Reading Time: 4 minutes

প্রপার্টি কিনতে যাচ্ছেন? যে কোনো প্রপার্টি কেনার আগে সম্ভাব্য সব যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা অবলম্বন ও অনুসন্ধান করা কিন্তু ভীষণ জরুরি। তা না হলে অনেক সময় জমির দালালদের কথায় প্ররোচিত হয়ে জমি কিনতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ার ঘটনাও দেখা যায়। তাই বাড়ি, প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে কিংবা তাড়াহুড়ো করে প্রপার্টি কিনতে যাবেন না। যেহেতু আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়তে চাচ্ছেন, তাই প্রপার্টি নিষ্কলুষ কিনা, সকল কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। আর এখানেই প্রয়োজন লিগ্যাল ভেটিং বা আইনী কাগজপত্র যাচাই। প্রপার্টি কেনার আগে আপনার কী কী কাগজপত্র যাচাই করতে হবে এবং কীভাবে সেগুলো যাচাই করবেন এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুন আজকের লেখায়।  

মালিকানা দলিল

এটি প্রপার্টির প্রধানতম দলিল। এর মাধ্যমেই এক পক্ষ অপরপক্ষের নিকট থেকে যে আইনগতভাবে প্রপার্টির মালিকানা বুঝে নিয়েছে এবং রেজিস্টার করে নিয়েছে, তা প্রমাণিত হয়। তাই এই দলিলের সত্যতা যাচাই করতে হবে সবার আগে। এজন্য প্রথমেই যেতে হবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। সেখান থেকেই আপনি জানতে পারবেন মালিকানা দলিলটি আসল কিনা। তবে, বিক্রেতা যদি উত্তরাধিকার সূত্রেএই প্রপার্টির মালিকানা পেয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু মালিকানা দলিলের পাশাপাশি যাচাই করে দেখতে হবে পার্টিশন ডিড বা বন্টননামা দলিল। নয়তোবা, প্রপার্টির অন্যান্য ওয়ারিশগণ পরবর্তীতে প্রপার্টির মালিকানা দাবি করতে পারে এবং আপনাকে মামলা মোকাদ্দমার ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।  

মালিকানা দলিলের সত্যতা যাচাই করতে হবে

বায়া দলিল

বায়া দলিল বলতে বোঝায় আগের সকল মালিকদের মালিকানা দলিল। একটি প্রপার্টির  পূর্ববর্তী মালিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকে বায়া দলিলে। প্রপার্টির আইনী  কাগজপত্র যাচাই এর সময় এই দলিলটিও খতিয়ে দেখতে হবে গুরুত্ব দিয়ে। বিশেষ করে বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয় দলিল বা ভায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে।

খতিয়ান

খতিয়ান (রেকর্ড অফ রাইটস), সত্তলিপি বা পরচা হল এমন একটি দলিল যেখানে প্রপার্টির অবস্থান চিহ্ণিত করা থাকে। এজন্য প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলাকে ছোট ছোট অসংখ্য প্লটে বিভক্ত করা হয় যা “মৌজা” নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এই মৌজাকেই আরও ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে প্রস্তুত করা হয় খতিয়ান। জমির ধরণ, জমির কতটুকু মালিকানা কার, ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ, কীভাবে সেই কর পরিশোধিত হবে এ সবকিছুই পরবর্তীতে খতিয়ানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশে সি.এস. (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে), এস.এ. (স্টেট অ্যাকিউজিশন সার্ভে), পি.এস. (পাকিস্তান সার্ভে), আর.এস. (রিভিশনাল সার্ভে), বি.এস (বাংলাদেশ সার্ভে) ও ঢাকা সিটি জরিপ সহ বিভিন্ন রকমের খতিয়ান রয়েছে। তবে কোন খতিয়ানগুলো কোন প্রপার্টির প্রযোজ্য হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রপার্টির অবস্থানের উপর। তাই আপনি যে জমিটি কিনতে চাচ্ছেন তার অবস্থান অনুযায়ী জমিটিতে কোন কোন খতিয়ান প্রযোজ্য আগে সেটি জানুন এবং প্রপার্টির মালিকের কাছ থেকে খতিয়ানের কপিগুলো সংগ্রহ করুন এবং সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে যাচাই করে নিন। 

What are Different Kinds of Deeds And Their Necessities - Bproperty
খতিয়ানের কপিগুলো সংগ্রহ করুন এবং সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে যাচাই করে নিন

মিউটেশন খতিয়ান বা নামজারি

প্রপার্টি হ্যান্ডওভার বা বিক্রির পরে মালিকানা পরিবর্তন করার পদ্ধতি হচ্ছে মিউটেশন বা নামজারি। জমির মালিকানা হস্তান্তরের পর প্রাক্তন মালিকের পরিবর্তে খতিয়ানে (রেকর্ড অব রাইটস) নতুন মালিকের নাম যুক্ত করে রেকর্ডটি আপডেট করা হয়। মিউটেশন বা নামজারি করার মাধ্যমেই  কেবলমাত্র নতুন মালিক ভূমি রাজস্ব বিভাগ থেকে তাদের নামে রেজিস্টারকৃত প্রপার্টির মালিকানা  পায় এবং তখন থেকেই সে সরকারকে প্রপার্টির কর দেয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

Papers collated
প্রপার্টি হ্যান্ডওভার বা বিক্রির পরে মালিকানা পরিবর্তন করার পদ্ধতি হচ্ছে মিউটেশন

দুটো ভিন্ন কারণে এই নামজারির প্রয়োজন এত বেশি। প্রথমত, প্রতিটি খতিয়ানই প্রস্তুত হবার কথা একটি সার্ভের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবতা হল, সবসময় যে তেমনটি হয়, তা নয়। এছাড়া দুটি সার্ভে বা জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে যদি কোন সম্পত্তির মালিকানার পরিবর্তন ঘটে তাহলে মিউটেশন করা এবং পূর্বের মালিকের জায়গায় খতিয়ানে নতুন মালিকের নাম পরিবর্তন বা নামজারি করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। 

আর এজন্যই কোনো প্রপার্টি কেনার আগে মিউটেশন বা নামজারি সংক্রান্ত তিনটি নথি অবশ্যই খতিয়ে দেখে নিতে হবে। একটি হচ্ছে নামজারি জমাভোগ প্রস্তাবপত্র বা মিউটেশন প্রপোজাল লেটার, দ্বিতীয়টি হল ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ বা ডিসিআর এবং সর্বশেষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশন খতিয়ান। কেননা এই ডকুমেন্টগুলো ছাড়া কখনো বৈধভাবে প্রপার্টি বা সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর সম্ভব নয়। তাই এই ডকুমেন্টগুলো যাচাই করে নিলে আপনি প্রপার্টির মালিকানার বৈধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন। 

আইনী কাগজপত্র যাচাই করার সময় গুরুত্বপূর্ণ এই দলিলগুলোর পাশাপাশি একজন সচেতন বিক্রেতা হিসেবে আপনার অবশ্যই এন.ও.সি (নো অবজেক্ট সার্টিফিকেট), এন.ই.সি (নো এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট) চেক করে নেয়া উচিৎ। পাশাপাশি চেক করে নেবেন জমির খাজনা রশিদ এবং ভাড়ার আপডেটেড রশিদ। কেননা বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি জমির জন্য একটি বাৎসরিক ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। জমিতে কোন প্রকার ঝামেলা থাকলে এই ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। তাই জমিটি সম্পূর্ণভাবে ঝামেলামুক্ত কিনা এটি পুনরায় নিশ্চিত হতেই আইনী কাগজপত্র যাচাই এর অংশ হিসেবে এটি চেক করতে হবে। 

দেশে জমি বা প্রপার্টি কেনাবেচা নিয়ে প্রতারণা কিন্তু প্রায়শই ঘটে থাকে। তাই আপনি যদি প্রপার্টি  কেনার বিষয়ে অভিজ্ঞ না হন তবে ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই একজন লিগ্যাল এক্সপার্ট এর পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়টি হতে পারে বিপ্রপার্টি লিগ্যাল সল্যুশন। যেখানে আইনী কাগজপত্র যাচাই সহ ঢাকার মাঝে যে কোনো প্রপার্টির জন্য যে কোনো লিগ্যাল সাপোর্ট নিতে পারবেন আপনি।  

Write A Comment

Author