Reading Time: 4 minutes

ডেকোর স্টাইলগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে কী জানেন? আপনাকে আপনার মনের মত করে বাঁচার, বসবাস করার সুযোগ করে দেয়। এই ধরুন আপনার বাসাটি বেশ ছোট তাহলে আপনি এমন স্টাইল খুঁজে নিতে পারেন যেটায় বাসাটা একটু বড় বড় দেখাবে। ছোট বড় সকল সমস্যার সমাধান কিন্তু আপনি চাইলে আর্টিস্টিক উপায়ে বের করে আনতে পারনে। তেমনি আর একটি বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করতে দেখা যায়, যে “এই শহুরে জীবনে থাকতে থাকতে প্রাকৃতিক জীবনকে বা সেই গ্রামীণ জীবনকে ভুলতে বসেছি। এছাড়াও, শহুরে জীবনে সেই গ্রামীণ বা প্রাকৃতিক জীবনকে খুঁজেই বা কীভাবে পাবো”! এমন অভিযোগগুলোর সমাধান খুঁজতেই আসলে আজকের আর্টিকেল লেখা! শহুরে জীবন বা ছোট বাসা যেকোন স্পেসে কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ খুঁজে পেতেই কিন্তু, এই ডেকোর স্টাইলগুলোর অস্তিত্ব। শহুরে জীবনে সেই প্রাকৃতিক আমেজ আনতে কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল এর আগমন। ঘরের ভেতর নিজের এক প্রাকৃতিক ভুবন গড়তেই বেছে নিতে পারেন এই ডেকোর স্টাইলটি।

সিঁড়ি ঘর
শহুরে জীবনে সেই প্রাকৃতিক আমেজ আনতে কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল এর আগমন

কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল আসলে কী? 

এক হচ্ছে শহুরে জীবন আর এক হচ্ছে গ্রামীণ জীবন। শহুরে জীবনে যদি থাকে উঁচু উঁচু দালানকোঠা, বড় বড় গাড়ি ঘোড়া অন্যদিকে গ্রামীণ জীবনে থাকে প্রকৃতির শুদ্ধ উপাত্ত। চারিদকে সবুজ, সকালের পাখি ডাকে ঘুম ভাঙা আরও কত কী!  এগুলো তো গেল জীবনের উপকরণ। গ্রামীণ জীবনযাপনও কিন্তু বেশ সাধারণ আর ছিমছাম। নেই কোন কৃত্তিমতার ছোঁয়া। এমন কী ঘরটাও সাধারণ প্রাকৃতিক উপাদানে নির্মিত। এই তো ছিল আমাদের দেশীয় কথা। দেশের বাইরে এই গ্রামীণ জীবনকেই বলা হয় “কান্ট্রি লাইফ”। মোট কথা ডেকোরে ওল্ড ইংল্যান্ড বা ভিন্টেজ ইউরোপের কটেজ ভাবটা থাকবে। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে গিয়ে নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে বসবাস করার যে আনন্দ তা কেবল এই বাইরের দেশগুলোর কান্ট্রি সাইডে বসবাস করার ফলেই পাওয়া যায়। কান্ট্রি লাইফের থেকে উপাদান নিয়েই সাজানো হয়েছে কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল কে। শহুরে জীবনেও কান্ট্রি লাইফকে সঙ্গী করতে এই স্টাইলক বেছে নেওয়া যায়।

কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল – ইতিকথা

প্যাস্টেল এবং উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারে একটা ঘরোয়া ডেকোর স্টাইল তৈরি করতেই কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইলের শুরু। এই ডেকোর স্টাইলে আপনি দেখতে পারবেন ইট, কাঠ ও পাথরের ব্যবহার। বিম বা খাম্বাকে দেয়ালে লুকিয়ে না রেখে বরং ডেকোরে সাজের উপকরণ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা। এই কান্ট্রি ডেকোর স্টাইলকে আপনি কখনো মডার্ন আবার কখনো অথেনটিক আবার কখনো ট্র্যাডিশনাল স্টাইলেও ব্যবহার করতে পারেন। কান্ট্রি ডেকোর স্টাইলে নতুনত্ব আনার জন্য বাকি স্টাইলগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

লিভিং রুম
আসবাবের গঠনে কোনভাবেই আধুনিক সময়ের কোন উপাদান থাকবে পারবে না

কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল –  মূল মন্ত্র 

সহজ সরল গ্রামীণ জীবনকে একটু আধুনিকতার আদলে মুড়িয়ে হোম ডেকোরে ব্যবহার করতেই বেছে নেওয়া যায় কান্ট্রি ইন্টেরিয়র স্টাইল। এই স্টাইলের আসবাবের দেখা যাবে আগেকার নকশা। আসবাবের আকার থেকে শুরু করে প্যাটার্ন সবকিছুতে থাকবে গ্রামীণ আর সেকেলে ভাব। যদিও এই ডেকোরে হোম অ্যাপ্লায়েন্স রাখাটা কিছুটা কঠিন হয়ে যায়। কেননা, আধুনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সগুলো এই স্টাইলের আউটলুকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাই, হোম অ্যাপ্লায়েন্সগুলো বেশ সাবধানে লুকিয়ে রাখতে হবে। তবে আসবাবের গঠনে কোনভাবেই আধুনিক সময়ের কোন উপাদান থাকবে পারবে না। আসবাবগুলো একটু চওড়া বা মোটা আকারের হবে। আসবাবের রঙেও থাকবে প্রাকৃতিক রং। কাঠ রঙা আসবাব প্রাধান্য পাবে বেশি। এই স্টাইলে কোনভাবেই কৃত্তিম উপাদান ব্যবহার করা যাবে না। এই ডিজাইনে প্লাস্টিক, লিনোলিয়াম বা গ্লাস এই জাতীয় ম্যাটেরিয়াল একদমই ব্যবহার করা যাবে না। মেঝে থেকে শুরু করে সবকিছুতে থাকবে কেবল প্রাকৃতিক উপাদান। মেঝে দেয়াল বা সিলিং কাঠের ব্যবহার করাই শ্রেয়। 

যেভাবে কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল এ ঘর সাজাবেন 

যারা খুব বেশি ট্রেন্ডি ডেকোর পছন্দ করেন না, তাদের জন্য আজকের এই ব্লগ। যারা এখনও কাঠের আসবাব ভালোবাসেন, একদম প্রাকৃতিক আমেজ রাখতে চান, কোন রঙে কিংবা ঢঙে পরিবর্তন পছন্দ করেন না, তাদের জন্যও ঘরের ভেতরটা বদলে ফেলার কিছু জাদুকরী হোম ডেকোর টিপস আছে!

প্রকৃতি থেকে রঙ বেছে নিন

প্রকৃতির গায়ে যে রঙে আঁকা থাকে সবকিছু সেখান থেকে আপনাকে রঙ বেছে নিতে হবে। প্রকৃতিতে আপনি পেয়ে যাবেন নানা ধরণের রঙ। এমনকি কম্বিনেশনও পেয়ে যাবেন। কালার কনট্রাস্ট নিয়েও তখন আর ভাবনা নেই। গাছের কথাই ধরুন, গাছের পাতা যদি হয় সবুজ তো গাছের ডালের রঙ হয় বাদামী। এখানেই কিন্তু রঙের কম্বিনেশন পেয়ে গেলেন। আর প্রকৃতি থেকে রঙ ধার নিলে ঘরের ভেতর ও কিন্তু প্রাকৃতিক আমেজ তৈরি হবে।  

উডেন ফ্লোর বা ওয়াল রাখুন 

ঘরের সাজে আনুন রাস্টিক লুক ! এই লুক আনতে ঘরের কোথাও না কোথাও আপনাকে কাঠের কিছু রাখতেই হবে। তা হতে পারে “কাঠের মেঝে” বা “উডেন ফ্লোর” অথবা, “কাঠের দেয়াল” বা “টেরাকোটা” যেকোনটা বেছে নিতে পারেন। এগুলো যদি বেশ কঠিন কিছু মনে হয় তাহলে, কাঠের আসবাব রাখুন। কিন্তু, আসবাবে আলাদা কোন রঙ দেওয়া যাবে না, কাঠের রঙটাই শুধু একটু পলিশ করে নিন।

সিলিং রাখুন কাঠের 

সিলিংটা কোনভাবেই রং করা যাবে না। উডেন সিলিং হলে ঘরের ভেতর একটা ভিনটেজ ভাব বিরাজ করবে। এই ডেকোর স্টাইলে এই আমেজটা বেশ প্রয়োজনীয়। আপনি চাইলে সিলিং এর মেকওভার করতে পারেন। সিলিং এর চারিদিকে বর্ডার যোগ করতে পারেন। এম্বিয়েন্ট লাইটিং করতে পারেন। এটা সবসময় সিলিংকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। লাইটিং এর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন ওয়ার্ম টোনের লাইটগুলো বেশ সুন্দর দেখায়। 

নিউট্রাল রঙগুলো বেছে নিন 

একদম হালকা কোন রঙ বেছে নিন ঘরের জন্য। নিউট্রালবেইস রঙগুলো বেশ মানিয়ে যায় ঘরের ভেতর। আপনি ঘরের দেয়ালের জন্য রঙ বেছে নেওয়ার পাশাপাশি আসবাবের জন্যও একই রঙ বেছে নিতে পারেন। ঘরের জন্য রঙগুলো হালকা হওয়ার সাথে সাথে উজ্জ্বল হলে বেশ ভাল দেখায়। রাস্টিক ডেকোরের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে নিউট্রালস রঙ! নিউট্রালস প্যালেটের অনেকগুলো শেড রয়েছে আপনার পছন্দমত একটি কিংবা কয়েকটি বেছে নিন। 

কান্ট্রি ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। ঘরোয়া একটা আমেজ নিশ্চিত করতে আপনি বেছে নিতে পারেন এই ডেকোর স্টাইলটি। 

Write A Comment