Reading Time: 3 minutes

বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত একটি মেগা প্রোজেক্ট হচ্ছে পদ্মা সেতু। ৪১ টি স্প্যান এবং ৪২ টি স্তম্ভ নিয়ে নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি বাংলাদেশ সরকারের নির্মাণ করা সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই সেতুটি নির্মাণই করা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যকার ব্যবধানটি কমিয়ে আনার জন্যে। এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে তা বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসবে। শতবাধা বিপত্তির পরও বাংলাদেশ সরকার বেশ প্রশংসনীয়ভাবে এই প্রকল্প নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, এই বহুমুখী সেতুর প্রায় ৯০% কাজ শেষ হয়েছে এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সকল যান বাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ দিকের প্রায় ২১ টির মত জেলা নানাদিক থেকে লাভবান হবে বলে আশা করা যায়। পদ্মা সেতুর প্রভাব কী রকম জানতে পড়তে থাকুন। 

পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩ কোটি লোক বসবাস করে। বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে এই সমস্ত সমস্যা অনেকটাই ঘুচে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাই ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেতুর শেষ স্প্যানটি স্থাপন করে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশাল মাইলফলক অর্জন করেছে। যদিও পুরো কাজটি একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব ও অর্থায়ন অসুবিধাগুলোর জন্য বছরের পর বছর এই নির্মাণ প্রক্রিয়াটি ধীর গতিতে আগায়। এই সমস্ত সমস্যার পরও পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজটি অনেকাংশে শেষ হয়েছে এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের মানুষদের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। 

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা 

ব্রিজ
পদ্মা সেতুর ফলে মংলা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযুক্ত হবে

সঠিক করে বলতে পদ্মা সেতু একটি নতুন পর্বের সূচনা করতে যাচ্ছে। যেহেতু এটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় রুটের মধ্যে সংযোগ তৈরি করবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ প্রশস্ত সেতুটিতে চার-লেনের একটি হাইওয়ে এবং একটি একক রেলপথ থাকবে, যা মাওয়া, মুন্সীগঞ্জ থেকে জাজিরা এবং শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করবে। পদ্মা সেতুর ফলে মংলা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযুক্ত হবে এবং এই বন্দরগুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সরাসরি সংযোগ পেতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, পদ্মা সেতু সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে রুট -১ এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথের উপর পরে যা বাংলাদেশকে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মতো দেশগুলোর সাথে সংযুক্ত করবে। এবং একটি শক্তশালি বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক তৈরি করবে। পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে ঢাকায় পৌঁছতে বেশ কম সময় লাগবে। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের মানুষরা ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা ব্যয় করে ফেরি ও নৌকা দিয়ে নদী পার হতো শহরে আসতে। কখনো বেগতিক আবহাওয়ার কারণে নদী পার হওয়াও বেশ কঠিন হয়ে যেত। থেমে যেত নদী পারাপার। তবে একবার পদ্মা সেতুটি চালু হয়ে গেলে আর কাউকে বিরতি নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রতি ভ্রমনে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় কমে আসবে।

শিল্পায়ন 

শিল্পায়ন
শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী দেশগুলোও এর সুফল ভোগ করবে

এই সেতু নির্মাণ হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলো ইকোনমিক জোন হিসেবে সফলতা পেতে পারে। যেহেতু, যাতায়াতে সময় এবং ভোগান্তি দুটোই কমে আসছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের জন্য সাতটি বিশেষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। চারটি খুলনা ও বাগেরহাটে, দুটি বরিশালে এবং একটি ভোলাতে। এই সমস্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশি বিদেশী সকল প্রকার বিনিয়োগ আনা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত থেকে আরও বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ হলে প্রায় বিরাট একটা  ‘শিল্প বিপ্লব’ প্রত্যক্ষ করবে সমগ্র বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী দেশগুলোও এর সুফল ভোগ করবে। 

সিয়ান হাইওয়ে -১ এর সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে প্রচুর ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি হবে। শুধু সিয়ান হাইওয়ে ১ নয় এশিয়ান হাইওয়ে -২, এশিয়ান হাইওয়ে -৪১ এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে -১ এবং ২ এর সাথেও এর সংযোগ স্থাপন হবে। এছাড়াও, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে মালামাল পরিবহনও বেশ সহজ হবে মংলা এবং পাইরা সমুদ্রবন্দর দিয়ে চলাচলের ফলে। পরিবহন বাধার কারণে এই অঞ্চলে নগরায়ন এবং শিল্পায়ন এখন পর্যন্ত তেমন একটা সমৃদ্ধ হতে পারেনি। তবে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিক বিদ্যুৎ সংযোগ সরবরাহ, বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের  রপ্তানিমুখী ব্যবসা বাণিজ্য তৈরি হবে। পটুয়াখালী ও খুলনার মতো অঞ্চলে বড় বড় বন্দরগুলো আগে থেকেই উপস্থিতি রয়েছে তাই পদ্মা সেতুর জন্য এটি নগরায়নের কেন্দ্রস্থল নিঃসন্দেহে হতে পারে। 

পদ্মা সেতুর প্রভাব বেশ সুদূর প্রসারী। জন জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র সকলেই এর সুফল পাবে। পদ্মা সেতু এমন একটি স্বপ্ন, প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মানুষ দেখে যাচ্ছিলেন। এটি কেবল সেতু নয় বাংলাদেশের জন্য সুদিনের চাবিকাঠি। এটা ছিল পদ্মা সেতুর প্রভাব নিয়ে আমাদের প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে আমরা পদ্মা সেতুর প্রভাব নিয়ে আরও বিস্তারিত জানবো।

Write A Comment