এই সুউচ্চ ভবনগুলো নির্মাণের প্রথম উদ্দেশ্য কখনই আবাসনের সমস্যা সমাধান করা ছিল না। এমনটা আমি বলছি না, বলছে ইতিহাসের পাতা! এই সুউচ্চ ভবনগুলো নির্মাণ করার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল, বিশ্বের বুকে শক্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং শহরের সুনাম ছড়িয়ে দেয়া। তবে শেষমেশ শহরের অধিকাংশ বাসিন্দারা তা উপলব্ধি করতে পারে যে, এই সুউচ্চ ভবনগুলো বৃহৎ আকারে শহরের আবাসন সমস্যাও সমাধান করতে পারবে। সেই থেকেই পথচলা। বিংশ শতাব্দীর কোন শহরকে সুউচ্চ ভবন ছাড়া কল্পনাই করা প্রায় অসম্ভব। এবং নানান সুযোগ ও সুবিধার জন্য নানাবিধ মানুষ এই সুউচ্চ ভবনে বসবাস করার দিকে ঝুঁকছে। সুউচ্চ ভবনে থাকার বেশ কিছু সুবিধা-অসুবিধা সম্বন্ধেই আপনাকে সঠিক ভাবে জানতে হবে, তা নাহলে বসবাসের সিদ্ধান্তটা নিবেন কীভাবে!
সুউচ্চ ভবনে থাকার বেশ কিছু সুবিধা

যেকোন সুউচ্চ ভবনে বসবাস করার বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। উন্নত জীবনযাপনের জন্য বাসস্থানটি হওয়া চাই সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত। যেখানে বাসস্থানের নিরাপত্তা সহ থাকবে নাগরিক সকল সুবিধা।
নিরাপত্তা
যেহেতু বেশীরভাগ সুউচ্চ ভবনগুলোতে নিরাপত্তার জন্য নির্দিষ্ট একটা মানদন্ড বজিয়ে রাখা হয়। তাই নিরাপত্তাও একদম প্রথম শ্রেণীর সেখানে। তাছাড়াও, এই সুউচ্চ ভবনগুলোতে এমনিতেও ২৪ ঘণ্টা সিকিউরিটি সিস্টেমের নজরদারিতে থাকে। এবং দিনরাত গার্ডরা শিফটে পাহারা দিয়ে থাকে। সুতরাং, অনুপ্রবেশের খারাপ ধরণের ঘটনা ঘটার কোন সম্ভাবনা এখানে নেই।
সুরক্ষা
সুউচ্চ ভবনগুলোতে যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম এবং জরুরী লাইটের ব্যবস্থাসহ আরও অনেক সুরক্ষা প্রোটোকল বজায় রাখতে হয়। যথাযথ ফায়ার এক্সিট থাকতে হবে। এমন অনেক সুরক্ষা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বলেই অনেকেই সুউচ্চ ভবন বেছে নেয়।
উন্নত সুযোগসুবিধা
মুদির দোকান, ব্র্যান্ড শপ, ব্যাংক এবং অন্যান্য স্থাপনাগুলি ইদানিং সুউচ্চ ভবনের নিচে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। কখনো কখনো দেখা যায় সুউচ্চ ভবনের ৩ থেকে ৫ তলা অব্দি কেবল বাজার বা সুপার শপ তৈরি করা হয়ে থাকে। ভবনের বাসিন্দাদের জন্য এই সুযোগসুবিধাগুলোই আকৃষ্ট করে এমন সুউচ্চ ভবনে নিজের জন্য একটই ঠিকানা খুঁজতে।
কমিউনিটি লাইফ এবং সামাজিক সম্পর্ক
যারা কমিউনিটি লাইফ বা সামাজিকতা পছন্দ করেন তাদের জন্য সুউচ্চ ভবনে বসবাস করা হতে পারে উপযুক্ত একটি উপায়। একই ভবনে বসবাস করলে নিয়মিত দেখা সাক্ষাতের যেমন সুযোগ থাকে তেমনি নানান উৎসবে এক হওয়ার উপলক্ষ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এতে করে একে ভবনবাসীদের মধ্যে পরিবার পরিজনের মত সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে। প্রতিবেশীর সাথে লিফটে ওঠা নামা করার সময়ের ২ মিনিটের কথোপকথন হতে পারে আনন্দের একটি মূহুর্ত।
সুউচ্চ ভবনে থাকার বেশ কিছু অসুবিধা

এতে কোন সন্দেহ নেই যে সুউচ্চ ভবনে বসবাস আপনাকে অনেক উপায়েই উপকৃত করতে পারে। সুউচ্চ ভবনে বসবাস করার ফলে আপনি কমিউনিটি লাইফে যুক্ত হতে পারছেন এবং সামাজিকতা রক্ষাও করতে পারছেন। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক সুবিধা রয়েছে। কিন্তু, সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। চলুন, অসুবিধাগুলো জানি!
লোকজন এবং কোলাহল
সুউচ্চ ভবনে বসবাস করা মানে এই যে আপনি কখনো একা নন। সবসময় লোকজনের ভিড় লেগেই থাকবে। সকলের এত আনাগোনা থাকবে যে নিজেকে নিরিবিলি রাখা অনেকটাই কঠিন। বহুতল ভবনে থাকলে বা পাশাপাশি থাকলে যা হয়, আপনি প্রতিবেশীদের কথা বা যেকোন শব্দ শুনতে পারছেন। নিজেকে একাকী সময় দেওয়াটা ভীষণ কঠিন পরে এক্ষেত্রে।
জরুরী প্রস্থান
যেহেতু অনেকেই বসবাস করেন এই ভবনে তাই যেকন জরুরী অবস্থায় ভবন থেকে প্রস্থান নেওয়া সহজ হবে না। প্রস্থানদারে লেগে যেতে পারে অনেক ভিড়। সাধারণ সময়ে ভিড় সামলানো অন্য বিষয় আর জরুরী অবস্থায় ভিড় ঠেলে নিরাপদ স্থানে যাওয়া আরও অনেক কঠিন হয়ে যায়। বহুতল ভবনে বসবাস করার ফলে ভিড় দেখা স্বাভাবিক হলেও বিপদের সময়ে এই ভিড় সামলাতে নিশ্চয়ই কেউ চাইবে না!
নিয়ম কানুন মেনে চলা
আমরা সকলেই নিজেদের মত করে জীবন যাপন করতে চাই। কিন্তু, যখন আপনি কোন একটি জনগোষ্ঠীর সাথে বাস করছেন, এমন কিছু নিয়মকানুন থাকবে যা প্রত্যেককে অনুসরণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় ফেরা বা পোষা প্রাণী রাখার অনুমতি না থাকা।
লিফট এবং বিদ্যুৎ
প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্য। সুউচ্চ এই ভবনগুলোতে সার্বক্ষনিক লিফট এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকে। এবং বিদ্যুৎ চলে গেলেও থাকে পাওয়ার ব্যকআপ সিস্টেম। কিন্তু, এতেও থেকে যায় নানা ঝুঁকি। এই সমস্ত পাওয়ার ব্যাক আপ যখন সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে তখন এই সুউচ্চ ভবন থেকে ওঠা বা নামা অসম্ভব হয়ে পরে। এত তলা পাড়ি দিয়ে কারও পক্ষেই সম্ভব না উপরে বা নিচে নামা। তাই সুউচ্চ ভবনে বসবাস অনেকের জন্য অসুবিধার তৈরি করতে পারে।
ভবনের সমস্যা
সুউচ্চ ভবনে থাকতে গেলে যেটা হয়, অন্য অ্যাপার্টমেন্টের পানির সমস্যা বা বিদ্যুতের সমস্যাগুলো আপনারও চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে। পানির লাইন একসাথে থাকার ফলে সকল মেরামত সবার একসাথেই করতে হয়। এই সমস্ত বিষয়গুলোর জন্য সুবিধার থেকে অসুবিধার কারণ হয়ে দাড়ায়।
সুউচ্চ ভবনে থাকার বেশ কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে সেগুলো সহজ এবং স্পষ্টভাবে আপনার সাথে তুলে ধরা হল। সকল বিষয়গুলো সময় নিয়ে ভেবে তবেই সিন্ধান্ত নেয়া শ্রেয়। এবং সেই সিদ্ধান্তটা আসলে কী তা জানাতে আমাদের কমেন্টস বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।