করোনাভাইরাস যত ছড়িয়ে পড়ছে, ততই একটি স্লোগান আরও জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, ঘরে থাকুন! পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের নীতিনির্ধারকেরাই ঘরে থাকার প্রতি জোড় দিচ্ছেন। আর এর সাথে তাল মিলিয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মচারীদেরকে নতুন এক পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম নামের এই নতুন পদ্ধতির সাথে কারো কারো পূর্ব পরিচিত থাকলেও বাকি সবার জন্য আসলে এটি একদমই নতুন। ঘরে থেকে কাজ করার সুবিধা অসুবিধা দুইই আছে। যদিও অফিস যাওয়া কিংবা ক্লান্তিকর ট্রাফিক জ্যামের বালাই নেই, তবুও ঘরে থেকে শুধুমাত্র কাজের প্রতি মনোযোগ দেয়া আসলেই অনেক কঠিন একটি বিষয়। কেননা আপনার হাতে থাকে অনেক অপশন, চাইলেই ইউটিউব বা নেটফ্লিক্স খুলে বসতে পারেন। তাই মানুষিকভাবে চাঙ্গা থাকতে এবং ঘরে বসে কাজ করার সময় প্রোডাক্টিভ থাকতে হলে কী করা উচিত? এ সম্পর্কে ৫টি কার্যকরী টিপস নিয়েই এ লেখাটি।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করুন
বাসা থেকে কাজ করার প্রথম টিপসটি হল, হোম অফিসের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করা। সবরকমের ঝামেলা থেকে মুক্ত এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখান থেকে কাজে মন বসাতে কোন সমস্যা হবে না। একটি নির্দিষ্ট স্থানকে ডেডিকেট করুন শুধুমাত্র ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর জন্যে যেখানে আপনি ঘরের কাজ থেকে আলাদা হয়ে অফিসের কাজ করতে পারবেন এবং অফিসের কাজ শেষ হলে আবার ঘরের কাজে মন বসাতে পারবেন। তাই বেডরুম, টিভি আছে এমন রুম কিংবা বিনোদনের জায়গা এরিয়ে চলা ভাল। খুব ভাল হয় রিডীং রুমকে একাজে ব্যবহার করতে পারলে।
যে কোন মূল্যে বেডরুমে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। তবে অনেকের জন্য বেডরুম ছাড়া অন্য রুমে গিয়ে কাজ করা বিলাশিতার নামান্তার, তাদের সেই সুযোগও হয়ত নেই, সেক্ষেত্রে আপনি “অফিসে কাজ করতে যাচ্ছেন” এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করুন। কাপড় বদলে, ফ্রেশ হয়ে, কফি বানিয়ে বা অন্য যে কোন উপায়ে, আপনার মনকে বুঝ দেয়া জরুরি যে যদিও এটি শোবার ঘর, কিন্তু এখন এখানে কাজ করতে হবে।
পরিবারের সদস্যদের সাথে বোঝাপড়া
পরিবারের অন্য সদস্য কিংবা রুমমেট, মেসমেটের সাথে থাকা অবস্থায় ওয়ার্ক ফ্রম হোম কঠিন ব্যবাপার হয়ে দাড়াতে পারে। তারা হয় আপনাকে ঘরে কাজ করতে দেখে অভ্যস্ত নয়। তাই আপনাকে কম্পিউটারের সামনে দেখে তারা হঠাৎ করে নাও বুঝতে পারেন যে আপনি কাজ করছেন। বিশেষ করে তারা যদি আগে কখনোই আপনাকে ঘর থেকে কাজ করতে দেখে থাকেন তাহলে কখনোই সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিড স্ক্রলরত আপনি আর বাসা থেকে অফিসের কাজ করা আপনি এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন না।.
এজন্যই বাসা থেকে কাজ শুরু করার আগেই পরিবারের সদস্যদের সাথে বোঝাপড়া করে নেয়া উচিত। সবাই যেন বুঝতে পারে যে আপনি ঘর থেকে কাজ করছেন, সেজন্য যা যা করা প্রয়োজন, করুন। তাদের বলুন অফিসের যে নির্দিষ্ট সময় তখন যেন কোনভাবেই আপনার মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটানো না হয়।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্রেক নিন
ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর ক্ষেত্রে প্রডাকটিভিটি বাড়ানোর জন্য অভিজ্ঞ সবাই খুব করে জোর দেন সময়ে অসময়ে ব্রেক নেয়ার উপর। এবং না, ফেসবুকে স্ক্রল করা কিংবা নেটফ্লিক্সে মুভি, সিরিয়াল দেখার অর্থ ব্রেক নয়! বরং আপনার চেয়ার বা ওয়ার্ক স্টেশন থেকে উঠু, বারান্দা কিংবা ছাদে গিয়ে ঘোরাঘুরি করুন, আপনার প্রিয়জনের সাথে কথা বলুন, আপনার কোন পোষা প্রাণী থাকলে তার সাথে খুনসুটি করুন, একটি অর্থবহ ব্রেক নিন!
প্রতি দেড়-দুই ঘন্টায় ১৫ মিনিটের ব্রেক নিলেই মন থাকে প্রফুল্ল, কর্মদক্ষতা বাড়ে বহুগুণে।
পুরোপুরি একা থাকা থেকে বিরত থাকুন
অফিসে না যেতে হওয়া, প্রতিদিন শতশত মানুষের সাথে দেখা না হওয়া, সারাদিন ঘরে বসে আরাম আয়েস করাকে প্রথম প্রথম অসাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু সময় যাবার সাথে সাথেই এর কুফল চোখে পড়তে শুরু করে। আপনি যদি স্বকেন্দ্রিক মানুষও হয়ে থাকেন, টানা অনেকদিন মানুষের সাথে দেখা না হবার কুফল হতে পারে ভয়াবহ। আপনার কর্মশক্তি ও কর্মক্ষমতা দুইই হ্রাস পেতে পারে অস্বাভাবিক হারে।
সেজন্য শুধু কাজ নয় বরং মানুষে মানুষে যোগাযোগের দিকেও লক্ষ্য রাখুন। বাড়ির সবার সাথে তো নিয়মিত কথা বলবেনই, সাথে সাথে নিশ্চিত করুন আপনার সহকর্মী, বন্ধু বান্ধব, সবার সাথেই যেন পূর্ণ যোগাযোগ থাকে, তা সেই যে মাধ্যমেই হোক না কেন।
প্রতিদিনের প্ল্যান আগেভাগেই করে ফেলুন
আগেভাগে পরিকল্পনার চেয়ে কার্যকরী কিছু নেই। এমন প্ল্যানিং আপনার দিনকে চমৎকারভাবে সাজাতে সহায়ক। আমরা অফিসে যেভাবে সময় ব্যয় করি তার সাথে বাসায় ব্যয় করা সময়ের বিশাল ব্যবধান আছে। আমরা সবসময়ই আমাদের আশেপাশের মানুষের দ্বারা বেশ বড়ভাবে প্রভাবিত। তাই ঘরে থেকে কাজ করতে নিলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হতেই পারে। এজন্যই আগেভাগে দিনের প্ল্যান করে ফেলুন একটি কর্মক্ষম দিন কাটানোর জন্য। দিনের কোনভাগে কোন কাজ করবেন, কখন করবেন মিটিং, ঘরের বিভিন্ন কাজই বা কখন করবেন তার সবই যেন আগেভাগেই জানা থাকে আপনার।
ঘর থেকে কাজ করার অনেক অকল্পনীয় সুবিধা আছে। আপনি স্যুট পরে কাজ করছেন নাকি স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি, তা কেউ দেখতে আসবে না। বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে সময়ের মধ্যে অফিস পৌঁছানো, কার্ড পাঞ্চ করা কিংবা ফিঙ্গার প্রিন্ট, এসবেরও কোন বালাই নেই। চাইলে ঘর থেকে সর্বোচ্চটা দেয়া যায়। কিন্তু আবার এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারলে আপনার ওয়ার্ক ফ্রম হোম হবে আর সবার চেয়েও বেশি উপভোগ্য।
আমরা আশা করছি এই টিপসগুলো আপনার কাজে লাগবে। আপনার ঘর থেকে কাজ করার সময়গুলো কেমন যাচ্ছে? এই টিপসগুলো কোন সাহায্য করেছিল কি? জানিয়ে দিন মন্তব্যের ঘরে।