Reading Time: 3 minutes

ব্যাংক লোনের উপর সুদের হার একক সংখ্যায় নামিয়ে নিয়ে আসা সরকারের নতুন কিছু উদ্যোগের একটি। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুদিন আগে একটি অফিসিয়াল নোটিশ জারি করে যার মূল কথা ছিল সকল ব্যাংক-কে আগামী ১লা এপ্রিল ২০২০ এর মধ্যেই ক্রেডিট কার্ড বাদে সবধরণের লোনের উপর সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। প্রস্তাবনাটিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এই সুদের হার হ্রাস হওয়ার বিরাট এক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে রিয়েল এস্টেট খাতে। কীভাবে? চলুন দেখে নেয়া যাক সম্ভাব্য কিছু দিক।

মূলধন সম্পদ ব্যয় (cost of capital) এবং মুদ্রাস্ফীতির উপর প্রভাব

Effects on the cost of capital and inflation
সুদের হারের সাথে মুদ্রাস্ফীতি সরাসরি জড়িত

বন্ধকী সম্পদের মূল্য নির্ধারণে সুদের হার অবশ্যই বড় একটি প্রভাব রাখবে, যা পরোক্ষভাবে আপনার প্রপার্টি ক্রয়ের সিদ্ধান্তকে করবে প্রভাবিত। বন্ধকী ঋণের ব্যয় বেড়ে যায় সুদের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে। বিপরীরক্রমে এই ঋণের বোঝা কমে যাবে যদি সুদের হার কমে যায়। বর্তমান নিয়ম অনুসারে ব্যাংক লোনের হার কোনভাবেই ৯% এর বেশি নির্ধারণ করা যাবে না, যা আগে ব্যাংকভেদে ১৪% পর্যন্ত হত, এবং যা অনেকটাই ছিল স্ব স্ব ব্যাংকের ইচ্ছা নির্ভর। ব্যাংক লোনের হার হ্রাস পাওয়ায় সর্বোপরি বন্ধকী সম্পদের উপর খরচও কমে আসবে বলে অনুমান করা যায়।
এছাড়া সুদের হারের সাথে মুদ্রাস্ফীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মূলধনের হারকে ইংরেজি পরিভাষায় বলে capitalization rate বা ক্যাপ রেট (cap rate)। এটি রিয়েল এস্টেট তথা আবাসন খাতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সূচক। আবাসন খাতে কোন বিনিয়োগের ফলে কেমন রিটার্ন পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে এটি। আর এই সূচক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সুদের হার হ্রাস হবার ফলে প্রপার্টির মূল্য কমে আসতে পারে। একজন ক্রেতার দৃষ্টি থেকে অবশ্যই এটি বড় একটি সুসংবাদ! 

ঋণগ্রহীতার সম্ভাব্য সংখ্যা বৃদ্ধি

An expected increase in borrowers
নতুন হারের কারণে অনেকেই আবাসন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন

ব্যাংক লোনের উপর এই সুদের হার হ্রাস বিষয়ক সিদ্ধান্ত অনেক “সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতাকে” সত্যিকারের ঋণগ্রহীতায় রুপান্তরিত করবে। বাসা বাড়ি ক্রয়, নির্মাণ কিংবা নতুন করে সাজাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আর একজন গড়পড়তা মানুষের পক্ষে একসাথে এত টাকা জোগাড় করা কিছুটা কঠিনই বই কী!
ঋণ পরিশোধের প্রতিটি ইন্সটলমেন্টে খরচ কমে আসবে যদি সুদের হার হ্রাস হয় ।  কিন্তু সুদের হার হ্রাসের বাস্তবতায় অনেকেই হয়ত হোম লোন নিতে উৎসাহিত হবেন যারা কিছুদিন আগেও উচ্চ সুদের হারের জন্য হয়ত ছিলেন দ্বিধায়। আর চাহিদা বাড়লে নতুন নতুন আবাসন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতেও উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বিনিয়োগকারীরা যা দিনশেষে দেশের অর্থনীতির জন্যই শুভকর।   

পুরোনো এবং নতুন ঋণগ্রহীতাদের উপর প্রভাব

দেশে দুধরণের হোম লোন প্রথা চালু আছে। একটিতে সুদের হার নির্দিষ্ট বা ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট, অন্যটিতে হার পরিবর্তনশীল বা ভ্যারিয়েবল রেট লোন। যারা লম্বা সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে ইন্সটলমেন্ট দিতে চান, তারা ফিক্সড রেটে লোন নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে যারা কিছুটা ঝুঁকি নিতে পারেন তাঁরা ভ্যারিয়েবল রেট নিতে পারেন কেননা এতে সুদের হার কম বেশি হবার সুযোগ থাকে।
তাই এই নতুন নিয়ম পরিবর্তশীল হারে নেয়া ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে যাবে কেননা তাঁরা যদি অতীতে বেশি হারেও লোন নিয়ে থাকেন, নতুন নিয়ম অনুসারে সেই হার কমে ৯%-এ নেমে আসবে। নতুন করে যারা ঋণ নেবেন তাদের জন্যও এই আশীর্বাদস্বরূপ, ১লা এপ্রিল থেকে সর্বোচ্চ সুদের হার যে ৯%। তবে অতীতে যারা ফিক্সড ৯% এর চেয়ে বেশি হারে ঋণ নিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য এটি কিছুটা হলেও নিরাশার, কেননা তাদের সুদের হারে কোন পরিবর্তন আসবে না। 

ডকুমেন্টেশন এবং অন্যান্য ভেরিফেকিশনে আরও কড়াকড়ি

নতুন হ্রাসকৃত সুদের হারের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাঙ্কগুলো ঋণগ্রহীতাদের জন্য নতুন নতুন নিয়মজারি করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ভেরিফিকেশন স্টেপগুলোও আরও কঠোর হবে। এছাড়া ব্যাংক ন্যুনতম যে টাকা ঋণ দিত সেই পরিমাণেও পরিবর্তন আনতে পারে। কেননা সুদের হার কমে গেলে মূলধন সম্পদ ব্যয়ও আগের থেকে কমে যাবে।

তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, লোনের উপর সুদের হার হ্রাস করার এই সিদ্ধান্ত রিয়েল এস্টেট খাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। সুদের হার কমলে ভবিষ্যতে ক্যাশ ফ্লো বাড়বে, ফলে যে কোন স্থাবর সম্পত্তির চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে।   

এই নতুন নীতি নিয়ে আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করে এই নীতির ফলে রিয়েল এস্টেট সেক্টর বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে? মন্তব্যের ঘরে আপনার মতামত জানিয়ে দিন এখনই!

Write A Comment