Reading Time: 4 minutes

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটু খোলা জায়গা পাওয়াই যেন বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার হার অনুযায়ী, এটা খুবই স্পষ্ট যে যত দিন যাবে এই শহরে বসবাসের জায়গার চাহিদাও দিনকে দিন বেড়েই যাবে। আর একারণেই বিশাল এই জনগোষ্ঠীর বসবাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যেখানেই কিছুটা খোলা জায়গা আছে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। এছাড়া উন্নত জীবনযাপনের সন্ধানে প্রতিনিয়তই রাজধানী শহরে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে প্রয়োজন হচ্ছে বসবাসের জায়গার। তাই, একদিকে যেমন ঢাকাকে এই সকল মানুষদের থাকার জায়গা নিশ্চিত করতে হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে নতুন নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা শহরে রয়েছে জায়গার সংকট। আর এরই বিকল্প একটি ব্যবস্থা হিসেবে অনেকেই ইদানিং ঢাকায় ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে আকৃষ্ট হচ্ছেন। 

অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিভিন্ন ধরনের বিষয় যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা-অসুবিধা, যেগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখাও প্রয়োজন। তবে চলুন আজকের ব্লগ থেকে ঢাকায় ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা নেয়া যাক। 

ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা সমূহ 

Buying a used flat in Dhaka will offer you several benefits with a lucrative price tag

ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনা হতে পারে ‘লাভজনক’ 

ঢাকায় একটি ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে। যেমন ধরুন- আপনি চাইলে বসবাসের উদ্দেশ্যে একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারেন, অথবা বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যেও আপনি প্রথমে ফ্ল্যাটটি কিনে সেটি পরবর্তীতে অধিক মূল্যে বিক্রিও করতে পারেন। আপনি যদি দ্বিতীয় অপশনটি বেছে নেন, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট কেনাই হবে আপনার জন্য উত্তম। কেননা, একটি ব্যবহৃত ফ্ল্যাট সবসময়ই এর বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। আর তাই, আপনি যদি সহজে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে কোন ফ্ল্যাট কেনার কথা ভেবে থাকেন, তবে কোন ব্যবহৃত ফ্ল্যাট ক্রয় আপনার জন্য তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুলই হবে। অন্যদিকে সময়ের সাথে সাথে, প্রপার্টির দাম বরাবরই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে পরবর্তীতে আপনি এটিকে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। তবে যখনই আপনি কোন ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন, তখন অবশ্যই সে ফ্ল্যাটের সকল দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবে চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হবেন৷

প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা 

আপনি যদি ঢাকায় কোন ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কিনে থাকেন, তবে দেখা যাবে ইতিমধ্যেই উক্ত ফ্ল্যাটে বেশ কিছু সংস্কারের কাজ করানো হয়েছে। সেটি হতে পারে দেয়াল রঙ করানো, মেঝেতে টাইলস লাগানো, বাথরুমের ফিটিংস পরিবর্তন বা রান্নাঘরে বাড়তি কোন কেবিনেট এর ব্যবস্থা করা। ব্যবহৃত ফ্ল্যাটে এ সকল কাজ করানোর ফলে তা একঅর্থে আপনার জন্য বেশ সুবিধারই হবে বলা যায়। কেননা পরবর্তীতে আপনি যখন এই ফ্ল্যাটটি বিক্রি করতে যাবেন, তখন উল্লেখযোগ্য এই কাজ গুলো আপনার  প্রপার্টির মূল্য বাড়িয়ে দিবে। ফলে প্রপার্টির কাঙ্ক্ষিত মূল্য বৃদ্ধিতে এর ভালোই প্রভাব পড়বে। 

প্রপার্টির মূল্য নিয়ে দরদামের সুযোগ  

প্রপার্টি কেনার ক্ষেত্রে আমাদের গতানুগতিক কিছু পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন ধরুন, ফ্ল্যাট কিনতে হলে আপনাকে সবার প্রথমে ডেভেলপারদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা যেহেতু প্রফেশনালি প্রপার্টি ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে থাকে, তাই তাদের সাথে প্রপার্টি মূল্য নিয়ে দরদামের সুযোগটা তেমন থাকে না। তবে অন্যদিকে ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের মালিকেরা নিজেরাই ফ্ল্যাট বিক্রয়ের পুরো বিষয়টি দেখেন বলে প্রপার্টির বর্তমান বাজারমূল্য নিয়ে তেমন একটা ধারণা তাদের নাও থাকতে পারে। আর এর সাথে যেহেতু তারা ফ্ল্যাটটি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই দীর্ঘসময় সেটিকে ধরে না রেখে বিক্রয়ের ব্যাপারেই বেশি উদ্যোগী থাকেন। ফলে ব্যবহৃত ফ্ল্যাট ক্রয়ের সময়ে দরদামের কিছুটা হলেও সুযোগ থাকে এবং বাজারের তুলনায় কম মূল্যেই ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।  

কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব 

প্রথমে মহামারীর ধাক্কা, পরবর্তীতে তেলের এবং ভবন নির্মাণে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, এসব কিছুর প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়েছে রিয়েল এস্টেট খাতে। ফলে যারা নতুন ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন এবং যারা তাদের জমানো বা লোন করা টাকা দিয়ে নিজেই বাড়ি বানানোর কথা ভেবেছিলেন, তাদেরকে এখন ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কেননা যেকোনো ক্ষেত্রেই বেশ বড় অংকের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর তাই এক্ষেত্রে বেশ বড় একটি সুবিধা হচ্ছে ব্যবহৃত ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুযোগ। যেহেতু ফ্ল্যাটে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কোন প্রভাব পড়ছে না, তাই নতুন ফ্ল্যাট কেনার বদলে তুলনামূলক কম খরচে আপনি একটি ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন, যা দারুণ এক সুবিধাই বলা যায়।   

ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার অসুবিধা সমূহ

Stop and rethink your decision before buying a used flat when you can buy brand new from developers

ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধার দিকগুলো নিয়েও কিছুটা হলে ভাবা উচিৎ। 

কেননা আপনি কিন্তু ডেভেলপারদের কাছ থেকে খুব সহজেই একটি নতুন ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন। তবে কেন ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাববেন? আর ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার বিভিন্ন সুবিধা সমূহ দেখে সহজেই রাজি না হয়ে, বরং অসুবিধা গুলো সম্পর্কেও আগে থেকেই ধারণা রাখুন।  

নতুন ফ্ল্যাটে থাকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা 

বর্তমান সময়ের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকে, যা আগের ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট-এ নাও থাকতে পারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ম্যাটেরিয়ালে নির্মিত ভবনগুলোতে থাকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা, পাওয়ার ব্যাকআপ এর সুবিধা, আধুনিক লিফট, অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা সহ আরও অনেক কিছু। ফলে আপনি যদি কোন ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার কথা ভেবে থাকেন, যেখানে এসকল সুযোগ-সুবিধা অনুপস্থিত, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই আরও একবার ভেবে নেয়া উচিৎ।

ব্যবহৃত ফ্ল্যাটে পরিবর্তনের সুযোগ আছে কি? 

ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে আপনি হয়তো সন্তোষজনক কোন দামে তা পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একবার সেই ফ্ল্যাটে ওঠার পর আপনার মনে হলো এই ফ্ল্যাটে বেশ কিছু জিনিস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিবর্তন গুলো করার সুযোগ কি আদৌ আছে? বা এতে করে আপনার যে টাকা খরচ করতে হবে, তা কি আপনার জন্য লাভজনক হবে? এ ধরনের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়তো আপনি হতে পারেন, যদি আপনি কোন ব্যবহৃত ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের কথা ভেবে থাকেন। অন্যদিকে নতুন ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে আপনাকে এ ধরনের কোন সমস্যার মধ্যে যেতে হচ্ছে না। আর তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে নিন আরও একবার!   

মূল্যহ্রাসের দিকগুলো বিবেচনা করেছেন তো? 

অবচয় বা মূল্যহ্রাস যেকোনো জিনিসের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে আপনার কেনা ব্যবহৃত ফ্ল্যাটটির ক্ষেত্রেও যদি এই মূল্যহ্রাস নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হয়, সেক্ষেত্রে এই ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনা আপনার জন্য সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই হবে বেশি। আর একারণে অনেকেই পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বাড়তি ঝামেলা এড়াতে ডেভেলপারদের কাছ থেকে নতুন ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে উৎসাহী থাকেন। 

পরিশেষে বলতে হচ্ছে, যেহেতু ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত আপনার, তাই ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কিনবেন নাকি নতুন ফ্ল্যাট, সেটাও আপনার পছন্দের উপরই নির্ভর করবে। তবে আপনি যেন সিদ্ধান্তটি সঠিকভাবে নিতে পারেন, সে লক্ষ্যেই উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা নেয়া প্রয়োজন।

Write A Comment