Reading Time: 4 minutes

বৈশ্বিক উষ্ণতা, পরিবেশগত সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশবান্ধবতা এই বিষয়গুলো সবসময়ই বিশ্ব জুড়ে বেশ আলোচিত। বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া নানা পরিবেশগত বিপর্যয়গুলো দেখে আমরা অচিরেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, আমাদের এই পৃথিবী একটু একটু করে মরতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে সকল মানুষ এখন পরিবেশ বান্ধব জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।  পরিবেশ বান্ধব জীবনই এখন আমাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতীক হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এই কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংগুলোও এই একই শর্তে নির্মাণ করা হচ্ছে। যেন পরিবেশবান্ধবতা শুধু জীবনেই নয় জীবনের অন্যান্য অংশে সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং নির্মাণে প্রতি বছর ব্যবহৃত হয় ৪০০ মিলিয়ন টনেও বেশি উপাদান যা পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণখাতে মোট বায়ু দূষণের ২৩% জন্য দায়ী এবং এর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ৫০%। পরিবেশ বান্ধব পৃথিবী গড়তে সকলেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি রোজ। ঠিক এই অনুপ্রেরণা থেকেই ২০২০ সালে পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড শুরু হয়েছে বেশ জোড়ালোভাবে। আরও জানতে পড়তে থাকুন। 

পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড

২০২০ সালের পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড সম্বন্ধে জানার আগে আমাদের বুঝতে হবে, পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল বিল্ডিং এর লক্ষ্য হচ্ছে পরিবেশের উপর সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা। পরিবেশের উপর থেকে ক্ষতিকর সকল প্রভাব কমিয়ে এনে পরিবেশবান্ধবতা তৈরি করা।

প্যাসিভ হাউজ বা ঘর

প্যাসিভ হাউজ
প্যাসিভ হাউজ

পুরো বিল্ডিং শক্তি দক্ষতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোন কিছুই নেই। আর যেকোন বিল্ডিংকে টেকসই করতে প্যাসিভ সিমেন্টগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে। এবং এই প্যাসিভ সিমেন্টের নিজস্ব শক্তি ব্যবহার করে বিল্ডিং তৈরি করার প্রধান কারণ হচ্ছে আর্কিটেকচারাল বিল্ডিংকে টেকসই করা। এই তত্ত্বটি প্রথমে, জার্মান -ভাষী দেশ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছিল। বিভিন্ন দেশ এই সম্বন্ধে জানতে পারার সাথে সাথে এই তত্ত্বের  জনপ্রিয়তা শীঘ্রই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই প্যাসিভ তত্ত্ব তখন আর কেবল আবাসিক বিল্ডিং এ নয় বরং কমার্শিয়াল বিল্ডিং এ ব্যবহৃত হতে শুরু করল। শুধু, কমার্শিয়াল বিল্ডিং নয় অফিস ভবন, স্কুল, কিন্ডারগার্ডেন  এবং একটি সুপারমার্কেটেও দেখা দিতে শুরু করল। বিশ শতকের শেষদিকে কেবল ইউরোপ জুড়েই ২৫,০০০ এর বেশি বিল্ডিং কাঠামো তৈরি হয়েছিল। ২০০৮ এর শেষদিকে।  তবে কিভাবে এই প্যাসিভ বাড়ি তৈরি হবে? এবং এর উপাদানগুলি কী কী?
তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সৌর বিল্ডিং ডিজাইনের অনুকরণ হিসাবে শক্তি উত্পাদনের জন্য প্যাসিভ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মিশর ও আফ্রিকার মতো উত্তপ্ত অঞ্চলে একটি বিল্ডিংয়ের তাপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য “কুল ছাদ” নামে একটি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। যখন ছাদ উষ্ণ তখন ২০% তাপ প্রতিবিম্বিত করে, একটি শীতল ছাদ তাপের ৮০% প্রতিফলিত করে এবং ফলস্বরূপ, ঘরের ভেতর একটি আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে। অন্যদিকে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মতো শীতল জলবায়ু অঞ্চলে, তাপ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকুয়াম প্যানেল এবং এয়ারজেল প্রাচীর ব্যবহার করে বেশ ভালো ফলাফল এসেছে। এছাড়াও, বিল্ডিংয়ের অবস্থান, ঘর সাজানো, ঘরের পরিমাপ, জানালার অবস্থার ইত্যাদি  করেও ঘরের তাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।

নবায়নযোগ্য শক্তি 

সোলার প্যানেল
নবায়নযোগ্য শক্তি

২০২০ সালের পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে এই ট্রেন্ডটি। তা হল নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। এই ট্রেন্ডটি অল্প সময়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপ্লবী প্রযুক্তি যেমন, টেসলার সৌর প্যানেল বা সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইনস (একটি ব্যয়বহুল বিকল্প), হিটার পাম্প (এয়ার কন্ডিশনার বিকল্প) এবং সৌর জল গরম করার প্রক্রিয়াগুলো ধীরে ধীরে মানুষ এবং ব্যবসায় বেশ দৃঢ় ছাপ ফেলেছে।  অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার উইন্ডসর এর কে টু অ্যাপার্টমেন্ট টেকসই আবাসনের আদর্শ উদাহরণ।   প্যাসিভ সৌর নকশার সাথে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে চমৎকার একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। পানির অপচয় রোধে সেখানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহেরও ব্যবস্থা রয়েছে।  

টেকসই নির্মাণ সামগ্রী

টেকসই নির্মাণ সামগ্রী
টেকসই নির্মাণ সামগ্রী

রোমান সেলফ কংক্রিট, কাগজের ফ্লেক্স থেকে তৈরি প্যানেল, বেকড আর্থ, রামড আর্থ, কাদামাটি, টেকসই কাটা কাঠ এর মত টেকসই বিল্ডিং উপকরণের অভাব নেই। একটি টেকসই আর্কিটেকচার কেবল ভালো নকশারই ফলাফল নয় বরং,পুনর্ব্যবহৃত উপকরণগুলোর সঠিক ব্যবহারের উপরও নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, আসবাবপত্র এবং বাড়ির নির্মাণে পুনরুদ্ধারযুক্ত কাঠ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য তামা ব্যবহার করা। এতে করে আপনার আর্কিটেকচারাল বিল্ডিং বেশ টেকসই হবে। তাই অনেক আর্কিটেক্ট আছেন যারা পুরাতন উপকরণগুলি সংগ্রহ করেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করেন।  কাঠ, পাথর এবং বাঁশ যেগুলো স্থাপত্য উপকরণ হিসেবে নির্মাণকাজে  পুনরায় ব্যবহার করা হয়। 

থ্রি ডি কনস্ট্রাকশন প্রযুক্তি 

থ্রি ডি কনস্ট্রাকশন বাড়ী
থ্রি ডি কনস্ট্রাকশন প্রযুক্তি

এই প্রযুক্তিটি নতুন হলেও নেতিবাচক পরিবেশগত প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে বেশ শক্তিশালী একটি হাতিয়ার। পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড গুলোর মধ্যে সচরাচর এমন পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যায় না কিন্তু, অবশ্যই এটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এটা কম বর্জ্য উত্পাদন করে পরিবেশের সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। প্রযুক্তিটি নতুন হলেও বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। বর্তমানে এই প্রযুক্তির প্রবল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। 

বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (বিআইএম)

বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং
বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং

উপরে বর্ণিত সকল পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিআইএম এর ভূমিকা রয়েছে। কিভাবে একজন আর্কিটেক্ট এমন শক্তিশালী বিল্ডিং নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। স্থপতিরা বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (বিআইএম) সফ্টওয়্যারটির উপর নির্ভর করে শক্তিশালী সব বিল্ডিং করে থাকেন। দক্ষতার সাথে বিল্ডিং এবং অবকাঠামো পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ এবং পরিচালনা করার জন্য এ ই সি আর্কিটেক্টরা এই বিআইএম ব্যবহার করে থাকেন। এই সফ্টওয়্যারটিতে টোগোগ্রাফিক এবং ধারণামূলক মডেলিং করা যায়। যা পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপ করার জন্য একটি নিখুঁত সিমুলেশন তৈরি করে থাকে। ২০২০ সালের পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড হিসেবে বিআইএম অন্যতম। 

একটি শক্তিশালী বিল্ডিং তৈরি করতে পরিবেশ বান্ধবতার কোন বিকল্প নেই। পরিবেশ, মানুষ এবং বিল্ডিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য ও সম্পর্ক রক্ষার জন্য নবায়নযোগ্য উপকরণের ব্যবহার আমাদের বাড়িয়ে তুলতে হবে।

Write A Comment