কীভাবে এই শহরগুলো একটু একটু করে বিকশিত হয়েছে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা বেশ জটিল। অনেক বিষয় এবং অনেক তথ্য রয়েছে যেগুলো, একটা অন্যটার সাথে পরস্পর সম্পৃক্ত। এই পরস্পর জড়িত বিষয়গুলোর যেকোন একটি যদি বলা হয় এমন হতে পারে পুরো ব্যাপারটি আমরা গুলিয়ে ফেলবো। যদিও, কোন বিশেষজ্ঞ বা তাত্ত্বিকরা একটি শহরের উন্নয়নের পেছনের কারণ বা উপাদান সম্বন্ধে সঠিক তথ্য বা প্রমাণ দিতে পারেননি। নিওলিথিক বিপ্লবের সময় অনেকে প্রথমে কৃষি কাজ শুরু করে। পানি যেখানে উপলভ্য ছিল তার আশেপাশে ঘনবসতি গড়তে শুরু করে যাতে তারা প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা নিতে পারে। পানির কাছে বসবাস করার ফলে, এখানের বাসিন্দারা মৃৎশিল্পের সূচনা করেছিল। কাঠ ও পাথর ব্যবহার করে নির্মাণ করেছিল বাড়িঘর। যার ফলে সেখানের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্রুত গতিতে। অল্প সময়ের ভেতরই তাদের মতাদর্শ, দর্শন পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি তৈরি হতে থাকে। এভাবেই একটা শহর থেকে বহু শহর তৈরি হতে থাকে। তেমনি আজকের এই শহর তৈরি হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই বেশ কিছু উপাদান রয়েছে। চলুন জানা যাক একটি শহরের উন্নয়নের ৫টি নিয়ামক কী কী?
অর্থনৈতিক দিক

শুরু থেকেই যখন মানুষ অর্থনৈতিক দিক এবং এর প্রভাব নিয়ে ভাবতে শুরু করল তখন থেকেই ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বাড়তে থাকে, পাশাপাশি উপযুক্ত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রগুলো বিকশিত হয়। যার ফলে গ্রাম হয়ে ওঠে শহর আর শহর হয়ে ওঠে আরও বড় শহর হিসেবে। কৃষি বিপ্লবের সময় কৃষি কাজ হয়ে ওঠে অর্থ উপার্জনের ও খাদ্য সংগ্রহের প্রাথমিক মাধ্যম। এবং এই কৃষিকাজ যেখানে করা হতো ঠিক তার আশেপাশেই জনবসতি গড়ে ওঠতে লাগলো। কারণ, কৃষিকাজ সম্পন্ন করতে অনেক সময় এবং শ্রম প্রয়োজন হতো। তাই মানুষজন কৃষিকাজে পুরো সময় দিতে কৃষি জমির আশেপাশেই বাসাবাড়ি করে থাকা শুরু করেন। যার ফলে প্রথমে গ্রাম হিসেবে ঘনবসতি তৈরি হতে শুরু করল। যা পরবর্তীতে গিয়ে শহরে পরিণত হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ঘিরে শহর গঠিত হওয়ার মতাদর্শ কিন্তু এখনো বহাল আছে। এভাবেই বড় বড় শহরগুলো একটু একটু করে গঠিত হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান

অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভৌগলিক অবস্থান রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ইতিহাসের পাতা ঘুরে জানা যায় বিশ্বের বড় বড় শহরগুলি প্রাকৃতিক সম্পদগুলো যেমন, নদী, সমুদ্র বা পাহাড়ের উপত্যকার চারপাশে গড়ে ওঠেছিল হয়েছিল। এই নদী ও সমুদ্র বন্দরগুলি যেকোন শহরকে যেমন টিকিয়ে রাখতে পারে তেমনি সকল জনগোষ্ঠীকে। এছাড়াও, পরিবহণ এবং শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রদান করে একটি শহরকে সহজেই উপকৃত করতে পারে। অন্যদিকে পর্বতগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আশ্রয় এনে দেয় আর প্রদান করে সুরক্ষা। শহর বা শহর গঠনের ক্ষেত্রে জলবায়ুও অনেকাংশে অবদান রাখে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন

একটি শহরের উন্নয়নের ৫টি নিয়ামক এর মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি একটি শহরের উন্নয়নের পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। কিন্তু, এই অগ্রগতিটি কখনই অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যতীত সম্ভব নয়। এর অর্থ হল, রাস্তা, রেলপথ, সেতু, সুড়ঙ্গ, পানি সরবরাহ, নর্দমা, বৈদ্যুতিক গ্রিড এবং টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির যেকোন একটি ব্যতীত কখনই একটি শহর অবকাঠামোগত দিক থেকে এগুতে পারে না। এই সমস্ত উপাদান নিয়েই একটি শহরের অবকাঠামো গড়ে ওঠে।
সরকারী উদ্যোগ

সরকারী অফিস, কূটনৈতিক এলাকা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরির মতো বিভিন্ন উদ্যোগ যেকোন অঞ্চলের পুরো আকার পরিবর্তন করতে পারে। চীনের শেনজেন গ্রামের কথাই ধরুন, মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই গ্রামকে প্রায় তিন দশক আগে এই শেনজেনকে বিশ্বের প্রযুক্তি উত্পাদনকারী রাজধানীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এমন অসংখ্য সরকারী উদ্যোগ একটি শহরকে একটু একটু করে একটি মেগাসিটিতে পরিণত করে। এই সমস্ত সরকারী উদ্যোগ না থাকলে হয়তো একটি শহর কখনই সমৃদ্ধ এবং উন্নত অঞ্চল হয়ে উঠতে পারতো না। তেমনিভাবে বাংলাদেশেও প্রচুর উদাহরণ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন সরকারী উদ্যোগের ফলে অনেক ক্ষেত্র এবং অর্থনৈতিক কাঠামো বদলেছে।
পর্যটন

একটি শহর বিকাশের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে পর্যটন খাত। একটি শহরে যেকোন অঞ্চল যদি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে তাহলে তা দেশের অর্থনৈতিক খাতের জন্য আশির্বাদ। উদাহরণস্বরূপ, বালি হ’ল লেজার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ যা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। দেশের মোট অর্থনীতির ৮০% অর্জন করা হয় এই পর্যটন কেন্দ্র থেকেই।
শহরের বিকাশের ক্ষেত্রে এই ৫টি নিয়ামক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি শহরের উন্নয়নের ৫টি নিয়ামক এর একটি যদি ঠিক মত গঠিত না হয় তবে পুরো শহরের ভিত্তি বেশ দূর্বল হয়ে পরে।