Reading Time: 3 minutes

ম্যাকডোনাল্ডস নামটি শুনলে আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে বার্গার এবং ফাস্টফুডের কথা। আর তা আসা খুবই স্বাভাবিক কেননা এই ব্যাপারে তারা পথপ্রদর্শক প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফাস্টফুড চেইন হওয়াতে আপনি ভাবতে পারেন যে, এমন বার্গার, ফ্রাইজ, শেক বিক্রি করেই হয়ত তাদের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন হয়। আপনাকে হতাশ করতে হচ্ছে বলে দুঃখিত তবে খাবারের ব্যবসা করে ম্যাকডোনাল্ডসের আয় সামান্যই। অন্তত রিয়েল এস্টেট বিজনেস করে যে পরিমাণ আয় করে ম্যাকডোনাল্ডস, তার তুলনায় সে আয় রীতিমত নগণ্য। সত্যি কথা হল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির একটি ম্যাকডোনাল্ডস! কীভাবে? বিপ্রপার্টি ডট কমের কাজই তো রিয়েল এস্টেট নিয়ে! তাই সে গল্পই হবে আমাদের আজকের লেখায়, চলুন শুরু করি!

ফাস্ট ফুড চেইনের পথপ্রদর্শক

Woman eating fries
ম্যাকডোনাল্ডসের বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

দুই ভাই, রিচার্ড আর মরিস ম্যাকডোনাল্ডের হাত ধরে ম্যাকডোনাল্ডস যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের পেসাডানা নামক অঞ্চলে। তাদের ব্যবসা বিশাল এক বুস্ট পায় ১৯৫৩ সালে যখন তারা বার্গার বানানোর এক নতুন সিস্টেম আবিষ্কার করেন, যা ছিল কোন ফ্যাক্টরিতে অ্যাসেম্বলি লাইন যেভাবে কাজ করে সেই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে বানানো। ফলে বার্গার প্রস্তুত ও পরিবেশনের সময় হয়ে উঠে অসম্ভব দ্রুত এবং সকল কাস্টোমার পান এমন সার্ভিস যা আগে কখনো কেউ দিতে পারে নি। তাই ক্রেতারাও ভিড় জমাতে শুরু করেন ম্যাকডোনাল্ডসের দোকানে।
রে কর্ক নামক এক সেলসম্যানের চোখে এই বিষয়টি পরে যিনি দোকানে দোকানে মিল্কশেক মেশিন বিক্রি করতেন। তিনি এই পদ্ধতিতে এতটাই উৎসাহী হয়ে উঠেন যে সারা দেশে একে ছড়িয়ে দেবেন বলে ঠিক করেন। তবে এতে ছোট একটি সমস্যা ছিল, ম্যাকডোনাল্ডসের আসল মালিক ভাতৃদ্বয়কে বুঝিয়ে শুনিয়ে তিনিই রাজি করান, এই রেস্টুরেন্টকে একটি ফ্রাঞ্চাইজে রুপান্তর করার জন্য।  

ফ্র্যাঞ্চাইজিং এবং সম্প্রসারণ

McDonald's In London
ম্যাকডোনাল্ডসের আছে ৩৬ হাজারেরও বেশি আউটলেট!

রে কর্কের সাথে ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের চুক্তি হয়ে যাবার পরই ম্যাকডোনাল্ডস শুরু করে বড়সর সম্প্রসারণ। এই সম্প্রসারণের কাজ মূলত দেখাশোনা করতেন কর্ক নিজেই, ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা নজর দেন রেস্টুরেন্টের দিকেই। কর্ক ছিলেন সেলসম্যান হিসেবে সফল। তাই দ্রুতই ম্যাকডোনাল্ডসের ফ্র্যাঞ্চাইজিং সফল হয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ম্যাকডোনাল্ডসের বিখ্যাত সোনালী রঙের, বাঁকানো ইংরেজি “এম” অক্ষরটি দেখা যেতে শুরু করে। কিন্তু আপাত এ সফলতার পরেও ব্যবসার ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছাতে না পারার দরুন রে কর্ক এবং তার করপোরেশন প্রায় দেউলিয়া হবার পর্যায়ে চলে যান। এ অবস্থায় তিনি একজন অর্থনৈতিক পরামর্শককে নিয়োগ দেন অবস্থা বিশ্লেষণের জন্য।

তো সেই অর্থনৈতিক উপদেষ্টা একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় লক্ষ্য করেন। এই কর্পোরেশনের মূল আয়ের উৎস হল খাবার এবং খাবারের উপাদান বিক্রি। অপর দিকে অনেক বেশি ব্যয় হয় যে খাতে সেটি খাবার নয় বরং যে স্থানে ফ্র্যাঞ্চাইজি বিজনেস পরিচালনা করছেন সেই স্থান বা জমির লিজ পরিশোধে। এই আয়-ব্যয়ের হিসেব না মেলাতেই যত গন্ডগোল! এসময়েই ম্যাকডোনাল্ডস করপোরেশন ঠিক করে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করার। তাদের পরিকল্পনা ছিল জমি ক্রয় যেখানে ভবিষ্যতে ফ্রাঞ্চাইজি তৈরি হবে এবং সেখানকার লিজ বা ভাড়া থেকে আয় করবে আমাদের ম্যাকডোনাল্ডস। আর ঠিক এভাবেই শুরু হল ম্যাকডোনাল্ডসের রিয়েল এস্টেট খাতে রাজত্বের! 

রিয়েল এস্টেট রাজত্বে ম্যাকডোনাল্ডস

McDonald's In Times Square
পৃথিবীর প্রায় সকল জনপ্রিয় স্থানেই আছে ম্যাকডোনাল্ডসের আউটলেট

এরপর থেকেই চলে আসছে ম্যাকডোনাল্ডসের রিয়েল এস্টেট রাজত্ব। ২০১৬ সালের এক হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে যত জায়গায় ম্যাকডোনাল্ডেসের অপারেশন আছে তার ৮৫% জমি অথবা জায়গার মালিকানা ম্যাকডোনাল্ডসের নিজের। ফলে ভাড়া এবং লিজ থেকে যে  উপার্জন হয় তা বিশাল। ম্যাকডোনাল্ডস কর্পোরেশনের রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির মূল্য অনুমান করা হয় ৩০বিলিয়ন বা ৩০০০কোটি ডলার। ব্যবসার জন্য এই মডেল অনুসরণ করায় ম্যাকডোনাল্ডস আজ পৃথিবীর বৃহত্তম ফাস্টফুড ইন্ডাস্ট্রি। তাদের রিয়েল এস্টেট অ্যাসেটের মূল্য বাড়ছে প্রতিদিনই! 

এছাড়া রিয়েল এস্টেটের উপর বিশেষ জোর দেবার কারণে ম্যাকডোনাল্ডস পেরেছে পৃথিবীর বিভিন্ন আইকনিক স্থানে ও লোকেশনে আগে থেকেই জায়গা সংগ্রহ করে রাখার সুযোগ। লন্ডনের বিগ বেন, মস্কোর রেড স্কয়ার কিংবা ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ারের মত যত বিখ্যাত স্থান এই পৃথিবীতে আছে তার সিংহভাগ স্থানেই আছে ম্যাকডোনাল্ডসের আউটলেট। আর জমির মালিকানা থাকায় ম্যাকডোনাল্ডস পায় বিশেষ ট্যাক্স সুবিধাও। সব মিলিয়ে তারা যেন এক রিয়েল এস্টেট রাজত্বেরই প্রতিনিধিত্ব করে! 

আমাদের অনেকের কাছেই ম্যাকডোনাল্ডস মানে শুধুই মজাদার খাবারের উৎস হলেও রিয়েল এস্টেট খাতে যে তাদের এত বড় জায়গা আছে, কে ই বা তা ভেবেছিল? তবে এটাই সত্যি যে ম্যাকডোনাল্ডসের রিয়েল এস্টেট সম্পত্তির মূল্য কোটি কোটি টাকা। যা নিয়েই আমাদের আজকের লেখাটি সাজানো ছিল। বিপ্রপার্টি ব্লগে আমরা প্রতিদিন প্রকাশ করি বিভিন্ন ধরণের ব্লগ শুধুই আপনার জন্য। তাই নতুন নতুন লেখা পড়তে চোখ রাখুন  আমাদের  ব্লগে। 

Write A Comment