জাপান সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশ। যেখানে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান করে আসছে। সময়ের সাথে সাথে, জাপানের বাড়ি গুলোতে আধুনিক নির্মাণ পদ্ধতির ব্যবহার আরও বেশি বিকশিত হয়েছে। এই দেশটির আবাসন ব্যবস্থা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত, সিঙ্গেল ফ্যামিলি হোমস এবং সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন একাধিক-ইউনিটের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। জাপানের বেশিরভাগ বাড়িই মডার্ন অথবা ট্রেডিশনাল স্টাইলে নির্মিত। ট্রেডিশনাল বাড়িগুলো কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়। অন্যদিকে মডার্ণ বাড়িগুলো পাশ্চাত্যের স্টাইলকে অনুসররণ করে, যেমন- উডেন ফ্লোর, স্টিলের পিলার এবং কংক্রিটের দেয়াল এখানে প্রাধ্যান্য পায়। জাপানের শহরাঞ্চলে এখন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলো আরও বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। জাপানের এ জাতীয় ঘরগুলোকে তিনটি প্রধান ধরণে আলাদা করা যেতে পারে।
অ্যাপার্টমেন্ট (অ্যাপাটো)
অ্যাপার্টমেন্ট কাঠ বা স্টিল ফ্রেম দিয়ে নির্মিত হয়। এই ধরণের বিল্ডিং সাধারণত ২তলা ভবনের সমান উঁচু হয়ে থাকে।
ম্যানশন
ম্যানশন অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল ভবন যা সাধারণত ৩ তলাবিশষ্ট বা তারও বেশি তলাবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এই ধরণের ভবন নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হয় ইস্পাত এবং কংক্রিট ।
কাশিয়া
ইজারা বা ভাড়ার জন্য নির্মিত বিশেষ ঘরকে বলা হয় কাশিয়া।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং স্থাপত্যশৈলী
তাতামি, হার্ড উড ফ্লোরিং এবং কার্পেট, জাপানের বাড়ির ডিজাইনে এই ৩ ধরণের মেঝের দেখা মেলে। তাতামি হল একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি ফ্লোরিং ম্যাটারিয়াল যা পুরু করে বোনা ধানের খড় দিয়ে তৈরি করা হয়। এই বিশেষ ডিজাইনে, মেঝে গ্রীষ্মকালে শীতল এবং শীতকালে উষ্ণ থাকে যা বাসিন্দাদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে, হার্ডউড এবং কার্পেট মেঝে বেশ ব্যয়বহুল অপশন। তবে হার্ডউড ফ্লোরিং ঘরজুড়ে একটি মডার্ন লুক নিয়ে আসলেও এতে স্ক্র্যাচ পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে, জাপানের আর্দ্র আবহাওয়ায়, কার্পেটের মেঝে পরিষ্কার করা যেমন কঠিন তেমনি এতে পোকামাকড় এর উপদ্রবও বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
বিশেষভাবে তৈরি জাপানী ঘর
জায়গার ঘাটতি থাকায়, জাপানের লোকেরা খুব অল্প পরিমাণ জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চৌকষ ডিজাইনের এক ধরনের বিশেষ বাড়ি তৈরি করেছিল। আসুন এমনই কিছু নান্দনিক ঘর নিয়ে আলোচনা করা যাক।
হরিনোচি হাউস
আর্কিটেক্ট মিজুইশি অ্যাটিলিয়া নদীর চৌমোহনায় ২০১১ সালে নান্দনিক ডিজাইনের এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটিতে একটি বাথরুম, একটি রান্নাঘর, ডাইনিং রুম এবং একটি লাউঞ্জ সহ একটি মাস্টার বেড রয়েছে। এছাড়াও, একটি পার্কিংয়ের জায়গা এবং ছাদের নীচে একটি লোফট এরিয়া রয়েছে। জাপানের বাড়ি গুলোর মধ্যে খুব কম পরিসরে অনিন্দ্যসুন্দর নির্মাণশৈলীর উদাহরণ এই বাড়িটি।
নড্ডা হাউজ
ফুজিওয়ারা আর্কিটেক্টস এর অধীনে হায়োগোর একটি আবাসিক শহরতলিতে এটি নির্মিত হয়। স্থপতিরা প্লাস্টার, কাঠ এবং গ্লাসের মিশ্রণে এই বাড়িগুলো নির্মাণ করেছিলেন। অভ্যন্তরে রয়েছে দুইটি বেডরুম এবং একটি কিচেন। এছাড়াও রয়েছে, একটি বাথরুম, একটি ডাইনিং রুম এবং একটি লিভিংস্পেস।
আল্ট্রা টিনি হাউস
এই বাড়িটি জাপানের রাজধানীর একটি এলাকায় গাড়ি পার্কিং স্পেস এর মধ্যেই তৈরি করা হয়েছিল। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিং স্পেস জায়গা ও লিভিংরুম এবং ১ম ফ্লোরে রয়েছে কিচেন। ২য় ফ্লোরটি সংরক্ষিত রাখা হয়েছে বেডরুম হিসেবে ।
মোরিয়ামা হাউস
মোরিয়ামা হাউজ নামের এই বাড়িগুলো নির্মাণ করেছে সানা এজেন্সি। টোকিওর একটি বিখ্যাত এলাকায় এই বাড়িগুলো অবস্থিত। মডার্ণ আর্কিটেকচারাল কনসেপ্টের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভলিউম, হাইট এবং সাইজের বেশ কয়েকটি বিল্ডিংকে সংযুক্ত করে এই বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়। জাপানের বাড়ি গুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত এই বাড়িগুলোতেই কিন্তু বেশিরভাগ লোকের বসবাস।
ফ্রেম দ্যা স্কাই হাউজ
এই বাড়িটির নির্মাতা অ্যাটেলিয়ার টেকুটো। বাড়িটি অবস্থিত টোকিওর আওয়ামা জেলায়। এর বেজমেন্টে রয়েছে একটি গ্যারেজ, মাস্টার বেড এবং বাথরুম। ১ম ফ্লোরে রয়েছে একটি ডাইনিং এবং লিভিং রুম। এছাড়াও টপ ফ্লোরে রয়েছে আলাদা চিলড্রেন’স রুম। এখানে প্রকৃতির সাথে বাসিন্দাদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে একটি বিশাল আকারের সেন্ট্রাল স্কাইলাইট উইন্ডো যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ এই ইন্টারফেসটির করণেই এই বাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রেম দ্যা স্কাই।
ভৌগলিকভাবে, জাপান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। যার ফলে ঐতিগ্যবাহী জাপানের বাড়ি গুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যেন তা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধী হয়। এছাড়াও, জাপানের বাড়ি এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এগুলো নির্মাণ করা হয় স্বল্পমেয়াদীভাবে যা সাধারণত দুই বা তিন দশক পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং পরবর্তীতে আবার তা সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করা হয়।