বাংলাদেশের শহরে এবং গ্রামে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিষয়টা এখন আর নতুন কিছু নয়। আর তাই ঢাকা শহরের বাড়ির মালিকরা এখন অনেকেই সোলার প্যানেল ব্যবহারের কথা ভাবছেন। কেননা যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ এর চাহিদা পূরণে একটা বিকল্প ব্যবস্থা ও পরিবেশবান্ধব উপায় হিসেবে সোলার প্যানেল হতে পারে একটা ভালো সমাধান। তবে সঠিকভাবে সোলার এর বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য সোলার প্যানেল লাগানোতেই এর কাজ শেষ হয়ে যায় না। বরং, সঠিকভাবে সোলার প্যানেল এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঢাকায় সোলার প্যানেল এর সঠিক ব্যবহারে যে ঘাটতি গুলো দেখা দেয় এবং এর পেছনে থাকা সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক। আর এর যথাযথ ব্যবহারে আমরা যেসকল সুবিধাগুলো পাবো সে সম্পর্কেও একটা পরিষ্কার ধারণা নেয়া যাক।
জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে উন্নয়ন
ঢাকায় বিদ্যুৎ এর ব্যাকআপ সোর্স হিসেবে যদিও অনেক বাড়ির মালিকরাই এখন সোলার প্যানেল ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে পাওয়ার গ্রিড থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উন্নত হয়েছে। যার ফলে অপ্রয়োজনীয় সোলার প্যানেলগুলো থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা এখন অনেকাংশেই কমে গেছে। তাছাড়া যদি কখনো বিদ্যুতের ঘাটতি দেখাও দেয়, তখন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর ভাড়াটিয়াদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য জেনারেটর এর ব্যাকআপ ব্যবস্থা তো থাকছেই।
সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাব
সোলার প্যানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি বাধা হলো এই প্যানেল ইনস্টল করার পর কর্তৃপক্ষ এর কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা না পাওয়া। ফলে যারা এই সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন তারা এর যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তেমন একটা অবগত থাকেন না। তবে পুরাতন ভবন রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি সোলার এর রক্ষণাবেক্ষণ করাও যে অত্যন্ত জরুরি। ঢাকা শহরের আশেপাশের বেশিরভাগ শহরেই বাড়ির মালিকরা বৈদ্যুতিক সংযোগের চাহিদা সামনে তুলে ধরার জন্য এই সোলার প্যানেল এর সেটআপ করে থাকেন। কিন্তু যেই না তারা গ্রিড থেকে বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছেন, ঠিক এর পর থেকেই যেন সোলার প্যানেল সিস্টেম পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। যা কিনা কোনভাবেই ফেলে রাখা উচিত নয়। আর এর ফলে শহরের বেশিরভাগ বাসার সোলার প্যানেলগুলোই এখন ধুলোবালি সংগ্রহের ডিজিটাল বর্জ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাই যেকোনো মেশিনারি সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর ব্যবহারকারীকে যন্ত্র ব্যবহারের উপযুক্ত ধারণা এবং পরিচালনা সম্পর্কিত নির্দেশনা সম্পর্কে আগে থেকেই জানা থাকা প্রয়োজন। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বাস্তবে এর প্রয়োজনীয়তা তেমন একটা দেখা যায় না বললেই চলে।
সঠিক সংখ্যা এবং যথাযথ ব্যবহারের অনুপাত
২০১০ সালের দিকে গ্রিড কানেকশনের জন্য ছাদে সোলার সিস্টেম থাকাটা অনেকটাই বাধ্যতামূলক ছিল। সাধারণ বাড়ি মালিকদের তাদের মোট চাহিদার বিপরীতে ন্যূনতম ৩% সোলার পাওয়ারের দরকার পড়তো। অন্যদিকে, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল ১০%। ডেসকো (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) এর আওতায় থাকা এলাকায় প্রায় ২৪৬৯৩ টি ছাদে এই সোলার পাওয়ার সিস্টেম রয়েছে। অন্যদিকে ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) এর রয়েছে ৩৭ হাজার সোলার পাওয়ার এর সুবিধা, যা ঢাকা দক্ষিণ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর রয়েছে অসংখ্য ছাদ সোলার সিস্টেম।
সোলার সিস্টেম এর সঠিক পরিদর্শন এবং ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্রমাবর্ধমান উন্নয়নের ফলে ঢাকার সোলার প্যানেলগুলোর অতিরিক্ত চাহিদা প্রয়োজনের তুলনায় এখন অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর উচিত হবে সেসব এলাকার বাড়ির ছাদে থাকা সোলার প্যানেলগুলো নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা। আর তাই ব্যবহারকারীদের বিশেষজ্ঞ কর্তৃক সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে ঢাকায় সোলার প্যানেল এর ব্যবহার এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। তবে সম্প্রতি নেট মিটারিং এর ব্যাপারে নেয়া উদ্যোগ এই অবকাঠামোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করছে।
নেট মিটারিং এবং এর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভাবনা
জাতীয় গ্রিডের লাইনের সাথে সোলার প্যানেলকে সংযুক্ত করা নেট মিটারিং সিস্টেম এর মূল কাজ এবং এর সাথে মেইন লাইনে বিদ্যুৎ স্থানান্তরিত করা। যেন প্রয়োজন অনুসারে গ্রাহকরা তা ব্যবহার করতে পারেন। আর তাই মেইন গ্রিড থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ যাচ্ছে এবং গ্রাহকরা এর কতটুকু ব্যবহার করতে পারছে তা এই দ্বিমুখী মিটারিং সিস্টেম ট্র্যাক রাখতে সহায়তা করে থাকে। গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল কমাতে এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতির অপচয় রোধ করতে এই পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করে থাকে, যা স্বল্প ক্ষমতা সম্পন্ন হোম প্যানেল যা ক্লাস্টার সিস্টেমের মাধ্যমে প্রধান গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকে। তাই অধিক উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্যানেলগুলো ক্লাস্টার সিস্টেমের মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের জন্য আয়ের একটি ভালো উৎসও হতে পারে।
ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশের বেশিরভাগ সোলার প্যানেল এখন প্রায় অব্যবহৃত অবস্থাতেই রয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) প্রতিটি উঁচু ভবনে সৌর প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা করেছে। ভবনে সোলার বসাতে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে মালিকদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব এবং এ বিষয়ে তৎপরতা না থাকা। এক্ষেত্রে সরকার এবং বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর উচিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেন মানুষ এর ব্যবহার সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারে। শুধু তাই-ই নয়, তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সোলার প্যানেল এর ব্যবহার এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলোও যথাযথ ভাবে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন।