বলা হয়, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চাবিকাঠি পদ্মা সেতু। কিন্তু শুধুই কি অর্থনীতি? শুধুই কী দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মানুষ? নাকি এর প্রভাব পড়ছে রাজধানী ও এর আশেপাশের আবাসন খাতেও? আর পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে প্রপার্টি কেনা, বেচা ও ভাড়া সহ নানা দিকে! এটি নিঃসন্দেহে সত্যি যে, পদ্মা সেতুকে ঘিরে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি আরো বেশি গতিশীল হচ্ছে। তবে, বিভিন্ন আর্থিক খাতের মত, পদ্মা সেতুর কারণে আবাসন খাত ও প্রভাবিত হচ্ছে নানাভাবে।
বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন আজকের আর্টিকেল।

প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধি
ঢাকার কাছেই অবস্থিত কেরানীগঞ্জ থেকে একেবারে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কারণে আবাসন খাত এর ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, এই অঞ্চলগুলোতে এখন ল্যান্ড প্রকল্পের জন্য সম্ভাবনা অনেক বেশি। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। কমেছে সময় ক্ষেপণের মাত্রা। তাই, সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে, অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে যাচ্ছে সেতুর এপার ও ওপারের এলাকাজুড়ে। আর এ কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না, শিল্প কারখানা যেখানে থাকবে, সেখানেই বাড়বে প্রপার্টির চাহিদা। ফলে, কমার্শিয়াল প্রপার্টি তো বটেই, ল্যান্ড ও রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টির দামও বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে কয়েক গুণ। এলাকাগুলোতে মূল্য বৃদ্ধির এ হার ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এবং আগামী কয়েক বছরে এই দাম যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে, তা খুব সহজেই অনুমেয়।

প্রপার্টির মার্কেট এর প্রসারণ
আগেই বলেছি, কেরাণীগঞ্জ ও মুন্সিঞ্জের মত এলাকাগুলোতে গড়ে উঠছে নতুন শিল্প-কারখানা। শুধুমাত্র, পদ্মার এপারেই নয়, ওপারেও মাদারীপুরের শিবচর এবং শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত গড়ে উঠতে যাচ্ছে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল। ফলে অর্থনীতিবীদরা বলছেন, পদ্মাসেতুর কারণে নদীর ওপার-এপার, দুইপারের বাসিন্দাদেরই আয় বাড়বে।
মানুষের আয় বাড়লেই কিন্তু তৈরি হয় আবাসন খাতের সম্ভাবনা। দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে মানুষ সুন্দর আগামীর জন্য নিশ্চিত করতে চায় মাথা গোঁজার ঠাঁই। আর এ একারণেই তারা বিনিয়োগ করবে। । তবে, শুধু বাসস্থান নিশ্চিত করতেই নয়, ঢাকার যে সকল বাসিন্দা বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা করছেন, তাদের অনেকেই বিনিয়োগের জন্য বেছে নিচ্ছেন কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাওয়া, ও ভাঙ্গার মত অঞ্চলগুলোকে। ফলে, মূল ঢাকার বাইরেও প্রপার্টির মার্কেট বড় হচ্ছে, আর পদ্মা সেতুর কারণে আবাসন খাত এ বইতে শুরু করেছে পরিবর্তনের হাওয়া।

বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি
পদ্মাসেতু চালু হওয়ার ফলে, যে জমি এক সময়ে ছিল কেবলই পতিত জমি, তা আজ পরিণত হয়েছে বহু মূল্যবান প্রপার্টিতে। এর ফলে অসংখ্য বিনিয়োগকারীর আগ্রহের কেন্দ্রস্থল এখন পদ্মার দুইপাশের এলাকাগুলোর ফ্ল্যাট ও জমি। বিশেষত, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ভাঙা এলাকার বহু মানুষ প্রবাসে কাজ করছেন। পর্যাপ্ত সঞ্চয় থাকার পরেও, পরিকল্পিত শহর গড়ে না ওঠায় এতদিন তারা এই এলাকাগুলোতে বিনিয়োগ করতে চাননি। তবে, পদ্মা সেতুর কারণে আবাসন খাত এর পরিবর্তনের এ হাওয়া পৌছে গেছে তাদের কাছেও। ফলে, পদ্মার আশেপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে থাকার জন্য জমি ও ফ্ল্যাট কিনতে বা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা। কেবল প্রবাসীরাই নয়, রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এখানে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনার প্রতি ঝুঁকছেন।

ঢাকার মাঝে প্রপার্টির চাপ হ্রাস
পদ্মা সেতুর কারণে আবাসন খাত এর আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো ঢাকার মাঝে প্রপার্টির চাপ হ্রাস পাওয়া। এতদিন যারা প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য কেবলই ঢাকার এলাকাগুলো বেছে নিতেন, এখন তারা ঝুঁকছেন পদ্মা সেতুর আশেপাশের এলাকাগুলোর দিকে। ফলে, কিছুটা হলেও ঢাকার মাঝে প্রপার্টির চাপ কমবে। রাজধানী শহর হওয়ায়, ঢাকায় এমনিতেই প্রপার্টির চাহিদা অনেক বেশি। মুন্সিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মাওয়া ও ভাঙার মত এলাকাগুলো এ চাহিদা পূরণে এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পদ্মা সেতু হওয়াতে আরেকটু আমূল পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে ঢাকা শহরের বাসা ভাড়ায়। বর্তমানে পদ্মাসেতুর কারণে মাত্র দেড় থেকে ২ ঘণ্টার মাঝেই পৌঁছানো যাচ্ছে পদ্মার ওপারের এলাকাগুলোতে। তাই চাকরির সুবাদে ঢাকায় উচ্চমূল্যে বাসা ভাড়া নেয়ার থেকে, পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি থেকে অফিস করার সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। এতে তাঁদের বাসা ভাড়ার অনেকগুলো অর্থ যেমন বেচে যাচ্ছে, তেমনি ঢাকার মাঝে বাসা ভাড়ার চাপও হ্রাস পাচ্ছে।
রাজধানী শহরের বাইরেও যে আবাসন শিল্প গড়ে উঠতে পারে, সেই মাইন্ড সেটটি পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। ঢাকার অদূরে, অথচ কোলাহলমুক্ত সবুজে ভরপুর এলাকাগুলো এখন আবাসন খাতের নতুন সম্ভাবনার নাম।
আপনার প্রপার্টি কেনার সিদ্ধান্তও কি পরিবর্তন এসেছে পদ্মা সেতুর কারণে? এসে থাকলে, আমাদেরকে জানান মন্তব্যের ঘরে।