বাংলাদেশের আবাসন খাত শত প্রতিকূলতার মাঝেও একরকম সফলতার সাথেই এগোচ্ছিল, মহামারী না থাকলে হয়ত এগিয়ে যেত আরো দ্রুত গতিতে। অতীতে বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি দুর্দান্ত জায়গাগুলোর দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাব যে সম্পত্তির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাংলাদেশের অন্যতম ব্যয়বহুল এলাকা গুলশানে এক কাঠা জমির দাম ২২ লক্ষ টাকা থেকে ২০০০-২০১০ সালের মধ্যে ২.৫ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের দশকের তুলনায় ১০৩৬% বেড়েছে। বর্তমানে আপনি যদি ঢাকার ভেতর একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চান তবে আপনাকে গড়ে প্রতি বর্গফুটের জন্য ৫০০০ টাকা ব্যয় করতে হবে। যা দাম হিসেবে খুব সাশ্রয়ী নয় তবে খুব ব্যয়বহুলও নয় যদি আপনি বাংলাদেশের আবাসন বাজারকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করেন। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসন বাজার কোন গুলো?
বিঃদ্রঃ এই তালিকায় উল্লিখিত সমস্ত শহরগুলি ১৬তম বার্ষিক ডেমোগ্রাফিকিয়া আন্তর্জাতিক আবাসন সাশ্রয়ীকরণ জরিপ: ২০২০ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি শহরকে একটি করে “মিডিয়ান মাল্টিপল” নাম্বার দেওয়া হয়েছে। যার মিডিয়ান মাল্টিপলের মান যত বেশি তার হাউজিং মার্কেত তত বেশি ব্যায় বহুল।
হংকং (20.8)
এই নিয়ে হংকং টানা দশম বারের মত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসন খাতের তকমা পেল। গত বারো বছর ধরে, হংকংয়ের আবাসিক সম্পত্তির দাম ২৬২% বেড়েছে। ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালে, হংকং হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসিক খাত, যার গড় সম্পত্তি দাম ছিল ১.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
হংকংয়ে ব্যক্তিগত ও পাবলিক এই দুই ধরণের হাউজিং ইউনিটের অফার করা হয়ে থাকে। পাবলিক রেন্টাল ইউনিটগুলির সংখ্যা ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত হংকংয়ের পাবলিক রেন্টাল অ্যাপার্টমেন্টগুলির মধ্যে প্রায় অর্ধেক অ্যাপার্টমেন্টগুলো ছিল ৩০ থেকে ৩৯.৯ বর্গমিটারের মধ্যে। তবে ২০০৮ সাল নাগাদ শুধু যে কেবল পাবলিক রেন্টাল ইউনিটগুলির সংখ্যা কেবল বেড়েছে না, বেড়েছে ব্যক্তিগত উনিটগুলোর সংখ্যাও। হংকং সরকারের গৃহ মালিকানা প্রকল্পের কল্যাণে হংকং এ পাবলিক উনিট থেকে বেসরকারী ইউনিট বা ব্যক্তি মালিকানাধিন প্রপার্টি এর সংখ্যা বেশি। গৃহ মালিকানা প্রকল্পের অধীনে যে কোন পাবলিক প্রপার্টি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে মালিকানাধিন প্রপার্টিতে রূপান্তরিত হতে পারবে।
ভ্যানকুভার (১১.৯)
ভ্যানকুভার যে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসন বাজারের তালিকায় জায়গা করে নিবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জীবনমানের বিবেচনায় প্রায়শই শীর্ষস্থানীয় শহরগুলির মধ্যে নামকরণ করা হয়ে থাকে ভ্যানকুভারকে। তবে কানাডার সবচেয়ে সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময়, পরিচ্ছন্ন এবং বৃহত্তম প্রাকৃতিক অঞ্চলও রয়েছে এই ভ্যানকুভারে।
ভ্যানকুভারে কোন সম্পত্তি কিনতে চাইলে আপনাকে গড়ে ৯,৩৭,০০০ মার্কিন ডলার করচ করতে হবে। যা সামগ্রিক কানাডিয়ান গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। ভ্যানকুভার ৩ দিক থেকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত তাই নতুন জমির সহজলভ্যতা নেই বললেই চলে। এই কারনেই ডাউনটাউনের এই অঞ্চলটি সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল।
সিডনি (১১)
সিডনি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাউজিং মার্কেট এর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এখানে ক্রেতাকে প্রতিটি বাড়ির জন্য গড়ে ৮,৭২,৯৩৪ মার্কিন ডলার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। সিডনির ক্রমবর্ধমান হাউজিং মার্কেট এর পেছনে রয়েছে সব ধরনের যুক্তিযুক্ত কারণ। সমুদ্র-সম্মুখ অবস্থান, লাইফস্টাইল এবং অতুলনীয় জলবায়ু এটিকে বসবাসের জন্য বিশ্বের অন্যতম পছন্দসই জায়গায় পরিনত করেছে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড -১৯ মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়ার শক্ত অবস্থান এবং মহামারীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা শহরটিকে সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
মেলবোর্ন (৯.৫)
সিডনির ঠিক পাশেই রয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ান ভিক্টোরিয়া রাজ্যের উপকূলীয় রাজধানী মেলবোর্ন, যেখানে বাড়ির গড় মূল্য ৬,৮৯,০৯৯ মার্কিন ডলার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাউজিং মার্কেট এর মধ্যে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে। শুধু মেলবোর্নই না অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের প্রপার্টিমূল্যও তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি। মেলবোর্ন কেবল বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলরেখার সাথে সংযুক্তই নয়, কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের বিশ্বকেন্দ্র হিসাবেও পরিচিত।
তবে অস্ট্রেলিয়ান সরকার আবাসন খাত নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বহিরাগতদের জন্য পুরাতন আবাসন, নির্মাণাধীন সম্পত্তি, এবং উন্নয়নের জন্য খালি জমি কেনার ক্ষেত্রে নিয়ম নীতিনির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিদেশী যে কেউ ইচ্ছে করলেই আবাসন খাতে বিনিয়গ করতে পারবে না। তার জন্য দরকার পড়বে ফরেইন ইনভেস্টমেন্ট রিভিউ বোর্ডের অনুমতি।
লস অ্যাঞ্জেলেস (9.0)
লস অ্যাঞ্জেলেস কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয় বরং সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ব্যায়বহুল অঞ্চল। উত্তর আমেরিকার সবথেকে স্বীকৃত পর্যটন স্পট এবং অর্থোনৈতিক জোন এর পিছনে রয়েছে এক সমৃদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক আবাসন খাত। ডেমোগ্রাফিকিয়া ইন্টারন্যাশনাল হাউজিং এফোর্ডবিলিটি সমীক্ষা অনুসারে, লস অ্যাঞ্জেলেস বিশ্বের পঞ্চম ব্যয়বহুল অঞ্চল যেখানে বাড়ি কিনতে হলে গড়ে খরচ করতে হবে ৭,০৯,৫০০ মার্কিন ডলার।
শহরটি বহু আগে থেকেই বিখ্যাত নামিদামি ব্যক্তি এবং কোটিপতিদের চারণভূমি হিসাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করে নিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসন খাত এবং তা যথাযথ কারণেই। আকর্ষণীয় ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু, সংস্কৃতি, খাবার এবং ক্যালিফোর্নিয়ান-ড্রিমের জন্মস্থান হিসাবে খ্যাতি রয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের।
মূল্য নির্ধারক কতগুলো ফ্যাক্টর (যেমনঃ সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, আবাসিক সুবিধা, অর্থনীতি, ইতিহাস এবং আর্কিটেকচার) এর কারণেই মুলত যেকোন শহরের আবাসন খাতের মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং আলোচিত শহরগুলোর বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাউজিং মার্কেট এ পরিণত হওয়ার কারণও একই।