Reading Time: 4 minutes

বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসেছে বিশাল এক প্রবৃদ্ধি যার ফলস্বরূপ এ দেশের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেশিরভাগ শহরাঞ্চলে আবাসন সহ অনেক কিছুর চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে আমাদের দেশের জনসংখ্যা দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে, শহরে এই আবাসন চাহিদা মেটানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। এই কারণেই আজকের এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আবাসন সমাধান নিয়ে আলাপ করব। কিন্তু তার আগে প্রথমে আমরা আলোচনা করব কয়েকটি সমস্যা নিয়ে!  

নগরায়ন  

ঢাকা
নিজের মনের মত বাসা ক্রয় করতে পারছে না

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দেশের বড় বড় শহরগুলো একনিষ্ঠ ভাবে সাহায্য করছিল। সময়ের সাথে এরা শিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপের হট স্পট হয়ে ওঠার জন্য এই শহরগুলো অর্থনৈতিকভাবে আরও বড় হয় এবং সেই সাথে আরও সংখ্যক লোকেরা এ শহরে পাড়ি জমান। গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসতে শুরু করে কিন্তু অন্যদিকে শহরে যথেষ্ট আবাসন ব্যবস্থা না থাকার জন্য শুরু হতে থাকে আবাসন সমস্যা। এমনকি ৯০ দশক থেকে ২০০০ সালে বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেটে অগ্রগতি হলেও এই আবাসন সমস্যা কখনো মেটেনি। এই সমস্যাটা বেশি আঘাত হেনেছিল মধ্যবিত্ত পরিবারে, ৮০ শতাংশ মানুষ এখনো বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। যাদের নিজের একটি ঠিকানা পাবার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তারা আকাশচুম্বী দাম পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার জন্য নিজের মনের মত বাসা ক্রয় করতে পারছে না।

দরিদ্রতা 

করাইল বস্তি
যথাযথ আবসন নিশ্চিত করতে হবে

নগরায়নের সাথে আর একটি সমস্যা যেটি এসেছে তা হল ঢাকার মত বড় শহরগুলোতে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক স্থানান্তর। যারা নতুনভাবে জীবন শুরু করতে ঢাকায় এসেছেন। এই কারনেই দেশের দক্ষিণে জেলে এবং কৃষকদের জীবন-জীবিকা নষ্ট হয়েছে। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র মানুষও নতুন সুযোগের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান। এবং যখন আবাসনের কথা ভাবেন তখন তাদের পড়তে হয় গভীর সমুদ্রে পড়ার মত এক বিপদে! দরিদ্রদের যথাযথ কম দামের আবাসন প্রয়োজন। বাংলাদেশের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য যথাযথ আবসন নিশ্চিত করতে হবে। এরপরের সেকশনে এই বিষয় নিয়ে আলাপ করছি। 

বাংলাদেশের জন্য আবাসন সমাধান

এইচবিডি হাউজিং সিংগাপুর
আবাসন সমাধান এইভাবেই আনতে হবে

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত সমৃদ্ধ হচ্ছে তবে বেশীরভাগ মুনাফা হচ্ছে জমির মালিক এবং ডেভেলপারদের। তাদের বেশীরভাগ সময় উদ্দেশ্য থাকে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোকদের চাহিদা পূরণ না করে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা পূরণ করা। তবে এনজিও এবং বেসরকারি খাতের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের যথাযথ নীতি নির্ধারণের ফলে আবাসন সংকট কমিয়ে আনা সম্ভব। এই কারনেই আমরা দেখব যে এই বিভিন্ন খাত কীভাবে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত আবাসন সমাধান সরবারহ করতে পারে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আবাসন সমাধান এইভাবেই আনতে হবে। 

এনজিও থেকে উদ্যোগ

দেশের দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি মোকাবেলায় বাংলাদেশে কর্মরত অসংখ্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে  আসছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আবাসন সমাধান যখন লক্ষ্য তখন এই এনজিওগুলো জনগণের সহায়তায় প্রথম এগিয়ে আসে। এখানে ইউএনডিপি অফিস থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, এনজিওগুলি কীভাবে কম খরচে আবাসনের উদ্যোগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে এই সম্বন্ধে।  এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নথিভুক্ত হল আরবান এবং ব্র্যাকের মত দুটি সংস্থা। আরবান তার মাইক্রো ক্রেডিট সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে মিরপুরে ৪২ জনের একটি সদস্যের জন্য স্ব-আবাসন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেছে। একইভাবে, ঝিনাইদহ সিটিওয়াইড হাউজিং প্রক্রিয়াতে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নির্মাণের জন্য ব্র্যাক ঝিনাইদহে পৌরসভার সাথে অংশীদার হয়েছে।

পাবলিক হাউজিং

পাবলিক হাউজিং শব্দটি বেশিরভাগ মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জাগাতে পারে। অনেকেই ভাবে এগুলোতে বসবাস করা সম্ভব নয়। অপরাধমূলক এলাকা। তবে একটি শহর-রাজ্য জনসাধারণের আবাসন সমস্যাটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সিঙ্গাপুরে ঢাকা এখন যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তার অনুরূপ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। শহরে উপচে পড়া ভিড়ের ফলে বেশিরভাগ মানুষ বস্তি এবং জনাকীর্ণ বাড়িতে বসবাস শুরু করেছিল। সরকার আবাসন ও উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সিঙ্গাপুরবাসীদের জন্য উচ্চমানের আবাসন নিশ্চিত করা। এমনকি পথ ধরে অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পরেও, এইচডিবি দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জনসাধারণকে আবাসন স্থানে বসবাস করার সুযোগ এনে দিয়েছিল। যা বহু আর্থিক নীতি, ভর্তুকি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

বেসরকারি খাত

দেশের রিয়েল এস্টেট খাতটি এখনও বেশিরভাগ বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানি এবং আর্থিক সংস্থাগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়। এই নগর আবাসন সংকট সমাধানে তাদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বেশিরভাগ ডেভেলপার কোম্পানি এখনও বাংলাদেশি সমাজের উচ্চ স্তরকে লক্ষ্য করে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক লোককে কিছুটা এড়িয়ে চলে এছাড়া বাংলাদেশ হোম লোন গ্রহণ করাও খুব কঠিন। যদি রিয়েল এস্টেট খাত এবং আর্থিক সংস্থাগুলি হাতে হাত রেখে কাজ করতে পারে তবে একটি বাড়ির মালিকানা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জন্য আরও সহজলভ্য হতে পারে। মর্টগেজ লোন গ্রহণ সহজ কর‍তে হবে অনেকের পক্ষে যা বাড়ি কেনায় সহায়তা করতে পারে এবং স্বল্প ব্যয়ের আবাসনের সহজলভ্যতা করতে হবে এতে করে অনেক লোকের পক্ষে বাড়ি কেনা সম্ভব হবে। বিপ্রপার্টি টকস এর আলোচনার একটি পর্বে এমটিবি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন কীভাবে তাদের নিজ নিজ শিল্পে বিভিন্ন সংকট সমাধানের জন্য ফিনান্স এবং রিয়েল এস্টেট শিল্পখাত একসাথে কাজ করতে পারে!

শহুরে আবাসন এখনও বাংলাদেশে একটি বিশাল সমস্যা। আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ সম্পত্তি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা এবং সংস্থাগুলির সাহায্য নিতে পারছে না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আবাসন সমাধান হিসেবে এই কয়েকটি উপায় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে তবেই একটি দেশের উন্নয়ন সত্যিকারের অর্থে সম্ভব। এর মতো আরও সামগ্রীর জন্য, বিপ্রপার্টি ব্লগের সাথে আপডেট থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হন। নীচের মন্তব্যে আমাদের আজকের নিবন্ধটি সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনাগুলি জানিয়ে দিন।

Write A Comment