Reading Time: 4 minutes

অবশেষে শীত চলেই আসলো। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই হিম হিম শীতের আমেজে ঘরে এবং বাইরে চলে শীতকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি। কাঁথা, কম্বল কিংবা লেপ এর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ঘরে গরম পানির ব্যবস্থা করতে অনেকেই এ সময় গিজার বসানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সাধারণত অনেকেই চুলায় গরম পানি ফুটিয়ে তা ব্যবহার করেন। তবে একদিকে এটি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি বেশ সময়সাপেক্ষও বটে। অন্যদিকে বাসায় গিজারের ব্যবস্থা থাকলে, আপনি চটজলদি আপনার প্রয়োজন মতো গরম পানি পেয়ে যাচ্ছেন। এতে ঝুঁকির সম্ভাবনাও থাকে কম এবং দ্রুত গরম পানির ব্যবস্থাও করা যায়। আর তাই এই শীতে ঘরে গরম পানির সহজ ব্যবস্থা করতে জেনে নিন গিজার বসানোর টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য।  

ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়াটার হিটার কিংবা চুলায় গরম পানি করতে যতটা সময় লাগে, তার চেয়েও দ্রুত সময়ে গরম পানি পেতে তাই অনেকেই বেছে নেন গিজার। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গিজারের পানি একবার গরম হলে তা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ব্যবহার করা যায়। এতে করে বারবার পানি গরম করার জন্য বাড়তি বিদ্যুৎ খরচও হয় না। আর তাই চুলা কিংবা ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়াটার হিটার এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গিজার বেশ জনপ্রিয়।       

গিজার
গিজারের ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে গিজার বসাতে কতটা জায়গা প্রয়োজন

জায়গা নির্ধারণ

গিজার বসানোর টিপস এর মধ্যে সবার প্রথমই বলতে হয় গিজার বসানোর জন্য সঠিক জায়গা নির্ধারণের কথা। গিজার বসাতে কতটা জায়গার প্রয়োজন তা আসলে নির্ভর করবে গিজারটির ধারণ ক্ষমতা কতটুকু তার উপর। আর তাই গিজার বসানোর পরিকল্পনা করার আগে গিজারের মাপ এবং বাথরুমের ভেতরের জায়গা সঠিকভাবে পরিমাপ করে তবেই নিশ্চিন্তে গিজার বসাতে পারেন।    

গিজার বসানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন, এটি যেন কোন ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় স্থাপন করা না হয়। আর তাই গিজারটি যদি বাথরুমের ভেতরে বসানোর পরিকল্পনা থাকে তবে তা অবশ্যই বাথটাব এবং শাওয়ারের জায়গা থেকে দূরে বসাতে হবে। 

শুধু তাই-ই নয়, গিজারটি বসানোর জন্য উঁচু কোন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে। তবে গিজারটি চালু বা বন্ধ করার জন্য এর সুইচ যেন হাতের নাগালে থাকে সে বিষয়টিও খেয়াল রাখা প্রয়োজন।    

বৈদ্যুতিক সংযোগ 

গিজার বসানোর টিপস এর মধ্যে অন্যতম একটি হল গিজার বসানোর পর এর সাথে যুক্ত সকল ইলেকট্রিক্যাল লাইন যথাযথ আছে কিনা, তা গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করা। বিশেষ করে গিজারের লাইনটি থেকে ইলেকট্রিক শক লাগার মতো কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য প্রতিটি সুইচ এবং লাইনের সংযুক্তি স্থান গুলো পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। আর তাই গিজার চালু এবং বন্ধ করার প্রধান সুইচ সবসময়ই বাথরুমের বাইরে বসানো উচিৎ এবং ভেজা বা পানি লাগানো হাতে কখনোই সুইচ অন-অফ করা উচিৎ নয়। অন্যথায় যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।   

গিজার
লাইন বা পাইপ দিয়ে পানি সঠিকভাবে আসা-যাওয়া করছে কিনা, তা পরীক্ষা করে গিজার স্থাপন করতে হবে

পানির লাইন, পাইপ 

গিজার বসানোর সময় অবশ্যই পানির লাইন ভালোমতো চেক করে দেখতে হবে। পানি সঠিকভাবে উক্ত লাইন বা পাইপ দিয়ে আসা-যাওয়া করছে কিনা, তা পরীক্ষা করে তবেই গিজার স্থাপন করতে হবে। এছাড়া পানির পাইপটি যেন পরিষ্কার থাকে এবং সেখানে যেন কোন ধরনের ময়লা জমে তা বন্ধ হয়ে না যায়, সেই বিষয়ের দিকেও নজর দিতে হবে। এমনকি পাইপ দিয়ে উপযুক্ত পরিমাণে পানি চলাচল না করলে, তা আগে সচল করে নিয়ে, তবেই গিজার বসানো উচিৎ। 

আর তাই গিজার বসানোর জন্য অবশ্যই কোন পেশাদার এবং দক্ষ ব্যক্তির সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। গিজারটি যেহেতু ভারী হয়, তাই এটিকে খুব সাবধানতার সাথে বসানো প্রয়োজন, যেন পরবর্তীতে কোন ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। আর তাই গিজার কিনে আনার পর আপনার এলাকার নিকটস্থ কোন দক্ষ টেকনেশিয়ন এর সহায়তায় গিজারটি বাসার উপযুক্ত স্থানে বসিয়ে নিন।    

রক্ষণাবেক্ষণ 

১। আধুনিক গিজারগুলো খুব দ্রুত পানি গরম করতে পারে। তাই গিজারের সুইচ অন করে কখনোই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না এবং করা উচিৎও নয়। অন্যথায় মেশিনটি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা থাকে। আর তাই ব্যবহারের পূর্বে ৫-১০ মিনিট পানি গরম হতে সময় দিন, অতঃপর সুইচ বন্ধ করে ব্যবহার করুন। 

২। বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে গিজারের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখুন। এতে করে পানি দ্রুত গরমও হবে এবং মেশিনের উপর অতিরিক্ত চাপও পড়বে না। এমনকি এতে করে গিজার মেরামতে ঘন ঘন টাকা খরচও করতে হবে না। 

৩। আপনার গিজারের ইউনিটটি যদি বড় হয়, তবে গিজারের ভেতরে অ্যানোড রডটি পরীক্ষা করুন। ট্যাংকের ক্ষয় রোধ করতে এটি ব্যবহৃত হয়, তাই এটি প্রতি তিন বছর পর পর প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। 

৪। বছরে অন্তত একবার প্রেসার ভালভ চেক করা জরুরি, যেন এর ভেতরে কোন লিক বা ছিদ্র হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে বের করা যায়।

৫। পাওয়ার সকেট এবং প্লাগ এর মধ্যে কোন পোড়া দাগ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। শর্ট সার্কিট থেকে কোনো ঝলসানো চিহ্ন যদি আপনার চোখে পড়ে, তাহলে একটি ক্ষুদ্র সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে পারেন।

৬। প্লাস্টিকের পার্টস এর বদলে মেটাল বা ধাতু ব্যবহার করা উচিৎ। এতে করে প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও, ধাতু বেশ মজবুত হওয়ার কারণে এটি টেকসই হবে এবং দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহারও করা যাবে।  

গিজার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গিজার বসানোর টিপস এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখলে, পরবর্তী সময়ে আপনাকে হয়তো তেমন কোন বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। তাই দক্ষ টেকনেশিয়নদের সহায়তায় শীত ভালোভাবে আসার আগেই ঘরে গিজারের ব্যবস্থা করে ফেলুন। আর শীতের সময়টা কাটান নিশ্চিন্তে।   

Write A Comment

Author