প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে সমগ্র পৃথিবীই এখন হাতের মুঠোয়। নিজের আপনজন কিংবা বন্ধুর খোঁজখবর নেবার জন্য এখন আছে হাজারটা যোগাযোগের ডিজিটাল মাধ্যম ও অ্যাপ। এসব যোগাযোগের ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আপনি সবসময় কানেক্টেড থাকতে পারবেন আপনার প্রিয়জনের সাথে, তা আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে মাধ্যম আপনি ব্যবহার করছেন তা আসলে কতটুকু নিরাপদ? গোপনে কী তা আপনার বিভিন্ন তথ্য পাচার করছে? আপনার বিভিন্ন দরকারী তথ্য যেমন পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য, ব্যাংক ইনফরমেশন, এগুলো কোন দুষ্কৃতিকারীর হাতে পড়লে তাঁর পরিণাম হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক ঘরবন্দী সময়ে দূরের বন্ধু ও পরিবারের সাথে সংযুক্ত থাকার কয়েকটি নিরাপদ ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে।
হোয়াটসঅ্যাপ
অত্যন্ত কঠোর প্রাইভেসি পলিসির জন্য হোয়াটস অ্যাপ সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় একটি অ্যাপ। এই অ্যাপের সকল মেসেজ এবং কলই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড তাই কোনভাবেই আপনার মোবাইল এবং নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড ছাড়া কেউ এর ভেতর থেকে কোন গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে না। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ একটি সম্পূর্ণ ফ্রি অ্যাপ। তাই চ্যাটিং হোক, মেসেজিং কিংবা অনলাইন কল, কোনটির জন্যই আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। এছাড়া এর ইউজার ইন্টারফেসও অনেক সহজ, যে কারণে খুজ সহজে ব্যবহার্য। নেই কোন উটকো অ্যাডের ঝামেলা যা একটি ফ্রি অ্যাপে খুবই দুর্লভ ঘটনা। চাইলে আপনার পিসি থেকেও হোয়াটসঅ্যাপ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন এর ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করে।
এছাড়া আপনার ফোনের কন্টাক্ট লিস্টের অ্যাক্সেস পেলে এটি খুব সহজেই আপনার কন্টাক্ট লিস্টে থাকা অন্য যে কেউ যদি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনি জানতে পারবেন। সব ধরণের সুযোগসুবিধা এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস মিলিয়ে হোয়াটস অ্যাপ অন্যতম জনপ্রিয় একটি যোগাযোগের ডিজিটাল মাধ্যম ।
টেলিগ্রাম
টেলিগ্রাম ডেভেলপড হয়েছিল কয়েকজন অত্যন্ত প্রতিভাধর ডেভেলপারদের দ্বারা এবং এর মূল্য প্রতিপাদ্য বিষয়ই ছিল তথ্যের নিরাপত্তা। তাই এটি পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ একটি মেসেজিং অ্যাপ। এটি খুবই হাইলি এনক্রিপশনের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করে। এর সাথে সাথে এর ইমেজ বা ছবি আদান প্রদানের বিশেষ ব্যবস্থাও বেশ জনপ্রিয়। আপনার ছবি অন্য কাউকে ইন্তারনেটের মাধ্যমে পাঠাতে গেলে অনেক সময়ই এর কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। টেলিগ্রাম হতে পারে এর সমধান। কোন ছবি পিক্সেল, অ্যাস্পেক্ট রেশিও, সাইজে সবকিছুই একদম ভালভাবে সংরক্ষিত হয়ে অন্য প্রান্তে পৌঁছায় এই অ্যাপের মাধ্যমে। এছাড়া এর বিল ইন এডিটর দিয়ে আপনি ছবি এডিটও করতে পারবেন।
আরও বিশেষ কিছু সুবিধা আছে টেলিগ্রাম অ্যাপে, আপনি অন্যপক্ষের মেসেজ দেখেছেন কী দেখেন নি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সিক্রেট চ্যাট নামক অপশনে গিয়ে আপনি কোন মেসেজ পাঠিয়ে তা যেন নির্দিষ্ট সময় পড়ে মুছে যায়, সে ব্যবস্থা করতে পারবেন ঠিক যেন মিশন ইম্পসিবল সিনেমার মত! টেলিগ্রামে এখনো ভিডিও কল করা যায় না তবে তা শীঘ্রই এর সাথে যুক্ত হবে বলে এর নির্মাতারা জানিয়েছেন।
সিগন্যাল
তিনটি নির্দিষ্ট সুবিধার জন্য সিগন্যালকে সবচেয়ে নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপের কাতারে ফেলা হয়। প্রথমত, এটি একটি ওপেন-সোর্স অ্যাপ এবং এতে সবচেয়ে আধুনিক ও জটিল এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের ব্যবস্থা আছে। দ্বিতীয়ত এই অ্যাপ কোন ইউজার রেকর্ড বা ডাটা সংরক্ষণ করে না। এমনকি কোন মেসেজ মেটাডাটাও এটি সংরক্ষণে রাখে না। অন্যান্য অ্যাপের মত এটি ক্লাউডে মেসেজ সংরক্ষণ করে না এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজগুলো মুছে ফেলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর। এবং তৃতীয়ত এই অ্যাপের রয়েছে একটি লক পিন, এজন্য অন্যান্য অ্যাপের মত আপনার লক-স্ক্রিনে এই অ্যাপের কণ মেসেজ ভেসে উঠবে না। তাই আপনি যদি একটি হাইলি সিকিউরড যোগাযোগের ডিজিটাল মাধ্যম খুঁজে থাকেন, সিগন্যাল হতে পারে সেটিই।
স্কাইপ
স্কাইপ পৃথিবীর একটি পুরাতনতম এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যপাএর একটি। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই দূরের প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ক্রএ চলতে পারবেন। প্রফেশনাল ইউজের জন্যও স্কাইপ অনেক জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার। সাইপের প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন কিনলে আপনি এমন একটি সুবিধা পাবেন যা খুব কমই অন্য কোন অ্যাপে পাওয়া সম্ভব। প্রিমিয়াম ইউজার হলে শুধু অনলাইনই নয় বরং সাধারণ মোবাইল বা ল্যান্ড ফোনেও কল করা সম্ভব এই অ্যাপ থেকেই। এই সাবস্ক্রিপশন যে খুব বেশি দামী তাও নয়। এছাড়া স্কাইপের সাহায্যে একসাথে একাধিক ব্যভারকারীর সাথে কল ও ভিডিও চ্যাট করা যায় সম্পূর্ণ ফ্রি ইউজার হয়েও। স্কাইপের ভিডিও কলিং এর সুনাম পৃথিবীজুড়ে আছে। এর মাধ্যমে পাঠানো যে কোন ফাইল অত্যন্ত কঠোর এনক্রিপশন মেনে চলে। সব মিলিয়ে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি ব্যবহার করে।
ফেসবুক মেসেঞ্জার
ফেসবুকের চ্যাটবক্স একসময় সেখান থেকে আলাদা হয়ে একটি আলাদা অ্যাপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যেটিই আজকে ফেসবুক মেসেঞ্জার। এটি যে শুধু কথা বলা , ভিডিও চ্যাটিং কিংবা মেসেজ আদান প্রদানের জায়গা তাই নয়, বরং বিভিন্ন গেমস, জিআইএফ, ফিলটার এবং স্টিকারের ব্যবহারে এটি হয়ে উঠেছে সবার সাথে যোগাযোগের সাথে সাথে সম্পূর্ণ একটি বিনোদনের মাধ্যম। সবচেয়ে মজার বিষয়, এই অ্যাপের মাধ্যমে বিশেষ এঙ্ক্রিপ্টেড ওয়েতে টাকাও পাঠানো সম্ভব, কোন কোন দেশে যা পরিক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এরকম নতুন নতুন আপডেট নিয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জার নিয়মিত আপডেট হয় এবং সবচেয়ে নিরাপদ একটি অ্যাপ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত। ফেসবুকের বিভিন্ন সেবাও এই অ্যাপের মধ্যে ইন্ট্রিগেটেড থাকায় এর কার্যকারীতা আরও অনেকগুণ বেড়ে যায়।
যোগাযোগের ডিজিটাল মাধ্যম নিয়ে এই ছিল আমাদের প্রিয় পাঁচটি অ্যাপের নাম। আপনি এর কোনটি ব্যবহার করেন কি? অথবা একাধিক? জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট সেকশনে। এমন নানা ব্লগের জন্য বিপ্রপার্টি ব্লগের সাথেই থাকুন, আমরা যেখানে প্রতিদিন পাবলিশ করি নতুন নতুন লেখা।