Reading Time: 4 minutes

ব্যবসায়ের প্রকৃতি, আকার এবং এর ধরনের উপর নির্ভর করে অফিসগুলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দেই ডিজাইন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং তাদের কার্যক্রমের চাহিদার উপর নির্ভর করে একেকটি অফিস একেক ভাবে সাজানো হয়, ফলে একটি অফিসের সাথে অন্য অফিসগুলোর ডিজাইনে মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই অফিস ডিজাইন এবং লেআউট এমন ভাবে করতে হবে, যেন তা কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের শতভাগ কাজ করার ব্যাপারে অবশ্যই অনুপ্রাণিত করে এবং কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব কিছু থাকার পূর্ণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, গোপনীয়তা বজায় রাখা এবং একাগ্রতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পেস প্রয়োজন হলেও, অফিসের ডিজাইন এবং লেআউট নির্ধারণের প্রধান বিষয়গুলো কিন্তু একই থাকে। আর তাই আপনি আপনার অফিসের স্পেসটি কীভাবে সাজাচ্ছেন, এর ইন্টেরিয়র এর কালার থিম কী থাকছে, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়গুলোই মূলত কর্মক্ষেত্রে কাজের ধারা এবং এর সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

স্পেস ম্যানেজমেন্ট

Space management
অফিস ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর একটি স্পেস ম্যানেজমেন্ট

অফিস ডিজাইনের সময় সবচেয়ে বেশি যে দিকটি বিবেচনায় থাকে তা হল স্পেস ম্যানেজমেন্ট। দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত এই অফিসটি কর্মীদের উপর নিত্যদিন প্রভাব ফেলে থাকে। বেশিরভাগ অফিসে কাজ করার জন্য সীমিত জায়গা থাকে। তাই কর্মক্ষেত্র ডিজাইন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি জিনিসই যেন কোন না কোন উদ্দেশ্যে পূরণ করে সে ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন। 

অফিসের প্রয়োজনে বাড়তি জায়গা কিংবা বড় পরিসরে সরে যাওয়ার দরকার হয়তো নাও হতে পারে, যদি না  বর্তমান লেআউটে আপনি বুদ্ধিমত্তার সাথে সব কিছু প্ল্যান করে নিন। স্পেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানে অফিসের রুমগুলো দেখতে কেমন হবে এবং কীভাবে এর সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সে ব্যাপারে আগে থেকেই পরিপূর্ণ প্ল্যান করে নিতে হবে। ঢাকায় অফিসের জন্য স্পেস খুঁজতে ঘুরে আসতে পারেন বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইট থেকে। 

কালার স্কিম এবং থিম 

color schemes
অফিস স্পেসে রঙের প্রভাব উল্লেখ করার মতো

স্পেস ম্যানেজমেন্ট এর চেয়ে অফিসের কালার নির্ধারণ করা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও, অফিস ডিজাইন করার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সাথে না দেখলেও, কাজের মান এবং কর্মীদের মানসিক অবস্থার উপর রঙের প্রভাব কিন্তু ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। লাল, কমলা এবং হলুদের মতো উষ্ণ রঙগুলো কিন্তু কর্মীদের আরামদায়ক, উত্তেজিত কিংবা রাগান্বিত করতে পারে। অন্যদিকে নীল, সবুজ এবং ট্যানের মতো শীতল রঙগুলো যেমন আপনার টিমের সদস্যদের উপর একটা শান্ত প্রভাব ফেলবে, তেমনি কাজের জায়গার জন্য জনপ্রিয় কিছু কালার প্যালেট হিসেবেও বেশ পরিচিত। মানসিক অবস্থার পাশাপাশি কর্মীদের শারীরিক অবস্থাতেও রঙ বেশ প্রভাব ফেলে। চোখের দৃষ্টি শক্তি এবং মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে হলুদ এবং সাদা রঙ, তাই এর ব্যবহার হওয়া উচিত সীমিত আকারে। এছাড়া দেয়ালে সঠিক রঙ ব্যবহার করে ঘরকে আরও বড় দেখানোর সম্ভব।  

কাস্টমার এবং ক্লায়েন্টরা আপনার ব্যবসায়কে কীভাবে দেখছে এর উপরও কিন্তু রঙের বেশ প্রভাব রয়েছে। কোন অ্যাকাউন্টিং ফার্মে যদি চোখে লাগে এমন শেডের কোনো রঙ ব্যবহার করা হয়, তবে তা ক্লায়েন্ট দের উপর ভালো প্রভাব তো ফেলবেই না বরং এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি করবে।    

রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট

Resource management
অফিস ডিজাইনের প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের অগ্রাধিকার থাকা উচিত সবচেয়ে বেশি

অফিসের কর্মীরা যেন তাদের কাজ ঠিকমতো করতে পারে এ জন্য প্রয়োজন সঠিক রিসোর্স, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তির ব্যবস্থা রাখা। অফিসে যদি পুরনো সিস্টেমই ঘুরেফিরে চলতে থাকে তবে তা একদিকে যেমন সময় নষ্ট করবে, অন্যদিকে ধীর গতির ডিভাইস ব্যবহার করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তা লোড হওয়া এবং সময়ে-অসময়ে টেকনিশিয়ান দের প্রযুক্তিগত এ সকল দিক ঠিক করতেই অনেকটা জরুরি সময় চলে যাবে। আর তাই আপনার দৈনন্দিন কাজে অগ্রগতি ধরে রাখতে যেখানে এবং যেভাবেই সম্ভব আপডেটেড প্রযুক্তির ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। 

যেহেতু নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই নতুন প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে অফিসের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়তো বেশ কিছু সময় ব্যয় করতে হতে পারে, তবে এটি কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একটি উপযুক্ত বিনিয়োগই হবে, কেননা তাদের প্রশিক্ষণের দিকগুলো কিন্তু আপনার অফিসের কাজেই আসবে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রের আশেপাশে চলাচলে উৎসাহিত করার জন্য যেখানে সম্ভব মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত। এমনকি কর্মীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনে অফিসে নিরিবিলি রুম, আলোচনার জন্য স্পেস বা মিটিং রুম সেট আপ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন হলে খুঁজে নিতে পারেন এলাকাভেদে পছন্দসই অফিস স্পেস।     

লাইটিং

Lighting
অফিস স্পেসে ভিন্ন এক অনুভূতি তৈরিতে আলোর ভূমিকা অন্যতম

অফিস ডিজাইন এবং লেআউট এর ঝামেলাপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হল লাইট। একবার ভাবুন তো, আপনার কাজের জায়গাটি যদি অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং মলিন হয়, তবে সেখানে কাজ করার মতো কোন মনমানসিকতা বা আগ্রহ কি তৈরি হবে? না, এরকম পরিবেশে কখনোই কাজের অগ্রগতি হবে না। কর্মীদের মনমানসিকতা উন্নত করতে কাজের জায়গাতে সর্বাধিক পরিমাণ প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চোখের সমস্যা কিংবা মাথাব্যাথার পরিমাণ কমানোর জন্য কৃত্রিম আলোর চেয়ে প্রাকৃতিক আলোর সংস্পর্শে থাকা বেশি প্রয়োজন। এর ফলে এ ধরনের সমস্যারই যে শুধু সমাধান হবে তা কিন্তু নয়, এই আলো কিন্তু আপনার অফিসের স্পেসটি যত না বড়, তার চেয়েও বড় দেখাবে। 

অফিসের সেটআপের জন্য বাহারি লাইটস কিনতে যেতে পারে কাছে কোন মার্কেটে। সবুজ এবং নীলের মতো শীতল রঙের সাথে যুক্ত হয়ে আপানার অফিসের অভ্যন্তরে এক ধরনের শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম। এমনকি পুরো অফিসের জন্য এটি আপনার পছন্দসই দৃশ্য না হলেও, এই প্যালেট কিন্তু নিরব রুমের জন্য মানানসই হবে এবং সাথে প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা কর্মীদের জন্য কাজের পরিবেশটা চিন্তামুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। প্রাকৃতিক আলোর সর্বাধিক ব্যবহারের সুযোগ আপনার ব্যবসায়ের ব্যয় এবং জ্বালানি খরচ কমিয়ে দিতে সহায়তা করবে।   

অফিস ডিজাইন এবং লেআউট প্ল্যান করার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। প্রাথমিকভাবে স্পেস ম্যানেজমেন্ট, রঙ, প্রযুক্তি এবং লাইটিং অফিস ডিজাইনের প্রধান বিষয়ের মধ্যে চলে আসে, যা দিয়ে মূলত অফিসের ডিজাইন করার কাজটা শুরু করা উচিত। কর্মক্ষেত্রের ডিজাইন করার সময় এই দিকগুলোর কথা বিবেচনা করেই ডিজাইনিং এর ফ্রেম তৈরি করে নিতে পারেন। আপনার ব্যবসায়ের অবস্থা উন্নত করতে তাই অফিস ডিজাইন এর প্রধান এই বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ গুরত্ব দেয়া উচিত।    

Write A Comment

Author