Reading Time: 4 minutes

অনেকেই চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক নগরী বলে থাকেন। তবে যথাযথ উদ্যোগ এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এই বন্দর নগরী এখনও পরিপূর্ণভাবে বাণিজ্যিক নগরী হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। তবে এ কথাও সত্য যে, অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশের উন্নত শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। অত্যাধুনিক কাঠামোগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং উন্নয়নশীল শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে। পৃথিবীর অন্যান্য শহরগুলোর মতো চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গা বাকি জায়গাগুলো থেকে বেশ উন্নত। আর তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কথা বলবো চট্টগ্রামের সুপরিকল্পিত এলাকা সমূহ নিয়ে, যেখান থেকে আপনি শহরটি সম্পর্কে বেশ ভালো একটা ধারণা পাবেন এবং চাইলেই আপনার পছন্দনীয় এলাকাটি বসবাসের জন্য বেছে নিতে পারবেন।    

নাসিরাবাদ 

Nasirabad, Chattogram
চট্টগ্রামের অন্যতম সুপরিকল্পিত এলাকা নাসিরাবাদ

চট্টগ্রামের নামীদামী জায়গার মধ্যে নাসিরাবাদ অন্যতম। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ার কারণে, চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাণচঞ্চল জায়গা হিসেবেও বেশ পরিচিত নাসিরাবাদ। এর পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে সুন্দর অবকাঠামোয় গড়ে ওঠা রাস্তা। যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি, এ এলাকায় অন্যান্য সামাজিক সুযোগ-সুবিধারও যেন কোন কমতি নেই। আপনি নিজে এসে যতক্ষণ না এ এলাকা ঘুরে দেখছেন, ততক্ষণ কোনভাবেই ধারণা করতে পারবেন না যে, কতটা সুপরিকল্পিতভাবে নাসিরাবাদের হাউজিং সোসাইটি গড়ে উঠেছে, যা কিনা সত্যিকার অর্থেই চট্টগ্রামের সুপরিকল্পিত নগরায়নে গড়ে ওঠা এলাকার মধ্যে অন্যতম। 

নাসিরাবাদের হাউজিং সোসাইটির এলাকাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা বিভিন্ন গ্রিডে বিভক্ত। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি শপিংমল, নামকরা রেস্টুরেন্ট এবং আড্ডা দেয়ার জন্য পারফেক্ট কিছু ক্যাফে। শুধু তাই-ই নয়, এসবের পাশাপাশি অত্র সোসাইটির মধ্যে সুপরিচিত কয়েকটি স্কুলও রয়েছে। এর মধ্যে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়া এসব কিছু ছাড়াও শহরের অন্যান্য অংশে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও রয়েছে বেশ সুবিধা, রয়েছে চট্টগ্রামের প্রধান কয়েকটি সড়ক এর সাথে যোগাযোগ। এ এলাকা থেকে জি ই সি সার্কেল অথবা বায়েজিদ বোস্তামি সার্কেলে যাওয়া আসার জন্য রিকশা ভ্রমণই যথেষ্ট।  এই দুইটি চৌরাস্তা থেকে শহরের ভেতরে যেকোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য এখান থেকে খুব সহজেই পরিবহন পাওয়া সম্ভব।

পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা  

Panchlaish R/A, Chattogram
নিজাম রোড এবং ফজলুল কাদের রোড ঘিরেই অবস্থিত চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা

পরিবার নিয়ে শহরতলীতে বসবাসের জন্য চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাটি বেশ জনপ্রিয়। এ এলাকাটির জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। এর মধ্যে রয়েছে প্রশস্থ রাস্তা, পরিকল্পিত আবাসিক ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট কমার্শিয়াল জোন এবং কমিউনিটি ব্যবস্থা।  আর এসব সুযোগ-সুবিধাই এই এলাকাটিকে অন্য এলাকা থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। শুধু তাই-ই নয়, বসবাসের জন্য চট্টগ্রামের সুপরিকল্পিত এলাকা হিসেবেও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা বেশ পরিচিত। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাস্তার মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। এখানের পারিবারিক জীবন এবং কমিউনিটি লিভিং এর প্রথা গর্ব করার মতো একটি বিষয়। এছাড়া ড্রেনেজ সিস্টেম এবং বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা শহরের অন্যতম পরিষ্কার জায়গা হিসেবে পরিচিত।  

খুলশী 

Khulshi, Chattogram
খুলশীতে রাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য

নান্দনিক আবাসিক এলাকা হিসেবে খুলশী বেশ সুপরিচিত। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এরিয়া, উত্তর খুলশী আবাসিক এরিয়া, যেখানে রয়েছে সমৃদ্ধশালী মানুষের বসবাস। সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকায় বসবাসের চাহিদা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে, আর এর পেছনের কারণ হিসেবে বলা যায় এ এলাকার বাণিজ্যিক মার্কেট, তরুণদের জন্য ঘোরাফেরার নতুন জায়গা এবং শহরের প্রধান অংশসমূহের সাথে এর সংযুক্তি অন্যতম। চট্টগ্রামের প্রধান রোডগুলোর মধ্যে অন্যতম জাকির হোসেন রোড, যা এই এলাকার মধ্য দিয়েই গিয়েছে। আর এখানকার মানুষের যাতায়াত এবং দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থাই মূলত এই এলাকাটিকে বেশ ব্যস্ত করে রাখে।   

চট্টগ্রামের খুলশী এমন একটি জায়গা যেখানে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক দুই ধরনের সুযোগ-সুবিধাই বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া খোলামেলা চমৎকার সব অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে খুলশীতে। আর এ কারণেই এই এলাকাটি অন্য এলাকাগুলো থেকে বেশ ভিন্ন। এখানে রাস্তার পাশ ধরে রয়েছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারখানা। এমনকি চট্টগ্রামে অবস্থিত বিপ্রপার্টির কর্পোরেট অফিসটিও রয়েছে খুলশীর একেবারে প্রাণকেন্দ্রে। শুধু তাই-ই নয়, ভারত এবং রাশিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসও এই এলাকার আশেপাশেই অবস্থিত।    

আগ্রাবাদ 

Agrabad, Chattogram
চট্টগ্রামের সবচেয়ে পরিকল্পিত এলাকাই নয়, প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত আগ্রাবাদ

তবে চলুন এবার কথা বলি চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রিমিয়াম লোকেশন এর ব্যাপারে। আর সেটা হচ্ছে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকা, যা চট্টগ্রামের সুপরিকল্পিত এলাকা-ই নয়, বরং এটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত আগ্রাবাদ সরাসরি সংযুক্ত আছে এখানে অবস্থিত বন্দর নগরীর সাথে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ এলাকা ঘিরে থাকা অবকাঠামো ব্যবস্থা বেশ উন্নতমানের। চট্টগ্রামের বেশিরভাগ দূতাবাস এ এলাকায় থাকার কারণে, আগ্রাবাদকে শহরকে ডিপ্লোম্যাটিক জোনও বলা হয়ে থাকে। আর এ কারণেই অত্র এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ ভালো।

শেখ মুজিব রোড হয়ে চট্টগ্রামের বাকি অংশের সাথে আগ্রাবাদের রয়েছে বেশ ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই অত্র এলাকায় বেশিরভাগ বাণিজ্যিক এবং অফিশিয়াল অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে চলাফেরায় তেমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। যদিও এটি বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবেই বেশি পরিচিত, তবে সমৃদ্ধ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এই এলাকার একটি নির্দিষ্ট অংশে আপনি বসবাসের জন্য আবাসিক সুযোগ-সুবিধাও পেয়ে যাবেন।    

চট্টগ্রামের এই এলাকাগুলোর মধ্যকার জীবনধারায় ভিন্নতা থাকলেও এর বৈশিষ্ট্য কিন্তু প্রায় একইরকম।  তবে বৈশিষ্ট্যগত তেমন পার্থক্য না থাকলেও, বেশ কিছু নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কারণে এ এলাকা সমূহ শহরের অন্য এলাকা থেকে বেশ ভিন্ন হয়ে উঠেছে। আর তাই বলতেই হয়, আপনি যদি চট্টগ্রামের সুপরিকল্পিত এলাকার সন্ধানে থেকে থাকেন, তবে দেরি না করে উপরে উল্লেখিত এই এলাকাগুলো থেকে ঘুরে আসতে পারেন।        

Write A Comment

Author