Reading Time: 4 minutes

একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই অগ্রগতি বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে বেশ ভালো একটি অবস্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরাও এখানে বিনিয়োগের ব্যাপারে বেশ উৎসাহী হয়ে উঠছেন। বর্তমান জিডিপি অনুযায়ী বিশ্বের ৪৩তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান। আর তাই উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় সবকিছু যদি পরিকল্পনামাফিক চলতে থাকে, তবে বলাই যায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের একটি দেশ হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবেই জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।  

আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শক্তিশালী অবকাঠামো গড়ে তোলা সাথে শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সারা দেশেই চলছে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের কাজ। আর তাই বাংলাদেশে চলমান একাধিক মেগাপ্রকল্পের মধ্য থেকে আজকে আমরা বাংলাদেশের ৫টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তবে চলুন আজকের ব্লগ থেকে বাংলাদেশের মেগাপ্রকল্প গুলো সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক!  

পদ্মা বহুমুখী সেতু 

পদ্মা বহুমুখী সেতু
পদ্মা বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার

প্রকল্পের অবস্থান– লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর 

দৈর্ঘ্য– ৬.১৫ কিলোমিটার

কাজের অগ্রগতি– ৮৮%

প্রকল্পে ব্যয়– ৩.৬ বিলিয়ন ডলার    

বাংলাদেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হল পদ্মা বহুমুখী সেতু, যা পদ্মা নদীর উপর দিয়ে বিস্তৃত। এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে। বর্তমানে এই সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। কাঠামোটির উপরের অংশে একটি চার লেনের হাইওয়ে রয়েছে এবং নীচের অংশে রয়েছে একটি একক-ট্র্যাক রেলপথ।  প্রায় ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশাল কাঠামোর এই সেতুটির কাজ সম্পন্ন হলে, তা হবে দেশের দীর্ঘতম সেতু। পদ্মা বহুমুখী সেতু নিয়ে তাই বেশ আশাবাদী এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই, কেননা এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ১.২ শতাংশ চাঙ্গা করে তুলবে বলেই সবাই আশাবাদী।

ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ 

ঢাকা মেট্রোরেল
বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল ট্রেন এর ট্রায়াল চলছে

স্টেশনের সংখ্যা– ১৬ (এলিভেটেড) 

দৈর্ঘ্য– ২০.১০ কিলোমিটার 

টার্মিনাল– উত্তরা টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন

ইন্টারচেঞ্জ স্টেশন– কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (এমআরটি লাইন ১, ২, ৪, ৬) 

ডিপো– উত্তরা টার্মিনাল

নির্মাণ কাজ সম্পন্নের সম্ভাব্য সময়– ২০২২

কাজের অগ্রগতি– ৭৩% 

প্রকল্পে ব্যয়– ২.৮ বিলিয়ন ডলার    

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ -কে ১.১৬ কিলোমিটার প্রসারিত করার জন্য ইতিমধ্যে বিশদ নকশা এবং জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। আর তাই, এই রুটে যে মেট্রো ট্রেনগুলো চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে সেগুলো পরীক্ষার জন্য বর্তমানে বেশ কয়েকটি ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হচ্ছে৷ সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চললে, আশা করা যাচ্ছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি সম্পূর্ণরূপে চালু করা যাবে।

মেট্রো ট্রেনের রুট-: উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ – পল্লবী – রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে ফার্মগেট হয়ে খামারবাড়ি – হোটেল সোনারগাঁ – শাহবাগ – টিএসসি – দোয়েল চত্বর – তোপখানা রোড – বাংলাদেশ ব্যাংক। 

কর্ণফুলী টানেল

কর্ণফুলী টানেল
কর্ণফুলী টানেল এর দৈর্ঘ্য হতে যাচ্ছে ৩.৩২ কিলোমিটার

প্রকল্পের অবস্থান– চট্টগ্রাম, কর্ণফুলী নদী

দৈর্ঘ্য– ৩.৩২ কিলোমিটার 

কাজের অগ্রগতি– ৭৫%

খরচ– ১.২ বিলিয়ন ডলার 

২০২২ সালের মধ্যে টানেলটি খোলা সম্ভব হলে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি হবে এশিয়ার প্রথম নদীর টানেল। দেশের সবচেয়ে সক্রিয় বন্দর শহর হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে এর অবস্থান। যার ভূগর্ভস্থ রাস্তাটি ৩.৩২ কিলোমিটারের এবং প্রায় ৩৪ ফুট বিস্তৃত। বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে, এই প্রকল্পের চূড়ান্ত খরচ পড়বে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে, যার অর্থায়নের প্রায় অর্ধেকই চীনের এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমেই হচ্ছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকল্পের অবস্থান– ঈশ্বরদী

কাজের অগ্রগতি– ৭৭%

খরচ– ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার 

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর, যা কিনা ঢাকা থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। রাশান ফেডারেশনের স্টেট এ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন (রোসাটোম) এর অবকাঠামোমূলক উপাদান সমূহ তৈরি করছে এবং স্থানীয় ডেভেলপাররা এর বাকি কাজগুলো পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যেই ২০২৩ সালে দুটি ইউনিটের কাজ চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যুতের সমস্যা দূর করতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বেশ উপকারী হবে বলেই আশা করছেন এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা। 

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর
মহেশখালীতে অবস্থিত দেশের সর্বপ্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি

প্রকল্পের অবস্থান– কক্সবাজার

কাজের অগ্রগতি- ৩০%

খরচ– ৪.৫ বিলিয়ন ডলার

দেশের সর্বপ্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ির অবস্থান মহেশখালী অঞ্চলে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাপানের দুইটি ব্যস্ততম বন্দর নিগাতা এবং কাশিমার এর আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। জাপানি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা এই বন্দর নির্মাণের চুক্তি পেয়েছে। বন্দরের কিছু অংশের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং মাতারবাড়ি ডকে নৌকা ভেড়ানো শুরুও হয়েছে। তবে এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

একটি দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মূল নির্দেশক হিসেবে কাজ করে সে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে নেয়া মেগাপ্রকল্পগুলো। একটি দেশের সম্পদ, গর্ব এবং শক্তির পরিচয় বহন করা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে এর উপস্থিতি জানান দেয়া পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই এই মেগাপ্রকল্পগুলো হয়ে উঠে কৃতিত্বের প্রতীক। আর তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এর চেয়ে আলাদা কিছু নয়, কেননা বাংলাদেশের মেগাপ্রকল্প গুলোই এর একেকটি উদাহরণ।

Write A Comment

Author