Reading Time: 4 minutes

ব্যস্ত জীবন। সবসময় দৌড়ে বেড়াচ্ছি আমরা। যত সুন্দর জায়গাই হোক না কেন একসময় ফিরতে হয় প্রিয় এই নীড়ে। নিজের ঘরের মত প্রশান্তি অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। ক্লান্ত শরীরটা শুধু মাত্র আপনার বেডরুমের বিছানায় যে প্রশান্তি খুঁজে পায় সেই প্রশান্তি বিশ্বের কোন পাঁচ তারা হোটেলেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা যেমন বেডরুমের ইন্টেরিয়েরে চাই আধুনিকতার ছোঁয়া তেমনি একই সাথে চাই মনের প্রশান্তিটাও। ইন্টেরিয়র ডেকোর নিয়ে সকলের মধ্যেই একটা ভাবনা কাজ করে সেটা হলো,  ইন্টেরিয়র ডেকোর অনেক ব্যয়বহুল। আসলেই কি তাই? আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের এই ব্লগ।

কম খরচে বেডরুমের ডেকোর সম্ভব। শুধু প্রয়োজন আপনার সময় আর ইচ্ছা। আমরা এনেছি কয়েকটি উপকারী টিপস যেগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজেই বেডরুমের সাঁজ বদলে ফেলতে পারবেন। না লাগবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, না লাগবে বেশি পয়সা। কম খরচে বেডরুমের ডেকোর এতটাও কঠিন কিছু না। একটি আরামদায়ক বেডরুমের জুড়ি নেই। তাই বেডরুমের ডেকোরেশন বা ফার্নিচার-প্ল্যানিং নিয়েও থাকে একেকজনের একেকরকম পরিকল্পনা। নিজস্ব প্রয়োজন, বাজেট আর ব্যক্তি-রুচির ওপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে ভিন্ন সাজসজ্জার বেডরুম। আমরা চেষ্টা করেছি প্রাথমিক একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে যেখানে খুব বেসিক কিছু ডেকোর করেই বেডরুমকে নতুনের মত করা সম্ভব। চলুন তবে শুরু করা যাক কিভাবে ৫০০০ টাকায় বেডরুম সাজানো যায়।

লাইট

আলোর বাতি
বাহারি আলোয় ভরিয়ে দিন আপনার ঘর

ঘরের চেহারা বদলাতে প্রথমেই যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে, ঘরের লাইট পরিবর্তন করা। আপনি যদি ঘরে লেখাপড়া বা অফিসের কাজ করেন সেক্ষেত্রে সাদা লাইট থাকা অত্যাবশকীয়। সাদা লাইটের কার্যকারিতা থাকা সত্ত্বেও মৃদু বাতির জনপ্রিয়তা এখন শীর্ষে। তাই দুই ধরনের লাইট থাকা জরুরী। যখন যেটার প্রয়োজন সেটা ব্যবহার করলেন। এগুলো ছাড়াও ঘর সাজানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন, এগুলোকে বলে স্ট্রিং লাইট। ছোট ছোট এই বাতিগুলোর দাম পরবে ২৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন অনলাইন পেইজে নানারকম শেপের এই স্ট্রিং বাতিগুলো পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন ল্যাম্প শেড। বিভিন্ন ধরনের টেবিল-ল্যাম্পের ভেতরে কাপড়ের তৈরি ল্যাম্প শেড পাওয়া যাবে ২৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। মাটি বা সিরামিকের তৈরি পটারি আকারের বাতি পাবেন ৩০০ থেকে ৯০০ টাকায়, কাঠের তৈরি বাতি পাবেন দুই হাজার টাকার ভেতর। পিতলের নানা ধরনের বাতির দাম পড়বে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। নিউ মার্কেট, ডিসিসি মার্কেট। এছাড়া বিভিন্ন গিফট শপের দোকানেও এগুলো পাওয়া যায়।

পর্দা

বেডরুম
একেক জানালায় একেক রকমের পর্দা বেশ বৈচিত্র নিয়ে আসে

ঘরের পর্দা অনেকটাই বদলে দিতে পারে ঘরের সৌন্দর্য। তাই পর্দা কেনার আগে আপনার ঘর কেমন এবং সেখানে কোন ধরনের পর্দা মানাবে সে সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিন। এছাড়া সব একই ধরনের পর্দার বদলে একেক জানালায় একেক রকমের পর্দা বেশ বৈচিত্র নিয়ে আসে। রাজধানীর নিউ মার্কেট, এলিফেন্ট রোড, মৌচাক, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের পাশেসহ বিভিন্ন জায়গায় পর্দা পাওয়া যায়। এ সব মার্কেটে পর্দার দোকান থেকে রেডিমেইড পর্দা কেনার পাশাপাশি পছন্দমতো কাপড় কিনে নিয়েও নিজের মনমতো ডিজাইনে পর্দা বানানো যাবে। এখন চাইলে বিভিন্ন ডিজাইনের লেইস, বোতাম বা লেয়ার হিসেবে পর্দা বানানো যায়। সাধারণত ১৫০ টাকা থেকে প্রতি পিস পর্দার দাম শুরু হয়। কাপড় এবং ডিজাইন ভেদে দাম এক হাজার টাকা বা বেশিও হতে পারে।

বেডশিট  

দুই বিড়াল
আরামদায়ক পাতলা সুতি কাপড় বেডশিট হিসেবে ব্যবহার করুন

এবার আসি বেডশিট, কুশন আর বালিশ প্রসঙ্গে। এক্ষেত্রে অবলীলায় বলা যায়, অবশ্যই আরামদায়ক পাতলা সুতি কাপড় বেডশিট হিসেবে ব্যবহার করবেন। বেডশিটে সিল্কের কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো। বালিশ, কুশন বা বেডশিটে কাজ করা অর্থাৎ মেটেরিয়ালস বসানো কাভার ইউজ না করাই ভালো। বাজারে এখন নানা শেপের কুশন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যে যার পছন্দমতো কুশন কিনতে পারেন বা ডিফারেন্ট লুক আনতে অর্ডার দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন। বেডরুমের ক্ষেত্রে অলঙ্কারের চেয়ে আরামের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। সিঙ্গেল বেডশিট ৩০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর নিউ মার্কেট, এলিফেন্ট রোড, মৌচাক, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের পাশেসহ বিভিন্ন জায়গায় বেডশিট পাওয়া যায়।

আয়না

আয়না
আয়না বদলে দিতে পারে ঘরের সাঁজ

আয়না শুধু মুখ দেখার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে এমন নয়। ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও আয়নার এক অন্যরকম প্রভাব আছে। বাজারে রড আয়রনের গল, ওভাল আর লম্বা ফ্রেম করা আয়না পাওয়া যায়। এইসব আয়নার ফ্রেমে লতা পাতার নকশা আর জিও ম্যাটিক নকশা বেশি থাকে, সাইজ  ভেদে এসব আয়নার দাম পড়বে ২৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। পছন্দমতো নকশার ফ্রেম নিতে চাইলে ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিতে হবে।  শিশু একাডেমির সামনে ফুটপাতে, আজিজ সুপার মার্কেট, রাজধানীর নিউ মার্কেট, এলিফেন্ট রোড, মৌচাক, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের পাশেসহ বিভিন্ন জায়গায় আপনি আয়না পেয়ে যাবেন। কম খরচে বেডরুমের ডেকোর  হিসেবে আয়না বেশ উপযোগী।

তবে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন। তা হল, নতুন একটি দিনের প্রস্তুতি শুরু হয় কিন্তু বেডরুম থেকেই। সারাদিনের ধকল সামলে নিয়ে একটু বিশ্রাম পাওয়ার জন্যই বেডরুমে সময় কাটানো। ক্লান্তি দূর করতে ঘুমের বিকল্প নেই। আর ঘুমের জন্য প্রয়োজন আরামদায়ক একটা পরিবেশ। আপনার চোখে যদি শান্তি অনুভব না হয় আপনি কোন ভাবেই সেখানে থাকতে পারবেন না। তাই ঘরের জন্য যেমন ডেকোরই বেঁছে নেন না কেন তা যেন আপনার জন্য হয় আরামদায়ক।

Write A Comment