Reading Time: 5 minutes

বৃষ্টির বিকেল কিংবা কড়া রোদের দুপুরে, এ শহরের একেক রূপ এক সময়ে আমাদের চোখে ধরা পড়ে। আকাশের সাথে মিলে কখনো এ শহর নীল আবার কখনো লাল। সারাটা দিনের একেক সময়ে এক রূপে খুঁজে পাওয়া এই শহরেরও কিছু রূপ এমনও আছে। কিন্তু, সেগুলো কি আপনি জানেন? এই পরিচিত ঢাকা কিছু সময়ে বেশ অপরিচিত হয়ে ওঠে? আরও রঙিন হয়ে হয়ে ওঠে। সেই সময়গুলো জেনে গেলে আপনার কাছেও ধরা দিতে পারে এই রূপসী ঢাকা। ঢাকার ৬টি মন ভোলানো দৃশ্য সম্বন্ধে জানতে পড়তে থাকুন।  

রমনা বটমূল 

রমনা বটমূল
শুধু একটা বট গাছ নয়, আমাদের সংস্কৃতির শেকড়

শাহবাগ শিশু পার্কের অদূরে রমনা উদ্যান। পুরো উদ্যানে সেই বট গাছটাই যেন সবার কাছে অন্যরকম একটা অনুভূতির জায়গা। এটা শুধু একটা বট গাছ নয়, আমাদের সংস্কৃতির শেকড়। ছায়ানটের এই অনুষ্ঠানের সাথে বৈশাখের প্রথম প্রত্যূষে বাংলা নববর্ষকে আহ্বান জানানো বাংলা সংস্কৃতিরই একটা অংশ। এই অনুষ্ঠানটি ছায়ানটের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ভোর থেকে রমনা উদ্যানে জমতে থাকে লাখো জনতার ভিড়। রঙিন পোশাক পরে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করে নেবার আকুলতা সত্যিই দেখার মত। সম্মিলিত কন্ঠে সকলে গেয়ে ওঠা, “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…। আনন্দের ফোয়ারায় ভাসতে থাকে রমনা বটমূল। সকলে যেন এক রঙের মানুষ। সাদা লালের মায়ায় সেদিন সকলে সেজে ওঠেন বাঙালির মত। “শুভ নববর্ষ” হয়ে ওঠে মুখের প্রিয় বুলি। ঢাকার ৬টি মন ভোলানো দৃশ্য এর ভেতর বর্ষবরণ করার এই আয়োজনটা কখনো ভোলার মত নয়। এমন আনন্দের মেলা কি কখনো ভোলা যেতে পারে? ঢাকার অন্যতম সুন্দর একটি রূপ এই বর্ষবরণ

মঙ্গল শোভাযাত্রা 

মঙ্গল শোভাযাত্রা
মুখোশ হাতে বের হয় বর্ণাঢ্য এই মিছিল

বৈশাখী সালের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরোনো হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব পুরোনো নয়। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে প্রথম এই শোভাযাত্রা বের হয়। সেই থেকে এই “মঙ্গল শোভাযাত্রা” আমাদের সংস্কৃতির একটা বড় অংশ। ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সকালে বাদ্যযন্ত্রের তালে নানা ধরণের বাঁশ-কাগজের তৈরি ভাস্কর্য, মুখোশ হাতে বের হয় বর্ণাঢ্য এই মিছিল। প্রতিবছর শোভাযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ থাকে এসব বাঁশ এবং কাগজের তৈরি নানা ভাস্কর্য। যা তৈরি হয় কোন একটি প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে। এসব মুখোশ বা অন্যান্য মোটিফের যে কোন একটা বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা শোভাযাত্রা দেখলে হয়তবা অনেকের চোখে পড়বে। মঙ্গল শোভাযাত্রার এই অনুষঙ্গগুলো আসলো কোথা থেকে? বাংলার লোকসংস্কৃতি থেকে খেলনা পুতুল, নকশি পাখা, যাত্রার ঘোড়া ও মুখোশ। বছরের এই দিনটি ঢাকা এতটা রঙিন হয়ে ওঠে। ঢাকার ৬টি মন ভোলানো দৃশ্য এর মধ্যে এই নববর্ষের দৃশ্যটি ছোট বড় সকলের প্রিয়। 

চৈত্র সংক্রান্তি  

চৈত্র সংক্রান্তি
লোক উৎসব সারা দেশে পালিত হয় বেশ ভিন্নভাবে

বাংলা বছরের শেষ মাস এই চৈত্র! যেহেতু বৈশাখ মাসের প্রথম দিন দিয়ে আমরা বাংলা বছরের আরম্ভ করি। বৈশাখ যেমন ঘটা করে পালন করে থাকি আমরা তেমনি চৈত্র সংক্রান্তি ও বেশ সুন্দর করেই সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকায় পালন করে থাকি। এই চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সারা দেশে সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে নানারকম অনুষ্ঠান,পূজা পার্বণ কিংবা মেলা। এটি একটি লোক উৎসব। এই লোক উৎসব সারা দেশে পালিত হয় বেশ ভিন্নভাবে। এত অদ্ভুত সুন্দর ও মজার হয়ে থাকে এই উৎসবগুলো দেখতেই ভালো লাগে। চড়ক পূজা, খেজুর ভাঙ্গা, শরবত, শাকান্ন, শাক কুড়ানো, নীল উৎসব, বিজু বা বৈসাবি উৎসব, গম্ভীরা পূজা ইত্যাদি। এই উৎসবগুলো পুরো দেশ জুড়েই হয়ে থাকে। ঢাকা নগরীতেও চলে নানা আয়োজন, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতিবারই থাকে নানা আয়োজন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিট, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মেলা, ঘুড়ি উৎসব, রকমারি সব ঘুড়ির প্রদর্শনী, গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় লাঠি খেলা। এ ছাড়া থাকছে পুঁথি পাঠ, পুতুলনাট্য, পালাগান, গম্ভীরা ও রায়বেশের মতো লোকসংস্কৃতির নানা আয়োজন। 

হিম উৎসব 

 জাবি
শীতকালে ঢাকার অন্য এক রূপ দেখতে চলে যেতে হবে জাবি তে

ব্যস্ততা থেকে একটি ছুটি নিয়ে চলে যেতে পারেন, রাজধানীর অদূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীতকালে ঢাকার অন্য এক রূপ দেখতে চলে যেতে হবে জাবি তে। সেখানে নাকি শীতের আমেজ থাকে পুরোমাত্রায়। এই শীতকালেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে ‘হিম উৎসব’। এই উৎসবটি ৩ দিন ধরে চলে, এই উৎসবে রয়েছে শীত নিয়ে চিরায়ত বাংলার লোকজ সংস্কৃতির উপস্থাপনা। গাজীর গান, আদিবাসী নাচ, সাপ খেলা, লাঠি খেলাসহ বৈচিত্রপূর্ণ এসব আয়োজন দেখতে ভীড় জমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। ভিন্নধর্মী এ উৎসব উপভোগে সন্ধ্যার পর থেকেই ভীড় বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যায়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে। শহরের ভিন্ন এক রূপ দেখে সন্ধ্যা কাটানোর জন্য হিম উৎসব হতে পারে চমৎকার এক উৎসব। 

প্রজাপতি মেলা 

 প্রজাপতি মেলা
পছন্দের এই প্রজাপতি মেলা

প্রজাপতি ভালোবাসে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাদা জালে মোড়ানো, ভেতরে গাছগাছালি, তার মাঝে ছুটছে নানা জাতের প্রজাপতি। কোনোটা হলুদ, কোনোটা নীল, কোনোটা সাদা। নানা রঙের প্রজাপতির এই ছুটে চলা দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসে শত শত দর্শনার্থী। ছোট থেকে বড় সকলের পছন্দের এই প্রজাপতি মেলা। প্রায় দশ বছর ধরে হয়ে আসা এই মেলায় চাইলে আপনিও চলে যেতে পারেন। হরেক রকম প্রজাপতির সমাহার দেখে একটি দিন তো কাটানো যায় ই।

সদর ঘাট 

সদর ঘাট
বুক ভোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মত মন ভোলানো দৃশ্য

পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ে কাটানো কিছু মুহূর্ত। শান্ত বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার সাথেও একটা অজানা স্থিরতা খুঁজে পাবেন। যা এই ব্যস্ত নগরীতে বসবাস করতে গেলে সবচেয়ে বেশি জরুরী। কাজে ছুটেই যাচ্ছেন ছুটেই যাচ্ছেন। একটু আরাম একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস তো আপনারও প্রয়োজন তাইনা? ঠিক এমনটাই আপনি খুঁজে পাবেন সদর ঘাটে। যেদিন লঞ্চ বা নৌকার আনাগোনা একটু কমে আসবে এমন একটি দিনে ছুটে যেতে হবে সদর ঘাটে। নদীর তীরে দাড়িয়ে বুক ভোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মত মন ভোলানো দৃশ্য সত্যি কি আর কোথাও হতে পারে? 

ঢাকার ৬টি মন ভোলানো দৃশ্য এতই সুন্দর মন মুগ্ধকর যে আপনি এই কয়টি জায়গায় ছুটে যেতে চাইবেন বার বার। অন্য ঢাকার এমন বৈচিত্র্য রূপ ক্যামেরায় বন্দী করতে হলেও ঘুরে আসুন এবং দেখে আসুন ঢাকার ৬টি মন ভোলানো দৃশ্য। 

Write A Comment