ঢাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার কথা ভাবছেন? কিন্তু জমি, অ্যাপার্টমেন্ট বা যে কোন সম্পত্তি কেনার আগে প্রয়োজনীয় জমির কাগজপত্র এবং কোন কোন নথি চেক করে দেখতে হয় সে সম্পর্কে কি আপনি জানেন?
এই শহরে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা পাওয়া সবার জন্যই স্বপ্ন। তবে, সবার সেই ভাগ্য হয় না। হয়তোবা যাদের হয়ও, এর পেছনে তাদের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সঞ্চয় ব্যয় হয়ে যায়। এছাড়াও, এই শহরে জমি কিনতে পাওয়া অসম্ভবেরই নামান্তর। তাই অ্যাপার্টমেন্টগুলিই হয়ে দাড়ায় মাথা গুঁজার ঠাইয়ের একমাত্র বিকল্প । নিঃসন্দেহে, এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অত্যন্ত যত্নের সাথে হ্যান্ডেল করা উচিত এবং সেজন্য ঢাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি ও জমর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা অপরিহার্য। তাই আসুন, প্রপার্টি কেনার আগে আইনগত যেসব কাগজ ও নথিপত্র যাচাই করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এবং প্রপার্টির ধরণ
জমির কাগজপত্র নিয়ে প্রথমেই আপনার যা জানতে হবে তা হল আপনার আপনার প্রপার্টির (যেটি আপনি কিনতে ইচ্ছুক) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে। ঢাকার প্লটগুলি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত, কিছু প্রপার্টি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক নিয়ন্ত্রিত এবং অন্যগুলি, যেগুলো সরাসরি রাজউকের তত্ত্বাবধানে নেই, তেমন ফ্রিহোল্ড বা উন্মুক্ত, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রপার্টি। রাজউক ওয়েবসাইটে একটি সম্পূর্ণ তালিকা পাওয়া যাবে যেখানে কোন এলাকায় কি ধরণের প্রপার্টি রয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া আছে।
এছাড়াও, প্রপার্টি দু’ধরনের হতে পারে, বাণিজ্যিক অথবা আবাসিক। সম্পত্তির মূল দলিলে এটি কি ধরনের সেই তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। প্রতিটি সম্পত্তির জন্যই তাদের নিজস্ব নিয়ম এবং বিধান আছে যা সেই এলাকার কর্তৃপক্ষ দ্বারা সংরক্ষিত। উল্লেখ্য যে, একজন ব্যক্তি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বরাদ্দকৃত কোন প্লটে যেমন আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না ঠিক তেমনি এর বিপরীতে গিয়ে আবাসিক প্লটে বানিজ্যিক ভবনও নির্মাণ করতে পারবেন না। এছাড়াও কর এবং অন্যান্য ব্যয় দুই ধরনের প্লটের জন্য আলাদা হয়। এখন চলুন, প্রত্যেক রকমের প্লট এবং এর সংশ্লিষ্ট আইনি নথি ও কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
১। রাজউকের তত্ত্বাবধানে থাকা জমির কাগজপত্র
রাজউক বা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হল রাজধানী ঢাকার উন্নয়নের জন্য নিবেদিত একমাত্র সরকারি সংস্থা। রাজউক কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকা সম্পত্তিগুলিতে যে কোনও ধরণের কার্যকলাপের জন্য ( ক্রয় / বিক্রয় / নির্মাণ) পূর্বঅনুমোদন এবং অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। আপনার সম্পত্তি যদি রাজউকের তত্ত্বাবধানে থাকে, তবে তা ক্রয়ের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত আইনি দস্তাবেজগুলি খতিয়ে দেখতে হবে।
রাজউক ভাড়া দলিল (লিজ ডিড বা লিজ দলিল)
রাজউক ঢাকায় তার তত্ত্বাবধানে থাকা কোন জমি বা প্লটই বিক্রি করে না বরং তা ১০০ বছরের জন্য বরাদ্দ করেন যা সরকার অনুমিত লিজের মাধ্যমে দেওয়া হয়। এই নথিই হল মালিকানার প্রমাণ তাই যে কোন প্রকার লেনদেন করার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ কাগজটিতে বিক্রেতার নাম সতর্কতার সাথে চেক করতে ভুলবেন না।
এছাড়াও, এই নথিতে উল্লেখ থাকে প্লটের ধরনও। সাধারণত কোন ভাড়ার দলিলে এই সম্পত্তির বিগত ২৫ বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ থাকে যার সাহায্যে আপনি এর পূর্ববর্তী মালিকদের সম্পর্কেও জানতে পারবেন। বর্তমানে এই নির্বাচিত সম্পত্তির একাধিক মালিক থাকলে তাও আলাদাভাবে এখানে উল্লেখ থাকবে। তাছাড়া, এই নথিতে উল্লেখিত প্লট সংলগ্ন অন্যান্য প্লট এবং সেগুলোর মালিকদের সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্যও থাকে।
রাজউক থেকে পাশ করানো প্ল্যান
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে বরাদ্দকৃত প্লটটিতে যেকোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য রাজউকের অনুমতি প্রয়োজন। নির্মাণের নকশা অনুমোদনের পাশাপাশি বিল্ডিংটি কয়তলা, প্রতিটি ফ্লোরের আকার, ফ্রী স্পেস কতটুকু থাকবে ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্যও অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে রাজউক থেকে। অর্থ্যাৎ এই প্ল্যান দেখতে পারলে একটি অ্যাপার্টমেন্ট সম্পর্কে আপনার যা যা জানা দরকার তা এতে পাওয়া যাবে। তবে মূল লিজ দলিল ছাড়া রাজউক কর্তৃপক্ষ কোন নির্মাণ পরিকল্পনাই অনুমোদন করবে না। তাই রাজউক থেকে পাসকৃত এই বিল্ডিং প্ল্যানটি যাচাই করা গেলে তা একই সাথে দুটি বিষয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে।
২। ফ্রিহোল্ড বা উন্মুক্ত মালিকানাধীন প্রপার্টি
যেসব সম্পত্তি রাজউক বা অন্য কোন সংস্থার তত্ত্বাবধানে নেই সেগুলোই মূলত ফ্রিহোল্ড বা উন্মুক্ত মালিকানাধীন প্রপার্টি হিসাবে বিবেচিত হয়। যেহেতু এই জমিগুলি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং এর জন্য কোন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই, তাই এ প্রপার্টিগুলো নিয়ে লেনদেন করার সময় আপনাকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এরূপ জমির কাগজপত্র যাচাইকরণের শুরু হিসেবে নিম্নলিখিত নথিগুলি যাচাই করা দিয়ে শুরু করুন।
ভূমি জরিপ রেকর্ড (সার্ভে রেকর্ড)
নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় জমির মালিকানা সংক্রান্ত জরিপ তথা সার্ভে পরিচালনা করে। প্রতিটি জরিপের সময়, আগের রেকর্ডগুলি আমলে আনা হয় এবং দাগ নম্বর, পর্চা ইত্যাদি পর্যালোচনা করে নতুন মালিকদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এটি একটি সরকারী উদ্যোগ এবং আপনি এই রেকর্ড যাচাই করার মাধ্যমে মালিক এবং সম্পত্তি সম্পর্কিত নানান তথ্য যাচাই করতে পারবেন।
রেজিস্ট্রেশনের কপি
যে কোন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তির মূল মালিকানার প্রমাণ হল এই রেজিস্ট্রেশন কপি। এটি অনেকটা রাজউক মালিকানাধীন সম্পত্তিগুলির লিজ ডিলের মতো। প্রতিটি এলাকার ল্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফিস এই অফিসিয়াল দলিলটি অনুমোদন করে। সার্ভে তথা জরিপ রেকর্ড যেখানে জমি সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য দেয়, এই নিবন্ধন নথিটি সম্পত্তির উপর বর্তমান মালিকের দখল নিশ্চিত করে। সাধারণত এই রেজিস্ট্রেশন রেকর্ডটির দুটি কপি জারি করা হয়, একটি পান জমির মালিক এবং অন্যটি বরাদ্দ থাকে রেজিস্ট্রি অফিসের জন্য। সুতরাং জমিটির মালিকানা সংক্রান্ত যে কোন সন্দেহের অবসান ঘটাতে রেজিস্ট্রি অফিসে যান এবং খতিয়ে দেখুন রেজিস্ট্রেশনের কপি।
মিউটেশন ও জমির কাগজপত্র
মিউটেশন হল আরেকটি সরকারী রেকর্ড যা রেজিস্ট্রি অফিসের স্বীকৃতি এবং সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তি নির্দেশ করে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু জমি চলমান মিউটেশন প্রক্রিয়ার ভেতর থাকতে পারে। যদি সম্পত্তির নিবন্ধনের বৈধতা যাচাই করা যায় তবে অনেকাংশেই ধরে নেয়া যায় যে এতে তেমন ভেজাল নেই। তবে, যে কোন প্রকারের লেনদেন করার আগে মিউটেশন সার্টিফিকেট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়।
কোন সম্পত্তি কেনার আগে আপনাকে যেসব কাগজপত্র অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে তা উপরে উল্লেখ আছে। কোন অতি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কি আছে যা এখানে দেয়া নেই? এমন হলে আমাদেরকে জানান। আর প্রপার্টি সংক্রান্ত যে কোন আইনী সহায়তার জন্য চলে আসুন বিপ্রপার্টি ডট কম-এর অফিসে। আমাদের আছে অভিজ্ঞ প্রপার্টি এভং লিগ্যাল অ্যাডভাইজার যারা আপনার যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি। আপনি সব প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র চেক করে সফলতার সঙ্গে পছন্দসই প্রপার্টি কিনতে পারবেন এই আমাদের কামনা!