Reading Time: 4 minutes

ঢাকা শহরে নিজের একটি জমি হবে, একথা কে না ভেবেছে!  আমরা সবাই চাই এমনভাবে বিনিয়োগ করতে যেখানে ঝুঁকির সম্ভাবনা খুব কম থাকবে এবং বিনিয়োগটি নিশ্চিতভাবে লাভজনক হবে।  এই নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশাল একটি বাজার দখল করে রেখেছে জমি, প্লট বা ল্যান্ড। কিন্তু রিয়েল এস্টেটের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটিতে লাভজনক বিনিয়োগ করতে হলে,  জানা প্রয়োজন বিগত কয়েক দশকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায়, জমির দামের তারতম্যটা কেমন। আপনি যখন বিগত দশকের বিভিন্ন এলাকার জমির দামের তারতম্য এবং এ তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ করতে পারবেন, তখনই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বর্তমানের বিনিয়োগের জন্য। তাই আজকের ব্লগে জানাব  ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিগত দশকগুলোতে জমির দাম, এর তারতম্য ও বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিনিয়োগ সম্ভাবনা সম্পর্কে।  

বারিধারা 

আবাসিক এলাকা হিসেবে আলাদা জনপ্রিয়তা আছে বারিধারার। ছায়াঘেরা শান্ত পরিবেশে সুপরিল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে চমৎকার এই এলাকাটি। রয়েছে স্বনামধন্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল কিংবা শপিংমলসহ নাগরিক জীবনের সকল উপকরণ। আর একারণেই এখানে জমির দাম বেড়েছে হু হু করে। বারিধারায় ১৯৯০ সালে প্রতি কাঠা জায়গার গড়মূল্য ছিল ৬ লক্ষ টাকা।.২০০০ সালে যা বেড়ে হয় ৫০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে বারিধারায় জায়গার দাম বেড়ে যায় ৭৩৩%। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বারিধারায় জমির দামের পার্থক্যটা আরও চাঞ্চল্যকর। ৫০ লক্ষ টাকা থেকে জমির দাম বেড়ে হয় কাঠা প্রতি ৪ কোটি টাকা। 

বারিধারা  সময় মূল্য (কাঠা প্রতি) উর্ধ্বগতির হার
১৯৯০ সাল  ৬ লক্ষ টাকা
২০০০ সাল ৫০ লক্ষ টাকা ৭৩৩% (১৯৯০-২০০০)
২০১০ সাল ৪ কোটি টাকা  ৭০০% (২০০০-২০১০) 

 

গুলশান

gulshan 2
২০০০-২০১০ সালে গুলশানের জমির মূল্যবৃদ্ধির হার ১০৩৬%

বর্তমান ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা গুলশান। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থাকায় প্রতিটি কর্মদিবসই এখানে মানুষের পদচারনায় মুখর। আর এসবকে কেন্দ্র করেই গুলশানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিলাসবহুল ভবন, আধুনিক রেস্টুরেন্ট এবং আনুষাঙ্গিক স্থাপনা। তাই আবাসিক এলাকা হিসেবেও এ এলাকাটির প্রতি সকলেরই আছে আলাদা আকর্ষণ।  গুলশানে ১৯৯০ সালে যে জমির দাম ছিল কাঠা প্রতি ৬ লক্ষ টাকা যা মাত্র ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২২ লক্ষ টাকায়।  ২০১০ সালে এ জমির দামের উর্ধ্বগতি গিয়ে দাঁড়ায় আড়াই কোটি টাকায়। অর্থাৎ মাত্র ১০ বছরে মূল্যবৃদ্ধির হার ১০৩৬%। 

গুলশান সময় মূল্য (কাঠা প্রতি) উর্ধ্বগতির হার
১৯৯০ সাল  ৬ লক্ষ টাকা
২০০০ সাল ২২ লক্ষ টাকা ২৬৭% (১৯৯০-২০০০)
২০১০ সাল ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ১০৩৬% (২০০০-২০১০) 

বনানী 

banani
আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক, উভয় কারণেই বনানী ঢাকার মহামূল্যবান এক এলাকা

অনেক আগে যখন বনানী এলাকার পরিকল্পনা করা হয় তখন এলাকাটিকে মধ্যবিত্তের জন্য একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে ভাবা হয়েছিল। তাই বিগত দশকগুলোতে জমির দাম ও ছিল হাতের নাগালে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই বনানীতে এখন দেশের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য মানুষদের বসবাস। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক, উভয় কারণেই বনানী বর্তমানে ঢাকার মহামূল্যবান এক এলাকা। এখানে ১৯৯০ সালে প্রতি কাঠা জমির গড় মূল্য ছিল ৬ লক্ষ টাকা যা ২০০০ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ২০ লক্ষ টাকায় এবং ২০২০ সালে বনানীতে প্রতি কাঠা জমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয় দেড় কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২০১০ সালে জমির মূল্যের উর্ধ্বগতির হার ৬৫০%। 

বনানী সময় মূল্য (কাঠা প্রতি) উর্ধ্বগতির হার
১৯৯০ সাল  ৬ লক্ষ টাকা
২০০০ সাল ২০ লক্ষ টাকা ২৩৩% (১৯৯০-২০০০)
২০১০ সাল ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ৬৫০% (২০০০-২০১০) 

ধানমন্ডি 

dhanmondi
১৯৯০ সালে ছিমছাম ধানমন্ডির প্রতি কাঠা জমির গড় মূল্য ছিল মাত্র ৬ লক্ষ টাকা

ঢাকার মধ্যে আবাসিক এলাকা হিসেবে অন্যতম জনপ্রিয় এলাকা ধানমন্ডি। ১৯৯০ সালে ছিমছাম এই এলাকাটির প্রতি কাঠা জমির গড় মূল্য ছিল মাত্র ৬ লক্ষ টাকা। ২০০০ সালে এ জমির মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ২২লক্ষ টাকায়। ২০১০ সালে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল আরও বেশি। প্রতি কাঠা জমির দাম হয় ২ কোটি টাকা।  

ধানমন্ডি সময় মূল্য (কাঠা প্রতি) উর্ধ্বগতির হার
১৯৯০ সাল  ৬ লক্ষ টাকা
২০০০ সাল ২২ লক্ষ টাকা ২৬৭% (১৯৯০-২০০০)
২০১০ সাল ২ কোটি টাকা ৮০৯% (২০০০-২০১০) 

অন্যান্য এলাকা 

অভিজাত এই এলাকাগুলো ছাড়াও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর বা উত্তরার মত আবাসিক এলাকার জমির দামও বেড়েছে অভাবনীয় হারে। মোহাম্মদপুরে ১৯৯০ সালে যে জমির দাম ছিল কাঠা প্রতি ৫ লক্ষ টাকা, মাত্র ১০ বছরে সেই একই জমির দাম বেড়ে হয় ১২ লক্ষ টাকা। ২০০০ থেকে ২০১০ সালে এই মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ৪৩৬%। অর্থাৎ প্রতি কাঠা জমির দাম ৭০ লক্ষ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির এই চিত্র মিরপুরের ক্ষেত্রেও আলাদা নয়। মিরপুরে ১৯৯০ সালে প্রতি কাঠা জমির দাম ছিল ২ লক্ষ টাকা যা ২০০০ সালে বৃদ্ধি পায় ৭ লক্ষ টাকা। এবং ২০১০ সালে সেই একই জমির দাম হয় ৪০ লক্ষ টাকা। ঢাকার মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় এলাকার উত্তরা।  ১৯৯০ সালে এই এলাকাটিও বর্তমানের মত এতো উন্নত ও অভিজাত ছিল না। তাই তখন এই এলাকাটিতে প্রতি কাঠা জমির গড় মূল্য ছিল মাত্র ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু পরের ১০ বছরে উত্তরাতে জমির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এবং তারও পরবর্তী ১০ বছরে উত্তরার জমির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬৫০%। অর্থাৎ উত্তরায় ২০১০ সালে প্রতি কাঠা জমির গড় দাম হয় ৭৫ লক্ষ টাকা। 

বর্তমান বিনিয়োগ ভাবনা 

এক সময়ে গুলশান, বনানী, বারিধারার মত এলাকাগুলোও ছিল স্বল্পোন্নত এবং অপরিকল্পিত। সময়ের বিবর্তনে এই এলাকাগুলোর আশেপাশে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো দূতাবাস। বৃদ্ধি পেয়েছে বিলাসবহুল আবাসনের চাহিদা। প্রতিটি ব্লক আর রোডে ভাগ করে সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে প্রশস্ত সড়ক আর আকাশচুম্বী ভবন। আর এ ধরণের উন্নয়নের কারণেই সময়ের বিবর্তনে এই এলাকাটিতে জমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক শো” গুণ।  কিন্তু পরবর্তী প্রশ্নটি হচ্ছে, আপনি কোথায় ইনভেস্ট করবেন? স্বল্প বাজেটের মধ্যে থেকেই সফল বিনিয়োগ করতে খুঁজে নিতে হবে এমন একটি এলাকা যেখানে আগামীতে উন্নয়নের অসংখ্য সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকার আশেপাশে এমনই কয়েকটি এলাকার নাম দক্ষিণখান, পূর্বাচল, কেরাণীগঞ্জ এবং সাভার। এই এলাকাগুলো এখনো যথেষ্ট উন্নত না হলেও আগামীর ঢাকা এখানেই বর্ধিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। অথবা, ধরা যাক মিরপুরের কথা! মেট্রোরেল চালু হলেই এখানকার জমির দাম বৃদ্দি পাবে কয়েক গুণ, বিগত দশকগুলোর তথ্যের হিসাব থেকেই তা সহজেই অনুমেয়। তাই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিগত দশকগুলোতে জমির দাম কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কেন বৃদ্ধি পেয়েছে, এই প্রশ্নের সঠিক বিশ্লেষণই আপনার ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে আরো সম্ভাবনাময় করে তুলতে পারে। আপনি কোথায় বিনিয়োগের কথা ভাবছেন, কমেন্টে জানিয়ে দিন।  

Write A Comment

Author