Reading Time: 5 minutes

আপনি এখন কোথায় আছেন? অফিসে? বাসায়? নাকি বাইরের কোন কাজে? যেখানেই থাকুন না কেন আপনার আশেপাশে একটু চোখ ঘুরিয়ে দেখুন তো! প্রতি ৫ জনে ৩ জনকে খুঁজে পাবেন যারা খুবই স্ট্রেসড কিংবা অস্থির! কারণ, যা ই থাকুক না কেন, স্ট্রেসড আমি আপনি সবাই! এখনকার দৈনন্দিন জীবনে কখনো না কখনো আপনাকে স্ট্রেসড হতেই হয়, অফিস হলে তো কথাই নেই। হাজারটা কাজ সামলাতে গিয়ে একটু আধটু স্ট্রেসড হতেই হয়। আবার যারা বাসায় থাকছেন তারা যে স্ট্রেস ফ্রি তা কিন্তু নয়! মোট কথা যার জায়গা থেকে আমরা সকলেই স্ট্রেসড কম বেশি। স্ট্রেস ফ্রি থাকার যত উপায়ই থাকুক না কেন দিনশেষে তেমন কাজে লাগে না, সুতরাং স্ট্রেস ফ্রি থাকার কথা আজ বলব না। আমি বলব, কিভাবে এই ব্যস্ত জীবনে একটুখানি রিলাক্সিং স্পেস তৈরি করা যায়, যেখানে আপনি রোজকার জীবনে একটু রিলাক্সিং সময় কাটাতে পারেন। প্রতিদিন তো আর বাইরে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নয় কিংবা ঘন ঘন ট্যুরে যাওয়াও সম্ভব নয়। নিজের ঘরটাকেই বানাতে হবে এমন একটি জায়গা যেখানে একটু রিলাক্সিং সময় কাটাতে পারবেন। এই ৭টি চমৎকার টিপস জানলেই, তৈরি করতে পারবেন নিজের বাসায় রিলাক্সিং কর্নার ! বেশ সহজ কয়টি টিপস, জানা যাক জলদি! 

হালকা কোন রঙ বেছে নিন

চেয়ার টেবিল রাখা
হালকা রঙ চোখের জন্য বেশ ভালো

সবচেয়ে প্রথমে যা আসবে তা হচ্ছে রঙ বাছাই করে নেয়া। রঙ শুধু ঘরের জন্য হবে তা কিন্তু আমি বোঝাচ্ছি না। আপনার রিলাক্সিং কর্নারটা নিশ্চয়ই আপনি আগে থেকেই বেছে নিয়েছেন তাই না? তাহলে, সেই কর্নারের দেয়ালের রঙ বদলে ফেলা হয়তো সবার জন্য সম্ভব হয়ে উঠবে না তাই, কিছু অর্থে বেমানান ও ব্যয়বহুলও বটে। তাহলে রঙটা বাছাই করবেন কিসের জন্য? তাইতো ভাবছেন? কর্নারটা সাজাতে আপনি যা ই ব্যবহার করবেন কিনা, সেটার রঙটা বাছাই করবেন এমন যেটা আপনার চোখের জন্য বয়ে আনবে শান্তি। তা হতে পারে বসার চেয়ার কিংবা চেয়ারে রাখা কুশন ইত্যাদি। হালকা কোন রঙ বাছাই করতে হবে। যেমন, হালকা নীল, ল্যাভেন্ডার রঙ কিংবা ছাই রঙা। যেটাই বেছে নিন না কেন, এই রঙগুলো থাকলে সেই কর্নারটা এমনিতেই রিলাক্সিং মনে হবে।

চেয়ার বা বসার জায়গাটি অবশ্যই হতে হবে আরামদায়ক

রিলাক্সিং চেয়ার ও সাইড টেবিল
রিলাক্সিং চেয়ার ও সাইড টেবিল রাখুন

“চেয়ার” হচ্ছে আমাদের এই গল্পের নায়ক! মানে প্রধান চরিত্র। যাকে ঘিরে সবকিছু। আপনি যেখানে একটু বসে সময় কাটাবেন সেটাই যদি আরামদায়ক না হয়, তাহলে কি চলবে? এমন একটা চেয়ার বা আসন আপনাকে খুঁজে আনতে হবে, যেখানে বসে আপনি আরামবোধ করবেন, শান্তি পাবেন। চেয়ারের কাপড়টা আরামদায়ক হতে হবে গায়ে যেন আরাম অনুভব হয়। নরম তুলতুলে হতে হবে চেয়ারের গদি কিংবা কুশন। যেন বসলেই আপনার মনে হবে “আমি কি আদৌ চেয়ারে বসেছি নাকি মেঘের উপর” চেয়ারের গদির কাপড় এবং কুশনের কাপড় মিলিয়ে রাখুন। সব কিছুতে একটি রঙের ছাপ রাখার চেষ্টা করুন।  

সাইড টেবিল চাই ই চাই

সাইড টেবিল
সাইড টেবিল

রিলাক্সিং কর্নার এ সাইড টেবিল না থাকলে চলবে নাকি? আপনার চশমা, মুঠোফোন, হেডফোন, কফি মাগ, বই এই সবকিছু রাখার জন্য তো একটা কিছু লাগবে তাই না? এই টেবিলে আপনি ফুলদানিও রাখতে পারবেন। এমন একটা টেবিল পাশে রাখা থাকলে আপনার ব্যবহারের কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় থাকবে না। সাইড টেবিলে এইসব রেখে চোখ বন্ধ করেই হারিয়ে যেতে পারবেন পছন্দের যেকোন রাজ্যে।

লাইটিং তো মাস্ট!

ওয়ার্ম লাইট
মৃদু আলো

এমন একটা লাইট আপনাকে বেছে নিতে হবে, যা আপনাকে রিলাক্স একটা ফিলিং দিবে। ওয়ার্ম লাইটগুলো বেশ ভাল, মেডিটেশনের আবহ তৈরি করার জন্য। ওয়ার্ম লাইটের কোন ল্যাম্প শেড রাখলে কেমন হয়? রিলাক্স একটা আবহ তৈরি করা যায়। এই ওয়ার্ম লাইটগুলো দেখলে মূহুর্তেই আপনার ভেতরটা শান্ত হয়ে যাবে। মৃদু আলোতে আপনি শক্তিশালী পজিটিভ এনার্জি খুঁজে পাবেন। বইকে ভালোবাসেন তাহলে এই আলোতে বই পড়তেও আপনার ভালো লাগবে। সাইড টেবিলে একটি ছোট ল্যাম্প রেখে দিলেন যখন বই পড়তে হবে ল্যাম্পটা চালু করলেন আবার খানিক পরে বন্ধ করে দিলেন। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা রকমের লাইট,সময় করে ঘুরে দেখলেই পেয়ে যাবেন মনের মত একটি চোখে আরাম দেয়া লাইট!    

ফুল ছাড়া কি চলবে নাকি!

ডাইরি ও ফুল
নিজের একটা কর্নার তৈরি করুন

প্রথমেই একটি সুন্দর ফুলদানী কিনে আনুন। বাহারি নকশার একটা সুন্দর ফুলদানী। মন কিন্তু এই ফুলদানী দেখলেই স্ট্রেস ফ্রি হয়ে যাবার কথা। এরপর সাইড টেবিলে ফুলদানীটি রাখুন, মাঝে মাঝে পছন্দের সুগন্ধী কোন ফুল কিনে আনলেন। ঢাকার ফুলের দোকানগুলো এইদিক দিয়ে বেশ প্রসিদ্ধ। দেশি বিদেশি সবরকম ফুল আছে তাদের। শুধু বসন্তে যে ফুলগুলো ফোটে সেগুলো আপনি দোকানে পাবেন না। এছাড়া মোটামুটি সব ফুলই মিলবে। ফুলগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলেন, ঘরের আবহটা এমনি বদলে যাবে। আপনি যতই স্ট্রেসে থাকুন না কেন রিলাক্স না হয়ে উপায় থাকবে না। 

আর্ট পিস রাখুন 

দেয়াল ও ওয়ালফ্রেম
দেয়ালে পছন্দের কিছু রাখুন

আপনার প্রিয় রিলাক্সিং কর্নার টা এই একটা উপকরণ ছাড়া যেন অপূর্ণ। আপনার পছন্দের কোন চিত্রকল্প কিংবা ভাস্কর্য রাখুন। যেকোন পেইন্টিং কিন্তু রাখা যাবে না, এমন পেইন্টিং রাখতে হবে যা আপনাকে জীবনের প্রতি অনুপ্রেরণা যোগাবে। দিনশেষে যেন নিজেকে বেশ পজিটিভ মনে হয় এমন আর্ট পিস রাখতে হবে। আপনি চাইলে আপনার ছোট বেলার ছবির অ্যালবামটাও রাখতে পারেন। অনেকেই আছি যারা ছোটবেলার সময়গুলো রোমন্থন করতে বেশ ভালোবাসি। নিজের শখের সবকিছু দিয়ে এই কর্নারটা আপন করে নিতে হবে। যাতে করে যখনই বসুন সেখানে দু-দন্ড শান্তি যেন আপনি খুঁজে পান।

রাগস রাখুন 

রাগস
কার্পেট কিংবা রাগস রাখুন

আপনার চিরিদিক তো বেশ সাজিয়ে নিলেন কিন্তু ঘরের মেঝেটা খালি রয়ে গেল তাইনা? পছন্দসই হালকা রঙের একটা রাগস বিছিয়ে নিন। নরম দেখে একটা রাগস বেছে নিন, যাতে করে আপনি যখন জুতাটা খুলে খালি পায়ে রাগসে পা রাখবেন আপনার যেন অনেক আরাম অনুভব হয়। একদম রিলাক্স হতে হবে। আপনি চাইলে কার্পেট ও রাখতে পারেন। কার্পেট সম্বন্ধে তবে জেনে নিতে হবে কোন ধরনের কার্পেট কেমন হবে। সব কার্পেট কিন্তু নরম হয় না তাই জেনে শুনে কিনুন। এখন সবথেকে জরুরী যে জিনিস তা হচ্ছে, এই বাসায় রিলাক্সিং কর্নার এ সময় কাটানোর সময় এমন কিছু পান করার চেষ্টা করুন যা আপনাকে ভেতর থেকে সজীব করে তুলবে এবং বেশ প্রাণবন্ত করবে। হতে পারে গ্রিন টি বা ঠান্ডা ডিটক্সিং কোন ড্রিংক বা শরবত যা পান করলে আপনি আরাম পান এমন কিছু নিতে পারেন। তাহলে আপনি পুরোদমে রিলাক্স এবং মেডিটেটেড অনুভব করবেন। 

আচ্ছা এই টিপসগুলো  কিন্তু আমার বেশ কাজে লেগেছে, ঠিক বাসায় রিলাক্সিং কর্নার আছে। আপনি কি দেখতে চাচ্ছেন সেই কর্নার দেখতে কেমন? তাহলে কমেন্টে জানান। এবং এই ব্লগটা আপনার কতটুকু কাজে লেগেছে জানাতে কিন্তু ভোলা যাবে না!

Write A Comment