Reading Time: 4 minutes

 করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে। ফলে কোভিড ১৯ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অধিকাংশ দেশেই চলে গিয়েছে কম-বেশি লকডাউন মুডে। কোভিড ১৯ হল করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ এবং শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণকারী ভাইরাসটি ছড়ায় মানুষ থেকে মানুষে। আর ভ্যাক্সিন এখনো আবিষ্কার না হওয়ায় এই রোগ প্রতিরোধে মানুষ এখন একমাত্র যা করতে পারে তা হল নিজেকে ঘরে বন্দী করে ফেলা, কারো সাথে কোন দেখা সাক্ষাৎ না বরং সবসময় ঘরে থাকা । স্কুল, কলেজ, অফিসসব ছুটি দিয়ে দেবে, সারক্ষণ ঘরে থাকব, প্রথমে ভাবতে ঘটনা যতটা রোমান্টিক মনে হয়, সময়ের সাথে সাথে সেই মোহ ফিকে হয়ে আসে। অতিদ্রুত আলস্য আর বিরক্তি স্থান করে নিতে শুরু করে নিজের মধ্যে। 

তবে, হঠাৎ পাওয়া এই অবসরকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে কিন্তু এর চেয়ে ভাল কিছু হয় না। আপনার জমিয়ে রাখা সিরিয়ালটা, কিংবা বহুদিন ধরে পরিবারকে দিতে চাওয়া সময়টা অথবা অনেকদিন ধরে শিখতে চাওয়া কাজটা শেখার উপযুক্ত সময় কিন্তু এখনই! তাই চলুন দেখে নেয়া যাক ঘরে থাকা এই সময়কে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়?

যা করতে ভালবাসেন, করুন!

Man Reading Book

প্রতিদিনের ব্যস্ত, ক্লান্তিকর জীবন থেকে হঠাৎ মুফতে পাওয়া এই অবসর কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ আমাদের কোন প্রিয় শখের পেছনে সময় দেবার জন্য। কত মুভি, নাটক অথবা টিভি শো আমরা জমিয়ে রাখি পরে দেখব বলে। এই সময়ের চেয়ে ভাল “পরে” আবার কবে পাওয়া যাবে কেউ বলতে পারে না! কত বই ফেলে রাখি সময়ে করে পড়ব বলে, এত ফ্রি সময়ও কিন্তু আপনি আর পাবেন না! তাই আপনি পড়ুয়া হলে হারিয়ে যান বইয়ের রাজ্যে।

আপনি বই পড়তে ভালবাসেন, কিন্তু কখনো কী লিখতে চেষ্টা করেছিলেন? এখনই করুন না! আপনি ছবি আঁকতে ভালবাসেন? বসে পড়ুন রঙ তুলি হাতে! সঙ্গীত পছন্দ করেন? কানে গুঁজে দিন এয়ারফোন, হাতে তুলে নিন গিটার কিংবা অন্য যে কোন বাদ্যযন্ত্র আর সৃষ্টি করুন নতুন সুর! মোদ্দা কথা, বহুদিনের জমানো সব কাজগুলো অথবা মনের খুশিতে কোন কাজ, সেগুলো করার সময় এখনই! 

নিজেকে নতুন কোন কাজে দক্ষ করে নিন

Origami

কখনো কি আফসোস করেছেন এই বলে যে, ইস! আরেকটু সময় পেলে এটা করে ফেলতে পারতাম? যদি এমনই হয় যে সময়ের অভাবে আপনি কিছু শিখতে পারছেন না, এখন আপনার হাতে আছে অফুরন্ত সময়। আর আছে বিশ্ব হাতের মুঠোয়, ইন্টারনেটের মাধ্যেমে! এই বন্দীত্বের সময়ে অনেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। টাকার বিনিময়ে করতে হয়ে এমন অনেক কোর্স তাঁরা ফ্রিতে করতে দিচ্ছে। এছাড়া অনেক কোর্স আছে যেগুলো আগে থেকেই ফ্রি। আর ইন্টারনেটে শেখারও নেই কোন শেষ, ছোটদের সামাজিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম ফিজিক্স, কী লাগবে আপনার?

এর বাইরে যদি কোন কারিগরি কিছুতে আপনার দক্ষতা বাড়াতে চান যা আপনার ক্যারিয়ারে সহায়ক হবে তো চাইলেই শুরু করতে পারেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ইমেজ এডিটিং, ভিডিও এডিটিং কিংবা ওয়ার্ড এক্সেলের বিভিন্ন কাজ শেখা। যাদের রান্নার শখ আছে তাঁরা বিখ্যাত সেফদের টিউটোরিয়াল দেখে করে ফেলতে পারেন মজার কোন ডিশ। ঘরে থাকা যেহেতু বাধ্যতামূলক তাই সেময়ে নিজের কিছু দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারলে খারাপ কী?

ঘরে থাকা নানান কাজে হাত লাগান

Iron

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যারা অফিস করেন কিংবা বাড়ির বাইরে ব্যস্ত থাকেন, তাঁরা খুব একটা বাড়ির কাজে হাত লাগান না। কিন্তু একজন্য কিন্তু বাড়ির কাজ থেমে থাকে না। সকাল দুপুর রাতের খাবার তৈরি করা থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার, বিছানা গোছানো কিংবা কাপড় কাচা, কিছুই কিন্তু থেমে থাকে না! কখনো ভেবে দেখেছেন কী, আপনার বাড়িতে থাকা মানুষটা সে আপনার বাবা, মা, সহধর্মীণী থেকে শুরু করে কাজের লোক, যেই হোক না কেন, তাঁরা কতটা ত্যাগ স্বীকার করে এগুলোকে ঠিকঠাক মত চালানোর জন্য? 

তাই এখনই সময়, যেহেতু ঘরে থাকা হচ্ছেই, কেন আপনি ঘরের সব কাজে কিছুটা হলেও অংশ নেবেন না? একদিন রান্নাঘরে গিয়ে সাহায্য করতে পারেন, কোন দিন নিজের ঘর নিজে গোছানোর দায়িত্ব নিতে পারেন আবার কোনদিন হয়ত কাপড় কেঁচে তা শুকোতে দিয়ে আসলেন?    

এগুলো করার মধ্যে অনুশেচনার কিছু নেই, বরং এতে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, বাড়ির প্রতিটি মানুষই একটি সংসার চালাতে কতটুকুন শ্রম দেয়, কতটুকুন ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিনিয়ত! যা প্রতিটি পরিবারের মধ্যে বন্ধনকে করে তুলবে আরও সুদৃঢ়! আর এমনটি করার জন্য এই ঘরের মধ্যে আটকে পড়া সময়ের চেয়ে ভাল সময়ে আর কী হতে পারে বলুন? 

সময় দিন নিজ পরিবারকে

letter blocks

জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো কাটানো উচিত সবচেয়ে মূল্যবান মানুষগুলোর সাথে, মানে পরিবারের সাথে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ব্যস্ততা আমাদের দেয় না এক দন্ড অবসর। এই সময়ই হতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত সেই সময়। যে সময় থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল আপনার সন্তানেরা। বাবা অথবা মা হিসাবে এখন আপনার সন্তানকে সময় দিন। তাদেরকে নতুন কিছু, আনদের কিছু শেখান। হতে পারে না হাতে কলমে কিছু, হতে পারে তা দাবা লুডোর মত নতুন কোন খেলা।  আপনার ছেলেবেলায় আপনি কী করেছেন? তাদেরকে পুরোনো দিনের সেসব গল্প বলুন। আজকের বাস্তবতায় বাবা, মা দুজনেই কাজে ব্যস্ত, এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠবার সময় আমাদেরকে কদাচিৎ কাছে পায়। এখন হঠাৎ পেয়ে যাওয়া এই সুযোগে তাদের সেই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করবার দায়িত্ব আপনারই! 

আপনার পরিবার মানে কিন্তু শুধু আপনার সন্তানই নয়। আপনার বাবা মা যদি আপনার সাথে থাকেন তাহলে সময়ে অসময়ে তার কাছে গিয়ে বসুন, জানতে চান তার কথা। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, প্রার্থনার সময় একসাথে তাদেরকে নিয়ে প্রার্থনা করুন, দেখবেন কত খুশি হয় তাঁরা! আর থেকে যায় আপনার সঙ্গীর কথা। আপনার সঙ্গীকে সময় দেয়া মানে কিন্তু শুধু ভাল রেস্তোরায় খেতে যাওয়া কিংবা কোন টুরিস্ট স্পতে ঘুরতে যাওয়াই নয়! দু’দেয়ালের মাঝে জমে থাকে কত গল্প, সে সব গল্প বলা বা শোনার এই না সময়! 

সব মিলিয়ে, ঘরে বন্দী হয়ে থাকা সময়টাকে যেমন হঠাৎই বিরক্তিকর লাগতে শুরু করেছিল, কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলে দেখবেন তা আবার নিমিষেই বদলে গিয়েছে! আর নিজেকে চাঙ্গা রাখতে পারলে কোন বাঁধাকেই আর বাঁধা মনে হবে না। মানুষ এমন অনেক বাঁধা পার করে এসেছে অতীতে, এই করোনাভাইরাসের বাঁধাও পার করে ফেলবে। দীর্ঘ বন্ধের পর আবার একদিন সব সচল হবেই, আর তখন হুট করে মাথার উপর চেপে বসবে অসংখ্য কাজ। এই বন্ধের সময় নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে পারলে দেখবেন, সে চাপকে চাপই মনে হচ্ছে না! কিন্তু এসময়ে যদি আপনার বোরিং সময় কাটে, তাহলে সাবধান, সামনে আপনার আরও কঠিন সময় আসবে হয়ত! তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখুন নানান প্রডাক্টিভ কাজে, ঘরে থাকা এ সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন যেভাবে সম্ভব।  

Write A Comment