এটা নিশ্চিত যে করোনা ভাইরাসের জন্য বিশ্ব মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, ১৯৩০ দশকের এটা সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট হতে যাচ্ছে। এই সংকটের কারণে বর্তমানে অনেক দেশের শেয়ার মার্কেটগুলো স্তব্ধ হয়ে আছে। অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাস বিপর্যয়ের প্রভাব বেশ স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান। রিয়েল এস্টেটসহ সমস্ত বড় ব্যবসায়িক খাতগুলো এই বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও রিয়েল এস্টেট খাত অন্যান্য বাজারের তুলনায় শক্তিশালী তবুও, করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট এবং উন্নয়ন খাতে এনেছে এক থমথমে ভাব। বলা চলে, এই করোনা সংকট রিয়েল এস্টেট খাতের বিভিন্ন অংশকে আলাদাভাবে প্রভাবিত করেছে। চলুন এখন আরও বিস্তারিত ভাবে জানি।
প্রপার্টি কেনা
করোনা ভাইরাসের ভয়ে প্রতিটি মানুষ তাদের জীবনের খেই হারিয়ে ফেলেছে। এমন মহামারি অবস্থায় যেখানে আপনি নিজের মনকেই শান্ত করতে পারছেন না সেখানে কিভাবে আপনি প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করবেন বা প্রপার্টি নিয়ে ভাববেন। অন্যদিকে প্রপার্টি মালিকরাও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না হচ্ছন প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত। বেশিরভাগ দেশে মালিকরা শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক ক্রেতাদের অনুমতি দিচ্ছেন প্রপার্টি দেখার জন্য তাও বহুশর্তে। তাদের মধ্যে আবার অনেকেই প্রপার্টি বিক্রি করতে নারাজ। বাংলাদেশে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি যদিও তবে প্রপার্টি মালিকরা আগের তুলনায় প্রপার্টি দেখার দিকে ঝুঁকছেন বেশি। যদিও চলমান পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে প্রপার্টি বাজারকে বড় আকারে প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও বাস্তবে এমনটা হবে না। যে সকল প্রপার্টিগুলো নতুন করে নির্মিত এবং কোনও দখলকারীত্ব নেই সেগুলো নিয়ে লেনদেন করার সম্ভাবনা অনেক বাড়ছে।
ভাড়ার ক্ষেত্রে

সেকেন্ডারি প্রপার্টি বা রেন্টাল প্রপার্টি এই দুটো ক্ষেত্রেই প্রপার্টি মালিকদের পড়তে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। এই অবস্থার আগে প্রক্রিয়াটি সহজ ছিল। এবং বর্তমান ভাড়াটিয়া উঠিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন ভাড়াটিয়া খুঁজে পাওয়াটা ছিল সহজ একটি ব্যাপার। কিন্তু এই অবস্থায় বর্তমান ভাড়াটিয়া কখনই নতুন ভাড়াটিয়াকে বাসা দেখতে দিবে না। তাই, অন্য কোথাও যাওয়াটাও এখন সহজ নয়, ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার কারণে উভয়পক্ষই অসুবিধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যা ভাড়াটেদের জন্য কঠিন এক পরিস্থিতি। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে এক বা দুই মাস পূর্বেই নোটিশ প্রদান করতেন, তখন বাসা আর ভাড়াটিয়া দুটোই খুঁজে পাওয়া যেত বেশ সহজে কিন্তু এখন এমন নয়! করোনা ভাইরাসের প্রভাব বলুন আর বর্তমান পরিস্থিতি! নতুন ভাড়াটে বা নতুন বাসা খুঁজে পাওয়া দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
নির্মাণ খাত

অন্যদিকে, নির্মাণ খাত এবং এর সহায়ক সংস্থাগুলো করোনা ভাইরাস মহামারী জনিত কারণে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি বর্তমান পরিস্থিতি এমনই অব্যাহত থাকে তবে চলমান সংকট নিঃসন্দেহে নির্মাণ শিল্পকে বিশাল আকারে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প ব্যতীত বর্তমানে নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট দুটো শিল্পই স্থবির হয়ে পড়েছে। ইস্পাত, সিমেন্ট এবং নির্মাণ শিল্পসহ সব ধরণের শিল্পের শ্রমিকরা এখন ঘরে অবস্থান নিয়েছে।
কাঁচামালের অভাবের কারণে ইস্পাত শিল্প এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা প্রায় ৯০% কাঁচামাল যা কিনা সম্পূর্ণ লকডাউন অবস্থায় আটকা আছে। ফলস্বরূপ, ছোট থেকে মাঝারি আকারের ইস্পাত কারখানাগুলো বন্ধের পথে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সিমেন্ট শিল্পেও বড় ধরনের আঘাত হানছে এবং মহামারীর ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে তা আরও তীব্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। কারণ, করোনা ভাইরাসের প্রভাব এর ফলে কাঁচামাল উৎপাদন ও সরবরাহ এখন বন্ধ রয়েছে।
অনুমান করা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে ১ বছর ধরে নির্মাণ খাত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার হারাতে পারে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কি রকম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সমস্ত বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে যার সাথে নির্মাণ শ্রমিকদের ভাগ্য ও রিজিক জড়িত। এখন দেখার বিষয় এই যে, বাংলাদেশকে তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পেতে কেমন সময় লাগবে!