শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি বরাবরই বেশি। একটু অবহেলা ডেকে আনতে পরে মহাবিপদ। শর্ট সার্কিট নিয়ে অবহেলার ফলে লাগতে পারে আগুন, হতে পারে বিস্ফোরণ, সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি, বৈদ্যুতিক শক, গা পুড়ে যেতে পারে, জখমও হতে পারে এবং এমনকি জীবনও যেতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল অব্দি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতগুলো অগ্নিকাণ্ড হয়েছে তার ভেতর ৬.৩ শতাংশ হয়েছে কেবল শর্ট সার্কিটের ফলে। এবং অবাক করা হলেও এটাই বাস্তবতা যে ২০২০ সালে এটি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তাই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে কখনই হেলাফেলা করতে নেই। ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই শ্রেয়। শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায় গুলো জেনে নিলে আপনিও হতে পারবেন সাবধান।
শর্ট সার্কিট
সহজ কথায় শর্ট সার্কিট হচ্ছে বৈদ্যুতিক সার্কিটের একটি সমস্যা বা গোলযোগ । এটা তখনই হয় যখন একটি তার অন্য আরেকটি বা একাধিক তারের সংস্পর্শে আসে, যেটা আসার কথা নয়। তখনই শর্ট সার্কিট ঘটে যায়। এটা পানি বা অন্যান্য তরল পদার্থ বা ধাতুর সংস্পর্শে আসলেও হতে পারে। এমন যখন ঘটে তখনই তা ঘরের ভেতর তাপ উৎপাদন করে সেখানে থেকেই মূলত অগ্নিকাণ্ড বা শর্ট সার্কিট হয়।
কেন শর্ট সার্কিট হয়?
শর্ট সার্কিট হবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে তার ভেতর উল্লেখযোগ্য হল,
অভ্যন্তরীণ ত্রুটি – তারগুলো যখন অন্য কোন তার বা পদার্থের সংস্পর্শে আসে তখন যেন কোন শর্ট সার্কিট না হয় সেজন্য পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড), পিই (পলিথিন), বা নাইলনের মত ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোতে ত্রুটি থাকলে শর্ট সার্কিট হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।
নড়বড়ে সংযোগ – অনেক সময় বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ স্থান বা প্লেট নড়বড়ে থাকে বলে শর্ট সার্কিট হতে দেখা যায়। এই নড়বড়ে তারগুলোর জন্য “নিউট্রাল” এবং “লাইভ” তার পরস্পরের সংস্পর্শে চলে আসলে শর্ট সার্কিট ঘটে।
গৃহপালিত প্রাণী বা কীটপতঙ্গ: অনেকেই পোষা প্রাণী হিসেবে ইঁদুর, কাঠবিড়ালিকে বাসায় রাখেন। এই প্রাণীগুলো সবসময়ই তার চিবাতে ভালোবাসে। এর ফলে অনেক সময় “নিউট্রাল তার” এবং লাইভ তার” পরস্পরকে ভেদ করে, এতে শর্ট সার্কিট এর মত ঘটনা ঘটে।
ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্সঃ অনেক সময় ত্রুটি সংযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্স থেকেও শর্ট সার্কিট হতে দেখা যায়। তাই ত্রুটি যুক্ত কোন অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার না করাই শ্রেয়। শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি এড়াতে আপনাকে ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্স পরিবর্তন করতে হবে।
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায় গুলো জানা থাকলে আপনি বেঁচে যেতে পারেন বড় কোন বিপদের হাত থেকে।
পাওয়ার বার বা মাল্টি প্লাগ সাবধানে ব্যবহার করুন
একটি ইলেকট্রিকাল আউটলেটে একের অধিক অ্যাডাপ্টার আমরা সবাই ব্যবহার করে থাকি। যার ফলে শর্ট সার্কিটসহ অনেক বৈদ্যুতিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে থাকে। একটি আউটলেটে একাধিক অ্যাডাপ্টার প্লাগিং করলে পাওয়ার অভারলোড হয়ে শর্ট সার্কিট হতে পারে। তাই কখনোই মাল্টিপ্লাগ বা একাধিক অ্যাডাপ্টার প্লাগিং করবেন না। যখন বেশি প্রয়োজন তখনই মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করুন কিন্তু থাকতে হবে অত্যাধিক সাবধান।
কার্পেট বা রাগসের নিচে বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
বেশীরভাগ বাসা বা অনুষ্ঠানে কার্পেটের নিচে দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ তার দিয়ে নেওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু, কার্পেটের উপর যখন হাঁটা চলা হয় তখন বেশ সহজেই এই তারগুলো ছিড়ে যায় এতে করেও কিন্তু শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, পোষা প্রাণী বাসায় থাকলে এই তারগুলোই কখন যে চিবিয়ে ছিড়ে রাখবে আপনি হয়তো টেরই পাবেন না। সুতরাং এই বিষয়গুলো খেয়াল করুন।
তাপ এবং পানি থেকে বৈদ্যুতিক তারকে দূরে রাখুন
তাপ বা পানি থেকে অবশ্যই এই তারগুলোকে সরিয়ে রাখতে হবে। নয়তবা শর্ট সার্কিট হতে পারে। তাই, বাথরুম, রান্নাঘর, ওয়াশিং মেশিন, রান্নাঘরের ফ্লোর এবং কাউন্টার টপের মত জায়গাগুলোতে কখনই বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবহার করা যাবে না।
প্রতিবছর ইলেকট্রিকাল ইন্সপেকশন করুন
এই সংযোগগুলোর প্রতি যথাযথ যত্ন না নিলে শর্ট সার্কিট হবার ঝুঁকি থাকে। তাই বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ বা সেট আপ বছরে একবার অন্তত চেক করানো ভালো। ভালোমত চেক করে নিশ্চিত করতে হবে কোন ভুল ত্রুটি রয়েছে কিনা। এছাড়াও প্রায়ই এই সংযোগগুলো চেক করা ভালো, কোন রকম দূর্গন্ধ আছে কিনা বা কোন ফিউজে সমস্যা আছে কিনা এই সমস্ত বিষয় যদি নিয়মিত যাচাই করেন তাহলে শর্ট সার্কিট এড়ানো সম্ভব।
প্রতিবছর এমন অসংখ্য দূর্ঘটনা ঘটে কেবল মাত্র নিজেদের অসাবধানতার জন্য। একটু সাবধানতা আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। এই ছিল শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায় সমূহ। এগুলো কি আপনি মেনে চলছেন? কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমি ছেড়ে যাইনি তো? এমন কিছু মনে হলে কমেন্টে জানিয়ে দিন।
1 Comment
Useful article. 👌