বধু কোন আলো লাগলো চোখে
বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে।
রবী ঠাকুর
রবী ঠাকুরের গানের মত এই ব্যস্ত নগরীতে সূর্যের আলো পোহাবার মত সময় আর সুযোগ ক’জনেরই বা আছে। তাই বলে কি বধুর মুখ ছুয়ে যাওয়া আলোর লোভ বুঝি কারও হয় না? নিশ্চয়ই হয়! একেক জনের ঘর একেক রকম কারও দক্ষিনমুখী তো কারও পূর্বে। কোথাও অঢেল আলো কোথাও আবার অল্প আঁধার। নিত্যপ্রয়োজনের আলোগুলো ঘরের ভেতর সেই আমেজ তৈরি করতে পারে না। তার জন্যই প্রয়োজন অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট, অ্যাকসেন্ট লাইট কিংবা পেনডেন্ট লাইট। ঘরের ভেতরে অন্য এক ভুবন তৈরি করতে পেনডেন্ট লাইট এর জুড়ি নেই। ঘরের সাজে বাহারি বাতির ব্যবহার সম্বন্ধে আমরা সবাই জানি। এবার জানবো, পেনডেন্ট লাইট ব্যবহার করে কিভাবে নিজের ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। চমৎকার সব আইডিয়া সম্বন্ধে পড়তে থাকুন।
পেনডেন্ট লাইট কী?
পেনডেন্ট লাইট হচ্ছে এক ধরণের ফিক্সচার লাইট যা কিনা একটি কর্ড, চেইন বা মেটালের রড দ্বারা সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য লাইটের থেকে সাইজ, শেপ এবং ডিজাইনে পেনডেন্ট লাইটে আপনি খুঁজে পাবেন অনেক ভ্যারাইটি। পেনডেন্ট লাইটের অন্যতম একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এটাতে লাইট বা বাল্বের সংখ্যা একটি বা খুব বেশি হলে ৩ টি হবে। বাল্বের পরিমিত ব্যবহারই পেনডেন্ট লাইটকে শ্যান্ডেলিয়ার থেকে আলাদা করে তুলে। শ্যান্ডেলিয়ারে আমরা বেশির ভাগ সময় দেখেছি অনেকগুলো বাল্বের ব্যবহার থাকে। পেনডেন্ট লাইট হোম ডেকোরে ব্যবহার করা হয় একটি কর্নার বা কোন অবজেক্টকে হাইলাইট করার জন্য। ঘরের ভেতর আলাদা একটা অ্যাম্বিয়েন্স তৈরি করতেও পেনডেন্ট লাইটের জুড়ি নেই!
বসার ঘর
বর্তমানে আলোর ব্যবহারে ঘর সাজানো বেশ ট্রেন্ডি হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির একেকটি ঘর একেক ধরনের। তাই প্রতিটি ঘরে নানা ধরনের আলোয় রাঙালে বেশ মানাবে। বসার ঘরে লাগাতে পারেন রকমারি পেনডেন্ট লাইট। স্টিল, পিতল ইত্যাদি ব্যবহার করে একটি বা দুটি আলোর সেট। আপনি চাইলে ঝাড়বাতির সঙ্গে ম্যাচিং করে ওয়াল ব্রাকেটও নিতে পারেন। ব্রাকেট ব্যবহার করতে চাইলে বসার ঘরের জানালার ওপর সেট করুন। বড় বসার ঘরে অথবা ফলস সিলিং বসানো থাকলে সোফার এক পাশে রাখতে পারেন গাছের আদলের পেনডেন্ট লাইট। অ্যালুমিনিয়াম স্ট্যান্ডে ক্রিস্টাল আর কাচের তৈরি এই লাইট বেশ জমকালো ভাব আনবে ঘরে। লাইটের আলো গাছ বা যেকোন শোপিসের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করে তুলবে।
শোবার ঘর
পেনডেন্ট বা একসেন্ট লাইটিং অন্দরে এনেছে মর্ডান স্থাপত্যের ছোঁয়া। আলাদা করে প্রতিটি ঘরে লাইটগুলো ব্যবহারে বাড়ির সাদামাটা চেহারা পাল্টে যায়। শোবার ঘরের জন্য আলোর ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিত যেখানে আপনার আরাম আর প্রয়োজন দুটোই পূরণ হবে। এমন আলো রাখতে হবে যেখানে শান্তিতে চোখে ঘুম নেমে আসবে আবার এমন এক নাগারে বই পড়ার মহলও তৈরি হবে। শোবার ঘরে ওয়াল লাইটের সঙ্গে ঘরের এক কোণে পেনডেন্ট লাইটও লাগিয়ে নিন। বিছানার পাশে ওয়াল ব্রাকেট লাগালে বইপড়ার কাজে লাগবে। শোবার ঘরে ডিমার লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন। আবার ড্রেসিং টেবিলের ওপর লাগানোর জন্য স্পটলাইটই উপযুক্ত।
সিঁড়ি ঘর
সিঁড়ির জন্য ঝাড়বাতিকে আমার বেশ দারুণ লাগে। সচরাচর ঝাড়বাতি বসার ঘরের ব্যবহার হয়। কিন্তু যাদের বাসা ডুপেক্স তারা কিন্তু ঝাড়বাতিকে একটু নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। পেনডেন্ট লাইট যে শুধু বসার ঘরেই হতে হবে এমন কিন্তু নয়! বড় ঘর আর ছিমছাম সিলিং থাকলেই পেনডেন্ট লাইট ঝুলিয়ে দিতে পারেন। পেনডেন্ট লাইট দেখতে বেশ সুন্দর হয় একদম রাজকীয় একটা ভাব থাকে ঘরের ভেতর।
ঘরের কোণে
নান্দনিক এই ঝুলন্ত বাতিগুলো ছোট আকার থেকে শুরু করে আরও বড় হতে পারে। এখনকার ফ্যাশন হলো একই শেপ ও ম্যাটেরিয়ালের কয়েকটি ছোট বাতি গ্রুপ করে সিলিং-এ ঝুলিয়ে দেওয়া। আর এই ধারণা মাথায় রেখেই লাইটিংয়ের পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করেন ইন্টোরিয়র ডিজাইনাররা। পেনডেন্ট লাইট ব্যবহার করা হয় ঘরের কোণ কিংবা একটা নির্দিষ্ট জিনিসকে হাইলাইট করার জন্য। দেয়ালের পেইন্টিং, স্কাল্পচার, গাছ অথবা কোনো বিশেষ শোপিস। হ্যালোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের স্পটলাইট ব্যবহৃত হয় একসেন্ট লাইটিংয়ে। আপনার ঘরের এমন কোন কোণ যেটা আপনার কাছে বিশেষ সে জায়গাটায় আপনি পেনডেন্ট লাইট ব্যবহার করে সবার নজরে আনতে পারেন। পুরো বাসায় নিজের একটা কর্নার থাকাও কিন্তু জরুরী।
কোথায় পাবেন
ঢাকার উত্তরার লাইটিং সিটি, লাইটিং সেন্টার ও গুলশানের লাইটিং ওয়ার্ল্ড এসব লাইট বিক্রি করে থাকে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নবাবপুর, ধানমন্ডি, পল্টন, বিজয়নগর ও নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানেও এসব লাইট পওয়া যায়।
এই তথ্যগুলো জেনে নিলেই ঘরের জন্য পেনডেন্ট লাইট সঠিকভাবে বেছে নিতে পারছেন! কেমন লাগলো এই তথ্যগুলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।