Reading Time: 4 minutes

কোভিড-১৯ এর কালে গোটা বিশ্বের ঘরের অবস্থা প্রায় একইরকম। অফিস আদালত রাস্তাঘাট সবকিছুই এখন প্রায় বন্ধ। সরকারি ছুটি চলছে আজ সারা দেশে। এর মধ্যে স্বভাবতই আমাদের মনের অবস্থা হয়তো আগের মত নেই। সকলেই আমরা অস্থির হয়ে আছি কবে আবার শহরের জনশূন্য রাস্তাগুলো ভরে উঠবে। যেখানে আমরা আবার হাঁটবো! এতো গেল নিজেদের কথা কিন্তু ঘরের ছোট সদস্যটির কথা ভেবেছেন কি? তাদেরও একটা রুটিন ছিল! তারা স্কুলে পড়তে যেত মাঠ জুড়ে ছুটে বেড়াতো। ঘরে খেলতো কখনো কখনো বাবার সাথে বাইরে খেতে যেতো, সেই ছোট মানুষটারও কিন্তু আজ একই অবস্থা বরং বেশি কঠিন। তার অবুঝ মন বোঝে না এই মুহুর্তের সতর্কতাকে। সুতরাং তাদের জন্য ভাবতে হবে বিশেষভাবে। তাদের জন্য করতে হবে নির্দিষ্ট প্ল্যানিং! খেলাধুলার সময়ের পাশাপাশি ঘরে শিশুর লেখাপড়ার ব্যবস্থা এমন ভাবে করতে হবে যেন এই ছুটিতে তাদের লেখাপড়া কোনভাবেই যেন ক্ষতি গ্রস্থ না হয়! কী করবেন আসুন জেনে নেই।  

রুটিন তৈরি করুন  

বাবার সাথে বাচ্চাদের সময়
রুটিন তৈরি করুন

প্রথমেই একটা রুটিন তৈরি করুন। যে দিনের কোন সময়টাতে বাচ্চা লেখাপড়া করবে। যেহেতু ক্লাসে একের অধিক বিষয় রয়েছে তাই সব বিষয়ে সমানভাবে সময় দিতে হবে। এমন যেন না হয় কোন বিষয়ে বেশি সময় দেওয়া হল অন্য বিষয়ে সময় দেওয়াই হল না। এছাড়াও, পড়ার জন্য খেলার সময় কমে আসবে এমনটাও করা যাবে না। শিশুদের জন্য খেলাধূলার মহত্ব প্রচুর। সেদিকে দিতে হবে বিশেষ নজর।  চেষ্টা করবেন কোন ভাবেই যেন তাদের মস্তিষ্কে কোন প্রকার চাপ না পড়ে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি ছেলেমেয়েদের অস্থিরতা এভাবেই বেড়ে চলেছে। ক্ষতি হচ্ছে লেখাপড়ায়; বাড়ছে মানসিক চাপ। দু একদিন ফাঁকি দিয়ে স্কুলে না গিয়ে থাকাই যায় তাই বলে এতদিন! অবশ্যই তাদের মনের ভেতর ঝড় বইছে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর সকল স্মৃতি তাদের একে একে মনে পড়ছে! এ সময় আপনাকেও হতে হবে বেশ সহনশীল। কোনভাবেই লেখাপড়ার সময় তাদের সাথে কোন রকম দুর্ব্যবহার করবেন না। এমন হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে তাদের পড়ায় মন নেই কিন্তু এতে আপনাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। 

অনলাইন স্ট্যাডি  

বাবা, মা ও বাচ্চারা
ইউটিউবেও রয়েছে ক্লাসের ভিডিও

দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার জন্য বাচ্চাদের রুটিন গড়মিল চলে এসেছে। স্কুল যেহেতু নেই খাওয়া দাওয়া ঘুমেরও ঠিক নেই। সারাদিন দেখা গেছে ফোনে ট্যাবে গেমস খেলেই সময় পার করছে। এভাবে কি হয় নাকি। বাবা মার সাথে লেখাপড়া অনেকেই করেন না, কেননা সকলেরই এখন রয়েছে হোম টিউটর! কিন্তু ছুটির কারণে তারাও এখন ঘরবন্দী। সেক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে, অনলাইন স্ট্যাডির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিশুদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আওতায় সংসদ টিভিতে ভিডিও ক্লাস কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই মাসের ৭ তারিখ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এ ছাড়া ইউটিউবেও রয়েছে ক্লাসের ভিডিও। সেগুলো দেখিয়েও কিন্তু এখন লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।  এছাড়া আরও যা করা যেতে পারে তা হল, হোম টিউটরের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে ঘরে শিশুর লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তেমন একটা সুবিধা না হলেও বাচ্চাদের লেখাপড়ায় একটা গতি থাকবে। এছাড়া বাবা মার নিজেরও সময় দিতে হবে।   

নিজের সময় দিন 

মা এবং বাচ্চা
যথেষ্ট সময় দিন

আপনার বাচ্চাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এবং তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে উত্সাহিত করুন। মনে রাখবেন যে আপনার বাচ্চার স্ট্রেসের বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তা সময় নিয়ে শুনুন। আপনার সন্তানকে আপনার সাথে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তাদের মনের ভেতর কী চলছে সে সম্বন্ধে জানুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, হাত ধোয়ার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই সাথে ঘরের সুরক্ষা কিভাবে নিশ্চিত করবে। ছোট কালেই এইসব বিষয়গুলো শেখাতে হবে। নিজেদের সময়কে আরও সুন্দর করে তুলতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিভাবে বানাবে সে সমন্ধেও একটা ছোট খাটো ক্লাস হয়ে যেতে পারে। 

 আপনার শিশুকে নির্দ্বিধায় কথা বলার সুযোগ দিন। ছবি আঁকা, গল্প এবং অন্যান্য কাজ গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার ব্যবস্থা করুন। আমি নিশ্চিত করতে বলতে পারি তারা এমন সময় কখনো দেখেনি। তাই তাদের মনের ভেতর জন্ম নেওয়া প্রশ্ন ও নেতিবাচক ভাবনাগুলোকে আপনাকেই সঠিক দিন নির্দেশনা দিতে হবে। তাদের আস্থা জয় করার এটা একটা সুন্দর সুযোগ হতে পারে, সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে আপনি যে তাদের কথা শুনছেন তা প্রদর্শন করুন। 

বাসার সারাদিন কি করবে তা নির্দিষ্ট করুন 

বাচ্চা ও পরিবার
সারাদিনের একটা তালিকা তৈরি করুনপ্রতিদিন একই রুটিনে থেকে একঘেয়েমি আসাটা স্বাভাবিক। একই খেলনা, খাবার, ঘুম, খেলাধূলা করতে করতে বিরক্তি আসাটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের দিনের রুটিনে একটু ভিন্নতা আনা জরুরী। তারা অবুঝ তাই তাদের জন্য আমাদেরই এমন রুটিন প্ল্যান করতে হবে যা কিনা তাদের এই ঘরবন্দী সময় হয়ে ওঠে উপভোগ্যসারাদিন বাসায় থেকে তারা কী কী করবে তার একটা তালিকা করতে হবে। ডেইলি রুটিন অনুযায়ী সময় আলাদা করতে হবে। বাসার সবার সাথে আলাপ করে রুটিনের কাজগুলো ভাগ করেতে হবে। বয়স অনুযায়ী প্রত্যেকের কাজের দায়িত্ব ভাগ করতে হবে। ছোট বাচ্চা হলে একই খেলনা দিয়ে বেশি সময় ধরে খেলতে দেওয়া ঠিক হবে না, এতে এক ঘেয়ামি ভাব চলে আসবে। কিন্তু, সেগুলো জীবাণু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন। তারপর অল্প অল্প করে অদল বদল করে বের করে দিন। এভাবে খেলনা বদলে দিলে তারা নতুন করে আনন্দ পাবে। একটু বড় শিশুদের/কিশোর-কিশোরীদের জন্য গল্পের বই, ছবির বই, বিজ্ঞানের বই ইত্যাদি দিন। সময়টা কাটুক ভালো কিছুর সাথে। ছবি আঁকতে পারে কিংবা লুডু, কেরাম দাবা এই সবকিছু দিতে পারেন এতেও বেশ ভালোভাবেই সময় কাটবে। টিভিতে কার্টুন, মোবাইলের গেমস, ট্যাব ইত্যাদি দেখতে দিলে সময় নির্দিষ্ট করে দিন। এই অবসরে তারা যেন কিছুতেই ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্ত না হয়ে যায় লক্ষ রাখুন। এটি ঠেকাতে সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর চাইল্ড লক অন করে রাখুন। এতে তাদের সামনে এডাল্ট কন্টেন্ট আসবে না।ঘরে সংস্কৃতি চর্চা, আবৃত্তি, নাটক, অভিনয় চর্চা করা করা যেতে পারে। অনেক কিছুই করা যেতে পারে কিন্তু সময় মেনে। 

শিশুকে সময় দিন ঘরে শিশুর লেখাপড়ার ব্যবস্থা এখন আপনাকেই করতে হবে। স্কুল কলেজ কবে খুলবে সে অপেক্ষায় থাকলে বাচ্চারা অচিরেই পিছিয়ে যাবে। সেদিকে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। আশা করি এই ব্লগ আপনাদের কাজে ততোটাই আসবে।

Write A Comment