Reading Time: 5 minutes

নতুন প্রপার্টি কেনার কথা ভাবছেন? প্রপার্টি কেনা হয়ত খুব সহজ বিষয় কিন্তু আইনগতভাবে প্রপার্টির মালিকানা নিজের করে নেয়া অনেক জটিল এবং সূক্ষ্ম একটি বিষয় যা করতে হয় অনেক সাবধানে, যত্ন নিয়ে। কেননা কোন প্রপার্টি, হোক সে আপনার মাথা গোঁজার ঠাঁই কিংবা বাণিজ্যিক কোন প্রপার্টি, তা সবসময়ই মহামূল্যবান। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক সময়ই এমন একটি প্রপার্টির মালিক হতে খরচ হয়ে যায় সারা জীবনের সঞ্চয়। আর সেজন্যই প্রপার্টির মালিকানা ভ্যালিডেশন করে নেয়াটা অত্যন্ত জরুরী।

কোন প্রপার্টি দেখে যদি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণীয় মনে হয় অথবা কেউ যদি কোন বাড়ি, প্রপার্টি বা জমি বিক্রিতে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখায়, তখনই সাবধান হয়ে যেতে হবে। এই প্রপার্টির সব ধরণের কাগজপত্র চেক করে দেখতে হবে। আমাদের দেশে রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত কেলেংকারীর ঘটনা ঘটে অহরহ। অনেকে প্রপার্টি ক্রয়ের পরে গিয়ে আবিষ্কার করেন যে এই সম্পত্তির বিপরীতে আছে ব্যাংক লোন কিংবা মর্টগেজ। এজন্যই প্রপার্টির মালিকানা ভ্যালিডেশন করার বিষয়টি  অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জরুরী। 

দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ রিয়েল এস্টেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাই আমাদের দায়িত্ব সংক্রান্ত তথ্য সবাইকে জানিয়ে দেয়া। তো চলুন দেখে নেয়া যাক দেশে জমি বা প্রপার্টির মালিকানা ভ্যালিডেশন করতে কী কী কাগজ পত্র খতিয়ে দেখতে হবে।

যে সকল ডকুমেন্ট বা নথি অবশ্যই চেক করে দেখতে হবে

white-paper-folders-with-black-tie
বিক্রেতা আপনাকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে সকল কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য

জমির মালিকের নামে থাকা দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্র হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল যার মাধ্যমে এর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব। তাই যে কোন প্রপার লেনদেনের পূর্বে জমির মালিকের কাছে নিম্নোক্ত কাগজগুলো খতিয়ে দেখার জন্য চেয়ে নিন

মালিকানা দলিল

এটি প্রপার্টির প্রধানতম দলিল। এর মাধ্যমেই এক পক্ষ অপরপক্ষের নিকট থেকে যে আইনগতভাবে প্রপার্টির মালিকানা বুঝে নিয়েছে এবং রেজিস্টার করে নিয়েছে, তা প্রমাণিত হয়। ক্রয় হোক অথবা উপহার, কোন প্রপার্টি রেজিস্টার করে নিয়ে তার মালিকানা দাবী করতে হলে অবশ্যই এই মালিকানা দলিলে স্বাক্ষর করা প্রয়োজন।

এই দলিলের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আপনাকে যেতে হবে এই দলিল যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে সেখানে। আর সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলেই আপনি এই প্রপার্টির আসল মালিক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। তবে, যদি উত্তরাধিকার সুত্রে কেউ কোন প্রপার্টির মালিক হয়ে থাকে তাহলে শুধুমাত্র এই দলিলই যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে পার্টিশন ডিড বা বন্টননামা চেক করে পূর্ববর্তী মালিক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। 

সকল বায়া দলিল

বায়া দলিল হল প্রাক্তন সকল মালিকদের মালিকানা দলিল। আপনি যে প্রপার্টি কিনতে চাচ্ছেন তার পূর্ববর্তী মালিকদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বায়া দলিল থেকে পাওয়া সম্ভব, যা আপনাকে এই প্রপার্টি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা প্রদান করবে। তাই বায়া দলিল চেক করাও দরকার প্রপার্টির মালিকানা ভ্যালিডেশন কল্পে

খতিয়ান

খতিয়ান (রেকর্ড অফ রাইটস), সত্তলিপি বা পরচা হল ভূমি নির্ণয়ের একটি বিশেষ দলিল বা নথি। এই নথির মাধ্যমে কোন জমির মালিকানা, দখল সম্পর্কে ধারণা পাবার পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর নিরূপণ করা যায়।

প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলাকে ছোট ছোট অসংখ্য প্লটে বিভক্ত করা হয় যা বাংলা পরিভাষায় “মৌজা” নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এই মৌজাকেও যখন আরও ভাগে বিভক্ত করার দরকার তখন প্রস্তুত করা হয় খতিয়ান। জমির ধরণ, জমির কতটুকুর মালিকানা কার, এর মালিকানা, ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ, কীভাবে সেই কর পরিশোধিত হবে এ সবকিছুই পরবর্তীতে খতিয়ানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

খতিয়ান বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – 

  • সি.এস.  (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে)
  • এস.এ. (স্টেট অ্যাকিউজিশন সার্ভে)
  • পি.এস. (পাকিস্তান সার্ভে)
  • আর.এস. (রিভিশনাল সার্ভে)
  • বি.এস (বাংলাদেশ সার্ভে)
  • ঢাকা সিটি জরিপ
  • দায়রা জরিপ, ইত্যাদি

উপরের কোন খতিয়ানটি/গুলো আপনার জমি বা সম্পত্তির জন্য প্রযোজ্য হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে এর অবস্থান কোথায় তার উপরে। 

মিউটেশন খতিয়ান বা নামজারি

কোন প্রপার্টির মালিকানার বৈধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই মিউটেশন খতিয়ান। মিউটেশন খতিয়ানকে অনেকে “নামজারি” হিসেবেও চেনেন। দুটো ভিন্ন কারণে এই নামজারির প্রয়োজন এত বেশি। 

প্রথমত, উপরে যেমন বলা হয়েছে, প্রতিটি খতিয়ানই প্রস্তুত হবার কথা একটি সার্ভের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবতা হল, সবসময় যে তেমনটি হয়, তা নয়। এছাড়া দুটি সার্ভে বা জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে যদি কোন সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন ঘটে তাহলে মিউটেশন করা এবং পূর্বের মালিকের জায়গায় খতিয়ানে নতুন মালিকের নাম পরিবর্তন বা নামজারি করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর দ্বিতীয়ত, সরকারীভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জমির খাজনা পরিশোধ করা। অপরিশোধিত খাজনার কারণে বহু জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আর খাজনা পরিশোধের জন্য একটি হোল্ডিং নাম্বার পেতে মিউটেশন খতিয়ান বা নামজারি থাকাটা আবশ্যক।

এসি ল্যান্ড অফিস থেকে মিউটেশনের তিনটি নথি অবশ্যই খতিয়ে দেখে নিতে হবে।

  • নামজারি জমাভোগ প্রস্তাবপত্র বা মিউটেশন প্রপোজাল লেটার
  • ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ বা ডিসিআর 
  • মিউটেশন খতিয়ান

এই ডকুমেন্টগুলো ছাড়া বৈধভাবে কোন প্রপার্টি বা সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর সম্ভব নয়।

এন.ও.সি (নো অবজেক্ট সার্টিফিকেট), এন.ই.সি (নো এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট)

জমির বা প্রপার্টি ক্রয়ের পরবর্তী জটিলতা পরিহার করতে চাইলে লেনদেনের পূর্বেই এই দুটি সার্টিফিকেট চেক করে নিতে হবে। এনকামব্রেন্স শব্দটির অর্থ দায়। হয়ত কোন প্রপার্টি বা জমির বিপরীতে কোন দায় আছে যা বিক্রির পূর্বে মালিক উল্লেখ করবেন না। ক্রেতা হিসেবে তাই আপনাকেই সে সকল খোঁজখবর নিয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে এই সার্ফিটিফিকেট দুটো সংগ্রহ করে রাখলে পরবর্তী যদি আপনি আবার এই সম্পত্তি বিক্রি করতে চান, তখনও তা কাজে লাগবে।

জমির খাজনা রশিদ এবং ভাড়ার রশিদ

বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি জমির জন্য একটি বাৎসরিক ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং আপডেটেড ভাড়ার রশিদ নিয়ে তা খতিয়ে দেখুন। সঠিকভাবে এটি পরিশোধিত হচ্ছে কী না তা জানতে সংশ্লিষ্ট অফিস ভিজিট করুন। এটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ কেননা জমিতে কোন প্রকার ঝামেলা থাকলে এই ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব না।

এবং অন্যান্য

architect-architecture-blueprint-build
দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে অ্যাপ্রুভাল নিয়ে প্রপার্টির প্ল্যান পাশ করা কী না খতিয়ে দেখুন

উপরে উল্লেখ করা কাগজপত্র ছাড়াও আরও বেশ কিছু দরকারী কাগজ খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন সকল জমির জন্য ট্যাক্স বা খাজনা পরিশোধ করা আবশ্যক। ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধিত না থাকলে সরকার যে কোন সময় এই জমি সিজ করে নিতে পারে। এজন্য একদম ঠিকভাবে খাজনা আদায়ের রশিদ চেক করতে হবে। এছাড়াও আপনি যদি কোন ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা বিল্ডিং কিনতে চান তাহলে কেনার আগে এই প্রপার্টির প্ল্যান পাশ করা আছে কী না, ঠিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে অ্যাপ্রুভাল নেয়া আছে কী না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। সম্পত্তির বিপরীতে কোন দায়, মর্টগেজ বা ব্যাংক লোন আছে কী না, তাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখুন।  

প্রপার্টি ক্রয়ের আগে অবশ্যই একাধিকবার স্বচক্ষে পরখ করুন

যদিও আমাদের এই লেখাটি শুধুমাত্র জমি বা প্রপার্টির বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই বাছাই সংক্রান্ত এবং আমরা তা নিয়ে বিস্তারিত বলেছিও, তবুও, নিজ চোখে দেখার চাইতে তৃপ্তিদায়ক আর কিছু হতে পারে না। আর সেজন্যই অবশ্য অবশ্যই জমি বা প্রপার্টিতে গিয়ে, নিজ চোখে সরোজমিনে প্রত্যক্ষ করে তবেই সিদ্ধান্ত নিন সেই প্রপার্টি সম্পর্কে। অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফলাফল হয়েছে খুবই মর্মান্তিক। অনেকে হয়ত টাকা পরিশোধ করে পরবর্তীতে আবিষ্কার করেছেন, যে প্রপার্টির জন্য তিনি টাকা দিয়েছেন বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই। এমন জোচ্চুরির হাত থেকে নিস্তার পেতে প্রপার্টি ক্রয়ের আগে অবশ্যই একাধিকবার নিজে গিয়ে স্বচক্ষে পরখ করুন সেটি।

এত দূর পড়ে যদি আপনার মনে হয় প্রপার্টির মালিকানা ভ্যালিডেশন একটি জটিল এবং সময় সাপেক্ষ কাজ, অবশ্যই এটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ কাজ! আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তা আরও ক্লান্তিরকর এক যাত্রা। এজন্যই সবারই প্রয়োজন অভিজ্ঞ এবং প্রফেশনাল কারো পরামর্শ, উপদেশ এবং সাহায্য, যারা আপনার হয়ে এসব কাজ প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রপার্টি সংক্রান্ত এমন পূর্ণাঙ্গ ৩৬০ডিগ্রি সাপোর্ট কেবলমাত্র দিচ্ছে বিপ্রপার্টি ডট কম। ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা, উভয়ের জন্যই এ ক্লান্তিকর যাত্রাকে সহজ করতে এবং প্রয়োজনীয় সবধরনের সাপোর্ট দিতে আমাদের আছে অভিজ্ঞ প্রপার্টি এক্সপার্ট, আফটার সেলস সার্ভিস ও লিগ্যাল টিম। প্রপার্টি কেনা বা বিক্রির পরিকল্পনা থেকে শুরু করে একদম লেনদেন হবার আগ পর্যন্ত আমরা আপনাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারি।

তো, এই লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে? এটি কি কোন আপনার কাজে আসবে? আপনার আর কিছু জানার আছে কি? আমাদেরকে প্রশ্ন করতে পারেন কমেন্ট বক্সে। আর আমরা আপনার জন্যই আমাদের ব্লগে প্রতিদিন নতুন নতুন লেখা প্রকাশ করি। সেজন্য চোখ রাখতে হবে বিপ্রপার্টি ব্লগে

Write A Comment