ঢাকা শহরকে নাকি জ্যামের শহর মনে করেন অনেকে। যদিও আমার কাছে এই শহরের চিত্র এবং সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন। সিগনালে যখন গাড়ি থামে, দেখা মেলে নানারকম গাড়ির। হোক তা গণ পরিবহন কিংবা ব্যক্তিগত। ঢাকার একটি সুবিধার কথা না বললেই নয় তা হল, বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় যাতায়াত করার জন্য বেছে নেয় বিভিন্ন যানবাহন। প্রতিটি যানবাহন বেশ সাশ্রয়ী এবং সস্তা। একশ বছর আগের কথাই যদি বলা হয়, তখন যাতায়াত করতেন সবাই ঘোড়ার গাড়িতে। এখনো ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায় তবে খুবই কম পরিমানে। চলুন না জেনে নেই! ঢাকা শহরের গণ পরিবহন সম্বন্ধে।
রিকশা
রিকশায় ঘোরার মত আনন্দ আর কোথায় আছে বলুন তো? কম দুরুত্বের স্থানে পৌঁছানোর জন্য রিকশার ব্যবহার হয়ে থাকে। যেহেতু সব মহাসড়কে রিকশা ঢুকতে পারে না তাই, এলাকার অলিগলিতে এর যাতায়াত বেশি। রিকশার একটা অন্যতম সমস্যা হল এটা বেশি দুরুত্বের যাতায়াতের জন্য উপযোগী নয়।
অটোরিকশা
মোটর চালিত একটি যানবাহন এই অটোরিকশা। ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকায় এই অটোরিকশার চলাচল রয়েছে। এমনকি বিদ্যুত চালিত অটোরিকশাগুলোর চলাচল বেশি এবং সকলের কাছে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই এর গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। ঢাকা শহরের গণ পরিবহন হিসেবে এই অটোরিকশাগুলো সবচেয়ে সস্তা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্য পৌঁছে যাওয়া যায়।
লেগুনা
লেগুনা হল আমাদের একমাত্র বাংলাদেশী পরিবহন যেটা শুধু বাংলাদেশেই দেখা মেলে। লেগুনা নির্দিষ্ট রুট ছাড়া চলাফেরা করে না। ১৪ সিটের একটা ভ্যানের মত বাহন। যেটা খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছায়। কম দুরুত্বের পথের জন্য এগুলো বেশ আরামদায়ক। যে রাস্তাগুলোতে জ্যাম থাকে বেশি সেই রাস্তার জন্য এই লেগুনাগুলো বেশ উপকারী।
সাইকেল
তরুণদের জন্য এই যানবাহনটি অনেক পছন্দের। বাংলাদেশে বিডিসাইক্লিস্ট নামে একটি বড় সাইকেল কমিউনিটি আছে যারা সকল তরুণদের অনুপ্রাণিত যুগিয়ে যায় সাইকেল চালিয়ে যাওয়ায়। কেননা এগুলো যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি আপনার স্বাস্থ্যকর। ভ্রমণ খরচের অনেকটা কমিয়ে আনে এই সাইকেল। বর্তমানে অনেকেই আছেন যারা দৈনন্দিন জীবনে সাইকেল চালাতে ভীষণ পছন্দ করেন। সব বয়সের মানুষ এখন সাইকেল চালাতে পছন্দ করে।
মোটর বাইক
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন যেমন উবার মোটো, পাঠাও, সহজ ইত্যাদি বাজারে আসার কারনে, ঢাকাবাসীর কাছে বাইক এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেকেই এই বাইকে আসা যাওয়া বেশ পছন্দ করছে। সময় মত গন্তব্যে পৌঁছাবার জন্য জন্য মটর বাইক এখন বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য ঢাকার রাজপথে বেড়েছে মোটরবাইকের সংখ্যা। যানজট এড়াতে বাইক এখন এক সস্তির নাম।
বাস
বাস আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং ব্যবহৃত একটি যানবাহন মাধ্যম। শহরের অর্ধেকের বেশি যাত্রী বাসে যাতায়াত করে থাকে। শহরের প্রতিটি মোড়ে বাস সুবিধা রয়েছে বলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বাসে ভ্রমণ করে থাকে। আপনি বাসের রুটে যেকোন এলাকায় পৌঁছে যেতে পারেন। রাস্তায় জ্যাম না থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। ঢাকা শহরের গণ পরিবহন এর অর্ধেকেটাই এই বাস।
প্রাইভেট কার এবং মাইক্রবাস
রাইড শেয়ারিং অ্যাপসগুলো ঢাকার মানুষদের জীবন বদলে দিয়েছে। নিজের গাড়ি না থেকেও বিলাসবহুল গাড়িতে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ এখন অনেকেই পাচ্ছে। আপনার সময় এবং বাজেটের পর নির্ভর করে এখন আপনি পেয়ে যাচ্ছেন গাড়ি। উবার এক্স, উবার প্রিমিয়াম এবং উবার এক্সএল ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আপনার ঘরের দুয়ারে এসে হাজির হয়। শাটল নামক অন্যান্য রাইড-শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি নির্দিষ্ট স্থানে নারীদের পরিবহন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
শাটল সার্ভিস
ঢাকার ভিআইপি রাস্তাগুলোতে, বিশেষত গুলশান, হাতিরঝিল, বনানী, নিকুঞ্জ, সেনানিবাস ইত্যাদিতে শাটল এর গাড়ি পাওয়া যায়। অফিসগামীদের জন্য বেশ আরামের একটি যানবাহন এটি। কম দূরত্বের পথেও এই শাটল সার্ভিসগুলো বেশ কার্যকরী।
ওয়াটার-টেক্সি
হাতিরঝিলে পানির ট্যাক্সি পাওয়া যায়। যানজটের এই শহরে যানজট মুক্ত একটি পরিবহন এবং রুট এই হাতিরঝিল ওয়াটার টেক্সি। ৪ স্টেশন রয়েছে এই ওয়াটার টেক্সির, যেগুলো হল গুলশান, বাড্ডা, গুদারাঘাট, নিকেতন, তেজগাঁও ও এফডিসি। যাতায়াতের পাশাপাশি এটি বেশ রিফ্রেশিং একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে এই ওয়াটার টেক্সির স্টেশনগুলো।
লোকাল ট্রেন
ঢাকার দীর্ঘতম কয়েকটি রুটের জন্য রেয়েছে স্থানীয় ট্রেন। এই ট্রেনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ে এবং পৌঁছায়। তেজগাঁওয়ের স্টপেজ নিয়ে মতিঝিল থেকে উত্তরায় যাত্রী বহন করে নামিয়ে দেয়। ঝামেলা মুক্ত একটি নির্ভেজাল যাতায়াত ব্যবস্থা।
মেট্রোরেল
দু-বছরের মধ্যে মেট্রোরেল চালু হওয়ার সাথে সাথে যাতায়াত মানুষের জন্য আরও সুবিধাজনক হয়ে উঠবে। এই মেট্রোরেলের কারনে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজেই যেতে পারবে। মেট্রোরেলের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের রেলের পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন- এলিভেটেড মেট্রোরেল, গ্রাউন্ড মেট্রোরেল, পাতাল রেলট্রেন ইত্যাদি অবকাঠামোগত পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা শহরের গণ পরিবহন এর মধ্যে আপনার পছন্দের কোনটি? কমেন্ট করুন জানিয়ে দিন।