ভবন নির্মাণে প্রয়োজন হয় স্টিল, ইটসহ আরো অনেক কিছুই। কিন্তু এসব কিছুর ‘বাইন্ডিং’ বা একত্রীকরণ করে সিমেন্ট। সিমেন্ট ভবন নির্মাণে বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। আপনার ভবনটি কতটুকু টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হবে তা নির্ভর করে নির্মানকার্যে ব্যবহৃত সিমেন্টের গুণগত মানের ওপর। এজন্য নির্মিতব্য ভবনের জন্য সিমেন্ট কেনার আগে কোয়ালিটি টেস্টের মাধ্যমে সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সিমেন্টের কোয়ালিটি টেস্ট
সাধারণত ল্যাবরেটরিতেই সিমেন্টের কোয়ালিটি টেস্ট করা হয়। তবে সব সময় ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করার সুযোগ নাও থাকতে পারে, বিশেষত গ্রামে-মফস্বলে এ সুযোগ পাওয়া খুবই কঠিন। সেক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে যথার্থ উপায়ে অন-সাইট টেস্ট করানো। আসুন জেনে নেই কীভাবে সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই এর জন্য অন-সাইট টেস্ট করানো যায়।
উৎপাদনের তারিখ
সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই এর প্রথম ধাপ উৎপাদনের তারিখ দেখে নেয়া। উৎপাদন বা মোড়কজাত করার ৯০ দিনের মধ্যে সিমেন্ট ব্যবহার করে ফেলা উচিত, কেননা সময়ের সাথে সাথে সিমেন্টের মান কমে যায়।
রং
সিমেন্ট সবসময় সবুজাভ ধূসর রংয়ের হয়। অতিরিক্ত সবুজ বা ধূসর হলে বুঝতে হবে যে, এতে চুনাপাথর বা মাটি জাতীয় কোনো উপাদানের পরিমাণ কাঙ্খিত পরিমাণের চেয়ে বেশি আছে, যা সিমেন্টের গুণগত মান কমিয়ে দেয়।
ঘনত্ব
সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই এর সময় এর নির্দিষ্ট ঘনত্ব আছে কিনা তা দেখে নেয়া আবশ্যক। যদি এতে দলা বা পিন্ডের উপস্থিতি থাকে, এর অর্থ হলো সিমেন্টের আর্দ্রতা বেড়ে গিয়েছে, যা সিমেন্টের গুণগত মান কমিয়ে দেয়। যেসিমেন্টে ছোট বা বড় দলা থাকে, তা কোনোভাবেই ব্যবহার করা উচিত নয়।
মসৃণতা
সিমেন্ট সাধারণত মসৃণ টেক্সচার বিশিষ্ট হয়। হাতে নিয়ে এর মসৃণতার ব্যাপারটি যাচাই করে নেয়া তাই জরুরি। যদি সিমেন্টের টেক্সচার রুক্ষ মনে হয় তবে এতে বালির পরিমাণ বেশি আছে, যা সিমেন্টের গুণগত মান কমায়। সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই এর সময় তাই এ ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবে না।
তাপমাত্রা
সিমেন্ট সাধারণত শীতল তাপমাত্রার হয়। হাত দিয়ে ধরলে ঠান্ডা অনুভূতিই তাই হওয়ার কথা। আর এটির মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন এতে পানি মেশানো হয়নি।
ঘ্রাণ
সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই এর জন্য ঘ্রাণের ব্যাপারটি খেয়াল করতে ভুলবেন হন। সিমেন্ট থেকে মাটির ঘ্রাণ আসার কথা নয়। যদি আসে, তবে বুঝতে হবে যে এতে কাঙ্খিত অনুপাতের চেয়ে বেশি পরিমাণে বালি ও মাটি মেশানো হয়েছে। এর ফলে সিমেন্টের দৃঢ়তা কমে গেছে আর এটি নির্মাণকাজে ব্যবহার করলে ভবনের দৃঢ়তা ও দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্যও তা হুমকিস্বরূপ।
তলানি
পানিতে সিমেন্ট মেশালে কেমন টেক্সচারের তলানি পড়ে তা দেখা সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে, অল্প একটু সিমেন্ট নিয়ে তা পানির সাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর মিশ্রণটি গ্লাসভর্তি পানিতে ছেড়ে দিন এবং এক দিন বা ২৪ ঘণ্টার জন্য এটিকে এভাবেই রাখুন। একদিন পর খেয়াল করে দেখুন তলানিতে জমে যাওয়া সিমেন্টের টেক্সচার কেমন। সিমেন্টের পেস্টটি সম্পূর্ণ তলানিতে থাকা উচিত ও এর টেক্সচারে কোনো ফাটল থাকার কথা না। যদি ফাটল থাকে তবে সে সিমেন্টে ভেজাল আছে।
ভাসমানতা
সিমেন্ট পানিতে মিশিয়ে দেখুন তা পানিতে কয়েক মূহুর্ত ভাসে কিনা। যদি কিছুক্ষণ ভেসে তারপর তলানি হিসেবে নিচে পড়ে যায়, তবে সিমেন্টের গুণগত মান ঠিক আছে।
দৃঢ়তা
প্রথমে পানি মিশিয়ে সিমেন্টের একটি ব্লক তৈরি করুন। এর আয়তন হবে ২৫ মিমি × ২৫ মিমি × ২০০ মিমি (১” × ১” × ৮”)। এরপর ব্লকটি তিনদিন পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। তিনদিন পর যদি ব্লকটি অক্ষত থাকে তবে এটি ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজনকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য উপযুক্ত। অন্যথায় বুঝতে হবে যে, সিমেন্টের গুণগত মান ভালো নয়।
যদি আপনার হাতে সময় কম থাকে বা ল্যাবরেটরিতে কোনো কারণে যেতে না পারেন তবে উপরে বর্ণিত উপায়গুলোর মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই করতে পারবেন আপনি। ভবনের কাঠামোগত গঠন দৃঢ় ও টেকসই করার ব্যাপারটি অনেকাংশেই সিমেন্টের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ ব্যাপারে অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়। সিমেন্টের এ টেস্টগুলোর ব্যাপারে বা সিমেন্টের গুণগত মান যাচাইয়ের ব্যাপারে যেকোনো কিছু জানতে চাইলে প্রশ্ন করুন আমাদের কমেন্টস বক্সে।