সাগর পাহাড় ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর চাটগাঁ! সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের তীর্থভূমি এ শহর বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি, প্রাচ্যের রাণী, বীর প্রসবিনী, আধ্যাত্মিক রাজধানী, বন্দরনগরী, পর্যটন নগরী, কল্যাণময় নগরী এমন অসংখ্য বিশেষণে বিশেষায়িত। এতসব বিশেষণ-উপমার পরও চট্টগ্রামের মাধুর্য যেন ভেদ হয় না, হৃদয় গ্রাস করা আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী এই নগর মুগ্ধতার মায়াজালে আঁকড়ে ধরে এখানে পা রাখা প্রতিটি মানুষকে। সেই মুগ্ধতা থেকেই প্রত্যেকে মনের অজান্তে নতুন বিশেষণে, উপমায়, ছন্দে-গানে বিশেষায়িত করে যায় চট্টগ্রামকে। বাংলাদেশের অন্য সকল অঞ্চল বা নগর থেকে ভিন্নতা নিয়ে চট্টগ্রাম সকল দিক থেকেই স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে। চট্টগ্রামের জানা অজানা সকল দিক নিয়েই “জানা অজানা চাটগাঁ”।
চট্টগ্রামের ভাষা ও সংস্কৃতি
নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষার আধিপত্য বাংলাদেশের অন্য সকল অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে বেশি। এ অঞ্চলের ভাষা, বাংলা ভাষাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি চট্টগ্রামের সংস্কৃতিতে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। কবিতা, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, গান থেকে শুরু করে সাহিত্য সংস্কৃতির সকল শাখায় চট্টগ্রামের ভাষা জাতীয়, আঞ্চলিক এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবসময়ই উল্লেখযোগ্য ভাবে উঠে এসেছে।
চট্টগ্রামের সংস্কৃতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বব্যাপী বাঙালির মনে স্থান করে নিয়েছে। এ অঞ্চলের ভক্তিমূলক গান, বিশেষ করে ভান্ডারী গান মনের খেয়ালে গেয়ে ওঠে না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দায়। চট্টগ্রামের কবিয়াল গানের জনপ্রিয়তাও সর্বত্র। এ শহরের বাউন্ডুলে ছেলেদের কিছু দল আধুনিক বাংলা ব্যান্ডকে করেছে তুমুল জনপ্রিয়, একই ভাবে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সকল শাখা সমৃদ্ধ করতে চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের অবদান অনস্বীকার্য।
আন্দোলন সংগ্রামে চট্টগ্রাম
কোনো দেশ বা অঞ্চলের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস সে অঞ্চলের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট করে তোলে। বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে চট্টগ্রাম সবসময় গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। প্রাচীন কাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব বাড়ার সমানুপাতিক হারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়তে থাকে, তাই হাজার বছর ধরে ভিনদেশি বেনিয়াদের লোলুপ দৃষ্টি কখনো এড়ায়নি চট্টগ্রাম। এ কারণে হয়ত এ ভূমির সন্তানেরা জন্ম থেকেই সংগ্রামী।
মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, একইভাবে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখন বিশ্ববাসী দ্বিধাদ্বন্দ্বে তখন তাদের ধারণা বদলে দিতে ১৯৭১ সালের ১৬ অগাস্টের প্রথম প্রহরে পরিচালিত “অপারেশন জ্যাকপট” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রামে তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সবসময় সতর্ক ছিল, অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলে হানাদার বাহিনীকে কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়। মোটকথা দেশের ইতিহাসের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ভাগ্য নির্ধারণে চট্টগ্রামের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভূপ্রকৃতি
বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। কাজেই এখানে আপনি প্রাচীন নিদর্শন থেকে শুরু করে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন অনেক স্থাপনা পেয়ে যাবেন। পাহাড়, সাগর, সমতল ভূমির মাঝে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম খুব সহজেই বাংলাদেশের অন্য সকল শহর থেকে ভিন্ন রূপে ধরা দেবে আপনার চোখে। পাহাড়ি উঁচুনীচু ভূমিতে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরের সাধারণ একটা পাড়াও আপনার কাছে আশ্চর্য সৌন্দর্যমণ্ডিত মনে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁটল ট্রেন সহ পাহাড়ের ঢালে গড়ে ওঠা শহরের বিভিন্ন সরকারি কলোনিগুলো মোহিত করে খুব সহজে। এক কথায় বলতে গেলে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভূ-প্রকৃতি এই ব্রহ্মাণ্ডের যে কারও স্বপ্নের নগরীর সমতুল্য।
রন্ধনশৈলী ও আপ্যায়ন
চট্টগ্রামের মানুষের রসনা বিলাসের খ্যাতি সম্পর্কে সকলের জানা, তাদের খাবার ও রান্নার ধরন বাংলাদেশের অন্য সকল অঞ্চল থেকে ভিন্ন। অনেক চাটগাঁইয়া খাবার ও রন্ধনশৈলী বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। মেজবানি গোশত, কালাভুনা, শুঁটকি, মধুভাত, বেলা বিস্কুট, দুরুস, বাকরখানি, লক্ষিশাক, ফেলন ডাল, আফলাতুন হালুয়া, তালের পিঠা, নোনা ইলিশ চট্টগ্রামের নিজস্ব রন্ধনশৈলীতে প্রস্তুত এসব খাবার যেমন মুখরোচক, একই সাথে খাবার গুলো চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী বন্ধুদের আপ্যায়নের এই উপলক্ষ্য চট্টগ্রাম জুড়ে সবসময় চলতে থাকে। এছাড়া চট্টগ্রামের বিয়ে সহ যেকোনো আয়োজনের আপ্যায়ন সর্বত্রই আলোচিত।
উৎসবে আমেজে চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। কিন্তু চট্টগ্রামের ছোট-বড় নানা ধরনের মেলা-খেলা ও উৎসবের মাত্রা অন্য সকল অঞ্চলকে ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে সীতাকুন্ডের মেলা, রাউজান মহামুণির মেলা, লালদীঘির জব্বারের বলী খেলা ও মেলা, পটিয়ার সূর্য খোলার মেলা ইত্যাদি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে সৃষ্টি করে উৎসবের আমেজ। এছাড়াও চট্টগ্রামে যতটা জাতি-ধর্মের সহবস্থান রয়েছে এতটা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নাই, তাই জাতি ধর্ম ভেদে এখানকার জাতিগত ও ধর্মীয় উৎসব সর্বজনীন রূপ লাভ করে।
সর্বোপরি চট্টগ্রামের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, উৎসব বাংলাদেশের অন্য সকল শহর তথা অঞ্চলকে ছাড়িয়ে যায় খুব সহজে। তাইতো সমগ্র বাংলাদেশর মানুষ একটু অবকাশ পেলে বা বিভিন্ন উপলক্ষ্যে এ শহরে ছুটে আসতে মুখিয়ে থাকে সবসময়। এছাড়া বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব রাখার পাশাপাশি আবাসন খাতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম। এমন অনিন্দ্য সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের চট্টগ্রাম মহানগরে নিজস্ব একটা প্রপার্টি আপনার অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে করবে আরো বেশি স্থিতিশীল।