 5 minutes

৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস ! এবারের নারী দিবসের থিম হতে যাচ্ছে, “আই এম জেনারেশন ইক্যুয়ালিটি”- নারীর অধিকার রক্ষা ও সমতায়নে”। জাতিসংঘ নারীদের জন্য ক্যাম্পেইন করতে যাচ্ছে, #ইচ-ফর-ইক্যুয়াল’(#EachforEqual) স্লোগানে। তাদের ক্যাম্পেইন হচ্ছে “ইউএন ওমেন’স নিউ মাল্টিজেনারেশন ইক্যুয়ালিটি”। এই ক্যাম্পেইনটি জেনারেশন ইক্যুয়ালিটি হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। “বেইজিং ডিক্লেয়ারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন (বিডিপিএ)” এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে  “জেনারেশন ইক্যুয়ালিটি” ক্যাম্পেইনটি এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে, চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ৪র্থ “ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ওমেন” শীর্ষক সম্মেলনে “প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন (বিডিপিএ)” কে নারীদের ক্ষমতায়ন ও প্রগতিশীলতায় পথ প্রদর্শক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ইউএন ওমেন সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ যুক্ত ক্যাম্পেইন #অরেঞ্জ-দ্যি-ওয়ার্ল্ড (#orangetheworld) শুরু করেছিল গতবছর ১লা নভেম্বর। যেখানে গ্লোবাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’স এর এই ১০টি মানদণ্ড পূরনের মাধ্যমে বৈষম্য বা অসমতায়ন দূর করা সম্ভব।  নারীর সমতায়ন বজায় রাখতে এবং সহিংসতা কমাতে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইতিহাস এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট 

ক্যালান্ডার
যেভাবে শুরুটা হয়েছিল!

১৯০৯ নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী “ক্লারা জেটকিনের” নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত নারীদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৮ই মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯১১ সালের ১৯শে মার্চ সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, জার্মানি এবং ডেনমার্কের দেশে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই সমাবেশে অংশ নিয়েছিল। এই সমাবেশটি হয়েছিল, নারীর প্রতিনিধিত্ব, অধিকার ও শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে। এমন কি ইউরোপের অনেক দেশেই এই ৮ই মার্চকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় এই দিনটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই দিনটিতে তখন কমিউনিস্ট দেশগুলো, তাদের নানা সমাজতান্ত্রিক কর্মকান্ড  উপভোগ করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে এই আন্দোলনটি একটি নারীবাদী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তারপর, ১৯৭৫ সালের ৮ই মার্চ জাতিসংঘ এই দিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করে এবং তখন থেকেই এটা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

সমতা-ন্যায়বিচার-স্বতন্ত্র-সমৃদ্ধি 

মেয়েদের ছবি
নারী-পুরুষ সমান একটি পৃথিবী

সময় এখন সমতায়নের। প্রতিদিনকার চিন্তাভাবনা এবং কাজকর্মের জন্য স্বতন্ত্রভাবে আমরা নিজেরাই দায়ী। সক্রিয়ভাবে আমরাই সমাজের নানা কুসংস্কার, চ্যালেঞ্জ, পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই কিংবা অবস্থার পরিবর্তন ও অর্জনগুলো যেমন উদযাপন করতে পারি তেমনি বেছেও নিতে পারি। আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের সাহায্যে গড়তে পারি, নারী-পুরুষ সমান একটি পৃথিবী। চলুন না, আমরা হয়ে যাই একে অপরের জন্য পরিপূরক! ক্যাম্পেইন স্লোগানে বললে, #ইচ_ফর_ইক্যুয়াল। ইক্যুয়ালিটি শুধু নারীদের সমস্যা নয়, এটি একটি ব্যবসায়িক ইস্যু! দেশের অর্থনীতি এবং জাতিগত সাফল্যের জন্য “জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” অপরিহার্য। যা ব্যতিত একটি জাতি কখনোই উন্নতি লাভ করতে পারে না। একটি “জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” দেশ বা জাতি সত্যিকার অর্থে, গুণেমানে অতুলনীয় হয়ে উঠে, এর থেকে চমৎকার আর কিছু কি হতে পারে? 

#ইচ_ফর_ইক্যুয়াল প্রতীকী 

#EachforEqual পোজ
#EachforEqual

#EachforEqual প্রতীকীটি একদম সহজ আর বেশ সাধারণ। আপনার দুটি হাত আপনার বুকের সামনে সমান্তরালভাবে রাখুন, একটির উপর একটি এমনভাবে রাখুন যেন, দুটি হাতের মধ্যে জায়গা থাকে। সমান্তরাল এই প্রতীকীটা বোঝাচ্ছে,  ফলাফল যাই হোক না কেন, সকলকে নারী অধিকারে সমতা আনতে হবে! আন্তর্জাতিক নারী দিবস “জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” তৈরি করতে বেশ কিছু, পরিকল্পনা এবং প্রোজেক্ট নিয়ে আশাবাদী। এই সব মিশনগুলো “জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” আরও দৃঢ়ভাবে ফিরিয়ে আনবে।  

বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২০

ইচ ফর ইক্যুয়াল পোজ
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস

বাংলাদেশের নামী দামী অনেক প্রতিষ্ঠান “জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” নিয়ে তৈরি সহিংসতা নিয়ে অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। যে সকল সংস্থা এবং এনজিওগুলো, যেমন- এএসকে (আইন ও সালিস কেন্দ্র), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, পার্টনার ফর প্রিভেনশন, ইউএন ওমেন, ইউএনএআইডিএস, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওডিসি সারা দেশে নানারকম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে। সপ্তাহব্যাপী দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যাচ্ছে এই সংস্থাগুলো। এসএএসএ সাপ্তাহিক দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ প্রকল্প এবং ইভেন্টগুলো আয়োজন করে যাচ্ছে। ইউএন ওমেন এবং এএসকে আয়োজিত মেডিকেল বুট ক্যাম্পগুলো করা হচ্ছে, ধর্ষণের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অফ মডিউলে। নারী দিবস উপলক্ষে সারা দেশে এই ট্রেনিংগুলো হয়ে থাকে।   

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২০ ও বিশ্বব্যাপী 

বিশ্বে নারী দিবস

২০২০ সাল আমাদের জায়গা করে দিয়েছে সেই সব যুগান্তকারী সুযোগের যেখানে, নারী অধিকার রক্ষা এবং সমতায়নের সম্পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। এই বছরটি বিশ্বব্যাপী সকল উদ্যোগের প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২০ কে বিশ্বব্যাপী জয় করে নিতে এবং জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি এবং সকলের মাঝে দায় দায়িত্ব সমান করে ভাগ করে নেয়ার সময়। #ইচ-ফর-ইক্যুয়াল ক্যাম্পেইনটি সারা বছর ধরে চলবে। নারী দিবস সমাপ্ত হওয়ার সাথে এটি শেষ হয়ে যায় না! সকলে মিলে একসাথে নিজেদের কার্যকলাপ, কথা বার্তা, ব্যবহারে পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই সামাজিকভাবে বাকিদের উপর এই প্রভাব পরে। ব্যাক্তিগতভাবে যখন আমরা নিজেদের মধ্যে এই পরিবর্তন আনবো তখন সেটা সমাজেও প্রভাব ফেলবে। তবে শুরুটা আমাদেরই করতে হবে! 

‘ইউএন ওমেন’ এর মতে আপনার যেকোন কাজ বা প্রোজেক্টে এই পয়েন্টগুলো অবশ্যই থাকতে হবে – 

১। প্রযুক্তির মাধ্যমে যে সকল নারীরা ডিজিটাল অগ্রগতি করছে এবং ইনোভেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের এই সাফল্যময় কাজে সর্বদা প্রেরণা যুগিয়ে যেতে হবে। এবং তাদের এই সাফল্য উদযাপন করতে হবে।

২।  নারী অ্যাথলেটদের বেতন, স্পন্সরশিপ বাকী সকল কিছুতে সমান স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।  

৩। নারীদের নিজস্ব শর্তাবলীতে এবং নিজের মত করে বাঁচতে সহায়তা করতে হবে। 

৪। নারীদের নিজেদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে সকলকে সহায়তা করতে হবে। 

৫। বাণিজ্যিক কাজে তাদের সৃজনশীলতার যথাযথ দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করতে হবে। এবং কাজের যথাযথ প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করতে হবে। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের লোগো এবং হ্যাসট্যাগ’স 

থিম
লোগো এবং হ্যাসট্যাগ’স

নারী দিবসের লোগোটি গোলাকৃতি, সার্কেলের ভেতর নারী লিঙ্গের প্রতীকী চিহ্ন দেওয়া এবং ডান দিকের সার্কেলে তীর  চিহ্ন দেওয়া। নারী দিবস উপলক্ষে, টুইটারে একটি জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ সক্রিয়ভাবে চালু আছে যা কিনা, নারী-লিঙ্গ-সাইন তৈরি করবে। ঠিক একই রকম থাকবে ইনস্ট্রাগ্রামেও। এই বছরের হ্যাশট্যাগগুলোর ক্ষেত্রে #EachforEqual, #IWD2020, #InternationalWomensDay এবং #SeeHer এগুলো যোগ হয়েছে। 

সমতায়ন অর্জন একদিনের নয়, পুরুষতান্ত্রিক এই পৃথিবীতে বসবাস করে তবেই এটা অর্জন করেছি। আসুন, আগেরকার সকল ধারণাগুলো বদলে ফেলি এবং ইতিহাসের পাতায় বন্দী করি। আসুন আমরা নতুন একটি জাতি, একটি নতুন পরিচয় এবং বৈষম্যহীন ও সমতার একটি বিশ্ব গড়ে তুলি। আপনি কি এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে লিঙ্গ সমান সমাজ বা নারীর সমতায়ন গড়তে প্রস্তুত আছেন? কমেন্টে মন্তব্য করে আমাদের জানিয়ে দিন।

Write A Comment